আদালতের রায়ের পর বৃহস্পতিবার থেকে ট্রাম্প প্রশাসনের ‘ট্রাভেল ব্যান' চালু হচ্ছে৷ কিন্তু ৬টি মুসলিম প্রধান দেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের নতুন নিয়ম সম্পর্কে এখনো অনেক বিভ্রান্তি রয়ে গেছে৷
বিজ্ঞাপন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঠিক যেমনটা চেয়েছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট তা পুরোপুরি মেনে নেয়নি, তাঁর নির্বাহী আদেশের অংশবিশেষ কার্যকর করতে সম্মতি দিয়েছে মাত্র৷ সিরিয়া, সুদান, ইরান, সোমালিয়া, লিবিয়া ও ইয়েমেন – ঢালাওভাবে এই ৬টি দেশের সব নাগরিকের অ্যামেরিকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করেছে আদালত৷ রায়ে বলা হয়েছে, এই দেশগুলির যেসব নাগরিকের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বৈধ সম্পর্ক রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না৷ অর্থাৎ শুধু আত্মীয়স্বজন থাকার প্রয়োজন নেই, মার্কিন প্রতিষ্ঠানের কর্মী অথবা মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী হিসেবেও এই ৬টি দেশের নাগরিক অ্যামেরিকায় প্রবেশ করতে পারবেন৷ তবে শুধু অ্যামেরিকায় প্রবেশের উদ্দেশ্যে এমন সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালালে চলবে না৷
সুপ্রিম কোর্টের এই রায় নিয়মের ব্যতিক্রম স্থির করে দিলেও অনেক খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে বিভ্রান্তি থেকে যাচ্ছে৷ ফলে বাস্তবে সেই নিয়ম কীভাবে প্রয়োগ হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়৷ যেমন অ্যামেরিকায় আত্মীয়স্বজন থাকলে সে দেশে প্রবেশে বাধা না থাকলেও ঠিক কত দূর সম্পর্কের আত্মীয় থাকলে চলবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি৷ অথবা যারা এই নির্বাহী আদেশ জারির আগেই বিশ্ববিদ্যালয় অথবা চাকুরির আবেদন করেছেন, তাদের অধিকারও স্পষ্ট নয়৷
ট্রাম্প অবশ্য এই রায়কে নিজের জয় বলেই তুলে ধরছেন৷ সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পরেই তিনি তাঁর নির্বাহী আদেশ কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছেন৷ তবে মার্কিন প্রশাসনের মধ্যেও বিভ্রান্তি থেকে গেছে৷ পররাষ্ট্র ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় বিচার মন্ত্রণালয়ের কাছে এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশ চেয়েছে, যাতে মার্কিন দূতাবাস ও বিমানবন্দর সহ অন্যান্য সীমান্ত-পোস্টে এ বিষয়ে বিভ্রান্তি এড়ানো যায়৷ অভিবাসনে সহায়তা করেন, এমন অনেক আইনজীবী বিমানবন্দরে উপস্থিত থেকে প্রয়োজনে যাত্রীদের সহায়তা করবেন বলে জানিয়েছেন৷
উল্লেখ্য, ৬টি দেশের নাগরিকের জন্য ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ৯০ দিন৷ অন্যদিকে শরণার্থীদের প্রবেশের উপর ১২০ দিনের নিষেধাজ্ঞাও কার্যকর হয়েছে৷
১০০ দিনে ট্রাম্প কথা রেখেছেন কি?
নির্বাচনি প্রচারের সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প জনতার সঙ্গে ১০০ দিনের চুক্তির কথা বলেছিলেন৷ প্রেসিডেন্ট হবার পর তিনি সেই চুক্তি মেনে সব প্রতিশ্রুতি পালন করেছেন কি? এতগুলি নির্বাহী আদেশের পর সেই প্রশ্ন আরও জোরালো হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Brendan Smialowski
‘ওবামাকেয়ার’ বাতিল, নতুন স্বাস্থ্য বিমা চালু
তীব্র বিদ্বেষ নিয়ে পূর্বসূরি বারাক ওবামার আমলে চালু করা স্বাস্থ্য বিমা কাঠামো বাতিল করে আরও অনেক কার্যকর এক পালটা ব্যবস্থা চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজের রিপাবলিকান দলের মধ্যেই বিরোধিতার মুখে আপাতত পিছু হঠতে হয়েছে তাঁকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. McNew
কর ব্যবস্থার সংস্কার
গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই কর ব্যবস্থার সংস্কারের ঘোষিত লক্ষ্যে একের পর এক সময়সীমা স্থির করেও বারবার ব্যর্থ হয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন৷ শেষ পর্যন্ত অবশ্য এক বিশদ প্রস্তাবমালা প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প৷ তবে প্রথম ১০০ দিনে তিনি এ ক্ষেত্রে কিছু করে উঠতে পারেননি৷
ছবি: Getty Images/W. McNamee
কর্মসংস্থানে জোয়ার
ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, কর ব্যবস্থার সংস্কার ও ‘অপ্রয়োজনীয়’ সরকারি বিধিনিয়ম কমাতে পারলেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে জোয়ার আসবে৷ এখনো সে কাজে অগ্রগতি ঘটেনি৷ যেটুকু সাফল্য এসেছে, তার দাবিদার হবার নৈতিক অধিকার আছে কিনা, তা স্পষ্ট নয়৷
ছবি: Reuters/A. P. Bernstein
মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর
অনুপ্রবেশ রুখতে মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর গড়ার অঙ্গীকার করেছিলেন ট্রাম্প৷ বলেছিলেন, তার ব্যয়ভার মেক্সিকোকেই বহন করতে হবে৷ সেই প্রক্রিয়া শুরু করতে তিনি এক নির্বাহী আদেশও জারি করেছেন৷ এবার তার ব্যয়ভারের জন্য কংগ্রেসের দ্বারস্থ হচ্ছেন ট্রাম্প৷ বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক দল প্রবল প্রতিরোধের হুমকি দিয়েছে৷
ছবি: Getty Images/J.Sullivan
আইএস ধ্বংস করার অঙ্গীকার
ক্ষমতায় আসার ৩০ দিনের মধ্যে তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটকে পুরোপুরি নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ কিন্তু সমালোচকদের মতে, এখনো পর্যন্ত ওবামার আমলের নীতিই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি৷ সার্বিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়লেও আইএস বহাল তবিয়তেই আছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Militant Website Turkistan Islamic Party
অভিবাসনের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি
প্রচারের সময় ট্রাম্প সংবিধানের তোয়াক্কা না করে সব মুসলিমদের অ্যামেরিকায় প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানোর অঙ্গীকার করেছিলেন৷ তারপর সুর নরম করে কিছু মুসলিম-প্রধান দেশ থেকে অ্যামেরিকায় ভ্রমণ কার্যত বন্ধ করার উদ্যোগ নিলেন৷ কিন্তু আদালতের হস্তক্ষেপে সেই উদ্যোগ থমকে গেছে৷ বেআইনি অভিবাসীদের তাড়ানোর ক্ষেত্রেও কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Huffaker
মুক্ত বাণিজ্যের বিরোধিতা
উত্তর অ্যামেরিকার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ‘ন্যাফটা’র বর্তমান শর্তগুলির চরম বিরোধিতা করে নতুন করে সেটি সাজানোর উদ্যোগ নেবেন বলে জানিয়েছিলেন ট্রাম্প৷ মেক্সিকো ও ক্যানাডার সঙ্গে এই নিয়ে কোন্দলও শুরু হয়েছে৷ তবে আপাতত কোনো রদবদল হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তিনি৷