মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন শহরে বাংলাদেশিরা শাহবাগের আন্দোলনের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছেন৷ তারই কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন অধ্যাপক রাগিব হাসান৷
বিজ্ঞাপন
শাহবাগের চেতনা আজ দেশের সীমানা পেরিয়ে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে৷ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসরত বাংলাদেশের মানুষ নানা ভাবে নিজেদের এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত করছেন৷ অ্যামেরিকাও ব্যতিক্রম নয়৷ সেখানকার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানালেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ অ্যালাবামা অ্যাট বার্মিংহাম' এর কম্পিউটার অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্সেস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাগিব হাসান৷
জার্মানিতে শাহবাগের ঢেউ
শাহবাগের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে জার্মানির বিভিন্ন শহরে আয়োজন করা হয়েছে এবং হচ্ছে প্রতিবাদ সমাবেশ৷ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে জার্মানি প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজিত এসব প্রতিবাদের খবর ছবিসহ যোগ করা হয়েছে এই ছবিঘরে৷
ছবি: Sams ul Arefin
‘যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই’
শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে যে জনসমুদ্র গর্জে ঘটেছে, তার ঢেউ আছড়ে পড়ছে গোটা দুনিয়ায়৷ জার্মানি বাদ থাকবে কেন? একের পর এক শহরে আয়োজন করা হচ্ছে সমাবেশ, মানববন্ধন৷ দাবি একটাই, ‘যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই’৷
ছবি: DW/A. Islam
বনে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি, জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি
কনকনে শীত৷ তার তোয়াক্কা না করেই গত ১৯শে ফেব্রুয়ারি জার্মানির বন শহরে জাতিসংঘের কার্যালয়ের সামনে সমবেত তাঁরা৷ তাঁদের কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, অধ্যাপক, ছাত্র, কেউবা হোটেল-রেস্তোরাঁয় কাজ ফেলে আসা বাংলাদেশি৷ বন শহরের নানা প্রান্ত থেকে তাঁরা ছুটে এসেছেন সারা বিশ্বে একটা দাবিকে ছড়িয়ে দিতে, ‘‘একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই৷''
ছবি: DW/A. Chakraborty
কোলোন ক্যাথিড্রালের সামনে শাহবাগ সমাবেশ
জার্মানির অন্যান্য শহরের মতো বন শহরের কাছেই কোলোনে গত ১৬ই ফেব্রুয়ারি বেলা তিনটেয় সমবেত হন সেই বাঙালিরা, যাদের মন রাজীবের হত্যাকাণ্ডে ক্ষুব্ধ, ভারাক্রান্ত, কিন্তু কণ্ঠে শাহবাগের সোচ্চার দাবি৷ সংগঠকদের মধ্যে অন্যতম, কোলোন ইউনিভার্সিটি অফ অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সেস'র আইটিটি প্রতিষ্ঠানের গবেষক এবিএম ফিরোজ ডয়চে ভেলেকে বলেন, রাজীবের হত্যাকাণ্ড তাঁদের আরো অনুপ্রাণিত করেছে৷
ছবি: Firoz
মিউনিখে প্রতিবাদ
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় মিউনিখে বসবাসরত বাংলাদেশিরা ম্যুনশনার ফ্রাইহাইটে সমবেত হন৷ উদ্দেশ্য শাহবাগের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ৷ এসময় তাঁরা রাজাকারদের মৃত্যুদণ্ড এবং জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবি জানান৷
ছবি: M. Rahman
প্রতিবাদ ম্যোনশেনগ্লাডবাখে
জার্মানির ম্যোনশেনগ্লাডবাখ শহরে ১৩ই ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেন একদল বাংলাদেশি শিক্ষার্থী৷ এই সমাবেশ থেকে কাদের মোল্লা এবং অন্যান্য যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড প্রদানের দাবি জানানো হয়েছে৷
ছবি: Rajib Ahmed
এসেন ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ
জার্মানিতে বর্তমানে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেড় হাজারের মতো৷ বিদায়ী রাষ্ট্রদূত মসূদ মান্নান জানিয়েছেন এই তথ্য৷ এই শিক্ষার্থীরা ছড়িয়ে আছেন বিভিন্ন শহরে৷ গত ১০ই ফেব্রুয়ারি ডুইসবুর্গ-এসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এসেন ক্যাম্পাসে একটি সমাবেশের আয়োজন করে শিক্ষার্থী, পেশাজীবীরা৷
ছবি: Sams ul Arefin
‘একাত্মতা ঘোষণা করছি’
ডুইসবুর্গ-এসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এসেন ক্যাম্পাসে আয়োজিত সমাবেশের অন্যতম আয়োজক শামস-উল-আরেফিন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘যুদ্ধাপরাধী, রাজাকারদের পূর্ণাঙ্গ শাস্তির দাবিতে এক সপ্তাহ আগে ঢাকার শাহবাগে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তার সঙ্গে আমরা জার্মানিতে বসবাসরত বাংলাদেশিরা একাত্মতা ঘোষণা করছি৷’’
ছবি: Sams ul Arefin
সমাবেশ ফ্রাঙ্কফুর্টে
ফ্রাঙ্কফুর্টে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গত ১০ ফেব্রুয়ারি আয়োজিত সমাবেশের ছবি আমরা পাইনি৷ তবে এই আয়োজন সম্পর্কে ফেসবুকে রয়েছে বিস্তর তথ্য৷ আয়োজকরা সেখানে লিখেছেন, ‘ঐকান্তিক ইচ্ছা আর কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে চলার মানসিকতায় উদ্বুদ্ধ হতে পারলে আমরা বিশ্বাস করি ঘৃণা আর প্রতিরোধের আগুন সবখানে, সবসময়েই জ্বালিয়ে দেওয়া সম্ভব৷’
ছবি: Sams ul Arefin
পেছনের কাজ
প্রতিবাদ জানাতে প্রয়োজন হয় লিফলেট, ব্যানার, পোস্টার৷ জার্মানিতে বাংলা ভাষায় সেসব কি আর সহজে মেলে? শিক্ষার্থীরা তাই নিজেরাই নেমে পড়লেন কলম, পেন্সিল, তুলি নিয়ে৷ ছবিতে মুঠোফোন থেকে দেখে দেখে কাগজে রাজাকারের প্রতিকৃতি আঁকছেন এক আন্দোলনকারী৷
ছবি: Adnan Sadeque
আরো প্রতিবাদ কর্মসূচি
জার্মানির ফ্রাইবুর্গ, মিউনিখ, উল্ম, বার্লিন, ব্রেমেনে প্রতিবাদ কর্মসূচি আয়োজন করা হচ্ছে বা হবে৷ এব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য আমাদের কাছে নেই৷ তবে প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজকরা চাইলে ‘Arafatul.Islam@dw.de’ ঠিকানায় ছবিসহ বিস্তারিত তথ্য পাঠাতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/AP
10 ছবি1 | 10
তিনি জানালেন, অ্যামেরিকায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন প্রয়াসের মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছেন৷ তারা শাহবাগের প্রতি সংহতি প্রদর্শন করছেন৷ মার্কিন ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমেও তারা সচেতনতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন৷ এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটি তারাও নিজস্ব উদ্যোগে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে৷
ফেসবুক, টুইটার, ব্লগ সহ সোশাল মিডিয়ার ক্ষেত্রেও শাহবাগ আন্দোলনের অভিঘাতের উল্লেখ করেন অধ্যাপক রাগিব হাসান৷ মিশরের ‘আরব বসন্ত'এর ক্ষেত্রে সোশাল মিডিয়া যেমন বড় ভূমিকা রেখেছিলো, এ ক্ষেত্রেও সেটা ঘটছে৷ ফেসবুকে শাহবাগ আন্দোলন সংক্রান্ত একাধিক ‘পাতা' রয়েছে৷ তাতে আন্দোলনের সব খবরাখবর নিয়মিত দিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ এছাড়া টুইটারে #shahbag হ্যাশট্যাগ-কে কেন্দ্র করেও তথ্যের অবাধ আদান-প্রদান চলছে৷ এছাড়া সাহবাগ চত্বর থেকে সরাসরি অডিও ও ভিডিও সম্প্রচারও সারা বিশ্বে বাংলাদেশিদের প্রেরণা জোগাচ্ছে৷
হোয়াইট হাউস-এর ওয়েবসাইটে ‘পিটিশন' বা আবেদনের মাধ্যমে মার্কিন প্রশাসন তথা প্রেসিডেন্টের নজরে বিষয়টি আনার প্রচেষ্টাও শুরু হয়েছে৷ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যথেষ্ট স্বাক্ষর সংগ্রহ করা গেলে এই উদ্যোগও সফল হবে৷
অধ্যাপক রাগিব হাসান আরও জানালেন, অ্যামেরিকার বিশ্ববিদ্যালয় মহলে যুদ্ধাপরাধ বিরোধী শক্তির দৌরাত্ম্য কম৷ তবে নিউ ইয়র্ক ও মিশিগানে জামায়াত-শিবিরের প্রতি কিছু সমর্থন লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