নিষেধাজ্ঞা না তুললে অ্যামেরিকার সঙ্গে বৈঠক নয়, রোববার স্পষ্ট জানিয়ে দিল ইরান।
বিজ্ঞাপন
অ্যামেরিকার আলোচনার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিল ইরান। ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সঙ্গে নিয়ে ইরানের সঙ্গে বৈঠক করতে চেয়েছিল অ্যামেরিকা। পরমাণু চুক্তি নিয়ে সেখানে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। ইরান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, অ্যামেরিকা তাদের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা না তুললে কোনো রকম আলোচনায় বসা সম্ভব নয়।
পরমাণু চুক্তি এবং তা ঘিরে অ্যামেরিকার নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কড়া অবস্থান নিয়েছে ইরান। জো বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে ইরান একের পর এক চরম সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। একদিকে যেমন দেশে ইউরেনিয়ামের মজুত বাড়ানো হয়েছে, তেমনই পরমাণু কেন্দ্রগুলির ছবি জাতিসংঘকে দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাদের বক্তব্য, ২০১৮ সাল থেকে অ্যামেরিকা তাদের উপর যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, তা দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে।
ইরান পরমাণু চুক্তি কী ও কেন?
অ্যামেরিকা একতরফাভাবে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি বাতিল করলেও বাকি স্বাক্ষরকারী দেশগুলি চুক্তি মেনে চলতে বদ্ধপরিকর৷ ‘জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন’ নামের এই চুক্তির প্রধান শর্তগুলি কী?
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Neubauer
পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ?
২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ইরান শুধু পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা চালাতে পারবে না৷ তবে আন্তর্জাতিক নজরদারির মধ্যে শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি চালু রাখার অধিকার সে দেশের রয়েছে৷ অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চিকিৎসার মতো ক্ষেত্রে পরমাণু শক্তি কাজে লাগানো যেতে পারে৷
ছবি: Getty Images/IIPA
ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ
চুক্তির প্রথম আট বছরে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের সীমা মেনে চলতে রাজি হয়েছিল৷ সেইসঙ্গে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত গবেষণাও বন্ধ থাকবে৷ আন্তর্জাতিক পরমাণু জ্বালানি সংস্থা আইএইএ ইরানের কার্যকলাপের উপর নজর রেখে চলেছে৷ জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন, চীন ও রাশিয়া এক্ষেত্রে আইএইএ-র মূল্যায়নকেই গুরুত্ব দিয়ে আসছে৷
ছবি: Kazem Ghane/AFP/Getty Images
পরমাণু ভাণ্ডারের ভবিষ্যৎ
চুক্তির আওতায় ইরান ৩,৬৭ শতাংশ সমৃদ্ধকৃত ইউরেনিয়ামের ভাণ্ডার ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর অঙ্গীকার করেছিল৷ অর্থাৎ ১৫ বছরের জন্য ৩০০ কিলোগ্রামের বেশি এমন মানের ইউরেনিয়াম ইরানের হাতে থাকার কথা নয়৷ ফলে পরমাণু অস্ত্র তৈরির পথ আপাতত বন্ধ থাকছে৷
ছবি: BEHROUZ MEHRI/AFP/Getty Images
নিষেধাজ্ঞা শিথিল
ইরান শর্ত পূরণ করার পরিবর্তে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সে দেশের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল৷ ফলে ইরান আবার আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোলিয়াম বিক্রি ও আন্তর্জাতিক অর্থ বাজারে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছিল৷ অ্যামেরিকার চাপের মুখে সেই সুবিধা হাতছাড়া করতে চায় না ইরান৷
ছবি: FARS
চুক্তিভঙ্গের পরিণতি
পরমাণু কর্মসূচির উপর আন্তর্জাতিক নজরদারির ফলে একটি পরমাণু বোমা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান তৈরি করতে ইরানের কমপক্ষে এক বছর লাগবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন৷ সে রকম প্রচেষ্টা চালালে আবার সে দেশের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর বিধান মেনে নিয়েছে ইরান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Jenis
চুক্তির মেয়াদ শেষের অবস্থা
সমালোচকরা বার বার চুক্তির ‘সানসেট ক্লজ’ বা মেয়াদ শেষের অবস্থার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকেন৷ তাদের অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ লক্ষ্যে পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা সত্ত্বেও ইরান চুক্তির মেয়াদ শেষে আবার অস্ত্র তৈরির কাজ শুরু করবে৷ তবে চুক্তির প্রবক্তারা মনে করিয়ে দেন, যে বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপের উপর ১০, ১৫, ২০ বা ২৫ বছর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকবে৷
ছবি: Fars
ক্ষেপণাস্ত্র ও আঞ্চলিক প্রভাব
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকরা ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির বাড়বাড়ন্ত ও মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে সে দেশের প্রভাব প্রতিপত্তির কড়া সমালোচনা করেন৷ ইউরোপসহ অন্যান্য অনেক দেশও বিষয়ে একমত৷ তবে ‘সফল’ পরমাণু চুক্তি বাতিল করার বদলে তা কাজে লাগিয়ে ইরানের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চায় তারা৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
7 ছবি1 | 7
পরমাণু চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনায় রাজি বাইডেনের প্রশাসন। কিন্তু ইরানের উপর থেকে এখনই নিষেধাজ্ঞা তোলার ব্যাপারে প্রস্তুত নয় বাইডেন সরকার। তারা আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধান সূত্রে পৌঁছাতে চায়। কিন্তু ইরান কোনোরকম আলোচনায় যেতে রাজি নয়। তাদের স্পষ্ট বক্তব্য, অ্যামেরিকা নিষেধাজ্ঞা না তোলা পর্যন্ত তারা কোনো রকম আলোচনায় যাবে না। রোববার ইরানের পরারাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনায় ইরানও আগ্রহী। কিন্তু তার আগে নিষেধাজ্ঞা তুলতে হবে।
ইরান আলোচনায় রাজি না হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই হতাশ ওয়াশিংটন। তবে বাইডেন সরকারের মুখপাত্র জানিয়েছেন, আবার আলোচনার জন্য প্রস্তুত অ্যামেরিকা। আলোচনার মাধ্যমেই জট কাটাতে হবে।
ইরান জানিয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিক জোসেপ বরেলের সঙ্গে তাদের আলোচনা জারি থাকবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মানি, রাশিয়া, ফ্রান্সের মতো দেশগুলির সঙ্গে আলোচনায় তাদের আপত্তি নেই। কিন্তু অ্যামেরিকা আলোচনার টেবিলে বসতে চাইলে আগে তাদের নিষেধাজ্ঞা তুলতে হবে।
ইরানের এই চাপের সামনে অ্যামেরিকা কী কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয়, সেটাই এখন দেখার। কারণ, পরমাণু চুক্তি নিয়ে অ্যামেরিকার উপর আগেই চাপ তৈরি করেছিল ইইউ।