নাম না করে অ্যামেরিকাকে হুমকি দিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। বললেন, ঠান্ডা যুদ্ধের সময়ের উত্তেজনা ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
চীনের প্রেসিডেন্টের দাবি, মতাদর্শগত লাইনে বা ছোট কোনো ভৌগোলিক এলাকাকে বেছে নিয়ে উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু এটা সফল হবে না। শি জিনপিং এশিয়া-প্যাসিফিক ইকনমিক কো-অপারেশন সামিটের ভার্চুয়াল বিজনেস সামিটে এই মন্তব্য করেন। সম্প্রতি তাইওয়ান ও এশিয়া-প্যাসিফিক নিয়ে অ্যামেরিকার সঙ্গে চীনের বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই শি এই কথা বলেছেন।
তিনি বলেছেন, এশিয়া-প্যাসিফিক এলাকাকে ঠান্ডা যুদ্ধের সময়ের বিরোধের মধ্যে ফেলা ঠিক হবে না, সেটা উচিতও নয়।
শি আর যা বলেছেন
চীনের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, তারা এশিয়া-প্যাসিফিক এলাকার উন্নয়নে দায়বদ্ধ। এই অঞ্চলের আর্থিক উন্নয়নে চীন সাহায্য করবে। তিনি জানিয়েছেন, করোনার টিকা যাতে উন্নয়নশীল দেশগুলি পায়, সেজন্য সকলকে চেষ্টা করতে হবে।
গ্লাসগোয় সদ্যসমাপ্ত কপ২৬ শীর্ষ সম্মেলনে পরিবেশ বাঁচাতে অ্যামেরিকা ও চীন যে উচ্চাকাঙ্খী পরিকল্পনা নিয়েছে শি তারও উল্লেখ করেন।
এশিয়া-প্যাসিফিকে উত্তেজনা
তাইওয়ান নিয়ে সম্প্রতি অ্যামেরিকা ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, তাইওয়ানকে রক্ষা করার দায় অ্যামেরিকার আছে। তাইওয়ানও চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়েছে বলে বাইডেন জানিয়েছেন।
বাইডেনও জানিয়েছেন, তিনি চীনের সঙ্গে ঠান্ডা যুদ্ধ চান না। চীনের উপর চাপ দিতে অ্যামেরিকা গত সেপ্টেম্বরে কোয়াডের বৈঠক করেছে। কোয়াড মানে অ্যামেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতকে নিয়ে গঠিত গোষ্ঠী।
জলবায়ু নিয়ে সমঝোতা
বিশ্বের পরিবেশ বাঁচাতে অ্যামেরিকা ও চীন সমঝোতার রাস্তায় এসেছে। সম্প্রতি কপ২৬ শীর্ষ সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট যোগ দেননি। তানিয়ে সোচ্চার ছিলেন বাইডেন। কিন্তু এরপর দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হয়। জাতিসংঘে চীনের জলবায়ু সংক্রান্ত দূত ঝেনহুয়া জানিয়েছেন, প্যারিস সম্মেলনে নেয়া দূষণ কমানোর লক্ষ্য ও বাস্তব পরিস্থিতির মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে। তাই অ্যামেরিকা ও চীন একটি উচ্চাকাঙ্খী পরিকল্পনা নেয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে। তাই দুই দেশ নির্দিষ্ট কিছু ব্যবস্থা নেবে।
এবারের জলবায়ু সম্মেলনের প্রধান খেলোয়াড় যারা
গ্লাসগো জলবায়ু সম্মেলনে নিজ নিজ দাবি দাওয়া নিয়ে হাজির হচ্ছে ১৯৭ টি দেশ৷ কপ২৬-এ উন্নত, উন্নয়নশীল আর স্বল্পোন্নত দেশগুলোর, কার কী এজেন্ডা থাকছে জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: Alistair Grant/AP Photo/picture alliance
চীন
বৈশ্বিক জলবায়ু লক্ষ্য অর্জন কতটা সম্ভব তা অনেকাংশে নির্ভর করে বিশ্বের সর্বোচ্চ কার্বন নিঃসরণকারী এই দেশের কর্মকাণ্ডের উপরে৷ ২০৬০ সাল নাগাদ কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জনের ঘোষণা দেন শি জিনপিং, যা বিজ্ঞানীদের বেঁধে দেয়া লক্ষ্যের চেয়ে ১০ বছর পিছিয়ে৷ ২০২৬ সালের মধ্যে কয়লার ব্যবহার বন্ধের ঘোষণাও এসেছে৷ এবারের সম্মেলনে সহ পরিবেশমন্ত্রীকে পাঠাচ্ছে চীন, যা বড় ধরনের কোনো ঘোষণার পথে বড় বাধা বলে মনে করছেন অনেকে৷
