মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাজেট নিয়ে অচলাবস্থার কারণে ইউরোপের পুঁজিবাজারও বেশ আশঙ্কায় ভুগছে৷ তবে জার্মানি সহ ইউরো এলাকায় অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সামান্য উন্নতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে৷ এর পরেও অবশ্য বিপদ এখনও পুরোপুরি কাটেনি৷
বিজ্ঞাপন
সপ্তাহের শুরুতে ইউরোপের পুঁজিবাজার এতটাই কাহিল হয়ে পড়েছিল, যেমনটা গত এক মাসে আর দেখা যায়নি৷ তবে এর মূল কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাজেট নিয়ে অচলাবস্থা, যার প্রভাব গোটা বিশ্বের বাজারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে৷ দুই দলের বোঝাপড়ার ভিত্তিতে ১৭ই অক্টোবরের মধ্যে এই অচলাবস্থা না কাটলে অ্যামেরিকা কার্যত দেউলিয়া হয়ে পড়তে পারে৷ তাই বিপদ এখনো কাটেনি৷ ইউরোপের এয়ারবাস কোম্পানি জাপান থেকে বিশাল অর্ডার পাওয়ায় তাদের শেয়ারের মূল্য বেড়ে গেছে৷ ফলে ইউরোপের পুঁজিবাজার ধাক্কা কিছুটা সামলাতে পেরেছে৷
ইউরো এলাকার নিজস্ব পরিস্থিতির উন্নতি ধীরে হলেও অব্যাহত রয়েছে৷ এর একটা সিংহভাগই অবশ্য জার্মানির কারণে ঘটছে৷ জুলাই মাসের তুলনায় সে দেশের রপ্তানি প্রায় ১ শতাংশ বেড়েছে৷ নির্বাচনের পর নতুন সরকার গড়ার ক্ষেত্রে অবশ্য জার্মানিতে এখনো কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না৷ এমনকি এই প্রক্রিয়া আরও দীর্ঘ হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে৷ তবে নতুন কোনো বড়ো সিদ্ধান্ত নিতে না পারলেও বিদায়ী সরকার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে৷ ফলে দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় কোনো বিঘ্ন ঘটছে না৷ জার্মানির এই পরিস্থিতির কারণে ইউরোপীয় স্তরে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হচ্ছে৷
‘‘জার্মান সরকারের কাছে আমার সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা’’
ম্যার্কেলের নতুন সরকারের কাছে জনগণের অনেক প্রত্যাশাই রয়েছে৷ সেরকমই কিছু প্রত্যাশার কথা জানা যাক এই ছবিঘরের মাধ্যমে৷
ছবি: DW/E. Shoo
হাইনরিশ নেটেকোভেন (৫৯), ফুল বিক্রেতা
আসলে জার্মানিতে আমরা ভালোই আছি৷ তবে ভালো হতো যদি জার্মান সরকার করদাতাদের টাকাটা অন্যভাবে খরচ করতো৷ এখানে রাস্তার দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা দেখে খারাপ লাগে৷ গ্রিসের মতো কোনো দেশকে যদি জার্মানি সাহায্য করে, তাহলে সে টাকাটা আমাদের জন্য হারিয়ে যায়৷ এসব দেশকে সাহায্য করা দরকার তা ঠিক৷ তবে গ্রিসের সমস্যার জন্য গ্রিসের জনগণই দায়ী, কারণ তারাই তো কর আদায় করে না৷
ছবি: DW/E. Shoo
সারা কেটার (২৮), শিশুদের ডাক্তার
সরকারের কাছে আমার প্রত্যাশা, যেন স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে আরো বেশি কর্মী নিয়োগ এবং কাজের নির্ধারিত সময় ঠিক করে দেওয়া হয়৷ আমাদের ক্ষেত্রে ওভারটাইম ব্যতিক্রম কিছু নয়, বরং তা একেবারেই সাধারণ ব্যাপার৷
ছবি: DW/E. Shoo
জারকাস ইব্রাহিম (৫৩), ট্যাক্সিচালক
আমার প্রত্যাশা, জার্মানিতে আরো বেশি কর্মসংস্থান হবে৷ এখানে সিস্টেমটা এমন যে, তুমি বড় কেউ হলে আরো বড় হতে পারো, অথবা তুমি ছোট বলে কিছুই হবার সুযোগ নেই৷ আগে আমি বেশ কয়েক জায়গায় চাকরি করেছি এবং সবগুলোই হারিয়েছি৷ শেষ পর্যন্ত আমি বাধ্য হয়ে নিজে ব্যবসা করছি, শুধুমাত্র বেঁচে থাকার জন্য৷
ছবি: DW/E. Shoo
মারিয়ো প্লেটাউ (৪২), বেকার
