আফ্রিকাতেও মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার। ভাইরাস ঢুকছে চোখ দিয়েও, দাবি হংকংয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের।
বিজ্ঞাপন
করোনা কালে আরও একটা অন্ধকার মাইলস্টোন পার করলো অ্যামেরিকা। বৃহস্পতিবার সেখানে মৃতের সংখ্যা ৭৫ হাজার পার হলো। শুক্রবার সকালের মধ্যে যা প্রায় ৭৭ হাজারে পৌঁছে গিয়েছে। মোট আক্রান্ত প্রায় ১৩ লাখ মানুষ। এরই মধ্যে আরও এক আতঙ্কের কথা জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তাদের বক্তব্য, নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা না গেলে আফ্রিকায় এই মহামারি ভয়াবহতম চেহারা নিতে পারে। আক্রান্ত হতে পারেন তিন থেকে চার কোটি মানুষ। মৃত্যু হতে পারে ৮০ হাজার থেকে দুই লাখ লোকের। শুধু তাই নয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, প্রথম আঘাতের পরে ফের নতুন ঢেউ নিয়ে ফিরে আসতে পারে করোনা। ফলে যে সব দেশ দ্রুত লকডাউন তোলার পরিকল্পনা করছে, তাদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত।
গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় আড়াই হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে অ্যামেরিকায়। নিউ ইয়র্কের চেহারা এখনও ভয়াবহ। হাসপাতালে নতুন রোগী নেওয়ার কার্যত কোনও জায়গা নেই। পাওয়া যাচ্ছে না মৃতদেহ কবর দেওয়ার জায়গা। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এখনও লকডাউন তুলে জনজীবন স্বাভাবিক ছন্দে ফেরানোর পক্ষপাতী। তিনি আগেই বলেছিলেন, দিনের পর দিন এ ভাবে সব কিছু বন্ধ করে বসে থাকা সম্ভব নয়। অর্থনীতিকে সচল করতেই হবে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করে দিলে মৃতের সংখ্যা অনেক গুণ বেড়ে যাবে। বাড়বে আক্রান্ত। তখন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
করোনার কারণে বদলে যাওয়া বিশ্ব
করোনা ভাইরাস থেকে দূরে থাকতে লকডাউন উঠে গেলেও সতর্ক থাকতে হবে সবাইকে। সেভাবেই প্রস্তুত হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন শহর। ছবিঘরে দেখুন, সোশ্যাল ডিসট্যান্সিংয়ের গুরুত্ব মেনে কিভাবে বদলে যাচ্ছে সবকিছু...
ছবি: Reuters/S. Vera
দুই মিটার দূরে থাকুন
সোশ্যাল ডিসট্যান্স বজায় রাখতে এমনিতে এক মিটার দূরে দাঁড়ালেই হয়। কিন্তু আমস্টারডামে কাশম্যান অ্যান্ড ওয়াকফিল্ড নামের এক রিয়েল এস্টেট কোম্পানি অনেক বেশি সতর্ক। তাদের অফিসের কর্মীরা আগামীতে এমন ডেস্কে কাজ করবেন, যার বিপরীতে অন্য সহকর্মীকে বসতে হবে অন্তত দু মিটার দূরে।
ছবি: Reuters/Cushman/Wakefield
ওয়েটারের নতুন রূপ
নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডামেরই এক রেস্তোরাঁয় চলছে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অতিথিদের সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে দূরে রাখার যাবতীয় প্রস্তুতি। রেস্তোরাঁ খুললে এভাবে মাথা, মুখ ঢেকে খাবার পরিবেশন করবেন কর্মীরা।
