অ্যামেরিকার স্কুলে আবার বন্দুকধারীর হামলা। এবার এক নারী গুলি চালিয়ে তিনজন বাচ্চা ও তিন বয়স্ক মানুষকে হত্যা করেছে।
ছবি: Kevin Wurm/REUTERS
বিজ্ঞাপন
সোমবার এই ঘটনাটি ঘটেছে অ্য়ামেরিকার ন্যাশভিল শহরে। আক্রমণকারী নারীর কাছে দুইটি সেমি-অটোমেটিক রাইফেল ও একটি হ্যান্ডগান ছিল। পুলিশ জানিয়েছে, ওই নারীও পুলিশের গুলিতে মারা গেছে।
স্কুলের নকশা ছিল
আক্রমণকারী নারীর কাছে ওই স্কুলের পুরো নকশা ছিল। হাতে আঁকা ওই নকশায় কোথা দিয়ে স্কুলে ঢোকা যায় তা দেখানো ছিল। ওই নারীর পরিচয় কী, পুলিশ এখন খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।
ঘটনার পর বাচ্চাদের স্কুল থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: Jonathan Mattise/AP/picture alliance
এই কনভেন্ট স্কুলে প্রিস্কুল থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস হয়। প্রায় দুইশ ছাত্রছাত্রী সেখানে পড়ে। যে তিনজন পড়ুয়া গুলিতে মারা গেছে, সকলের বয়স নয় বছর। এছাড়া স্কুলের তিনজন কর্মীও মারা গেছেন।
ন্যাশভিলের পুলিশ প্রধান জন ড্রেক বলেছেন, ''বাচ্চাদের দেখে আমি চোখের জল সামলাতে পারিনি।'' তিনি জানিয়েছেন, ''আক্রমণকারী নারী ওই স্কুলেরই ছাত্রী ছিল। তার কাছে কিছু কাগজপত্র পাওয়া গেছে। সেগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই দিনের সঙ্গে ও স্কুলের কোনো ঘটনার সঙ্গে তার কোনো যোগ ছিল কি না, তাও দেখা হচ্ছে।''
খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত স্কুলে পৌঁছয়। ছবি: Andrew Nelles/The Tennessean/AP/picture alliance
শহরের মেয়র জন ড্রেক বলেছেন, খুবই দুঃখের ঘটনা। পুরো শহর শোকপালন করছে।
বাইডেনের আবেদন
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মার্কিন কংগ্রেসকে বলেছেন, ''এবার অন্তত অস্ত্র আইন কড়া করা হোক।'' বাইডেনের প্রেস সেক্রেটারি বলেছেন, ''আর কতজন বাচ্চাকে এভাবে হত্য়া করা হবে, তারপর রিপাবলিকানরা উদ্য়োগী হবে এবং অ্যাসল্ট অস্ত্রের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে।''
কে-২ স্কুল ডেটাবেস জানাচ্ছে, ২০২৩ সালে এখনো পর্যন্ত ৮৯ বার অ্য়ামেরিকার স্কুলে গুলি চলেছে। যখনই কোনো স্কুল চত্বরে গুলি চলে, তখনই তা স্কুলে গুলির ঘটনা বলে চিহ্নিত করে এই সংস্থা।
গতবছর ৩০৩ বার স্কুলে গুলি চলেছিল। ১৯৭০ সাল থেকে এই সংস্থা হিসাব রাখছে। তাদের হিসাব বলছে, গতবছর সবচেয়ে বেশি স্কুলে গুলির ঘটনা ঘটেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে স্কুলে গুলির ঘটনায় মামলা ও তার পরিণতি
যুক্তরাষ্ট্রে স্কুলে গুলির ঘটনায় বিভিন্ন সময় মামলা হয়েছে৷ এসব মামলার রায় কী হয়েছে, জানবো ছবিঘরে৷
দুই শিক্ষার্থীর হামলায় এক শিক্ষকসহ ১৩ জন নিহত হয়েছিল৷ এরপর স্থানীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা হয়েছিল৷ কিন্তু সরকারি ইমিউনিটির কারণ দেখিয়ে প্রায় সবগুলোই খারিজ করে দেয়া হয়৷ শুধু পুলিশের বিরুদ্ধে নিহত শিক্ষকের মেয়ের করা মামলাটি চলেছিল৷
