প্রথম দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার জন্য মার্কিন স্বাধীনতা দিবসের দিনটি বেছে নিয়েছিলেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন৷ তিনি বলেন, অ্যামেরিকানদের জন্য এটা স্বাধীনতা দিবসের উপহার৷
বিজ্ঞাপন
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বুধবারের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত৷ তাদের দাবি, বড় আকারের পরমাণু বোমা বহন করতে সক্ষম ‘হোয়াসং-১৪' নামের এই ক্ষেপণাস্ত্র৷ ২,৮০২ কিলোমিটার ‘ক্রুজিং' উচ্চতায় পৌঁছতে পারে সেটি৷ ৯৩৩ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে জাপান সাগরে ফেলা হয়েছে সেটিকে৷ অর্থাৎ মার্কিন ভূখণ্ডেও আঘাত হানতে পারে এই ক্ষেপণাস্ত্র৷ উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন অত্যন্ত কটু ভাষায় এই পরীক্ষাকে অ্যামেরিকানদের জন্য স্বাধীনতা দিবসের উপহার হিসেবে বর্ণনা করেন৷ তাদের ‘একঘেয়েমি' দূর করতে মাঝে মধ্যে আরও এমন উপহার পাঠানোর কথা বলেন তিনি৷
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন পরোক্ষভাবে স্বীকার করেছেন, উত্তর কোরিয়ার এই দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা সফল হয়েছে৷ মার্কিন সেনাবাহিনী ২৭ মিনিট ধরে সেই ক্ষেপণাস্ত্রের যাত্রাপথ পর্যবেক্ষণ করেছে৷ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ধারণা, এই ক্ষেপণাস্ত্র ৭,০০০ থেকে ৮,০০০ কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দিতে সক্ষম৷ কিছু মার্কিন বিশেষজ্ঞের মতে, বছর দুয়েকের মধ্যে উত্তর কোরিয়া এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রয়োগ করতে পারবে৷
টিলারসন আন্তর্জাতিক সমাজের উদ্দেশ্যে উত্তর কোরিয়ার উপর আরও চাপ সৃষ্টি করার ডাক দিয়েছেন৷ তিনি বলেন, যেসব দেশে উত্তর কোরিয়ার অতিথি শ্রমিক কর্মরত রয়েছে, যারা সে দেশকে অর্থনৈতিক ও সামরিক সুবিধা দেয় অথবা নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব পুরোপুরি কার্যকর করতে ব্যর্থ হয়েছে, তারা এক বিপজ্জনক প্রশাসনকে মদত দিচ্ছে৷
টিলারসন নাম উল্লেখ না করেও চীন ও রাশিয়ার উদ্দেশ্যে এই বার্তা পাঠালেন বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ মস্কোয় এই দুই দেশের শীর্ষ নেতারা সব পক্ষের উদ্দেশ্যে সংযমের ডাক দিয়েছেন৷ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদেও বিষয়টি উত্থাপন করতে চলেছে ওয়াশিংটন৷
এমন হুমকির মুখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়াও হাত গুটিয়ে বসে নেই৷ দুই দেশ এক যৌথ সামরিক মহড়া চালিয়েছে৷ পূর্ব সাগরে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে তারা পিয়ং ইয়ং সরকারের উদ্দেশ্যে কড়া বার্তা পাঠিয়েছে৷ উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহেই উত্তর কোরিয়ার প্রশ্নে বলেছেলিন যে, তাঁর প্রশাসনের ‘কৌশলগত ধৈর্য' শেষ হয়ে গেছে৷ চীন এই সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন৷ চলতি সপ্তাহে জার্মানিতে জি-টোয়েন্টি শীর্ষ সম্মেলনে বিষয়টি গুরুত্ব পাবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷
উত্তর কোরিয়ার সামরিক শক্তি কতটা?
উত্তর কোরিয়া যে কোনো ধরনের সামরিক প্ররোচনার আঁচ পেলেই পাল্টা প্রতিক্রিয়ার হুমকি দিয়েছে৷ ওদিকে একটি মার্কিন নৌ-বহর কোরীয় উপদ্বীপের কাছে৷ কিন্তু কী ধরনের আঘাত হানতে পারে উত্তর কোরিয়া?
