প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার পর প্রথম ভাষণে ট্রাম্প প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিন্টনের প্রশংসা করলেন৷ বিরোধীদের দিকেও হাত বাড়িয়ে দিলেন৷ সংসদীয় নির্বাচনেও সাফল্য পেয়েছে তাঁর রিপাবলিকান দল৷ হিলারি শিবিরে শোকের ছায়া৷
বিজ্ঞাপন
এ যেন এক ভিন্ন ব্যক্তি৷ কটু ভাষা, ব্যক্তিগত আক্রমণ, কদর্য অঙ্গভঙ্গি পেছনে ফেলে ‘স্টেটসম্যান’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ প্রথমেই প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিন্টন সম্পর্কে বেশ কিছু প্রশংসামূলক মন্তব্য করলেন৷ নির্বাচনি প্রচারের সময় বিভাজন ভুলে ঐক্য প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করলেন তিনি৷ এমনকি যে সব ভোটার তাকে ভোট দেন নি, তাঁদের প্রতিও সৌজন্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন৷ বিশ্বের বাকি দেশগুলির সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে দেশ চালাবেন – এমনটাও বললেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷
জনমত সমীক্ষায় দুই প্রার্থীর মধ্যে ব্যবধান কম ছিল৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও হিলারি ক্লিন্টন অ্যামেরিকার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হবেন, এমন সম্ভাবনা ও আশা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত উজ্জ্বল ছিল৷ কিন্তু গণনার এই পর্যায়ে সেই আশার আলো নিভে গেল৷ প্রয়োজনীয় ২৭০টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের সীমা পেরিয়ে গেছেন তিনি৷ অতএব তিনিই হতে চলেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট৷
শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সবার নজর ছিল পেনসিলভেনিয়া, মিশিগানের মতো মোট ৮টি রাজ্যের গণনার দিকে৷ এই কয়েকটি রাজ্যের ফলাফলের উপর সার্বিক চিত্র নির্ভর করছিল৷ হিলারি ক্লিন্টন আশাভরে তাকিয়ে ছিলেন সেদিকে৷ কিন্তু শেষরক্ষা হলো না৷
প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন ডলার ও মেক্সিকোর পেসো-র বিনিময় মূল্য পড়ে গেছে৷ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প-এর আমলে গোটা বিশ্বে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার আশঙ্কা করছে পুঁজিবাজারের একাংশ৷
ক্ষমতায় এলে ট্রাম্প তাঁর ঘোষিত নীতি বিনা বাধায় বাস্তবায়ন করতে পারবেন – এটা ধরে নেওয়া যেতে পারে৷ কারণ সংসদের উভয় কক্ষেই তাঁর রিপাবলিকান দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা এসে গেছে৷
নতুন প্রেসিডেন্টের জন্য যা অপেক্ষা করছে
নতুন প্রেসিডেন্টকে স্বদেশে ও বিদেশে বিভিন্ন সমস্যা ও পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে, যার উপর শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নয়, সেই সঙ্গে আধা দুনিয়ার ভালো-মন্দ নির্ভর করবে৷ কী ভাবছেন দুই প্রতিযোগী এই সব সমস্যা সম্পর্কে?
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Nelson
বারাক ওবামা যা করে যেতে পারেননি
তার মধ্যে প্রথমেই আসে স্বাস্থ্য বীমার সংস্কার৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষের কোনো স্বাস্থ্য বীমা নেই, এছাড়া আছে চলতি বীমা পদ্ধতির নানা ঘাটতি ও দুর্বলতা৷ এর বিরুদ্ধে তথাকথিত ‘ওবামাকেয়ার’ কিছুদূর এগোলেও, এখনও অনেক কাজ বাকি৷ এছাড়া দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও অবকাঠামোর চরম দুরবস্থার কথা ভুললে চলবে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Samad
ধনি-দরিদ্রের ব্যবধান
ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধিকাংশ সমর্থক যে পর্যায়ের মানুষদের মধ্য থেকে উঠে এসেছেন, তারা হলেন শিল্পায়ন পরবর্তী যুগের অ্যামেরিকায় যারা সবচেয়ে বেশি হারিয়েছেন বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন৷ বড় বড় শহরগুলি ছেড়ে একটু বাইরে গেলেই সে ধরনের অবক্ষয় চোখে পড়ে: রোগগ্রস্ত, অসুস্থ মানুষ; উপেক্ষিত, অবহেলিত শিশুরা যাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই৷ এই ব্যবধান থেকেই জন্ম নিয়েছে এক নতুন পরস্পরবিরোধিতা৷
