প্রধানমন্ত্রী হয়েই শাহবাজ শরীফ অ্যামেরিকা ও চীনকে ইতিবাচক বার্তা দিলেন। ভারতের সঙ্গেও সুসম্পর্কের কথা বললেন।
বিজ্ঞাপন
ইমরান খানের সময়ে অ্যামেরিকার সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়। শাহবাজ শরীফ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরই জানিয়েছেন, অ্যামেরিকার সঙ্গে সহযোগিতার নীতি নিয়ে চলার প্রয়োজন আছে। চীনকে আশ্বস্ত করে তিনি বলেছেন, দুই দেশের সম্পর্ক আরো মজবুত হবে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করার কথা বলেছেন তিনি।
শাহবাজ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর হোয়াইট হাউস তাকে অভিনন্দন জানায়। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি বলেন, অ্যমেরিকার স্বার্থের জন্য গণতান্ত্রিক পাকিস্তান খুবই জরুরি। তার জবাবে প্রধানমন্ত্রীর অফিস জানিয়েছে, নতুন সরকার শান্তি, উন্নয়ন ও সুরক্ষার জন্য অ্যামেরিকার সঙ্গে গঠনমূলক ও ইতিবাচক সম্পর্ক চায়।
ইমরানের অভিযোগ ছিল, তিনি রাশিয়াপন্থি নীতি নিয়েছিলেন বলে অ্যামেরিকা তাকে ক্ষমতাচ্যূত করতে উঠেপড়ে লেগেছিল। এমনকী, পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে রীতিমতো হুমকি দিয়েছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। অ্যামেরিকা অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে।
শাহবাজ শরীফ: ব্যবসায়ী থেকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী
পাকিস্তানের ২৩তম প্রধানমন্ত্রী হলেন পিএমএল-এন নেতা শাহবাজ শরীফ৷ ব্যবসা সংগঠনের নেতৃত্ব, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব, বিরোধী দলীয় নেতার ভূমিকার পর কঠিন এক সময়ে সরকার প্রধান হলেন তিনি৷ ছবিঘরে জানুন তার বিস্তারিত৷
ছবি: picture alliance/dpaEPA/PMLN
ব্যবসায়ী পরিবার
মিয়া মোহাম্মদ শাহবাজ শরীফের জন্ম ১৯৫১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পাঞ্জাবের লাহোরে৷ তার বাবা ছিলেন শিল্পপতি মিয়া মোহাম্মদ শরীফ৷ স্নাতক শেষ করে শাহবাজ শরীফ নিজেও পারিবারিক প্রতিষ্ঠান ‘ইত্তেফাক’-এর হাল ধরেন৷ ১৯৮৫ সালে তিনি লাহোর চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন৷
ছবি: DW/T. Shahzad
রাজনীতির ময়দানে
১৯৮৮ সালে পাঞ্জাব অ্যাসেম্বলির সদস্য হওয়ার মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন ব্যবসায়ী শাহবাজ৷ ১৯৯০ সালে এমএনএ নির্বাচিত হওয়ার পর ১৯৯৩ সালে পাঞ্জাব অ্যাসেম্বলির বিরোধী দলের নেতা হয়ে ওঠেন তিনি৷
ছবি: Reuters/A. Soomro
লিডার অব দ্য হাউজ
পাঞ্জাব অ্যাসেম্বলির বিরোধী দলের নেতা হিসেবে সাফল্যের পথ ধরে ১৯৯৭ সালে তিনি লিডার অব দ্য হাউজ নির্বাচিত হন৷ তখন তিনি কঠোর প্রশাসক হিসেবেও নাম কুড়ান৷ পাঞ্জাব প্রদেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবেশ উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন তিনি৷
ছবি: DGPR Pakistan
গ্রেপ্তার ও নির্বাসন
১৯৯৯ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানের তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল পারভেজ মোশাররফ পিএমএল-এন সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে৷ সেই সময় গ্রেপ্তার এবং পরবর্তীতে ২০০০ সালের ডিসেম্বরে পরিবারসহ নির্বাসিত হন সৌদি আরবে৷
ছবি: Anjum Naveed/AP/picture alliance
রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন
জেদ্দাহ ও লন্ডনে থাকাকালে বেশ কয়েক বছর রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ছিলেন শাহবাজ৷ ২০০৭ সাালের ২৫ নভেম্বর ভাই নওয়াজ শরীফের সঙ্গে পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তন করেন৷ এরপর থেকে রাজনীতির ময়দানে সক্রিয় তিনি৷ ২০০৯ সালে পাঞ্জাবের ২১তম মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন৷ প্রদেশের উন্নয়নে এসময় বেশ কিছু অবকাঠামো প্রকল্প নেন৷ তার সামাজিক প্রকল্প ‘সস্তা তন্দুর’ এবং ‘আশিয়ানা ঘর’ প্রশংসা কুড়ায়৷ দুর্নীতি দমনে কঠোর অবস্থানও নেন তিনি৷
