অ্যামেরিকায় এক কৃষ্ণাঙ্গ বন্দির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলো। প্রায় দুই দশক পর ফের কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলো। তাঁর আইনজীবীর অভিযোগ, এর পিছনেও আছে বর্ণবাদ।
বিজ্ঞাপন
গত জুলাই থেকে অ্যামেরিকায় কেন্দ্রীয় স্তরে আবার মৃত্যুদণ্ড দেয়া হচ্ছে। ১৭ বছর বন্ধ থাকার পর ট্রাম্প প্রশাসন আবার মৃত্যুদণ্ড চালু করেছে। তারপর এই কৃষ্ণাঙ্গ অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলো।
স্থানীয় সময় সকাল সাতটা নাগাদ তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। অপরাধীর নাম ক্রিস্টোফার ভিয়ালভা। বয়স ৪০ বছর। এক খ্রিস্টান দম্পতিকে হত্যার জন্য তাঁকে এই সাজা দেয়া হয়েছিল। ইন্ডিয়ানার ফেডারেল জেলে এই মৃত্যুদণ্ড কর্যকর হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ভয়ংকর কিছু উপায়
গিলোটিনে মাথা কাটা, হাতির পায়ে পিষ্ট করা- প্রাচীনকালে এ ধরনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পদ্ধতি অনেককে আতঙ্কিত করে৷ কিন্তু এরচেয়েও নৃশংস কিছু পদ্ধতি রয়েছে, যার কথা হয়ত আপনাদের জানা নেই৷ সেগুলো দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: fotolia
শরীরকে দ্বিখণ্ডিত করা
বহু বছর আগে ইংল্যান্ডে এই পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হতো৷ অপরাধী দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে সাজা দেয়ার স্থানে নিয়ে যাওয়া হতো৷ তারপর দুই পা’র মাঝ বরাবর কেটে ফেলা হতো৷
ছবি: picture-alliance/Godong/C. Leblanc
শূলে চড়ানো
রোমান সাম্রাজ্যে এ পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ছিল৷ যীশু খ্রীস্টকেও এভাবেই মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল৷ কাঠের তক্তার সঙ্গে হাত ও পায়ে পেরেক ঠুকে সেই তক্তা দাঁড় করিয়ে দেয়া হতো৷ এভাবে ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ত ব্যক্তিটি৷
ছবি: Reuters/J. Costa
কলম্বিয়ার টাই
কলম্বিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকটি দেশে প্রথমে অপরাধীর মাথা কেটে ফেলা হতো৷ তারপর জিভ টেনে বের করে মাথাটা গাছে বেঁধে রাখা হতো৷
ষাঁড়ের পেটে
সিসিলিতে অ্যাক্রাগাসের শাসনামলে এই ভয়াবহ পদ্ধতির প্রচলন শুরু হয়৷ লোহার ষাঁড় বানানো হতো৷ অপরাধীকে ঐ ষাঁড়ের পেটে ঢুকিয়ে এর নীচে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হতো৷ ষাঁড়ের মুখ দিয়ে বের হতো অপরাধীর আর্তনাদ৷ মনে হতো ষাঁড়টিই চিৎকার করছে৷
ছবি: picture alliance/Blickwinkel/W. G. Allgoewer
সেপুকু
জাপানী যোদ্ধা সামুরাই এই পদ্ধতি ব্যবহার করতেন৷ নিজের হাতেই অপরাধীর অন্ত্র বের করে আনতেন, আর যখন অপরাধী ছটফট করতো, তখন সামুরাইয়ের কোনো সহযোগী তরবারি দিয়ে অপরাধীর শিরচ্ছেদ করে দিতো৷
ছবি: Museum Kunstpalast, Düsseldorf, Graphische Sammlung
লিং চি
চীনে বিংশ শতাব্দিতে এসে এই পদ্ধতি বাতিল করা হয়৷ এ ধরণের মৃত্যুদণ্ডে অপরাধীর প্রতিটি অঙ্গ একে একে ছিন্ন করা হতো৷ আর চেষ্টা করা হতো, যাতে সে দীর্ঘ সময় এ অবস্থায় জীবিত থাকে৷
ছবি: Fotolia/D. Presti
জীবন্ত পুড়িয়ে মারা
১৯৩৭ সালে জাপানের সৈন্যরা বন্দি চীনাদের এই শান্তি দিয়েছিল৷
ছবি: Getty Images/U. Ifansasti
স্প্যানিশ থাবা
প্রাচীন কালে স্পেনে লোহা দিয়ে বিড়ালের থাবার মতো ধারালো হাতিয়ার বানানো হতো৷ আর অপরাধীর চামড়া ঐ হাতিয়ার দিয়ে খুবলে নেয়া হতো৷ চামড়ায় সংক্রমণের কারণে ঐ ব্যক্তির মৃত্যু ছিল অবধারিত৷
ছবি: fotolia
ক্যাথরিন হুইল
অপরাধীকে চাকার সঙ্গে বেঁধে দেয়া হতো৷ আর জল্লাদ ঐ চাকা ঘুরাতে থাকত, পাশাপাশি লাঠি দিয়ে প্রহার করতো৷ ফলে হাড্ডি ভেঙে ঐ ব্যক্তির মৃত্যু হতো৷
ছবি: Reuters/J. Young
9 ছবি1 | 9
