যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভোটগণনা এখনো চলছে। সেনেট দখল নিয়ে রুদ্ধশ্বাস লড়াইও চলছে। হাউসে এগিয়ে রিপাবলিকানেরা।
বিজ্ঞাপন
মধ্যবর্তী নির্বাচনে দলকে জেতাতে পারেননি বাইডেন। হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠতার দিকে এগোচ্ছে। তবে রয়টার্স জানাচ্ছে, চূড়ান্ত ফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে, তার জন্য এখনো কিছুটা সময় লাগবে। সেনেটে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দুই দলই ৪৮টা করে আসন পেয়েছে। কে এখানে গরিষ্ঠতা পাবে, তা স্পষ্ট হয়নি। তিনটি আসনের ফল আসা বাকি।
এই অবস্থায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তিনটি খুব উল্লেখযোগ্য কথা বলেছেন। হো.য়াইট হাউসে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেছেন, রিপাবলিকানদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তিনি কাজ করতে প্রস্তুত। তিনি জানিয়েছেন, ''অ্যামেরিকার ভোটদাতারা এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন, রিপাবলিকানদেরও আমাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে।''
বাইডেন বলেছেন, তিনি ২০২৪-এ আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান। আগামী বছরের গোড়ায় তিনি এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
বাইডেনের প্রথম একশ দিন, সাফল্য ও ব্যর্থতা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে জো বাইডেনের প্রথম একশ দিন। কী করতে পেরেছেন এই একশ দিনে। কী পারেননি। তারই খতিয়ান এই ছবিঘরে।
ছবি: Tasos Katopodis/Getty Images/AFP
করোনার বিরুদ্ধে লড়াই
বাইডেন যখন প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব নিলেন, তখন অ্যামেরিকার করোনা পরিস্থিতি খুবই খারাপ। প্রচুর আক্রান্ত। মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না। বাইডেন প্রথমেই করেনা নিয়ে টাস্কফোর্স গঠন করেন। সব ফেডারেল অফিসে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করেন। টিকা দেয়ার গতি অনেকটাই বাড়িয়ে দেন। করোনা-বিধি পালন করার জন্য জোর দেন।
ছবি: Jonathan Ernst/REUTERS
বাইডেনের দাবি
প্রেসিডেন্ট হিসাবে প্রথম ১০০ দিন উপলক্ষে মার্কিন কংগ্রেসে ভাষণ দেন বাইডেন। তার দাবি, ''করোনাকে ঠেকিয়ে অ্যামেরিকা আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আমরা আবার কাজ করছি, স্বপ্ন দেখছি, বিশ্বের নেতৃত্ব দিচ্ছি। আমরা নিজেদের ও বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে পেরেছি, অ্যামেরিকা কখনো হাল ছাড়ে না।''
ছবি: Chip Somodevillaat/PREUTERS
পরিকাঠামো উন্নতির জন্য
বাইডেন পরিকাঠামো উন্নতির জন্য চার ট্রিলিয়ান ডলারের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। এতে রাস্তা, পাইপলাইন, ব্রিজ সহ সব পরিকাঠামো উন্নত করা হবে, সারানো হবে। পরিকাঠামো ক্ষেত্রে অর্থ খরচ করার মানে কর্মসংস্থান তৈরি হবে। অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। দেশের পরিকাঠামোর ভোলবদল হবে। তাতে আরো বিনিয়োগ আসবে।
ছবি: Justin Sullivan/Getty Images/AFP
বড়লোকদের উপর কর বসিয়ে
পরিকাঠামোতে খরচ করার জন্য এই বিপুল পরিমাণ অর্থ তিনি জোগাড় করবেন বড়লোকদের উপর, কর্পোরেটের উপর কর বসিয়ে। তিনি বড় কর্পোরেটের কর সাত শতাংশ বাড়াবার কথা বলেছেন। ট্রাম্পের আমলে কর্পোরেটের কর কমিয়ে দেয়া হয়েছিল। তিনি তা বাড়িয়েছেন।
ছবি: Tasos Katapodis/Getty Images/AFP
ন্যূনতম মজুরি
বাইডেন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কেন্দ্রীয় স্তরে ন্যূনতম মজুরি হবে, ঘণ্টায় ১৫ ডলার। তিনি এই মজুরি ৩৭ শতাংশ বাড়িয়েছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগনের মতো বাইডেনও বলছেন, আর্থিক সুবিধা একেবারে নীচ পর্যন্ত পৌঁছতে হবে।
ছবি: TransCanada/G. Waddell
সকলকে নিয়ে চলা
প্রচারের সময় বাইডেন বলেছিলেন, তিনি সকলকে নিয়ে চলবেন। তিনি অতীতে কৃষ্ণাঙ্গদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি কমলা হ্যারিসকে তার ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী করেছিলেন। জেতার পরে বাইডেন প্রশাসনে প্রচুর কৃষ্ণাঙ্গ গুরু দায়িত্ব পেয়েছেন। এমন অনেক মানুষকে প্রশাসনে নিয়েছেন, যাদের শিকড় ভারত, বাংলাদেশ সহ এই উপমহাদেশে আছে। উপরের ছবিটি কমলা হ্যারিসের।
ছবি: Drew Angerer/Getty Images/AFP
চীনের সঙ্গে সম্পর্ক
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমলে চীনের সঙ্গে অ্যামেরিকার সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকে। বাইডেন আসার পর চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করতে চাইছেন। চীন ও অ্যামেরিকার মধ্যে একদফা আলোচনা হয়েছে। তাতে অবশ্য দুই পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ বেশি করেছে। তবে আলোচনা শুরু হয়েছে। বাইডেন বলেছেন, তিনি চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতে যাবেন না। তবে অ্যামেরিকার স্বার্থরক্ষা করবেন।
ছবি: Frederic J. Brown/REUTERS
ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি
ইসরায়েলের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও বাইডেন ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তিতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। ইউরোপের কিছু দেশের সঙ্গে এখন ইরানের আলোচনা চলছে। উপরের ছবিটি ভিয়েনায় গত ১৫ এপ্রিল ইরানের পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছেন ইইউ প্রতিনিধিরা।
ছবি: EU Delegation in Vienna/Handout/AA/picture alliance
বাইডেনের সমালোচনা
অভিযোগ উঠেছে, অ্যামেরিকার স্বার্থরক্ষা করতে গিয়ে বাইডেন গরিব দেশগুলির দিকে তাকাচ্ছেন না। তাদের ভ্যাকসিন দেয়া, সাহায্য করার ক্ষেত্রে বাইডেন দরাজ হতে পারেননি। করোনার প্রকোপ বাড়ার পর ভারত বারবার সাহায্য চেয়েছে। কিন্তু তিনি তা দিতে দেরি করেছেন।
ছবি: Jonathan Ernst/REUTERS
9 ছবি1 | 9
বাইডেনের দাবি, যেরকম লাল-ঝড় হবে বলা হচ্ছিল, সেরকম হয়নি। রিপাবলিকান পার্টির রং হলো লাল। তাই লাল ঝড় মানে রিপাবলিকানদের বিপুল জয়।
রয়টার্স জানাচ্ছে, ফলাফলের বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, ৪০ বছরে সবচেয়ে বেশি মুদ্রাস্ফীতির জন্য ভোটদাতারা বাইডেনকে শাস্তি দিয়েছেন ঠিকই, আবার তারা রিপাবলিকানদেরও বুঝিয়ে দিয়েছেন, গর্ভপাত-বিরোধী নীতি, ভোট-গণনার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলাকে তারা মোটেই ভালো চোখে দেখছেন না।
ডনাল্ড ট্রাম্প যাদের সমর্থন করেছিলেন, তারা অনেকেই হেরেছেন। ফলে ট্রাম্প ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলের প্রার্থী হতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় থাকছে।
৭৫ বয়সি ভোটদাতা ইভন ল্যাংডন জানিয়েছেন, ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো তার ইগো।
বাইডেন বলেছিলেন, মঙ্গলবারের নির্বাচন হলো মার্কিন গণতন্ত্রের বড় পরীক্ষা। আর ট্রাম্প বলেছিলেন, ২০২০-র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফলাফল চুরি করা হয়েছিল। যারা ট্রাম্পের দাবিকে সমর্থন করে ভোটে লড়েছেন, তাদের অনেকেই হেরেছেন। আর যারা এর বিরোধিতা করেছিলেন, তাদের অনেকে জিতেছেন।
বাইডেন বলেছেন, ''আমি বিশ্বাস করি আজ গণতন্ত্রের পক্ষ শুভদিন।''
১৯৭৩ সালে এক মামলার রায়ে যুক্তরাষ্ট্রের নারীরা পেয়েছিলেন গর্ভপাতের অধিকার৷ সেই অধিকার এখন আইনত নিষিদ্ধ৷ গর্ভপাত নিষিদ্ধ করা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে চলছে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ...
ছবি: Evelyn Hockstein/REUTERS
৪৯ বছর পর…
১৯৭৩ সালের রো বনাম ওয়েড মামলা এতদিন যুক্তরাষ্ট্রে নারী অধিকার ইতিহাসের মাইলফলক মামলার মর্যাদা পেয়েছে৷সম্প্রতি ডবস বনাম নারীদের স্বাস্থ্য সংস্থার গর্ভপাত বিষয়ক এক মামলায় ৪৯ বছর আগে দেয়া গর্ভপাতের অধিকার আইনত নিষিদ্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট৷ সর্বোচ্চ আদালতের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে চলছে বিক্ষোভ৷ ওপরের ছবিতে নিউইয়র্কের বিক্ষোভ মিছিল৷
ছবি: CAITLIN OCHS/REUTERS
নারীরা ভীত
সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জানানো এক নারীর হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘‘ (এই রায়ে) আমাদের সবারই ভয় পাওয়া উচিত৷’’ বিক্ষোভকারীরা মনে করেন, গর্ভপাতের অধিকার কেড়ে নিলে অনেক নারীর জীবন সংকটে পড়বে৷
ছবি: Caitlin Ochs/REUTERS
এ রায় গর্ভধারণ বাধ্যতামূলক করার নামান্তর...
