অ্যামেরিকার নির্বাচনে আক্রমণের চক্রান্তে গ্রেপ্তার এক
৯ অক্টোবর ২০২৪
ওকলাহোমা থেকে ২৭ বছরের এক আফগান নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তার সঙ্গে এক নাবালককেও আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিজ্ঞাপন
আগামী ৫ নভেম্বর অ্যামেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ভোটের দিন সেখানে আক্রমণের ছক কষা হয়েছে বলে এফবিআই-এর কাছে আগেই খবর ছিল বলে দাবি। তারই তদন্তে নেমে এফবিআই এক আফগান নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানানো হয়েছে। তার সঙ্গে এক নাবালক সহযোগীকেও আটক করা হয়েছে বলে এফবিআই সূত্র জানিয়েছে।
এফবিআই জানিয়েছে, ইসলামিক স্টেটের জন্য জন্য অস্ত্র কেনার দায়িত্ব ছিল ওই ব্যক্তির উপর। এফবিআই জানিয়েছে ধৃত নাসির এবং ইসলামিক স্টেটের এক ব্যক্তির মধ্যে কথপোকথন ইন্টারসেপ্ট করা হয়। এরপর সেই সূত্র ধরেই নাসিরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে এফবিআই।
ইসলামিক স্টেটের শক্তি এখন কেমন?
২০১৯ সালের মার্চে সিরিয়া-ইরাক সীমান্তের বাঘুজে সংঘাতের পর ইসলামিক স্টেট তথা আইএস-এর পতন ঘটেছিল৷ এরপর সেটি এখন গেরিলা সংগঠনে পরিণত হয়েছে৷ বুধবার মার্কিন অভিযানে তাদের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা প্রাণ হারান৷
ছবি: Dabiq/Planet Pix via ZUMA Wire/ZUMAPRESS/picture alliance
পতন
২০১৯ সালের মার্চে সিরিয়া-ইরাক সীমান্তের বাঘুজে সংঘাতের পর ইসলামিক স্টেট তথা আইএস-এর পতন ঘটেছিল৷ এরপর ঐ বছরের অক্টোবরে আইএস-এর প্রতিষ্ঠাতা আবু বকর আল-বাগদাদি নিহত হন৷ একসময় ইরাক ও সিরিয়ার একটি বিশাল এলাকার লাখ লাখ মানুষের জীবন নিয়ন্ত্রণ করলেও বর্তমানে সংগঠনটি গেরিলা হামলা চালানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ আছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Cacace
দুই শীর্ষ নেতার মৃত্যু
বাগদাদির মৃত্যুর পর আইএস এর প্রধান হন ইরাকের আবু ইব্রাহিম আল-হাশেমি আল-কুরেশি৷ একসময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রে কারাবন্দি ছিলেন৷ গত বুধবার রাতে উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনা অভিযানের সময় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তিনি নিহত হন৷ কুরেশি ছাড়া সংগঠনটির আর কোনো নেতা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায় না, কারণ আইএস এখন গোপনভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে৷
ছবি: Mohamed Aldaher/REUTERS
কত সদস্য আছে?