আমার প্রত্যাশা যে, জার্মানিতে করদাতাদের টাকাটা যেন জার্মানির জন্য খরচ করা হয় – ব্যাংক বা অন্য কোনো দেশকে না দেওয়া হয়৷ অন্য দেশকে সাহায্য করা যেতে পারে, তবে এতো বিশাল অঙ্কের টাকা দিয়ে নয়৷ সরকারের উচিত আমাদের টাকা শিক্ষা, শিশু এবং বয়স্কদের জন্য খরচ করে দায়িত্ববোধের পরিচয় দেওয়া৷ যাঁরা যুদ্ধের পর দেশকে পুনর্গঠন করেছেন, তাদের এখন মাসে ৬০০ থেকে ৭০০ ইউরো অবসরভাতা পাওয়া উচিত৷
ছবি: DW/E. Shoo
নাদিন সাসেনরাট (৪৪), শিক্ষক
আমার প্রত্যাশা, সরকার পরিবর্তনের ফলে যেন শিক্ষাক্ষেত্রে আরো বেশি টাকা ব্যয় করা হয়৷ এই মুহূর্তে আমরা দেখছি যে, সাধারণ এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের ক্লাসে অত্যন্ত কম অর্থ ব্যয় করা হয়৷ শিক্ষাক্ষেত্রের জন্য কম অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে৷ আমার প্রত্যাশা হলো, যে সব শিশুরা স্বাভাবিক নয়, তাদের জন্য একটু বেশি টাকা ব্যয় করতে হবে৷
ছবি: DW/E. Shoo
মার্গারেটে ভ্যুস্টেনফেল্ড (৮০) অবসরপ্রাপ্ত নারী
আমি চাই, অবসরভাতা বাড়ানো হোক৷ গতবার এতোটাই কম বেড়েছে, যে তা কোনো কাজে আসেনি৷ আমি আমার সময়ে দু’বছর ট্রেনিং করার পর খুবই অল্প বেতনে অফিসে চাকরি করেছি৷ পাঁচ বছর কাজ করার পর চাকরি ছেড়ে দিতে হয়েছে আমাকে বিয়ে এবং অন্য শহরে চলে যাওয়ার কারণে৷ আমার স্বামী চায়নি যে আমি চাকরি করি৷ আজ আমি খুবই কম অবসরভাতা পাচ্ছি এবং বিধবা হিসেবেও আমার স্বামীর অবসরভাতা থেকেও যা পাই, সেটাও খুবই সামান্য৷
ছবি: DW/E. Shoo
আনেমারি ক্যুন (১৯) সাবিনা নুহি (২১)
আমাদের প্রত্যাশা, ছাত্রছাত্রীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হবে এবং আরো বেশি ছাত্রদের পড়ার জন্য বেশি সিটের ব্যবস্থা থাকবে৷ যাতে যে যে বিষয়ে পড়তে আগ্রহী, তা পড়ার সুযোগ পেতে পারে৷ বিশেষ করে আইন এবং ডাক্তারির মতো বিষয়ে৷ বড় শহরগুলোতে ছাত্রদের থাকার ব্যবস্থার উন্নতি চাই, যেন প্রথমেই ছাত্রছাত্রীরা থাকার জায়গা পায় এবং পরে তারা ছাত্রদের হোস্টেলে যেতে পারে৷
ছবি: DW/E. Shoo
ফাতিমা স্টোহর (৪৪) রুটির দোকানের কর্মী
সরকারকে দেখাতে হবে যে সিরিয়া থেকে আসা অভিবাসীদের এখানে স্বাগত জানানো হয়৷ আমার জন্ম সিরিয়াতে৷ আমি আমার আত্মীয়দের দেখছি, যাদের সিরিয়া থেকে চলে আসতে হয়েছে, তাদের দৈনন্দিন সমস্যাগুলোও দেখছি৷ সুযোগের অভাবে তাদের সমাজে মিশে যেতে সমস্যা হয়৷
ছবি: DW/E. Shoo
ভিলহেল্ম ভেস্টার (৫৯), জনসংযোগ প্রধান
আমার সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশা যে, সরকার ইউরোপের অর্থনৈতিক সংকটের অমীমাংসিত বিষয়গুলোকে আরো বেশি গুরুত্ব দেবে৷ যে বিষয়ে জনগণের মনে বেশ কিছু প্রশ্নই রয়েছে৷ এবারের নির্বাচনে ‘আল্টারনাটিভে ফ্যুর ডয়েচলান্ড’ বা ‘জার্মানির জন্য বিকল্প’ দলের সাফল্য দেখিয়ে দিচ্ছে, যে অনেক নাগরিক এই প্রশ্নে সমাধানসূত্রের আশা করছেন৷
ছবি: DW/E. Shoo
9 ছবি1 | 9
সংকটগ্রস্ত দেশগুলি থেকেও কিছু সুসংবাদ পাওয়া যাচ্ছে৷ এমনকি গ্রিসও আগামী বছর সামান্য হলেও প্রবৃদ্ধির পথে ফেরার আশা করছে৷ ফলে পরপর ছয় বছর ধরে অর্থনীতির সংকোচন বন্ধ হবার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে৷ তবে নতুন করে গ্রিসের জন্য – বেলআউট-এর ব্যবস্থা করতে হবে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়৷ এদিকে আস্থা ভোটে জয়ের পর ইটালির প্রধানমন্ত্রী লেটাকে আবার অর্থনীতি সামলানোর কাজে মন দিতে হবে৷ তাঁর সরকার যে ব্যাপক সংস্কার ও ব্যয় সংকোচ নীতি গ্রহণ করেছে, তার সাফল্য ও ধারাবাহিকতার দিকে নজর রাখছে পুঁজিবাজার৷ স্পেনের ব্যাংকিং ক্ষেত্রও সংকট থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