ঘটনাটি হয়েছিল মার্চে। বর্ণবাদী পুলিশের হাতে কালো মানুষ ড্যানিয়েল প্রুডের হত্যা। সেই ঘটনায় ভিডিও সামনে আসার পর সাত পুলিশ অফিসারকে সাসপেন্ড করা হলো।
বিজ্ঞাপন
অ্যামেরিকায় আবার বর্ণবাদী পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ-হত্যার ঘটনা সামনে এল। এ বার রচেস্টারে। ঘটনাটি ঘটেছিল মার্চে। এতদিন পরে তাঁকে নির্যাতনের ভিডিও সামনে এসেছে। বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কের মেয়র সাতজন পুলিশকে সাসপেন্ড করেছেন।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, নগ্ন হয়ে প্রুড রাস্তায় দৌড়চ্ছেন। তখন পুলিশ অফিসাররা তাঁকে ধরেন। তাঁর মুখে ঠুলি পরিয়ে দেয়া হয়। তাঁর মাথা ফুটপাথে দুই মিনিট ধরে চেপে রাখা হয়। পুলিশের দাবি, তিনি যাতে থুথু ফেলতে না পারেন, তার জন্য তারা এই কাজ করেছিল। তারপর তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সাতদিন পর তাঁর পরিবার জীবনদায়ী ব্যবস্থা খুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়।
যে সময় ঘটনাটি ঘটে, তখন বিষয়টি নিয়ে কোনও হইচই হয়নি। ভিডিও প্রকাশের পর শুরু হয়েছে। কারণ, ইতিমধ্যে ফ্লয়েড ও ব্লেকের ঘটনা ঘটে গেছে। অথচ, প্রুড মারা গেছেন ফ্লয়েডকে হত্যার দুই মাস আগে। তাঁর দেহ যিনি পরীক্ষা করেছেন সেই চিকিৎসক জানিয়েছেন, এটা খুন। শারীরিক নির্যাতনের প্রতিক্রিয়ায় প্রুড মারা গেছেন।
বর্ণবাদ নিয়ে হলিউডের কিছু উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র
‘গ্রিন বুক’ ২০১৯ সালে সেরা চলচ্চিত্রের অস্কার জিতে নিয়েছে৷ কিন্তু বর্ণবাদ নিয়ে এই প্রথম কোনো ছবি আলোড়ন তুললো এমন নয়৷ একই ইস্যুতে হলিউডে এর আগেও চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছে এবং প্রশংসা ও পুরস্কার জিতেছে৷ ছবিঘরে দেখে নিন৷
২০১৯ সালের সেরা ছবি: গ্রিন বুক
পিটার ফ্যারেলি পরিচালিত ‘গ্রিন বুক’ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ হয়েছে বাস্তব কাহিনির উপর ভিত্তি করে৷ ভিগো মোর্টেনসেন (বামে) একজন গাড়ি চালকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন, যিনি পিয়ানিস্ট মাহেরসালা আলীকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ রাজ্যগুলোতে ঘুরে বেড়ান৷ তাঁর কাছে থাকে একটি সবুজ রঙের বই, যেখানে সেসব রেস্তোরাঁ আর মোটেলের তালিকা আছে, যেগুলো কেবল কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য৷
ছবি: picture alliance/AP/Universal/P. Perret
‘ব্ল্যাকক্ল্যান্সম্যান’ এর জন্য অস্কার
বেস্ট অ্যাডাপটেড স্ক্রিনপ্লে’র জন্য চলতি বছর অস্কার জিতেছে এই ছবিটি, যেটাতে বর্ণবাদকে উপজীব্য করা হয়েছে৷ পরিচালক স্পাইক লি সত্য ঘটনার উপর ভিত্তি করে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন৷ ৭০ এর দশকে একটি গ্যাং-এর কর্মকাণ্ড তদন্ত করেন একজন কৃষ্ণাঙ্গ পুলিশ৷ এই ঘটনা নিয়েই সিনেমার কাহিনি গড়ে উঠেছে৷
ছবি: D. Lee/F. Features
‘ব্ল্যাক প্যান্থার’
চলতি বছরে অস্কার পাওয়া চলচ্চিত্রের মধ্যে এটি তৃতীয় ছবি, যা বর্ণবাদের সঙ্গে যুক্ত৷ ২০১৮ সালে মার্ভেলের চলচ্চিত্র ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’ প্রথমবারের মতো কৃষ্ণাঙ্গ সুপারহিরোদের জনসমক্ষে এনেছে৷
ছবি: picture-alliance/Marvel Studios