বাঘুজে লড়াই শেষে ২০১৯ সালের মাঝামাঝি আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়াইরত মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট জানিয়েছিল, প্রায় তিন হাজার বিদেশিসহ সংগঠনে এখনও ১৪ থেকে ১৮ হাজার সদস্য আছে৷ তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, আইএস-এর অনেক স্থানীয় সদস্য হয়ত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছে৷ কিন্তু সুযোগ পেলেই তারা আবার আবির্ভূত হতে পারে৷
ছবি: Dabiq/Planet Pix via ZUMA Wire/ZUMAPRESS/picture alliance
তিনবছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় হামলা
সপ্তাহ দুয়েক আগে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের হাসাকা শহরের একটি জেলখানায় হামলা চালায় আইএস৷ সেখানে তাদের সদস্যদের বন্দি রাখা হয়েছিল৷ ঐ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করা কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস জানিয়েছে, হামলায় তাদের ৪০ জন সদস্য, কারাগারের ৭৭ জন নিরাপত্তা প্রহরী ও চারজন সাধারণ মানুষ প্রাণ হারান৷ আর ইসলামিক স্টেটের ৩৭৪ জন হামলাকারী বা বন্দি ঐ হামলায় নিহত হন৷
মার্কিন সরকারের সবশেষ প্রতিবেদন বলছে, গত তিন মাসে আইএস ইরাকে ১৮২টি ও সিরিয়ায় ১৯টি হামলা চালিয়েছে৷ আইএস এখনও প্রাণঘাতী ও জটিল হামলা চালাতে সক্ষম৷
ছবি: HUSSEIN FALEH/AFP/Getty Images
ভবিষ্যৎ কৌশল?
ইসলামিক স্টেটের পূর্বসূরি সংগঠনের নাম ছিল ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক৷ ২০০৭ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে স্থানীয়দের সঙ্গে মিলে যুক্তরাষ্ট্র ঐ সংগঠনকে ধ্বংস করে দিয়েছিল৷ এরপর ঐ সংগঠনের সদস্যরা গোপনে চলে গিয়েছিলেন৷ তারপর সুযোগ বুঝে সামনে এসেছিল তারা৷ এবারও কি সেই কৌশল নেবে তারা?
ছবি: SDF/AP photo/picture alliance
কী ছিল সেই কৌশল?
ইরাকে শিয়া নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় সুন্নিদের মধ্যে অসন্তোষ এবং সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের সুযোগ কাজে লাগিয়ে সামনে আসা শুরু করেছিল আইএস৷ ২০১২ ও ২০১৩ সালে ইরাকের বিভিন্ন কারাগারে হামলা চালিয়ে অনেক সদস্যকে মুক্ত করে তারা৷ একই সময়ে মানুষজনকে ভয় দেখিয়ে এবং চুরি, ছিনতাই ইত্যাদি উপায় ব্যবহার করে অর্থ সংগ্রহ করেছিল৷ এরপর ২০১৪ সালে মসুল ও ইরাকের উত্তরাঞ্চলের এক বিশাল এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল আইএস৷
ছবি: Dabiq/Planet Pix via ZUMA Wire/ZUMAPRESS/picture alliance
7 ছবি1 | 7
এফবিআই-এর এক আন্ডারকভার এজেন্টের কাছেই অস্ত্র কিনতে যায় নাসির এবং তার নাবালক সহযোগী। তারা দুটি একে ৪৭ রাইফেল এবং প্রচুর গুলি কিনতে চেয়েছিল। এভাবেই তাদের হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয় বলে এফবিআই জানিয়েছে। দাবি, জেরায় নাসির জানিয়েছে, পরিকল্পনা ছিল, নির্বাচনের দিন বড় জমায়েতে তারা গুলি চালাবে। প্রয়োজনে নিজেরাও 'শহিদ' হবে। নাসিরের সহযোগী যেহেতু নাবালক, তা-ই তার বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
এফবিআই জানিয়েছে, ২০২১ সালে বিশেষ ভিসায় নাসির আফগানিস্তান থেকে অ্যামেরিকায় এসেছে। এই বিশেষ ভিসা দেওয়া হয় তাদের, যারা আফগানিস্তানে সেনাবাহিনীতে কাজ করেছে অথবা অ্যামেরিকার সেনার দোভাষী হিসেবে কাজ করেছে। নাসির দোভাষী ছিল কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
মার্কিন গোয়েন্দাদের বক্তব্য, অ্যামেরিকার নির্বাচনে নাশকতার ছক এখনো কষা হচ্ছে। ছোট ছোট গোষ্ঠী এই কাজ করছে বলে তারা মনে করছে। নাসিরের কাছ থেকে আরো তথ্য মিলবে বলেই মনে করছেন গোয়েন্দারা।