কথা হয়েছে অ্যামেরিকা ও জার্মানির সঙ্গে। এবার ইইউ-র সঙ্গে বৈঠকে বসবে তালেবান।
বিজ্ঞাপন
বিশ্বের দেশগুলির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চায় তালেবান। তারা এখন একের পর এক দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলছে। আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি জানিয়েছেন, মঙ্গলবার তিনি দোহায় ইইউ-র প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
তালেবান-ইইউ বৈঠক নিয়ে
মুত্তাকি জানিয়েছেন, তারা বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে চান। ইতিমধ্যে কিছু বৈঠক হয়েছে। সবগুলোই ইতিবাচক বৈঠক। তিনি বলেছেন, ''আমরা বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চাই। আমরা একটা ভারসাম্যের নীতি নিয়ে চলতে চাই। একমাত্র এই নীতিই আফগানিস্তানকে স্থিরতা দিতে পারে।''
ইইউ-র মুখপাত্র নবিলা মাসরালি বলেছেন, আলোচনার মানে এই নয় যে, ইইউ আফগানিস্তানকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দিচ্ছে। তিনি বলেছেন, নারীদের অধিকার নিয়ে কথা হবে, আফগানিস্তানকে সাহায্য দেয়া নিয়েও কথা হবে।
জার্মান প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা
সোমবার জার্মান প্রতিনিধিদের সঙ্গে তালেবানের কথা হয়। সেখানে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের জন্য বিশেষ জার্মান প্রতিনিধি মার্কাস পটজেলও ছিলেন। তিনিই এখন আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূতের কাজ দেখছেন।
তালেবানের এই আফগানিস্তান
আফগানিস্তানে এখন আর বিদেশি সৈন্য নেই৷ সব জায়গায় শুধুই সশস্ত্র তালেবান যোদ্ধার উপস্থিতি৷ আরো অনেক পরিবর্তন চোখে পড়ছে দেশ জুড়ে৷ দেখুন ছবিঘরে..
ছবি: WANA NEWS AGENCY/REUTERS
যেন পুরুষের দেশ
তালেবান দখল নেয়ার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবন ফিরছে আফগানিস্তানে ৷দোকান, অফিস-আদালত খুলছে৷ তবে কোনো জায়গাতেই নারীদের তেমন দেখা যায় না৷ ছবির এই রেস্তোরাঁতেও খেতে আসা সবাই পুরুষ৷
ছবি: WANA NEWS AGENCY/REUTERS
লিঙ্গবৈষম্য
কাবুলের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আফগানিস্তানের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই এখন ছেলে আর মেয়েদের বসতে হয় আলাদা৷ মাঝে পর্দা অথবা কার্ডবোর্ডের দেয়াল দিয়ে আলাদা করা হয় তাদের৷ প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারী-পুরুষের বৈষম্য এভাবে তুলে ধরতে চায় তালেবান৷ এর কারণ জানাতে গিয়ে তালেবান নেতা আব্দুল বাগি হাক্কানি বলেন, ‘‘সহশিক্ষা ইসলামের মূল নীতিমালা এবং আমাদের জাতীয় মূল্যবোধ, রীতিনীতি এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক৷’’
ছবি: AAMIR QURESHI AFP via Getty Images
নারীর নিয়ন্ত্রিত অধিকার
হেরাতের মসজিদে এভাবেই এখন নামাজ আদায় করতে যান নারীরা৷ নারীদের শুধু নিজের পছন্দের পোশাক পরার অধিকারই কেড়ে নেয়া হয়নি, তালেবানের সাংস্কৃতিক কমিশনের প্রধান আব্দুল্লাহ ওয়াসিক জানিয়েছেন, এখন থেকে খেলাধুলাতেও সীমিত পরিসরে অংশ নিতে পারবেন মেয়েরা৷
ছবি: WANA NEWS AGENCY/REUTERS