‘মিসিসিপি বার্নিং’ ভেঙে দেয় সব ট্যাবু
১৯৮৮ সালে অ্যালেন পার্কারের মুভি ‘মিসিসিপি বার্নিং’-এ তিন সমাজকর্মীর অন্তর্ধানের গল্প বলা হয়েছে৷
ছবি: ORION PICTURES CORPORATION
‘ইনভিকটাস’
২০০৯ সালে ইস্টউড দ্বিতীয়বারের মতো বর্ণবাদকে তাঁর চলচ্চিত্রের বিষয় হিসেবে নির্বাচন করেন৷ ‘ইনভিকটাস’ খেলা নিয়ে একটি কাহিনি, যেখানে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় রাগবি দলের গল্প বলেছেন৷ জার্মান ভাষায় এই চলচ্চিত্রের নাম ‘শত্রুরা যেভাবে বন্ধু হলো’৷ এই চলচ্চিত্রে নেলসন ম্যান্ডেলার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মর্গ্যান ফ্রিম্যান৷
ছবি: AP
‘দ্য বাটলার’
বর্ণবাদ নিয়ে শিক্ষণীয় চলচ্চিত্র এটি৷ ২০১৩ সালের এই ছবিতে ফরেস্ট হোয়াইটেকার এবং অপরাহ উইনফ্রে অভিনয় করেছেন৷ এই চলচ্চিত্রে আফ্রো-অ্যামেরিকান বাটলার ইউজেন অ্যালেন-এর গল্প বলা হয়েছে, যিনি আট জন মার্কিন প্রেসিডেন্টের অধীনে কাজ করেছিলেন৷
ছবি: picture alliance/AP Images
‘টুয়েলভ ইয়ার্স আ স্লেভ’
২০১৩ সালে মুক্তি পায় চলচ্চিত্রটি এবং সে বছর সেরা ছবির অস্কার জিতে নেয়৷ যুক্তরাষ্ট্রের ক্রীতদাস প্রথা নিয়ে নির্মিত এটি৷ ব্রিটিশ পরিচালক স্টিভ ম্যাককুইন এই চলচ্চিত্রে দুর্দান্ত অভিনেতাদের দিয়ে অভিনয় করিয়েছেন৷
ব্যারি জেনকিন্স পরিচালিত ‘মুনলাইট’ চলচ্চিত্রে আফ্রো-অ্যামেরিকান এক ব্যক্তির গল্পকে তিন অধ্যায়ে দেখানো হয়েছে৷ এই ছবির সিনেমাটিক কাজ অসাধারণ৷ ফলে কোনো ধরণের মেলোড্রামা ছাড়া এই ছবির মূল উপজীব্য উপস্থাপিত হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/D. Bornfriend
‘আই অ্যাম নট ইওর নিগ্রো’
গত কয়েক দশক ধরেই বলিউডে বর্ণবাদকে ইস্যু করে চলচ্চিত্র, এমনকি তথ্যচিত্র নির্মাণ হয়েছে৷ হাইতির পরিচালক রাউল পেক ২০১৬ সালে অসাধারণ একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন যার নাম ‘‘আই অ্যাম নট ইওর নিগ্রো’৷
9 ছবি1 | 9
প্রুড ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন। তাঁর চিকিৎসা চলছিল। তাঁকে মানসিক হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসার পর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তিনি নগ্ন হয়ে রাস্তা দিয়ে দৌড়তে থাকেন। তাঁর মাসী লেটোরিয়া মুর জানিয়েছেন, ''তাঁর কী মনে হয়েছিল, কেন তিনি দৌড়চ্ছিলেন, কোন পরিস্থিতিতে দৌড়চ্ছিলেন, সে সব আমি জানি না। আমি শুধু জানি, এভাবে পুলিশি অত্যাচার অন্যায়। পুলিশ কেন এ ভাবে তাঁকে হত্যা করবে?''
আর রচেস্টারের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মেয়র লাভলি ওয়ারেন বলেছেন, ''ড্যানিয়েল প্রুডের ঘটনা হলো পুলিশ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, সমাজ এবং আমার নিজের ব্যর্থতা। আমরা কালো মানুষদের জীবন রক্ষা করতে পারছি না।''
কিন্তু ভিডিও প্রকাশে এত দেরি হলো কেন? পুলিশ কর্তারা কি অপরাধীদের বাঁচাতে চাইছিলেন? এই সব প্রশ্ন উঠছে। পুলিশ প্রধান বলেছেন, আমি মানুষের রাগের কারণ বুঝতে পারছি। কিন্তু পুলিশ বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেনি।
বুধবার ভিডিও সামনে আসার পরই বিক্ষোভকারীরা পুলিশ সদরদফতরের সামনে জড়ো হয়। তাঁরা অবিলম্বে দোষী পুলিশের শাস্তি দাবি করে। বিক্ষোভ চলবে বলে তাঁরা জানিয়েছেন।