অনেকেই মনে করছেন গর্ভপাতের অধিকার কেড়ে নেয়া মানে অনেক নারীকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে গর্ভধারণে বাধ্য করা৷ তাই ছবির প্ল্যাকার্ডে ‘‘কোনো বাধ্যতামূলক গর্ভধারণ নয়’’ লিখে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জানাচ্ছেন এক নারী৷ ওহাইয়োর কলম্বাস শহরের ছবি৷
ছবি: Megan Jelinger/REUTERS
স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও গর্ভপাত
এক নারীর (মাঝখানে) হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘‘অ্যাবরশন ইজ হেল্থকেয়ার৷’’ তার মতো অনেকেই মনে করেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীর সুস্থ জীবনের স্বার্থেই গর্ভপাতের অধিকার থাকা প্রয়োজন৷ ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের মায়ামির ছবি৷
ছবি: Marco Bello/REUTERS
‘শরীর আমার, সিদ্ধান্তও আমার...’
মায়ামির বিক্ষোভ সমাবেশের ছবি৷এক বিক্ষোভকারীর হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘‘নট ইয়োর বডি, নট ইওর লাইফ, নট ইয়োর চয়েস৷’’ এর মাধ্যমে আদালতকে তিনি বলতে চাইছেন, শরীর যেহেতু নারীর, জীবন নারীর, তাই গর্ভপাত করাবেন কি করাবেন না তা ঠিক করার অধিকারও নারীরই থাকা উচিত৷
ছবি: Marco Bello/REUTERS
‘শরীর থেকে দূরে রাখুন’
নিউিয়র্কের রাস্তায় এক নারী আদালতকে বলছেন, ‘‘আইনগুলো আমার শরীর থেকে দূরে রাখো৷’’
ছবি: Brendan McDermid/REUTERS
নারীদের বাঁচান!
ওয়াশিংটনের এক বিক্ষোভকারী প্ল্যাকার্ডে লিখেছেন, ‘‘নারীরা মারা যাবেন৷’’ অর্থাৎ, তিনি মনে করেন গর্ভপাতের অধিকার কেড়ে নেয়ার কারণে অনেক নারীর অকালমৃত্যু হবে৷ তাই নারীদের জীবন রক্ষার স্বার্থেই গর্ভপাতের অধিকারের দাবি জানাচ্ছেন তিনি৷
ছবি: Evelyn Hockstein/REUTERS
নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নাও!
ম্যাসাচুসেটসের এক বিক্ষোভকারীর হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘‘ আমাদের শরীর থেকে নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নাও!’’
ছবি: Brian Snyder/REUTERS
পুরুষদের হুমকি...
নিউইয়র্কের এই নারী জানাচ্ছেন, রো বনাম ওয়েড মামলার রায়ে দেয়া গর্ভপাতের অধিকার ফিরে না আসা পর্যন্ত তিনি পুরুষদের সঙ্গে যৌনমিলনে বিরত থাকবেন৷
ছবি: Brendan McDermid/REUTERS
9 ছবি1 | 9
রিপাবলিকানরা কী করবেন
রিপাবলিকানরা যদি সেনেটের নিয়ন্ত্রণ পান, তাহলে তারা বিচারবিভাগীয় ও প্রশাসনিক পদে বাইডেনের প্রার্থীদের খারিজ করতে পারবেন। তাই তারা সেনেটে ডেমোক্র্যাটদের পিছনে ফেলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা চাইছেন।
রিপাবলিকানরা যদি দুই কক্ষের নিয়ন্ত্রণ পান, তাহলে সামাজিক সুরক্ষা, মেডিকেয়ার সেফটি-নেট প্রকল্পে অর্থ ছাঁটাই করতে বলবেন। সেই সঙ্গে ২০১৭ সালের স্থায়ী কর ছাঁটাইয়ের আইন আবার করতে বলবেন। এই বছর আগের আইনের সময়সীমা শেষ হচ্ছে।
তারা বিভিন্ন খাতে খরচ কমাবার দাবি তুলবেন। এর ফলে ইউক্রেনকে অর্থসাহায্য করার ক্ষেত্রে অসুবিধায় পড়তে পারেন বাইডেন।
এমনিতে যে দলের প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউসে থাকেন, তারা মধ্যবর্তী নির্বাচনে খারাপ ফল করে। কিন্তু রিপাবলিকান নেতা রব জেসমার বলেছেন, ''আমরা ততটা ভালো ফল করতে পারিনি।''
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা থাকায় মার্কিন শেয়ার বাজারও পড়েছে।