অলি-গলিতেও সশস্ত্র তালেবান
ছবির এই রাস্তার মতো আফগানিস্তানের সব শহরের সব রাস্তায়ই থাকে তালেবান পাহারা৷ সশস্ত্র তালেবান যোদ্ধারা কেউ পশ্চিমা পোশাক পরেছেন কিনা, তালেবানবিরোধী কিছু করছেন কিনা এসব দিকে কড়া নজর রাখেন৷
ছবি: Haroon Sabawoon/AA/picture alliance
বেকারত্ব বাড়ছে
কাবুলের রাস্তার পাশে বসে কোনো কাজের সুযোগের অপেক্ষায় কয়েকজন দিনমজুর৷ আফগানিস্তানে বেকারত্ব দ্রুত বাড়ছে৷ জাতি সংঘের আশঙ্কা, বিদেশি সহায়তা না পেলে চলতি বছরের শেষ নাগাদ বেকারত্ব ভয়াবহ পর্যায়ে চলে যেতে পারে, দারিদ্র্যের হারও সর্বশেষ সমীক্ষার ৭২ শতাংশ থেকে বেড়ে শতকরা ৯৮ ভাগ হয়ে যেতে পারে৷
ছবি: Bernat Armangue/dpa/picture alliance
তালেবানকে চ্যালেঞ্জ
প্রতিবাদ, বিক্ষোভ রোধে লাঠি, বেত, এমনকি আগ্নেয়াস্ত্রও চালায় তালেবান৷ এ বিষয়ে তালেবানকে সতর্কও করেছে জাতিসংঘ৷ তালেবানের হামলায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে চারজন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন অনেক৷ তা সত্ত্বেও নিজেদের অধিকার আদায়ের দাবিতে সোচ্চার নারীরা৷ ওপরের ছবিতে এক নারী বিক্ষোভকারীর হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা আমাদের (নারীর) ক্ষমতার ফলাফল৷’’
ছবি: REUTERS
তালেবানের নারী সমর্থক
তালেবান দখল নেয়ার পর আফগানিস্তানে তালেবান সমর্থক নারীদেরও দেখা যাচ্ছে৷ ওপরের ছবিতে তালেবান সমর্থক নারীদের বিক্ষোভের এক প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘‘মুজাহিদিনের দৃষ্টিভঙ্গি ও ব্যবহারে আমরা সন্তুষ্ট৷ ’’
ছবি: AAMIR QURESHI/AFP/Getty Images
তালেবানের পক্ষপাত
তালেবানবিরোধীদের সমাবেশে হামলা হয়েছে, সেই খবর প্রকাশ করতে যাওয়া সাংবাদিকদেরও ধরে নিয়ে পিটিয়েছে তালেবান৷ অন্যদিকে তালেবান সমর্থকদের সমাবেশ কাভার করতে আহ্বান জানানো হয় সাংবাদিকদের৷
ছবি: AAMIR QURESHI/AFP/Getty Images
8 ছবি1 | 8
আলোচনার পর জার্মান প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, আফগানিস্তানে তালেবান এখন বাস্তব। মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী আফগানিস্তান ছেড়ে চলে গেছে। জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে এখনো যে জার্মান নাগরিকরা আছেন এবং যে সব আফগান নাগরিকদের প্রতি জার্মানির বিশেষ দায়িত্ব আছে, তারা যাতে নিরাপদে কাবুল ছাড়তে পারে তা নিয়ে কথা হয়েছে। জার্মানির প্রতিনিধিরা মানবাধিকার ও বিশেষ করে নারীদের অধিকাররক্ষা নিয়ে কথা বলেছেন।
তালেবান জার্মান প্রতিনিধিদের জানিয়েছে, তারা বিদেশি কূটনীতিকদের রক্ষা করবে। তারা আন্তর্জতিক ত্রাণ সংগঠনের কর্মীদেরও সুরক্ষা দেবে। আর গতমাসেই তালেবান মুখপাত্র বলেছিলেন, তারা জার্মানির সঙ্গে সরকারিভাবে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চান।
তালেবান যখন বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে একের পর এক বৈঠক করছে, তখন জাতিসংঘ জানিয়েছে, আফগানিস্তানের অর্থনীতি ভেঙে পড়ার মুখে। জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল গুতেরেস বলেছেন, অর্থনীতিকে বাঁচাতে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
