দেশটিতে ইসলামী অভ্যুত্থানের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের খামেনেই বলেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্র অশুভ আত্মা দ্বারা পরিচালিত৷ আর ওরা প্রশ্ন করে, আমরা কেন বলি ‘অ্যামেরিকা নিপাত যাক'৷ যতদিন তারা তাদের ধূর্ত কাজকর্ম চালিয়ে যাবে, ততদিন আমরা এই শ্লোগান বাতিল করবো না৷''
এরপর খামেনেই শ্লোগানটির ব্যাখ্যা দেন৷ বলেন, ‘‘এই শ্লোগানের অর্থ কিছু মানুষ, যারা দেশ চালান, তারা নিপাত যাক৷ ‘অ্যামেরিকা নিপাত যাক' মানে (প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড) ট্রাম্প, (জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা) জন বল্টন আর (স্বরাষ্ট্র সচিব মাইক) পম্পেও নিপাত যাক৷ অর্থাৎ অ্যামেরিকার শাসকদের মৃত্যু হোক৷''
৭৯ বছর বয়সি খামেনেই বলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র একটি ধূর্ত শত্রু৷ তারা জিওনিস্ট (ইসরাইল) ও আরবের প্রতিক্রিয়াশীল শাসকদের (সৌদি আরব ও আরব উপসাগরীয় অঞ্চল) সঙ্গে যুক্ত৷
‘‘ইয়েমেন একটি উদাহরণ৷ সৌদি আরব সেখানে ক্রমাগত অপরাধ করে চলেছে৷ তাদের এই অপরাধের সহযোগী যুক্তরাষ্ট্র,'' বলেন তিনি৷ ‘‘তারা হাসপাতাল, বাজার ও জনসমাগমে হামলা করে৷ তারা অপরাধী৷ এটাই যুক্তরাষ্ট্রের চেহারা৷''
সম্প্রতি ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে এবং ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুণরায় আরোপ করেছে৷
তাঁর সাম্প্রতিক স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন ভাষণেও ইরান প্রসঙ্গ ছিল৷ ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমার প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েই সন্ত্রাসের সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক ইরানের মৌলবাদী শাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে৷''
‘‘আমরা এমন শাসকগোষ্ঠীর দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নেবো না, যারা অ্যামেরিকার মৃত্যু কামনা করে এবং ইহুদিদের বিরুদ্ধে গণহত্যার হুমকি দেয়,'' ট্রাম্প বলেন৷
পরমাণু চুক্তি সই করা ইউরোপের দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্র সরে যাবার পরও চুক্তিটি বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে৷ তবে তারাও ইরানের ব্যালিস্টিক মিসাইল প্রোগ্রাম এবং মধ্যপ্রাচ্যে তাদের কর্তৃত্ব রাখার প্রক্রিয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে৷
খামেনেই বলেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো ইউরোপকেও ‘বিশ্বাস করা যায় না'৷
৭০-এর দশকে শিয়া অধ্যুষিত ইরানে মুহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভির শাসনে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ইরানের জনগণ৷ সেই ক্ষোভের সুযোগ নিয়ে ধর্মীয় নেতা ইমাম খোমেনী ১৯৭৯ সালে অভ্যুত্থান ঘটান৷ ছবিতে তারই কিছু দৃশ্য...
