কেনটাকির গভর্নর জানিয়েছেন শুধু তার রাজ্যেই মৃতের সংখ্যা ৮০। এখনো নিখোঁজ অনেকে।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার একাধিক টর্নেডো আছড়ে পড়েছিল অ্যামেরিকার একাধিক রাজ্যে। তবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কেনটাকি। রোববার কেনটাকির মেয়র টুইট করে পরিস্থিতির কথা জানিয়েছেন। বাইডেন সরকারের কাছে তার আর্জি, জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে কেনটাকির জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করুক প্রশাসন। টুইটে তিনি লিখেছেন, 'অনেকে ভাবছেন, দরজায় দরজায় ঘুরে মানুষ কেমন আছে, তা দেখছি। কিন্তু বাস্তব হলো অধিকাংশ বাড়িতে দরজাই নেই। সব নষ্ট হয়ে গেছে।'
মেয়র জানিয়েছেন, কেবল তার রাজ্যেই টর্নেডোর প্রকোপে অন্তত ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনো অনেকে নিখোঁজ। বস্তুত, একটি মোমবাতি তৈরির কারখানায় আটজনের মৃত্যু হয়েছে। ওই কারখানারই আরো বেশ কিছু কর্মী এখনো নিখোঁজ। তবে প্রশাসন জানিয়েছে, সকলের মৃত্যু হয়নি। ঝড় শুরু হওয়ার আগে তাদের কয়েকজন কারখানা থেকে পালিয়ে টর্নেডো শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। কেনটাকির মেয়রের মতে এখনো পর্যন্ত সবকটি রাজ্য মিলিয়ে অন্তত ৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ যাদের নিত্যসঙ্গী
বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ নতুন নয়৷ ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডোর মতো দুর্যোগ মোকাবিলা করেই এগিয়ে চলছে মানুষ৷ তবে দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক৷ বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে ছবিঘর৷
ছবি: Jewel Samad/AFP/Getty Images
সবচেয়ে ভয়ংকর টর্নেডো
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় টর্নেডোর ঘটনা ঘটে ১৯৮৯ সালে৷ সেবছরের ২৬ এপ্রিল মানিকগঞ্চ জেলার দৌলতপুর এবং সাটুরিয়া এলাকার উপর দিয়ে বয়ে যায় প্রলয়ংকরী টর্নেডো৷ এতে প্রাণ হারায় ১,৩০০ মানুষ৷
ছবি: David L. Nelson/AFP/Getty Images
পুরোপুরি ধ্বংস
২৬ এপ্রিলের টর্নেডোতে কার্যত ছয় বর্গকিলোমিটার এলাকা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়৷ সেসময় অবজারভার পত্রিকায় এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘‘ধ্বংসযজ্ঞ এতই নিঁখুত যে, সেখানে কিছু গাছের চিহ্ন ছাড়া দাঁড়ানো আর কোনো বস্তু নেই৷’’
ছবি: David L. Nelson/AFP/Getty Images
ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় টর্নেডো
আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যানাডার পর অন্যতম টর্নেডোপ্রবণ দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ৷ সর্বশেষ গত ২২ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টর্নেডোতে বেশ কয়েকজন প্রাণ হারায়৷
ছবি: picture alliance / AP Photo
পূর্বাভাষের প্রযুক্তি নেই
টর্নেডোর পূর্বাভাষের কোনো প্রযুক্তি নেই বাংলাদেশে৷ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এ কে এম মাকসুদ কামাল এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আমাদের দেশে না থাকলেও এখন টর্নেডোর পূর্বাভাষ দেয়া সম্ভব৷ অ্যামেরিকা এবং ইউরোপ এক ধরনের রাডার ব্যবহার করে অন্তত ৪৫ মিনিট আগে টর্নেডোর পূর্বাভাষ দিতে পারে৷ আর এ ধরনের পূর্বাভাষ দিয়ে জীবন ও সম্পদ রক্ষার নজির আছে৷’’
ছবি: picture alliance / AP Photo
ঘূর্ণিঝড়ের নিয়মিত শিকার বাংলাদেশ
টর্নেডো ছাড়াও ঘূর্ণিঝড়েরও নিয়মিত শিকার হয় বাংলাদেশ৷ উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত বাংলাদেশে মৌসুমী ঘূর্ণিঝড়ের তালিকায় ১৫৮২ সালের কথা উল্লেখ রয়েছৈ৷ সেসময় বাকেরগঞ্জের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারায় দু’লাখ মানুষ৷
ছবি: Reuters
স্বাধীনতা পরবর্তী বড় দুর্যোগ
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ঘটে ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল৷ সেসময় চট্টগ্রামে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে প্রাণ হারায় কমপক্ষে ১৩৮,০০০ মানুষ৷ প্রায় এক কোটি মানুষ ঘরছাড়া হয়৷ ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৫০ কিলোমিটারের মতো৷
ছবি: AFP/Getty Images
আইলার আঘাত
সর্বশেষ ২০০৯ সালে সাইক্লোন আইলায় কয়েকশত মানুষ প্রাণ হারায়৷ সাইক্লোনের পরপরই ডায়েরিয়া ছড়িয়ে পড়লে প্রাণ হারায় কমপক্ষে চার ব্যক্তি৷ এভাবে নিয়মিতই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করছে বাংলাদেশ৷
ছবি: DW
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে এখন বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবও পড়তে শুরু করেছে৷ বিশেষ করে উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে সমুদ্রের পানি বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলীয় বিশাল এলাকা তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে৷
ছবি: Jewel Samad/AFP/Getty Images
8 ছবি1 | 8
স্থানীয় মানুষ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ঝড় শুরু হওয়ার ২০ মিনিট আগে মোবাইলে টর্নেডো অ্যালার্ট এসেছিল। কিছু না গুছিয়েই সকলকে বের হতে হয়েছিল। ফিরে এসে দেখা যায়, বাড়ির প্রায় কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। অধিকাংশ বাড়ির দরজা, জানলা ভেঙে গেছে। মেয়রের বক্তব্য, সময় মতো অ্যালার্ট না এলে আরো বহু মানুষের মৃত্যু হতে পারতো।
ঘটনার পর রোববার অ্যামেরিকার বহু রাজ্য শোকদিবস পালন করেছে। তবে মেয়র জানিয়েছেন, এটা শোকপ্রকাশের সময় নয়, দ্রুত সবকিছু গুছিয়ে ফলেতে হবে। নিখোঁজদের খুঁজে বার করতে হবে।