ছবি: picture alliance/U. Baumgarten
ইরান
ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তিকে ‘‘ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃষ্ট চুক্তিগুলির মধ্যে একটি’’ বলে খারিজ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে এই চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলাপ-আলোচনা করবেন৷ অপরদিকে হিলারি ক্লিন্টন এই চুক্তিকে ‘‘মহান কূটনীতি’’ বলে স্বাগত জানিয়েছেন৷ তবে ইরানের প্রতি ক্লিন্টনের মনোভাব অতীতে বেশ কড়াই ছিল এবং তিনি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার চেয়ে বেশি ইসরায়েল ঘেঁষা বলে কথিত৷
ছবি: Colourbox/Getty Images
সিরিয়া
ক্লিন্টন সিরিয়ায় নো-ফ্লাই জোন স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন ও বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য ‘সেফ জোন’ কামনা করেছেন৷ নো ফ্লাই জোন থেকে রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতের বিপদ বাড়বে, বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা৷ ট্রাম্প তো স্পষ্টই বলে দিয়েছেন, ‘‘আমাদের আইএস-এর দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত, সিরিয়ার দিকে নয়’’৷ বস্তুত তাঁদের প্রথম ৯০ মিনিটের টেলিভিশন বিতর্কে ২২ বার আইএস-এর নাম করা হলেও, আলেপ্পোর নাম করা হয়েছিল মাত্র একবার৷
ছবি: Reuters/A.Ismail
রাশিয়া
লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসের একটি রেস্টুরেন্টের দেয়ালে আঁকা ছবি, যাতে ট্রাম্পের সম্ভাব্য পুটিন-প্রীতির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে৷ ট্রাম্পকে পরে বলতে শোনা গেছে, ‘‘আমি পুটিনকে চিনি না....রাশিয়া সম্পর্কেও কিছু জানি না’’৷ তবে রাশিয়ার সঙ্গে মিলে আইএস-এর মোকাবিলা করলে ভালো হয়, বলে তাঁর ধারণা৷ অপরদিকে ক্লিন্টনের দৃষ্টিতে ক্রেমলিন শুধুমাত্র সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতায় রাখতে আগ্রহী৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Malukas
ন্যাটো ও ইউরোপ
ছবিতে পোল্যান্ডের প্যারাট্রুপার সৈন্যরা ন্যাটোর একটি সামরিক মহড়ায় অংশ নিচ্ছে৷ ট্রাম্প এর আগে ন্যাটো ও ইউরোপের সঙ্গে সহযোগিতার ব্যাপারে নানা অবহেলাকর মন্তব্য করেছেন৷ অপরদিকে ক্লিন্টন যদিও ‘অ্যাটলান্টিসিস্ট’ হিসেবে পরিচিত, তাঁর মুখেও প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটে একবার বা দু’বারের বেশি ইউরোপ কিংবা ন্যাটোর নাম শোনা যায়নি৷ বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর এতে সন্তুষ্ট না হবারই কথা৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Skarzynski
চীন
ছবিতে চীনের একটি বোমারু বিমান দক্ষিণ চীন সাগরের উপর টহল দিচ্ছে৷ এলাকার বিতর্কিত দ্বীপপুঞ্জগুলিকে নিয়ে বিরোধে ক্লিন্টন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি সংশ্লিষ্ট করতে চান না, কিন্তু ট্রাম্প বলেছেন যে, তিনি একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা প্রণালী স্থাপন করে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো মিত্রদের আশ্বস্ত করতে চান৷ নয়তো ট্রাম্পের ধারণা যে, চীন তাঁর ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক স্বার্থের হানি ঘটাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot/Xinhua/Liu Rui
পরিবেশ
ছবিতে ক্যালিফর্নিয়ার মৌহাভি মরুভূমিতে অবস্থিত একটি সৌরবিদ্যুৎ পার্ক৷ ট্রাম্প কিন্তু নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে বলেছেন ‘‘অনির্ভরযোগ্য ও ভয়ঙ্কর’’; বিশ্বের উষ্ণায়নকে বলেছেন ‘‘মার্কিন শিল্পোৎপাদনকে বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতার অযোগ্য করে তোলার জন্য চীনাদের তৈরি একটি কল্পকাহিনি’’৷ অপরদিকে ক্লিন্টন ওবামার পরিবেশ নীতি চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা করলেও, তাঁর প্রচার অভিযান বা রাজনৈতিক জীবনে পরিবেশ বিশেষ গুরুত্ব পায়নি৷