পর্তুগালে আশ্রয় পেলেন আফগানিস্তানের নারী ফুটবলাররা
তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর সে দেশের যুব নারী দলের ফুটবলারদের কয়েকজন সপরিবারে পর্তুগালে আশ্রয় নিয়েছেন৷ তাদের একজন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে দেখা হওয়ারও স্বপ্ন দেখছেন৷
ছবি: Rodrigo Antunes/REUTERS
পর্তুগালে আশ্রয়
আগস্টের মাঝামাঝি তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে৷ এরপর তারা জানিয়ে দেয়, মেয়েদের হয়ত খেলাধুলা করার অনুমতি দেওয়া হবে না, কারণ, তারা মনে করে এটি ‘প্রয়োজনীয় নয়’৷ এবং মেয়েতাদের মুখ ও শরীর ঢাকা থাকবে না৷ তাই সে দেশের যুব নারী দলের ফুটবলারদের কয়েকজন পরিবারসহ ১৯ সেপ্টেম্বর পর্তুগালে পৌঁছেছেন৷ মোট ৮০ জন পর্তুগাল গেছেন৷ তাদের মধ্যে বাচ্চাও আছে৷ পর্তুগাল তাদের আশ্রয় দিয়েছে৷
ছবি: Rodrigo Antunes/REUTERS
অধিনায়কের উদ্যোগ
আফগানিস্তানের নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক ফারখুন্দা মুহতাজ (কথা বলছেন) ঐ ফুটবলারদের পর্তুগালে নেয়ার ব্যবস্থা করেন৷ মুহতাজ নিজে ক্যানাডায় থাকেন৷ সেখানে তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল দলের সহকারি কোচ৷ বুধবার রাতে তিনি ফুটবলারদের সঙ্গে দেখা করতে লিসবন গিয়েছিলেন৷
ছবি: Rodrigo Antunes/REUTERS
আবেগঘন মিলন
তরুণী ফুটবলাররা মুহতাজকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরে৷ কেউ কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি৷ মুহতাজ জানান, ‘‘তারা তাদের ভালোবাসার খেলাটি খেলতে পারবে এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে আমরা এই পদক্ষেপ (নারী ফুটবলারদের সরিয়ে নেওয়া) নিয়েছিলাম৷’’
ছবি: Rodrigo Antunes/REUTERS
রোনালদোর দেখা পাওয়ার স্বপ্ন
পর্তুগালে পৌঁছানো ফুটবলারদের একজন ১৫ বছর বয়সি সারাহ৷ দেশ ছাড়তে কষ্ট হলেও পর্তুগালে গিয়ে সে নিজেকে নিরাপদ ভাবছে৷ সম্ভব হলে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে দেখা করতে চায় সে৷ রয়টার্সকে সে বলেছে, ‘‘এখন আমি মুক্ত৷ আমার স্বপ্ন রোনালদোর মতো একজন ভালো খেলোয়াড় হওয়া৷ পাশাপাশি পর্তুগালে একজন বড় ব্যবসায়ী হতে চাই৷’’
ছবি: Rodrigo Antunes/REUTERS
দেশে ফেরা?
সারাহর আশা, একদিন আবার সে মাতৃভূমিতে ফিরে যাবে৷ তবে অবশ্যই সেখানে মুক্ত ও স্বাধীনভাবে বসবাস করার অধিকার পাওয়া গেলে তবেই৷ তার মা অবশ্য আফগানিস্তানে ফেরার তেমন কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না, কারণ, আফগানিস্তানে আগেও তালেবানের শাসন দেখেছেন তিনি৷
ছবি: Rodrigo Antunes/REUTERS
5 ছবি1 | 5
তালেবান ক্ষমতা দখলের পর অ্যামেরিকা আফগানিস্তানের সব সম্পদ ফ্রিজ করে দিয়েছে। তালেবানও নারীদের বিষয়ে তাদের প্রতিশ্রুতি রাখেনি। এই পরিস্থিতিতে গুতেরেস বলেছেন, তালেবান যেন নারীদের বিষয়ে তাদের দায়বদ্ধতা পূরণ করে। আন্তর্জাতিক সাহায্য পাওয়ার জন্য এটা জরুরি। নারীরা যুক্ত না হলে আফগানিস্তানের অর্থনীতি ও সমাজ শক্তিশালী হতে পারবে না বলে তিনি জানিয়েছেন।