পাখিদের মহামারি শুরু হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। রোগ এখনো চিহ্নিত করা যায়নি। ওয়াশিংটন এলাকায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
করোনায় রক্ষা নেই, এবার পাখির মহামারি শুরু হয়েছে অ্যামেরিকায়। রাজধানী থেকে শুরু করে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে পাখির মৃতদেহ পড়ে আছে। প্রায় দুই মাস ধরে এই মহামারি চলছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু কীভাবে পাখির মৃত্যু হচ্ছে, তা এখনো অস্পষ্ট।
করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময়ে ভারতে পাখির মহামারি দেখা গিয়েছিল। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাখির মরক এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল, যে হাঁস-মুরগি খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল সরকার। এবার সেই একই সমস্যা শুরু হয়েছে অ্যামেরিকায়। প্রায় গোটা অ্যামেরিকা জুড়েই পাখির মৃতদেহ পাওয়া যাচ্ছে। গত এপ্রিল মাস থেকেই পাখির মরক শুরু হয়েছে বলে স্থানীয় মানুষের দাবি।
বার্ড ফ্লু সম্পর্কে কিছু তথ্য
বার্ড ফ্লু মুরগির রোগ হলেও সেটা মানুষের দেহেও প্রবেশ করতে পারে৷ বার্ড ফ্লুর নানা তথ্য নিয়ে সাজানো হয়েছে এই ছবিঘর৷
ছবি: Reuters
বার্ড ফ্লু কী?
বার্ড ফ্লু পাখিদের একধরনের জ্বর৷ কিন্তু এই জ্বরটির জন্য দায়ী এক ধরনের ভাইরাস, যার নাম এইচ৫এন১৷ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হাঁস-মুরগি থেকে ভাইরাসটি মানুষের দেহে প্রবেশ করতে পারে৷ ছবিতে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নীচে এইচ৫এন১ ভাইরাসকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: AP
বার্ড ফ্লু যেভাবে ছড়ায়
এইচ৫এন১ ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো বন্য পাখি, সামুদ্রিক বা শীতের অতিথি পাখির মাধ্যমে রোগটি ছড়াতে পারে৷ যেমন অতিথি পাখি কোনো পুকুরের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় মলত্যাগ করলে সেই পুকুরে নামা হাঁস ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে৷ সেই হাঁস থেকে ডিম বা মাংসের মাধ্যমে ভাইরাসটা ঢুকে যেতে পারে মানবদেহে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
মহামারির আশঙ্কা
অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করে বিশেষজ্ঞদের মনে শঙ্কা জেগেছে যে, এইচ৫এন১ ভাইরাসের কারণে হয়ত বহু লোকের প্রাণ যেতে পারে৷ যেমনটা এর আগে অন্তত তিনবার হয়েছে৷ ১৯১৮-১৯ সালে এইচ১এন১-র কারণে চার কোটি, ১৯৫৭-৫৮ সালে এইচ২এন২-র কারণে ২০ লাখ এবং ১৯৬৮-৬৯ সালে এইচ৩এন২-র কারণে সাত লাখেরও বেশি মানুষ মারা গেছে গোটা বিশ্বে৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Press
বর্তমান অবস্থা
আশার কথা, বার্ড ফ্লু এখনো ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারেনি৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে, ২০০৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৬৫০ জন মানুষ বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছে৷ এর মধ্যে মারা গেছে ৩৮৬ জন৷ অবশ্য বিশেষজ্ঞরা সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথেষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করে রেখেছেন৷
ছবি: Reuters
বাংলাদেশে একজনের মৃত্যু
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত সাতজন বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছে৷ এর মধ্যে একজন শিশুর মৃত্যু হয়েছে গত বছর৷ কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের ঐ শিশুটি তার বাড়ির মুরগি থেকে বার্ড ফ্লু ভাইরাসটি পেয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মুরগি নিধন
বাংলাদেশে মুরগির দেহে বার্ড ফ্লু প্রথম ধরা পরে ২০০৭ সালে৷ তখন সারা দেশে মুরগির খামার ছিল প্রায় দেড় লাখ৷ পরবর্তীতে বার্ড ফ্লু আতঙ্কে গণহারে মুরগি নিধন শুরু হওয়ায় খামারের সংখ্যা অনেক কমে যায়৷ এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন অনেক পোল্ট্রি ব্যবসায়ী৷
ছবি: Reuters
6 ছবি1 | 6
পাখি বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা শুরু করেছেন। তাদের বক্তব্য, প্রথম সংক্রমণ ঘটছে পাখির চোখে। তারপর তা স্নায়ুতে ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে পাখি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে এবং মৃত্যু হচ্ছে। জিম মোসামা একজন পাখি বিশেষজ্ঞ। তার বক্তব্য, পাখিদের চোখে সংক্রমণ এর আগেও বিভিন্ন রোগে ঘটেছে। কিন্তু তা যেভাবে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, সেটাই চিন্তার।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে ওয়াশিংটনে পাখি বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করছেন মোসামা। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, প্রাথমিক ভাবে বিষয়টি স্বাভাবিক বলেই মনে হচ্ছিল। যত দিন যাচ্ছে, ততই বোঝা যাচ্ছে বিষয়টি মহামারির আকার ধারণ করেছে।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ওয়াশিংটন তো বটেই পার্শ্ববর্তী ৯৬৫ কিলোমিটার পর্যন্ত এই রোগ ছড়িয়ে গেছে। মূলত মধ্য অ্যামেরিকা থেকে পশ্চিম অ্যামেরিকা পর্যন্ত পাখিদের মৃতদেহ পাওয়া যাচ্ছে।
মহামারি যে শুরু হয়েছে, তা স্পষ্ট। কিন্তু এই মহামারির থেকে পাখিদের বাঁচানো যাবে কী করে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। কারণ রোগটিকেই এখনো চিহ্নিত করা যায়নি। তবে সবরকমের গবেষণা চলছে। মৃত পাখিদের ময়নাতদন্তও হয়েছে। রোগের উৎস খুঁজে বার করার চেষ্টা চলছে।