ছবি: Reuters/E. Plevier
রাস্তা থেকেই সামাজিক দূরত্ব
নেদারল্যান্ডসের আনহেম শহরে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা ম্যাকডোনাল্ডসের এই শাখাটিতে ঢুকতে হলে রাস্তা থেকেই বজায় রাখতে হবে সামাজিক দূরত্ব। হলুদ বৃত্তাকার জায়গায় দাঁড়িয়ে করতে হবে ভেতরে প্রবেশের অনুমতির অপেক্ষা।
ছবি: Reuters/P. van de Wouw
ট্রাম স্টপে কড়াকড়ি
ফ্রান্সের নিস শহরের একটি ট্রাম স্টপে কেউ আর যেখানে-সেখানে দাঁড়াতে পারেন না। পায়ের ছাপ বসানো স্থানে দাঁড়িয়ে ট্রামের অপেক্ষা করতে হয় সবাইকে।
ছবি: Reuters/E. Gaillard
দেখে দাঁড়ান
নিস শহরের ট্রামগুলোর ভেতরেও দাঁড়াতে হয় পায়ের ছাপ দেখে।
ছবি: Reuters/E. Gaillard
রেস্তোরাঁয় কোয়ারান্টিন
নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম শহরের এক রেস্তোরাঁয় রাখা হচ্ছে এমন 'গ্রিন হাউজ কোয়ারান্টিন'-এর ব্যবস্থা। শুধু দূরে বসে নয়, থাকছে আলাদা আলাদা প্লাস্টিকের ঘরে বসে খাওয়ার ব্যবস্থাও।
ছবি: Reuters/E. Plevier
রেল স্টেশনে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ট্রেনে ওঠার সময় গোলাকৃতির প্লাস্টিকের ভেতরে দাঁড়াতে হয়। নিয়ম না মানলে এগিয়ে আসে পুলিশ৷
ছবি: Reuters/B. Tessier
দেয়াল ঘেরা টেবিল
তাইওয়ানের এক রেস্তোরাঁর টেবিলগুলো এখন প্লাস্টিকের দেয়ালে ঘেরা। সুতরাং খাওয়ার সময় কেউ কাছে চলে এসে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াবেন তার উপায় নেই।
ছবি: Reuters/J. Silva
সবজির বাজারে পরিবর্তন
ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার এই সবজি বাজারেও এখন আর গা ঘেষাঘেষি করে দাঁড়ানোর উপায় নেই।
ছবি: Reuters/A. D. Ulfiana
নতুন নিয়মে হাঁটো
ডেনমার্কের আলবোর্গ শহরে এক পায়ে হাঁটার রাস্তা। কোন পাশে কার কতটুকু জায়গা তা ঠিক করে দেয়া হয়েছে হলুদ রেখা টেনে।
ছবি: Reuters/H. Bagger
সৌদি আরবের শপিং মল
রিয়াদের এক শপিং মল। বাইরেও দাঁড়াতে হয় পর্যাপ্ত দূরত্ব বজায় রেখে।
ছবি: Reuters/Ahmed Yosri
সাইকেলেও সোশাল ডিসট্যান্স
ইতালির মিলান শহরের এক মা তার সন্তানকে নিয়ে যাচ্ছেন সাইকেলে। সাইকেলেও বজায় আছে সোশ্যাল ডিসট্যান্স।
ছবি: Reuters/D. Mascolo
টয়লেটে সাবধানতা
বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসের এক প্রস্রাবাগারে প্লাস্টিকের ব্যাগ ঝুলিয়ে নিশ্চিত করা হয়েছে সামাজিক দূরত্ব।
ছবি: Reuters/F. Lenoir
'দূর থেকে হাসুন'
ভেতরে গিয়েও কারো খুব কাছে যাওয়ার উপায় নেই। আসনগুলো এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে, অন্তত দেড় মিটার দূরত্ব বজায় রেখে বসতেই হবে। ভুলেও যাতে কেউ কারো খুব কাছে চলে না যান, সেই ব্যবস্থা করতে লাগানো হয়েছে বিশেষ স্টিকার। স্টিকারে লেখা, "দূর থেকে হাসুন।"
