জার্মানরা তাঁদের অল্প অথচ দীর্ঘ সময় ধরে মদ্যপানের অভ্যাস থেকে সরে আসছেন৷ বরং এবার তাঁরা ঝুঁকছেন অ্যালকোহলমুক্ত বিয়ারের দিকে৷ পরিসংখ্যান বলছে, অ্যালকোহলযুক্ত বিয়ার বিক্রি পরিমাণ গত সাত বছর ধরে পড়তির দিকে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানরা তাঁদের অল্প অথচ দীর্ঘ সময় ধরে মদ্যপানের অভ্যাস থেকে নাকি সরে আসছেন৷ বরং এবার তাঁরা ঝুঁকছেন অ্যালকোহলমুক্ত বিয়ারের দিকে৷ পরিসংখ্যান বলছে, অ্যালকোহলযুক্ত বিয়ার বিক্রি পরিমাণ গত সাত বছর ধরে পড়তির দিকে৷
জার্মানি বললে আমার-আপনার মতো অনেকেরই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ‘অক্টোবর ফেস্ট'-এর ছবি, যার অর্থই হচ্ছে বড় বড় মগ বা গ্লাস ভর্তি ফেনাযুক্ত ‘বিয়ার'৷ অথচ গত বছর জার্মানিতে বিক্রি হয়েছে প্রায় ৪ দশমিক ৮ মিলিয়ন হেক্টোলিটার অ্যালকোহলমুক্ত বিয়ার৷ ২০১২ সালের তুলনায় এই বিক্রির পরিমাণ কিনা ১২ শতাংশ বেশি৷ জার্মান মদ প্রস্তুতকারীদের ফেডারেশন এই তথ্য জানিয়ে বলেছে, জার্মানিতে উৎপাদিত মোট বিয়ারের ৫ শতাংশই নাকি অ্যালকোহলমুক্ত!
মিষ্টিমিশ্রিত পানীয় ওজন বাড়ায়
অল্প বয়সিরা পান করা বলতেই বোঝে মিষ্টি পানীয়, অর্থাৎ পানির সাথে প্রচুর চিনি৷ কিন্তু তারা বোঝে না যে এর পরিণাম কতটা ভয়ঙ্কর! শুধুমাত্র অতিরিক্ত মিষ্টির কারণে ডায়াবেটিসের মতো কঠিন অসুখও হতে পারে৷
ছবি: Fotolia/runzelkorn
মিষ্টি পানীয় থেকে সাবধান!
কোকাকোলা, ফান্টা বা এ ধরনের মিষ্টি পানীয় নিয়মিত পান করলে মানুষ স্থায়ীভাবে মোটা হয়ে যায়, অর্থাৎ পরে এই অতিরিক্ত ওজন কমানো খুবই কঠিন হয়ে পড়ে৷ বিশেষ করে শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে৷ বিভিন্ন ফলের রস, চা, মিল্ক শেক-এ যথেষ্ট পরিমাণে চিনি মেশানো থাকে যা পান করলে ওজন তো বাড়েই, সেই সাথে ডায়াবেটিস টাইপ- ২ হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে খুব বেশি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শুধু সফ্ট ড্রিংক থেকে ৩০ কেজি চিনি
জার্মানিতে ছয় বছরের একটি বাচ্চা লিমোনেড বা ফান্টা জাতীয় মিষ্টি পানীয় পান করার মধ্য দিয়ে বছরে প্রায় ৫ কেজি চিনি শরীরে ঢুকিয়ে থাকে৷ আর ১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সিদের মধ্যে এই হিসেব বেড়ে দাড়ায় ৩০ কেজি৷ সেজন্যই জার্মানির ডায়াবেটিস সাহায্য সংস্থা স্কুল, কিন্ডারগার্টেন বা কাছাকাছি দোকানগুলোতে মিষ্টি পানীয় বিক্রি নিষিদ্ধ করার পক্ষে৷
ছবি: picture alliance/dpa
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি শতকরা ২২ ভাগ
ডায়াবেটিস সাহায্য সংস্থার সভাপতি ও হানোভার শিশু হাসপাতালের প্রধান প্রোফেসর ড. টোমাস ডানে সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, দিনে নিয়মিত মাত্র এক গ্লাস করে এ জাতীয় মিষ্টি পানীয় পানের ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে শতকরা ২২ ভাগ৷ তাই এসব পানীয়ের লোভনীয় বিজ্ঞাপণ দেখে না ভোলার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/ZB
কৃত্রিম গন্ধ