ছবি: picture-alliance/dpa/KCNA
বিশ্বের বৃহত্তম সেনাবাহিনীগুলির মধ্যে একটি
সাত লাখ সক্রিয় সেনা ও আরো ৪৫ লাখ রিজার্ভ সৈন্য থাকার অর্থ, উত্তর কোরিয়া যে কোনো সময়ে তার মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশকে সামরিক সেবার ডাক দিতে পারে৷ দেশের প্রত্যেকটি পুরুষকে কোনো না কোনো ধরনের সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে হয় এবং তাদের যে কোনো সময় সামরিক সেবায় নিযুক্ত করা চলে৷ সৈন্যসংখ্যায় উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী দক্ষিণ কোরিয়ার দ্বিগুণ বলে মনে করা হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Jones
বিপুল অস্ত্রসম্ভার
২০১৬ সালের গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইন্ডেক্স অনুযায়ী উত্তর কোরিয়ার সমরসজ্জা চমকে দেওয়ার মতো: ৭০টি ডুবোজাহাজ, ৪,২০০ ট্যাংক, ৪৫৮টি জঙ্গিজেট, ৫৭২টি ফিক্স্ড উইং অ্যাটাক এয়ারক্রাফ্ট ও আরো অনেক কিছু৷ ২০১৩ সালের ছবিটিতে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনকে দেখা যাচ্ছে, তিনি কিভাবে রণকৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনীকে বিভিন্ন মার্কিন ও দক্ষিণ কোরীয় লক্ষ্যের উপর আঘাত হানার জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সামরিক কুচকাওয়াজ
প্রতিবছর হাজার হাজার সৈন্য ও সাধারণ নাগরিকদের রাজধানী পিয়ংইয়াং-এর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজে অংশ নিতে দেখা যায়৷ এ ধরনের কুচকাওয়াজের প্রস্তুতি চলে বেশ কয়েক মাস ধরে এবং সাধারণত তার উপলক্ষ্য হয় কমিউনিস্ট পার্টি অথবা কিম পরিবারের কোনো সদস্যের কোনো গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিকী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/KCNA
পরীক্ষামূলক পারমাণবিক বিস্ফোরণ
আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও পিয়ংইয়াং তার আণবিক বোমা ও রকেট তৈরির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ রকেট পরীক্ষা তো নিয়মিত ব্যাপার, এছাড়া পাঁচবার পরীক্ষামূলক পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে উত্তর কোরিয়া, তার মধ্যে এক ২০১৬ সালেই দু’বার৷ দৃশ্যত শেষবারের বিস্ফোরণে যে বোমাটি ব্যবহার করা হয়, তা একটি রকেটে লাগানোর উপযোগী – অন্তত পিয়ংইয়াং-এর তাই দাবি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/KCNA
শত্রু চতুর্দিকে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও, পিয়ংইয়াং প্রতিবেশী দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানকে তার মুখ্য বৈরি বলে মনে করে৷ এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক মহড়াকে উত্তর কোরিয়ার উপর অভিযান চালানোর প্রস্তুতি বলে গণ্য করে পিয়ংইয়াং৷
ছবি: Reuters/K. Hong-Ji
মার্কিন ‘রণকৌশলগত ধৈর্য্যের’ অন্ত?
২০১৭ সালের এপ্রিল মাসের গোড়ার দিকে ‘কার্ল ভিনসন’ বিমানবাহী পোতটিকে কোরীয় উপদ্বীপের দিকে পাঠায় ওয়াশিংটন৷ সঙ্গে সঙ্গে পিংয়ংইয়াং ‘যে কোনো ধরনের যুদ্ধের জন্য’ প্রস্তুতি ঘোষণা করে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবধি পৌঁছাতে সক্ষম, এমন রকেট বানানোর জন্য উত্তর কোরিয়ার আরো বছর দু’য়েক সময় লাগবে, বলে গুপ্তচরবিভাগগুলির ধারণা৷ তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ততদিন অপেক্ষা করবেন কিনা, সেটা আরেক প্রশ্ন৷