ছবি: Reuters/P. van de Wouw
14 ছবি1 | 14
আফ্রিকা নিয়ে ভয় অবশ্য অন্য। ইউরোপ কিংবা অ্যামেরিকা যে ভাবে করোনার সঙ্গে লড়াই করেছে, আফ্রিকার দেশগুলির পক্ষে স্বাভাবিক ভাবেই সে ভাবে লড়াই করা সম্ভব নয়। অর্থনৈতিক ভাবে আফ্রিকার অধিকাংশ দেশই পিছিয়ে পড়া। করোনার পরীক্ষাও সেখানে ঠিক ভাবে হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন না। পরিস্থিতি এমনই চলতে থাকলে আফ্রিকায় করোনা ভয়াবহ চেহারা নেবে বলে আশঙ্কা। মৃত্যু হবে অসংখ্য লোকের। কিন্তু বিকল্প উপায়ও দেখতে পাচ্ছেন না অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ। তাঁদের বক্তব্য, ক্যামেরুন বুঝিয়ে দিয়েছে, এক মাস অর্থনীতি সচল না থাকলে আফ্রিকার অধিকাংশ দেশের কী ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে। বিপুল পরিমাণ অর্থ সাহায্য করে ক্যামেরুনের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে। অন্য দিকে সেখানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে।
বাকি ইউরোপের পরিস্থিতি খানিকটা স্বাভাবিক হলেও রাশিয়ায় নতুন করে করোনা পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়াবহ চেহারা নিচ্ছে। জার্মানি এবং ফ্রান্সকে টপকে রাশিয়া এখন পঞ্চম বৃহত্তম করোনা আক্রান্ত রাষ্ট্র। মোট আক্রান্তের পরিমাণ ১ লাখ ৭৭ হাজার। গত চার দিনে রেকর্ড পরিমাণ রোগী বেড়েছে। একেক দিন আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে।
শরণার্থী ও বস্তিবাসীরা যেমন আছেন
শরণার্থী শিবির আর বস্তি এলাকায় সামাজিক দূরত্ব ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা কঠিন৷ তারপরও যতটা সম্ভব সেখানকার বাসিন্দাদের রক্ষায় কাজ করছে বিভিন্ন দেশের সরকার ও সংস্থা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Pilick
ইয়েমেন
হুতিদের বিরুদ্ধে সৌদি জোটের সংঘাতের কারণে ইয়েমেনের প্রায় ৩৬ লাখ মানুষকে বাড়িঘর ছেড়ে দেশের ভেতরে অন্য জায়গায় আশ্রয় নিতে হয়েছে৷ বেশিরভাগকেই এখন অল্প জায়গায় গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে৷ এই অবস্থায়ও করোনার হাত থেকে কীভাবে বাঁচা যায় তা শেখাচ্ছেন ইউনিসেফের স্বেচ্ছাসেবীরা৷
ছবি: UNICEF/UNI324899/AlGhabri
সিরিয়া
সিরিয়া-তুরস্ক সীমান্তের কাছে অবস্থিত আক্রাবত শরণার্থী শিবির৷ সেখানকার বাসিন্দাদের করোনার ঝুঁকি সম্পর্কে জানাতে জাতিসংঘের কর্মীরা নিয়মিত শিবিরে যাচ্ছেন৷ হাতে তৈরি পুতুলের সহায়তায় করোনার বিপদ সম্পর্কে শরণার্থীদের সতর্ক করা হচ্ছে৷
ছবি: UNICEF/UNI326167/Albam
ফিলিপাইন্স
২০১৩ সালের টাইফুন হাইয়ানের কারণে এখনও অনেককে তাকলোবান শহরের শিবিরে বাস করতে হচ্ছে৷ সেখানকার পাবলিক টয়লেটগুলো থেকে করোনা ছড়াচ্ছে৷
ছবি: UNICEF/UNI154811/Maitem
জাম্বিয়া
গত দুই বছর ধরে খরার কারণে জাম্বিয়ার গেম্বে উপত্যকা এলাকায় বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে৷ করোনার এই সময়ে নিয়মিত হাত ধোয়া জরুরি৷ তাই ইউনিসেফ ঐ এলাকায় পানির ব্যবস্থা করছে৷
