অ্যামেরিকায় আদমশুমারি
১৭ মে ২০১২সুবর্ণ সুযোগ ও সম্ভাবনার দেশ অ্যামেরিকা৷ যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে অনেক উঁচুতে পৌঁছানো যায় এই দেশে৷ জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার সামনেই সমান সুযোগ৷ সেইসঙ্গে তীব্র স্বাধীনচেতা মানুষ৷ বাইরে থেকে কোনো হস্তক্ষেপ পছন্দ নয় মানুষের – এমনকি সরকার ভালো কিছু করতে চাইলেও নয়৷ সঙ্গে অস্ত্র রাখা মৌলিক অধিকার বলে মনে করে জনসংখ্যার একটা বড় অংশ, যে অধিকার তারা কোনমতেই ছাড়তে প্রস্তুত নয়৷ একেই বলে ‘অ্যামেরিকান ওয়ে অব লাইফ'৷
তা সেই অ্যামেরিকার আজকের কী দশা? ইউরোপের অভিবাসীরা অজানার পথে পাড়ি দিয়ে যে দেশ ‘আবিষ্কার' করেছিল, যেখানে পাকাপাকি থাকতে শুরু করেছিল এবং অপ্রিয় কাজ করাতে আফ্রিকা থেকে ক্রীতদাস নিয়ে এসেছিল, সেখানে আজ কারা বসবাস করে? ২০১১ সালের আদমশুমারিতে বেশ চমকপ্রদ সব তথ্য উঠে এসেছে৷ তাতে দেখা যাচ্ছে, এই প্রথম সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর শিশুদের সংখ্যা সংখ্যাগুরু সমাজের শিশুদের তুলনায় বেড়ে গেছে৷ অর্থাৎ জাতিগত ভিত্তিতে জনসংখ্যার অনুপাতের হার দ্রুত বদলে যাচ্ছে৷ তবে অর্থনীতির বেহাল অবস্থার কারণে অভিবাসন অনেক কমে এসেছে৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন সমাজে এর আগে এই মাত্রার বৈচিত্র্য দেখা যায় নি, যেমনটা বর্তমান প্রজন্মের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে৷
সংখ্যালঘুদের মধ্যে সবচেয়ে বড় গোষ্ঠী হলো হিসপ্যানিক – অর্থাৎ স্প্যানিশ ভাষাভাষী মানুষ৷ নতুন হিসেব অনুযায়ী জনসংখ্যার ৩৬.৬ শতাংশ অ্যামেরিকা মহাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছে৷ অর্থাৎ এই প্রবণতা চলতে থাকলে ২০৪০ সালের মধ্যে হিসপ্যানিক নয় – এমন শ্বেতাঙ্গ মানুষ অ্যামেরিকায় সংখ্যালঘু হয়ে পড়তে পারে৷ চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে চূড়ান্ত তথ্য প্রকাশিত হলে চিত্রটা আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে৷
পরিসংখ্যানে আরও কিছু উল্লেখযোগ্য তথ্য উঠে এসেছে৷ সামগ্রিকভাবে হিসপ্যানিক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়ে চললেও গত কয়েক বছরে তাদের সংখ্যা কিন্তু অত্যন্ত কম হারে বাড়ছে৷ অ্যামেরিকার আকর্ষণে আগের মতো শরণার্থীর ঢল নামছে না৷ ফলে একদিকে অভিবাসনের প্রবণতা কমছে, অন্যদিকে তাদের সমাজে জন্মহারও কমতির দিকে৷ তা সত্ত্বেও হিসপ্যানিক'দের গড় বয়স কম হওয়ায় সমাজের বাকি অংশের তুলনায় তাদের ক্ষেত্রে জন্মহার বেশি৷
মন্দার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ করতে রাজনৈতিক চাপ বাড়ছে৷ তারই মধ্যে আদমশুমারির এই ফল প্রকাশিত হলো৷ অভিবাসন কমে চলেছে, এটা জানতে পেরে এখন আর অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজনৈতিক দাবি অনেকটা কমজোর হয়ে পড়বে৷ অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সমাজের সব অংশেই জন্মহার পড়তির দিকে৷ কিন্তু অর্থনীতি চাঙ্গা হলে যখন আবার কর্মক্ষম পারদর্শী কর্মীদের প্রয়োজন হবে, তখন অভিবাসী আকর্ষণ করা ছাড়া উপায় থাকবে না৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন (এপি, এএফপি)
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