ছবি: MARK LEFFINGWELL/AFP/Getty Images
আপস
শিক্ষকের মেয়ের অভিযোগ ছিল, হামলাকারীদের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পরও পুলিশ তার বাবার চিকিৎসা করতে চিকিৎসকদের সেখানে যেতে দেয়নি৷ মামলাটি সাড়ে ১৩ কোটি টাকায় রফা হয়েছিল৷ নিহতদের পরিবারেরাও দুই হামলাকারীর পরিবার ও হামলাকারীদের বন্দুক পেতে সহায়তা করা দুই ব্যক্তির সঙ্গে ২২ কোটি ৪০ লাখ টাকায় আপস করেছিল৷
ছবি: BOULDER DAILY CAMERA/AFP/Getty Images
রেড লেক সিনিয়র হাইস্কুল, মিনেসোটা, ২০০৫
সাবেক শিক্ষার্থী জেফ ওয়াইজের হামলায় সাতজন প্রাণ হারিয়েছিলেন৷ আহত হয়েছিলেন কয়েকজন৷ হতাহতদের পরিবার স্থানীয় স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নয় কোটি ও স্কুলে সংকটকালীন সমস্যা মোকাবিলার পরিকল্পনা তৈরি করা একটি কোম্পানির সঙ্গে ১৩ কোটি টাকায় আপস করেছিল৷
ছবি: JEFF HAYNES/AFP/Getty Images
ভার্জিনিয়া টেক ইউনিভার্সিটি, ২০০৭
শিক্ষার্থী সেয়ুং-হুইয়ের হামলায় ৩২ জন নিহত হয়েছিলেন৷ আহত ২৩ জন৷ হতাহতদের মধ্যে কয়েকজনের পরিবার স্কুলের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল৷ কিন্তু ২০১৩ সালে ভার্জিনিয়া সুপ্রিম কোর্ট রায় দেন যে, তৃতীয় পক্ষের কার্যক্রম সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সতর্ক করার আইনি দায়িত্ব স্কুলের নয়৷
ছবি: Tannen Maury/dpa/picture-alliance
স্যান্ডি হুক এলিমেন্টারি স্কুল, কানেক্টিকাট, ২০১২
অ্যাডাম লানজার গুলিতে ছয় ও সাত বছর বয়সি ২০ জন শিশু ও ছয়জন স্টাফ প্রাণ হারান৷ নিহত পাঁচ শিশু ও চার স্টাফের পরিবার হামলায় ব্যবহার করা বুশমাস্টার এআর-১৫ রাইফেল প্রস্তুতকারক রেমিংটন আর্মসের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল৷ পরে সেটি সাড়ে ছয়শ কোটি টাকায় রফা হয়েছিল৷ যুক্তরাষ্ট্রে গুলির ঘটনায় কোনো অস্ত্র প্রস্তুতকারকের আপসে যাওয়ার এটিই প্রথম ঘটনা৷
সাবেক শিক্ষার্থী নিকোলাস ক্রুজের হামলায় তিনজন স্টাফ ও ১৪ জন শিক্ষার্থী প্রাণ হারান৷ হামলার সময় স্কট পেটারসন নামের এক পুলিশ কর্মকর্তা স্কুলে দায়িত্বরত অবস্থায় ছিলেন৷ কিন্তু গোলাগুলি চলার সময় তিনি বাইরে থাকায় ব্যাপক সমালোচিত হন৷ পরে তার বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার মামলা করা হয়৷ এ বছরের শেষে বিচার শুরু হওয়ার কথা৷
ছবি: WPLG-TV/dpa/picture-alliance
সান্তা ফে হাইস্কুল, টেক্সাস, ২০১৮
শিক্ষার্থী দিমিত্রিয়স প্যাগুর্টজিসের শটগান ও রিভলবার দিয়ে চালানো হামলায় ১০ জন নিহত ও ১৩ জন আহত হন৷ নিহত দুইজনের পরিবার হামলাকারীর পরিবারের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিরাপদে না রাখার অভিযোগে মামলা করেছে৷ এছাড়া বয়স পরীক্ষা করে না দেখে অস্ত্র বিক্রি করায় অস্ত্র বিক্রির অনলাইন পোর্টাল লাকিগানার ডটকমের বিরুদ্ধেও মামলা করেছে নিহত কয়েকজনের পরিবার৷ দুটি মামলারই প্রক্রিয়া শুরুর অপেক্ষায় আছে৷