ছবি: UNICEF/UNI308267/Karin Schermbrucker
কেনিয়া
বিভিন্ন স্থানে পানির স্টেশন বসিয়েছে কেনিয়া৷ ছবিতে নাইরোবির এক শিশুকে হাতে ধুতে দেখা যাচ্ছে৷ তার আগে সে ভালোভাবে হাত ধোয়ার নির্দেশনা দেখে নিচ্ছে৷
ছবি: UNICEF/UNI322682/Ilako
জর্ডান
১৩ বছরের কাফা পানি সংগ্রহ করে ফিরছে৷ দেশটির সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরের নারীরা এখন বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে সাবান তৈরি করে বিতরণ করছে৷
ছবি: UNICEF/UNI156134/Noorani
ভারত
সে দেশে ঘরেই মাস্ক তৈরির পরামর্শ দেয়া হচ্ছে৷ ফলে গ্রামাঞ্চলের নারীদের আয়ের একটি পথও খুলেছে৷ ছবিতে গুঞ্জ এনজিও-র এক নারীকে মাস্ক তৈরি করতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Goonj
বাংলাদেশ
রোমান হোসেন ঢাকার রাস্তায় জীবাণুনাশক বিতরণ করছেন৷ সেই সঙ্গে তিনি সবাইকে হাত ধোয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করেন৷ শারীরিকভাবে অক্ষমদের নিয়ে গঠিত বিভিন্ন গোষ্ঠীর স্বেচ্ছাসেবকেরা ঢাকার অনেক স্থানে জীবাণুনাশক বিতরণ করছেন৷
ছবি: CDD
গুয়েতেমালা
গত বছরের খরার কারণে হিউহিউতেনানগো এলাকায় খাবার সংকট তৈরি হয়েছে৷ তার উপর করোনা এসে পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তুলেছে৷ আদিবাসী সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের প্রতিদিন খাবারের পাশাপাশি হাইজিন রক্ষার বিভিন্ন উপকরণ দেয়া হচ্ছে৷ এছাড়া সচেতনতামূলক বার্তা সম্বলিত নির্দেশনাও পাচ্ছেন তারা৷
ছবি: ASEDEEs
9 ছবি1 | 9
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী শুক্রবার সকাল পর্যন্ত গোটা বিশ্বে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩৯ লাখ ১৬ হাজার। মৃত দুই লাখ ৭০ হাজার। সুস্থ হয়েছেন ১৩ লাখ ৪৩ হাজার।
করোনার প্রকোপ যত দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে, পৃথিবী জুড়ে অর্থনীতি ততই সংকটজনক চেহারা নিচ্ছে। অর্থনৈতিক ভাবে পৃথিবীর তৃতীয় শক্তিশালী দেশ জাপানে গভীর মন্দা শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আপাতত এই সংকট কাটার কোনও সম্ভাবনা নেই।
এ দিকে হংকংয়ের একটি বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি জানিয়েছে, শুধু মুখ আর নাক নয়, চোখ দিয়েও করোনা ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করছে। শুধু তাই নয়, তাদের বক্তব্য সার্স ভাইরাসের চেয়ে করোনা অন্তত ১০০ গুণ বেশি শক্তিশালী।
একগুচ্ছ খারাপ খবরের মধ্যে সামান্য সুসংবাদ অস্ট্রেলিয়ায়। দেশের সরকার ঠিক করেছে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে ধীরে ধীরে লকডাউন পুরোপুরি তুলে নেওয়া হবে। তবে সামাজিক দূরত্বের মতো কিছু বিষয়ে বিধিনিষেধ কার্যকর থাকবে।