ছবি: Reuters/M. Raza
বিরোধী দলীয় নেতা
২০১৩ সালে তৃতীয় দফা পাঞ্জাব মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান শাহবাজ৷ ২০১৮ সালে পিএমএল-এন পরাজিত হলে এই অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে৷ এসময় তিনি জাতীয় পরিষদের বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচিত হন৷ ২০১৯ সালে অর্থ পাচারের অভিযোগে পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো তার ও তার সন্তানের নামে থাকা ২৩ সম্পত্তি জব্দ করলে বিপাকে পড়েন শাহবাজ৷ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০২১ সালের এপ্রিলে জামিন পান শাহবাজ৷
ছবি: Anjum Naveed/AP/picture alliance
প্রধানমন্ত্রীর দুয়ার
চলতি বছরের মার্চে জাতীয় পরিষদে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে বিরোধী দলগুলো৷ নানা নাটকীয়তার পর ইমরান খান সেই অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হন৷ প্রধানমন্ত্রীত্বের দুয়ার খোলে শাহবাজের জন্য৷ বিদেশ নীতির ব্যর্থতা, অর্থনৈতিক সংকটসহ যেসব কারণে ইমরান ক্ষমতা হারিয়েছেন, সেগুলো সামাল দেয়াই এখন পাকিস্তানের ২৩তম প্রধানমন্ত্রীর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ৷
ছবি: picture alliance/dpaEPA/PMLN
এক পরিবারের দুই প্রধানমন্ত্রী
দ্বিতীয়বারের মতো এক পরিবার থেকে দুই প্রধানমন্ত্রী পেলো পাকিস্তান৷ ১৯৯০ সালে এবং ১৯৯৭ সালে দুই দফা প্রধানমন্ত্রীত্বের দায়িত্ব পেয়েছিলেন শাহবাজ শরীফের ভাই নওয়াজ শরীফ৷ এর আগে ১৯৭৩ সালে জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং তারপর ১৯৮৮ সালে পাকিস্তানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন তার মেয়ে বেনজির ভুট্টো৷ ১৯৯৩ সালে দ্বিতীয়বারের জন্যেও নির্বাচিত হয়েছিলেন আতাতায়ীর হামলায় নিহত বেনজির৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
8 ছবি1 | 8
শরীফ প্রধানমন্ত্রী হয়ে অ্যামেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করার বার্তা দিলেন। তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, অ্যামেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করাই হবে তার সরকারের লক্ষ্য। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে ভাষণ দেয়ার সময় শরীফ বলেছেন, অ্যামেরিকার সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি আছে। তবে তার মানে এই নয় যে, ঐতিহাসিক সম্পর্ক শেষ হয়ে গেছে।
ভারত ও চীন নিয়ে
শাহবাজ শরীফকে অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার জবাবে শরীফ বলেছেন, পাকিস্তান শান্তি ও মানুষের সামাজিক-অর্থনৈতিক চাহিদার উপরই জোর দেবে। পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক চায়। তারা চায়, জম্মু ও কাশ্মীর-সহ সব বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান হোক।
চীনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স শরীফের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তাকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার সরকার চীনের সঙ্গে আর্থিক সহযোগিতা আরো বাড়াবে। তার আশা, চীন পাকিস্তানের শিল্প, কৃষি ও ডিজিটাল প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আরো বিনিয়োগ করবে।
পুটিনের বার্তা
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুটিনও শাহবাজ শরিফকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। একটি বিবৃতিতে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, নতুন সরকারের আমলে রাশিয়া ও পাকিস্তানের সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে।