বার বার চেষ্টা চালিয়ে অবশেষে সফল হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ ছ'টি মুসলিম-প্রধান দেশ থেকে অ্যামেরিকায় ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞার পথ সুগম করে দিলো মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট৷ তবে এখনো অনিশ্চয়তা থেকে যাচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
চাড, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সিরিয়া ও ইয়েমেন – এই ছ'টি দেশ থেকে অ্যামেরিকায় প্রবেশ কার্যত বন্ধ করে দেবার উদ্যোগ নিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন৷ ট্রাম্প বলেছিলেন, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এমন সিদ্ধান্ত জরুরি৷ গত সেপ্টেম্বর মাসে এই ‘ট্রাভেল ব্যান'-এর তৃতীয় সংস্করণ পেশ করা হয়৷ তাতে উত্তর কোরিয়া ও ভেনেজুয়েলার কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের যোগ করা হয়৷
কিন্তু প্রায় এক বছর ধরে একের পর এক আদালতের রায়, সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল৷ বেছে বেছে শুধু মুসলিমদের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ মার্কিন সংবিধানের পরিপন্থি – এমন যুক্তি তুলে ধরে চ্যালেঞ্জ জানায় একাধিক মহল৷ অবশেষে সোমবার মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে বৈধতা দিলো৷ অর্থাৎ অবিলম্বে এই পদক্ষেপ কার্যকর করা যাবে৷ তবে এখনো দেশের অনেক আদালতে বিষয়টি বিচারাধীন থাকায় বিষয়টির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হচ্ছে না৷ অর্থাৎ সেই সব আদালত এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলে বিষয়টি আবার সুপ্রিম কোর্টে ফিরে আসতে পারে৷ সুপ্রিম কোর্ট নিম্ন আদালতগুলিকে দ্রুত রায় দেবার ডাক দিয়েছে৷
অ্যামেরিকার সবচেয়ে বড় মুসলিম নাগরিক অধিকার সংগঠন মার্কিন-ইসলামি সম্পর্ক পরিষদ এই রায়ের সমালোচনা করেছে৷ তাদের মতে, এর ফলে অনেক মার্কিন নাগরিক ও বিদেশে তাঁদের আত্মীয়স্বজনদের কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে৷ নির্বাচনি প্রচারের সময়েই ট্রাম্প যেভাবে অ্যামেরিকায় মুসলিমদের প্রবেশ বন্ধ করার অঙ্গীকার করেছিলেন, এই পদক্ষেপ সেই প্রচেষ্টারই অঙ্গ বলে মনে করছে অ্যামেরিকার মুসলিম সমাজের একাংশ৷
মার্কিন অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে৷ মার্কিন নাগরিকদের নিরাপদ রাখতে এই পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করে এই মন্ত্রণালয়৷ নিষেধাজ্ঞার তালিকার দেশগুলি মৌলিক নিরাপত্তার মানদণ্ড মেনে চলে না এবং সন্ত্রাসবাদী ও অপরাধীদের সম্পর্কে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে কোনো তথ্যের আদানপ্রদান করে না বলে জানিয়েছে ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিইউরিটি৷ অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনস আদালতর রায়কে মার্কিন নাগরিকদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিশাল জয় হিসেবে তুলে ধরেছেন৷
ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু বিতর্কিত টুইট বার্তা
হোয়াইট হাউস ও নিজের প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে শলাপরামর্শ না করেই ‘স্বতঃস্ফূর্ত’ টুইট বার্তা প্রকাশ করে বার বার বিতর্কের মুখে পড়েন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তারই কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হলো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul
বার্সেলোনা হামলা, সন্ত্রাসবাদের দাওয়াই
স্পেনে একাধিক সন্ত্রাসী হামলার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প চরম ইসলামপন্থিদের শায়েস্তা করতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় এক মার্কিন জেনারেলের নৃশংস পদ্ধতি থেকে শিক্ষা নেবার পরামর্শ দেন৷ শুকরের মাংসে ডোবানো বুলেট দিয়ে জেনারেল পার্শিং ফিলিপাইন্সে ইসলামি বিদ্রোহীদের কীভাবে শায়েস্তা করেছিলেন, ট্রাম্প পরোক্ষভাবে সেই কাহিনির উল্লেখ করেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Barrena
শার্লটসভিলে তাণ্ডব
নব্য নাৎসি ও চরম দক্ষিণপন্থি গোষ্ঠীগুলির হিংসাত্মক তাণ্ডবের পর অ্যামেরিকাসহ গোটা বিশ্বে যখন সমালোচনার ঝড় উঠেছে৷ ট্রাম্প তখন তাণ্ডবকারী ও প্রতিবাদকারীদের ঢালাওভাবে হিংসার জন্য দায়ী করেন৷ চরম বিতর্কিত কনফেডারেট নেতাদের মূর্তি সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তেরও প্রবল সমালোচনা করেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/D. Angerer
নিজের শিবিরই যখন লক্ষ্যবস্তু
শুধু ‘ফেক নিউজ’ নয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের রিপাবলিকান দলের একাধিক নেতা ও সংসদ সদস্যদের সমালোচনা বরদাস্ত করতে প্রস্তুত নন৷ শ্লেষাত্মক ও অপমানজনক টুইট বার্তার মাধ্যমে তিনি তাঁদের সরাসরি আক্রমণ করে আসছেন৷ ঘরের মধ্যেই অভাবে শত্রু বাড়িয়ে চললে চরম দুর্দিনে তিনি নিঃসঙ্গ হয়ে পড়বেন বলে মনে করিয়ে দিচ্ছেন অনেকেই৷
ছবি: Getty Images/W. McNamee
শিল্প-বাণিজ্য মহলের সঙ্গে সংঘাত
শার্লটসভিল কাণ্ডের পর দু’টি উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা নব্য নাৎসিদের প্রতি নরম মনোভাবের প্রতিবাদে প্রকাশ্যে ট্রাম্পের সমালোচনায় সোচ্চার হয়ে ওঠেন৷ তাঁরা পরিষদ ভেঙে দেবার উপক্রম করলে ট্রাম্প নিজেই টুইট বার্তায় সেই ঘোষণা করে লেখেন, তিনি ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে ফেলতে চান না৷
ছবি: Imago/ZumaPress/O. Douliery
বেপরোয়া পররাষ্ট্র নীতি
নিজের প্রশাসনের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সামরিক কর্মকর্তাদের মতামতের তোয়াক্কা না করেই অন্য দেশের বিরুদ্ধে তর্জন-গর্জন করতে ওস্তাদ ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে হুমকি ও ভেনেজুয়েলায় সামরিক হস্তক্ষেপের হুঙ্কার করে তিনি চরম অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সষ্টি করেছেন৷