ছবি: picture-alliance/AP Photo/V. Salemiইরানের শাসক রেজা শাহ পাহলভির একনায়কতন্ত্র ও অত্যাধিক আমেরিকাপ্রীতিকে বিপ্লবের বীজ বপনের কারণ বলে মনে করেন অনেক বিশ্লেষক৷ ইরানের হাজার বছরের সংস্কৃতিতে পশ্চিমা, বিশেষত মার্কিন আগ্রাসনকে মেনে নিতে পারেনি দেশটির জনগণ৷ সে কারণেই খোমেনিকে সমর্থন দিয়েছেন হাজারো জনগণ৷
ছবি: picture-alliance/Everett Collectionইরানের শেষ সম্রাট রেজা শাহ পাহলভি৷ পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজতন্ত্রের বংশধর ছিলেন তিনি৷ তাঁর বংশ আড়াই হাজার বছরের পুরোনো পারস্য রাজতন্ত্রের ধারক ছিল৷ ১৯৫৩ সালে জনভোটে বিজয়ী প্রধানমন্ত্রী মোসাদ্দেককে হটিয়ে ব্রিটিশ ও মার্কিন মদতে সর্বময় ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম করেন রেজা শাহ পাহলভি৷ ৬৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করেন।
ছবি: picturealliance/AP Photoঅ্যামেরিকার পাপেট বা পুতুল বলে পরিচিত ছিলেন রেজা শাহ পাহলভি৷ তাঁর শাসনামলে ইরানের সংস্কৃতিগত সংকটের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সংকটও পরিলক্ষিত হচ্ছিল৷ বিশেষ করে তেল ব্যবসায় প্রায় একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণে ছিল ব্রিটিশ ও অ্যামেরিকান কোম্পানি৷ সংস্কৃতিগত অবক্ষয়ে ধর্মপ্রাণ ইরানি মুসলমানদের মধ্যে রাজতন্ত্রবিরোধী ক্ষোভ দানা বাঁধে৷
ছবি: picture-alliance/akg-images/H. Vassal৪০ বছর আগে আয়াতোল্লাহ খোমেনি ফ্রান্সে তাঁর নির্বাসিত জীবন শেষে ইরানে ফিরে ইসলামি বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন৷ খোমেনি ছিলেন ইরানের ধর্মীয় নেতা৷ ১৯৭৮ সালে আয়াতোল্লাহ খোমেনি ইরাকে শিয়াদের পবিত্র নগরী নাজাফে কড়া পাহারায় নির্বাসিত ছিলেন৷ পরে ইরাক থেকে তাঁকে বিতাড়িত করা হয়৷ তখন তিনি ফ্রান্সে আশ্রয় নেন এবং পরে ইরানের বিপ্লবে ভূমিকা রাখেন৷
ছবি: Imago/Zuma/Keystone১৯৭৮ সালের ৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার তেহরানে শাহবিরোধী এক বিশাল জনসমাবেশ হয়৷ সেদিন শাহের বাহিনী নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে কয়েকশ’ বিক্ষোভকারীকে৷ সেই সমাবেশে ৬০-৭০ লাখ জনসমাগম হয়৷ ইরানের বিপ্লবের পর সেই দিনটিকে ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ নাম দেওয়া হয়৷
ছবি: akairan.com১৯৭৯ সালের ১৬ জানুয়ারি পালিয়ে যান শাহ৷ এর আগে জনবিক্ষোভের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে ৪ জানুয়ারি তিনি প্রধানমন্ত্রী শাপর বখতিয়ারকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ঘোষণা করেন৷ শাহ পালিয়ে পরিবারসহ তিনি মিশরে চলে যান৷
ছবি: akairan.com১৯৭৯ সালের জানুয়ারি মাসেই নির্বাসিত খোমেনিকে দেশে ফেরার অনুমতি দেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান শাপর বখতিয়ার৷ ১৫ বছর নির্বাসনে কাটিয়ে ১ ফেব্রুয়ারি দেশে ফেরেন খোমেনি৷ সেই সময় বিমানবন্দরে লাখো লোক তাঁকে স্বাগত জানান৷
ছবি: akairan.com১৯৭৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারিতে ইমাম খোমেনির নেতৃত্বে শাহের ক্ষমতাসীন প্রশাসনকে হটানো হয়৷ সেই সময় ইসলামী বিপ্লবের প্রধান নেতা হিসেবে প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন খোমেনি৷ এরপর থেকেই ১১ ফেব্রুয়ারিকে ইরানের বিপ্লব দিবস হিসেবে পালন করা হয়৷
ছবি: atraknews.comইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের মাত্র দুই মাস পর ৩০ মার্চ দেশটিতে এক ঐতিহাসিক গণভোট অনুষ্ঠিত হয়৷ ওই গণভোটের মাধ্যমে ইরানের জনগণ ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে রায় দেন৷ সেই সময় ইসলামী প্রজাতন্ত্রের পক্ষে ৯৮ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পড়েছিল৷ এরপর ১৯৭৯ সালের ১ এপ্রিল ইরানকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/V. Salemi জেডএ/এসিবি (এপি, এএফপি)