ভিসা জালিয়াতি ও চরবৃত্তির অভিযোগে তিনজন চীনা নাগরিককে গ্রেপ্তার করল অ্যামেরিকা। তাঁরা চীনা সেনার সদস্য হওয়া সত্ত্বেও তা গোপন করেই ভিসা নিয়েছিলেন।
ছবি: Getty Images/AFP/G. Chai Hin
বিজ্ঞাপন
অভিযুক্ত চারজন। তার মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একজন পালিয়ে সান ফ্রান্সিসকোর কনসুলেট অফিসে লুকিয়ে আছেন। তদন্তকারী সংস্থা এফবিআই এর অভিযোগ, চারজনই চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু ভিসার আবেদনে সে কথা তাঁরা গোপন করে গিয়েছিলেন। অ্যামেরিকায় সেনার সঙ্গে যুক্ত বৈজ্ঞানিকদের পাঠানোর পরিকল্পনা ছকেছে চীন। তারই অঙ্গ হিসাবে তাঁরা অ্যামেরিকায় এসেছিলেন।
সরকারি অ্যাটর্নি জন সি ডিমার্স সংবাদ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, চীনের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা তাঁদের পরিচয় গোপন করে রিসার্চ ভিসার জন্য আবেদন করেছিল। এটা চীনের কৌশল।
চীনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রের দাবি, অ্যামেরিকা তাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে। তাদের আইনগত অধিকার রক্ষায় চীন সক্রিয় হবে এবং উপযুক্ত জবাব দেবে।
একদিন আগেই হিউস্টনের চীনা কনসুলেট তিনদিনের মধ্যে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অ্যামেরিকা। সেখানেও অভিযোগ ছিল, ওই কূটনৈতিক অফিস থেকে চরবৃত্তি করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে এফবিআই তিনজন চীনা নাগরিককে গ্রেপ্তার করার পর মার্কিন বিদেশ সচিব মাইক পম্পেও বলেছেন, চীন নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চাইছে। সব দেশের সব নেতার কাছে তাঁর আবেদন, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির থেকে নিরাপদ দূরত্ব তৈরি করাই এই সময়ের লক্ষ্য হওয়া উচিত।
অ্যামেরিকার বড় শত্রু কারা?
ইরানের সঙ্গে অনেকটা যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে অ্যামেরিকার৷ আর চীনের সঙ্গে চলছে বাণিজ্য যুদ্ধ৷ মার্কিনিদের বিবেচনায় তাঁদের শত্রুদের চিনে নিন ছবিঘরে৷
ছবি: Imago/UPI//Imago/Russian Look
উত্তর কোরিয়া
জরিপের মাধ্যমে অ্যামেরিকার শত্রুদের তালিকা প্রকাশ করে থাকে গ্যালাপ৷ প্রতিষ্ঠানের ২০১৮ সালের জরিপে দেখা যায়, গত কয়েক বছরের মতো এবারও অ্যামেরিকার শত্রু তালিকার শীর্ষ দেশ হিসেবে উত্তর কোরিয়ার নাম আছে৷ ২০১৬ সালে ১৬ ভাগ মানুষ উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক শক্তিকে হুমকি হিসাবে বিবেচনায় নিয়েছিলেন৷ ২০১৮ সালে এসে হুমকি বিশ্বাসকারীদের সংখ্যা ৫১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রাশিয়া
অ্যামেরিকার সঙ্গে রাশিয়ার শত্রুতার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের৷ এর মধ্যে উত্থান-পতনও দেখা গেছে বিভিন্ন সময়ে৷ ২০১৬ সালে ১৫ শতাংশ অ্যামেরিকান বলেছেন, রাশিয়া তাঁদের সবচেয়ে বড় শত্রু৷ ২০১৮ সালে গিয়ে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ শতাংশে৷
চীনের সঙ্গে অ্যামেরিকার বাণিজ্য যুদ্ধ ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বিশ্বের অন্যান্য দেশের অর্থনীতিকেও৷ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অর্থনৈতিক পরাশক্তি হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে চীন৷ দুই দেশের সাম্প্রতিক কিছু সিদ্ধান্ত উভয়ের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করছে৷ ২০১৬ সালে অ্যামেরিকার ১২ শতাংশ মানুষের বিবেচনায় চীন ছিল দেশটির সবচেয়ে বড় শত্রু৷ তবে, ২০১৮ সালে দেশটিকে বড় শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করেছেন ১১ শতাংশ অ্যামেরিকান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইরান
২০০৬ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত অ্যামেরিকানদের কাছে তাঁদের শত্রু তালিকায় শীর্ষে ছিল ইরান৷ পরের কয়েক বছর পরিস্থিতি ভালো হয় কিছুটা৷ তবে, ২০১৫ সালে ইরানকে নিজেদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করেছেন ৯ শতাংশ অ্যামেরিকান৷ ২০১৮ সালে এমন চিন্তার মানুষের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭ শতাংশে৷
ছবি: Imago/UPI//Imago/Russian Look
সিরিয়া
গ্যালাপের পাশাপাশি অ্যামেরিকার শত্রুদের তালিকা প্রকাশ করে থাকে ক্যানাডাভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অন গ্লোবালাইজেশন বা সিআরজি৷ তাদের বিবেচনায় ইরান, রাশিয়া ও ফিলিস্তিনের সঙ্গে সিরিয়ায় ক্ষমতাসীনদের সখ্যের কারণে সিরিয়ার সঙ্গে অ্যামেরিকার বিরোধ হয়েছে৷ আবার অ্যামেরিকা-ইসরায়েল মৈত্রীর ক্ষেত্রে বিপরীত অবস্থানে আছে সিরিয়া৷ ভূ-রাজনৈতিক কারণে সিরিয়ার উপর আধিপত্য রাখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Elfiqi
ভেনেজুয়েলা
সিআরজি বলছে, ভেনেজুয়েলার তেলের মজুদ ও সামাজিক-রাজনৈতিক কারণে অ্যামেরিকার সঙ্গে তাঁদের বিরোধ দীর্ঘদিনের৷ যদিও বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ভেনেজুয়েলা, তবুও সেই বিরোধ কমেনি মোটেও৷ দেশটির ক্ষমতাসীন মাদুরো সরকারকে হটাতে তৎপর অ্যামেরিকা৷ সম্প্রতি অ্যামেরিকার সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে দক্ষিণ অ্যামেরিকার দেশটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Miraflores
6 ছবি1 | 6
যে চারজন চীনা নাগরিকের বিরুদ্ধে ভিসা জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে, তাঁরা হলেন, ওয়াং শি, সং চেন, ঝাও কাইকাই এহং ট্যাং জুয়ান। এর মধ্যে ট্যাং সান ফ্রান্সিসকোর কনসুলেট অফিসে আছেন বলে অনুমান করা হচ্ছে। অভিযোগ, তাঁরা প্রত্যেকেই মিথ্যা কথা বলেছিলেন। তাঁরা জানিয়েছিলেন, তাঁরা কখনওই সেনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।
এর মধ্যে ওয়াং শিনকে লস এঞ্জেলেস বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার করা হয়। কাস্টমস ও বর্ডার প্রটেকশন এজেন্টের কাছে তিনি স্বীকার করেন যে, তিনি মিলিটারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে কাজ করেন। অথচ, ভিসার আবেদনপত্রে তিনি লিখেছিলেন, ২০১৬ সালে তিনি সেনার সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করে দিয়েছেন। সং চেন ও ঝাওকে গত ১৮ জুলাই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরাও সেনা হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু ভিসার আবেদনে সে তথ্য দেননি। অভিযুক্তরা সকলেই চীনা সেনার চিকিৎসক শাখার সঙ্গে যুক্ত এবং তাঁরা প্রত্যেকেই শীর্ষ গবেষণা সংস্থার সদস্য। ট্যাং বিমানবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত এবং পুরো ইউনিফর্মে তাঁর ছবিও আছে। কিন্তু তিনি ভিসায় লিখেছিলেন, তিনি কখনই সেনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।
এফবিআই এখন ২৫টি শহরে চীনা নাগরিকদের জেরা করছে। তাঁরা সকলেই চীনা সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত বলে সন্দেহ।