ক্রিস্টোফারের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলো সেই সময় যখন বর্ণবাদের বিরুদ্ধে অ্যামেরিকা জুড়ে আন্দোলন চলছে। বিচার ব্যবস্থার বিরুদ্ধেও বর্ণবাদের অভিযোগ উঠছে। পুলিশের বর্ণবাদী মনোভাব নিয়ে প্রতিদিনই প্রায় বিক্ষোভ হচ্ছে। এক কৃষ্ণাঙ্গ নারীর পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর বিচার সম্প্রতি শেষ হয়েছে। সেখানে একজন পুলিশের শাস্তি হয়েছে। বাকি দুই অভিযুক্ত পুলিশ কর্মী ছাড়া পেয়ে গেছেন। এরপর আবার প্রবল বিক্ষোভ শুরু হয়। সেই বিক্ষোভেও গুলিতে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, পুলিশ ইচ্ছে করে এমনভাবে মামলা সাজিয়েছিল, যাতে তাঁদের সাবেক সহকর্মীদের বেশি শাস্তি না হয়।
এর মধ্যেই শুরু হলো কৃষ্ণাঙ্গ বন্দির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা নিয়ে বিতর্ক। তাঁর আইনজীবীদের অভিযোগ, এই মৃত্যুদণ্ডের পিছনেও বর্ণবাদ কাজ করছে।
মৃত্যুদণ্ড বাতিল করেছে যেসব দেশ
বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অনেক দেশে এখনও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর রয়েছে৷ তবে চলতি শতকে কয়েকটি দেশ এই শাস্তি প্রথা বাতিল করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আলবেনিয়া
বাতিল: ২০০০; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ১৯৯৫
ছবি: Fotolia/Matthias Krüttgen
আর্মেনিয়া
বাতিল: ২০০৩; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ১৯৯২
ছবি: AP
ভুটান
বাতিল: ২০০৪; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ১৯৭৪
ছবি: DW
বুরুন্ডি
বাতিল: ২০০৯; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ২০০০
ছবি: picture-alliance/Philipp Ziser
চিলি
বাতিল: ২০০১; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ১৯৮৫
ছবি: picture-alliance/dpa
ফিলিপাইন
বাতিল: ২০০৬; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ২০০০
ছবি: DW/P. Hille
গ্যাবন
বাতিল: ২০১০; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ১৯৮১
ছবি: AP
কাজাখস্থান
বাতিল: ২০০৭; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ২০০৩
ছবি: picture-alliance/dpa
মাদাগাস্কার
বাতিল: ২০১৪; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ১৯৫৮
ছবি: picture alliance / blickwinkel
মন্টোনেগ্রো
বাতিল: ২০০২; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ১৯৯২
ছবি: imago/P. Widmann
সেনেগাল
বাতিল: ২০০৪; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ১৯৬৭
ছবি: Alexander Joe/AFP/Getty Images
সার্বিয়া
বাতিল: ২০০২; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ১৯৯২
ছবি: picture-alliance/dpa
টোগো
বাতিল: ২০০৯; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ১৯৭৮
ছবি: DW/J. von Mirbach
তুরস্ক
বাতিল: ২০০২; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ১৯৮৪
ছবি: Bulent Kilic/AFP/Getty Images
উজবেকিস্তান
বাতিল: ২০০৮; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ২০০৫
ছবি: picture-alliance/dpa
15 ছবি1 | 15
ক্রিস্টোফার অবশ্য নিজে স্বীকার করেছিল যে সে দম্পতিকে খুন করেছে। ওই খ্রিস্টান দম্পতি চার্চে প্রার্থনার পর বাড়ি ফিরছিলেন। সে সময় ক্রিস্টোফার ও তাঁর এক সঙ্গী গাড়ি থামিয়ে গুলি চালায়। তারপর গাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। কোনো সন্দেহ নেই, খুবই নির্মমভাবে সেই দম্পতিকে হত্যা করা হয়েছিল। ওই দম্পতি বারবার প্রাণ ভিক্ষা করেছিলেন। কিন্তু ক্রিস্টোফাররা তাতে কান দেয়নি।
বিচারের পর ক্রিস্টোফারের আইনজীবী বলেন, তাঁর বিপরীতে যে আইনজীবীরা ছিলেন, তাঁরা একটা ধারণা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন যে, ক্রিস্টোফার হলেন ভয়ঙ্কর কৃষ্ণাঙ্গ অপরাধী। আইনজীবী সুশান অটোর দাবি, এই মামলায় বর্ণবাদের ভূমিকা ছিল।
ওয়াশিংটন ভিত্তিক সংগঠন ডেথ পেনাল্টি ইনফরমেশন সেন্টারের রিপোর্ট বলছে, মৃত্যুদণ্ড দেয়ার ক্ষেত্রে বর্ণবাদের ভূমিকা আছে। আর ট্রাম্পের আমলে একের পর এক মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। ১৯২৭ সালের পর থেকে কখনো এত বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়নি।