কোকাকোলা, লিমোনেড বা ফান্টা জাতীয় পানীয়গুলোতে থাকে কৃত্রিমগন্ধ আর চিনি৷ ফলের রসগুলোতেও বেশিরভাগই থাকে ফলের রসের বদলে শুধু ফলের কৃত্রিম গন্ধ ও চিনি৷ মাল্টিভিটামিন জুস-এ থাকে অত্যন্ত বেশি পরিমাণে চিনি, ফলে এ সব জুস পান করা পিপাসা মেটানোর জন্য কোনো ভালো সমাধান নয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
বাবা-মায়ের উচিত বাচ্চাদের ছোটবেলা থেকেই মিষ্টি জাতীয় সফ্ট ড্রিংক পান করার অপকারিতা সম্পর্কে জানানো৷ কারণ, পরে অতিরিক্ত মোটা হয়ে গেলে তা কমানো খুবই কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়৷ সময়মতো এদিকে নজর দিলে অনেক সমস্যার সমাধান নিজে থেকেই হয়ে যায়৷ এ বিষয়ে শিশু বিশেষজ্ঞদেরও উচিত বাচ্চার বাবা-মাকে আগে থেকে জানানো, পরামর্শ ড. ডানের৷
ছবি: picture-alliance / dpa/dpaweb
তাজা ফলের জুস
মিষ্টি পানীর বদলে বাচ্চাদের কম চিনি মিশ্রিত পানীয়, চিনি ছাড়া চা এবং ঘন ও অতিরিক্ত মিষ্টি ফলের জুসের সাথে বেশি পরিমাণে পানি মিশিয়ে পান করানো যেতে পারে৷ তাজা ফলের রস প্রতিদিন না হলেও মাঝে মাঝে পান করা উচিত৷
ছবি: pressmaster/Fotolia
জীবনযাত্রায় পরিবর্তন
ডায়াবেটিস সাহায্য সংস্থার উদ্যোগে ডায়াবেটিস বন্ধ করার লক্ষ্যে একটি প্রচারণা চালানো হয়৷ সুস্থ্য জীবনযাপনের জন্য লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন, স্কুলের কাছাকাছি ছোট দোকানগুলোতে মিষ্টি জাতীয় খাবার এবং পানীয় বিক্রি বন্ধ,প্রতিদিন পুরো এক ঘণ্টা শরীর চর্চা৷ অতিরিক্ত মোটা হওয়ার মতো এমন খাবার বা পানীয়র বিজ্ঞাপন স্কুলে বন্ধ করতে হবে৷ ফাস্টফুডের দোকানগুলোতে খাবারের পাশেই লেখা থাকা প্রয়োজন খাবারে পুষ্টিগুণের তালিকা৷
ছবি: imago/imagebroker
টিভি দেখার সময় খাওয়া নয়
যখন তখন টিভির সামনে বসে চিপস বা এ জাতীয় খাবারের সাথে মিষ্টি জাতীয় পানীয় পান করা কমাতে হবে৷ অতিরিক্ত মোটা হওয়ার কারণে কিশোর-কিশোরীদের শুধু শরীরিক সমস্যা নয়, মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ারও আশঙ্কাও থাকে অনেক, মত বিশেষজ্ঞদের৷
ছবি: Fotolia/runzelkorn
8 ছবি1 | 8
বিয়ার, তাও আবার অ্যালকোহল বিহীন? আপনি অবাক হলেও, ফেডারেশনটির প্রধান হল্গার ইশেল কিন্তু মনে করেন, অ্যালকোহলমুক্ত বিয়ারের মধ্যেও স্বাদ খুঁজে পাচ্ছে মানুষ৷ তাছাড়া যাঁরা গাড়ি চালান বা খেলাধুলা করেন, তাঁরাও এ ধরনের বিয়ার পান করার ফলে বিয়ার উপভোগ থেকে একেবারে বঞ্চিত হচ্ছেন না এখন৷
প্রসঙ্গত, গোটা বিশ্বের মধ্যে জার্মানিতে সবচেয়ে বেশি বিয়ার বিক্রি হয়৷ কিন্তু গত সাত বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বিয়ার বিক্রির পরিমাণ কমে যাচ্ছে এ দেশে৷ আগের বছরের তুলনায় ২০১৩ সালে ২ শতাংশ কম বিয়ার বিক্রি হয়েছে৷ ১৯৮৯ সালে বার্লিন প্রাচীরের পতনের পর এটাই বিয়ার বিক্রির সবচেয়ে কম পরিমাণ৷
প্রসঙ্গত, অ্যালকোহলমুক্ত বিয়ার আসলে পুরোপুরি অ্যালকোহল মুক্ত নয়৷ এই বিয়ারের খুব অল্প পরিমাণ অ্যালকোহল থেকেই যায়৷ দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টির সমালোচনা করে আসছে বিভিন্ন ভোক্তা গোষ্ঠী৷ বিয়ার উৎপাদকরা তাই আগামী বছর থেকে ০ দশমিক ৫ শতাংশ অ্যালকোহলযুক্ত বিয়ার বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা করছেন৷