ছবি: Wiktor Dabkowski/ZUMA/picture alliance
যুক্তরাষ্ট্র
কার্বন নিঃসরণে চীনের পরে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান৷ ট্রাম্পের বিদায়ের পর চলতি বছর আবারও জলবায়ু আলোচনায় ফিরেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ প্যারিস চুক্তিতে ফেরার পাশাপাশি ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বণ নিঃসরণ ২০০৫ সালের তুলনায় ৫০ শতাংশ কমানোর ঘোষণা দেন বাইডেন৷ কিন্তু এ সংক্রান্ত সুস্পষ্ট নীতির অভাব গ্লাসগো সম্মেলনে চীন, ভারত ও ব্রাজিলের মতো দেশগুলোকে চাপে রাখার ক্ষেত্রে বড় বাধা বলে মনে করছেন কূটনৈতিক ও এনজিওকর্মীরা৷
ছবি: Reuters/B. McDermid
যুক্তরাজ্য
এবারের সম্মেলন নিয়ে ভীষণ আশাবাদী আয়োজক দেশটি৷ এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে কয়লাকে ইতিহাসের পাতায় নিয়ে যাবেন বলে উল্লেখ করেছেন সম্মেলনের নেতা ব্রিটিশ মন্ত্রী অলোক শর্মা৷ ২০৫০ সালের মধ্যে নিট কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি আছে যুক্তরাজ্যের৷ উত্তর সাগরে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান বন্ধে চাপ আছে বরিস জনসন সরকারের উপরে৷ সেক্ষেত্রে দেশটিকে সামনের দিনে আমদানিকৃত জ্বালানির উপর নির্ভরশীল হতে হবে৷
ছবি: Scott Heppell/AP Photo/picture alliance
ইউরোপীয় ইউনিয়ন
বিশ্বের আট ভাগ গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের দায় এই জোটের ২৭ দেশের৷ তবে গত কয়েক বছর ধরেই তাদের নিঃসরণের মাত্রা পড়তির দিকে৷ ১৯৯০ সালের পর্যায়ের চেয়ে ২০৩০ সাল নাগাদ নিট নিঃসরণ অন্তত ৫৫ শতাংশে আর ২০৫০ সালে শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্য তাদের৷ গত দুই বছর ধরেই তাপদাহ আর বন্যার মতো বৈরি জলবায়ুর মুখোমুখি হচ্ছে তারা৷
ছবি: INA FASSBENDER/AFP
স্বল্পোন্নত দেশ
৪৬টি দেশ, ১০০ কোটি নাগরিক আছে এই দলে৷ তারা ছড়িয়ে আছে আফ্রিকা, এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে৷ উন্নত দেশগুলোর মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণের ভুক্তভোগী মূলত বাংলাদেশসহ এই দেশগুলোই৷ আফ্রিকান গ্রুপ অব ন্যাশনস, ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সাথে মিলে এলডিসি দেশগুলোর লক্ষ্য থাকবে, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে উন্নত দেশগুলোর বছরে ১০০ কোটি ডলারের জলবায়ু তহবিলের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় চাপ দেয়া৷
ছবি: DW/M. Rashed
‘ব্যাসিক’ দেশসমূহ
ব্রাজিল, সাউথ আফ্রিকা, ভারত এবং চীন উন্নয়নশীল এই অর্থনীতিগুলো এখন উচ্চ দূষণকারী দেশে পরিণত হয়েছে৷ তারা জলবায়ু তহবিলে ধনীদের আরো বেশি বেশি অর্থ প্রদানে চাপ দিয়ে আসছে৷ নতুন দিল্লি মনে করে উন্নত দেশগুলোর বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার দেয়াও যথেষ্ট নয়৷ এই তহবিল ৭৫০ বিলিয়নে নেয়ার দাবি সাউথ আফ্রিকার৷ অ্যামাজনের বন ধ্বংসের বিপরীতে আর্থিক ক্ষতিপূরণ চায় ব্রাজিলও৷
ছবি: REUTERS
6 ছবি1 | 6
দুই দেশের মধ্যে ক্ষতিকর মিথেন গ্যাস কমানো নিয়ে চুক্তি হয়েছে। ২০৩৫ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে কয়লার ব্যবহার বন্ধ করা নিয়েও একমত হয়েছে দুই দেশ। তার আগেই কয়লার ব্যবহার দ্রুত কমানো হবে। মার্কিন বিশেষ দূত জন কেরি বলেছেন, চীন ও অ্যামেরিকা দুই দেশই দূষণ কমাবার জন্য দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নেবে। .