পশ্চিমা দেশগুলিতে তরুণীরা পুরুষদের মতোই ড্রিঙ্ক, অর্থাৎ অ্যালকোহল পান করতে শুরু করেছেন৷একটি জরিপে তা জানা গেছে৷ বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি মদ্যপানে নারী-পুরুষের যে ব্যবধান ছিল, তা ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
১৮ থেকে ২৭ বছরের নারীরা মদ্যপান সংক্রান্ত তিনটি ক্ষেত্রে সমবয়সি পুরুষদের প্রায় ধরে ফেলেছেন৷ সেই তিনটি ক্ষেত্র হলো, মদ্যপানের সম্ভাবনা, মদ্যপান যখন সমস্যা হয়ে ওঠে এবং মদ্যপান কমানো বা থামানোর জন্য চিকিৎসা৷
গত শতাব্দীর মাঝামাঝিতে পুরুষরা মহিলাদের চেয়ে গড়ে প্রায় দ্বিগুণ মদ্যপান করতেন৷ কিন্তু মহিলারা প্রতি দশকে ছয় শতাংশ করে এগিয়ে পুরুষদের প্রায় ধরে ফেলেছেন, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে মদ্যপানে পুরুষদের পিছনে ফেলে দিয়েছেন৷
সম্প্রতি বিএমজে ওপেন জার্নালে এই জরিপের ফলাফল প্রকাশিত হয়৷ জরিপের তথ্য এসেছে ৬৮টি সমীক্ষা থেকে৷ সমীক্ষাগুলির অধিকাংশই সম্পন্ন হয় ইউরোপ ও উত্তর অ্যামেরিকায়৷ ১৯৪৮ থেকে ২০১৪ সাল অবধি এই এলাকার প্রায় ৪০ লাখ মানুষের মদ্যপানের অভ্যাস নিয়ে সমীক্ষা৷ ১৬টি সমীক্ষা চলেছে বিশ বছর কিংবা তার বেশি সময় ধরে; পাঁচটি সমীক্ষা চলেছে অন্তত ত্রিশ বছর ধরে৷
শরণার্থী যখন ওয়াইন সম্রাজ্ঞী
জার্মানির ওয়াইন কুইন বা সুরা সম্রাজ্ঞী হতে হলে আপনাকে ভালৎস নাচ জানতে হবে আর বহন করতে হবে একটি রাজদণ্ড৷ প্রতিবছর জার্মানির বিখ্যাত ওয়াইনের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করা হয় এই রানিকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Anspach
প্রথম শরণার্থী সুরা সম্রাজ্ঞী
২৬ বছর বয়সি সিরীয় শরণার্থী নিনোর্তা বাহনো জার্মানির ট্রিয়ার শহরের সুরা সম্রাজ্ঞীর মুকুট জিতেছেন৷ তিনি প্রথম কোনও আশ্রয়প্রার্থী ব্যক্তি যিনি এই সম্মান অর্জন করলেন৷ বাহনো সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরুর পর জার্মানিতে আসেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Tittel
জার্মানির প্রথম ওয়াইন কুইন
১৯৩১ সালে এই প্রথা শুরু হয়৷ সেসময় ডানিয়েল মাইনিনগার, যিনি ওয়াইন নিয়ে লেখালেখি ও প্রচারণা চালাতেন, তিনি বার্ষিক ওয়াইন ফেস্টিভালে স্থানীয় সুন্দরী কোনো নারীকে ওয়াইন কুইন নির্বাচিত করার প্রস্তাব করেন৷ রুথ বাখরট প্রথম সুরা সম্রাজ্ঞী নির্বাচিত হন৷
ছবি: Pfalzwein e.V.
নাৎসি আমলে ওয়াইন কুইন
গুস্টেল হাউপ্টমান ১৯৩৭ সালে জার্মান ওয়াইন কুইন নির্বাচিত হন৷ নাৎসি শাসনামলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে এই নির্বাচন হয়৷
ছবি: Pfalzwein e.V.
যখন থেকে ছড়িয়ে পড়ল এই প্রতিযোগিতা
১৯৫০ সালে জার্মানির যেসব রাজ্যে বেশি ওয়াইন উৎপাদন হয় সেসব রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ল এই প্রতিযোগিতা৷ সেবছর ওয়াইন কুইন নির্বাচিত হয়েছিলেন ভ্যুর্টেমব্যর্গ এর মার্থা ক্নোবলখ (ছবিতে বাঁ দিক থেকে দ্বিতীয়)৷ এই ছবিটি ২০১৩ সালের প্রতিযোগিতার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Maurer
সুরা সম্রাজ্ঞীর দায়িত্ব
ছবিটি ১৯৬৮ সালের, যেখানে পিয়ানোবাদক ও পরিচালক লেওনার্ড ব্যার্নস্টাইনকে কোলোন বিমানবন্দরে স্বাগত জানাচ্ছেন তখনকার ওয়াইন কুইন রুথ কোলেট৷ ওয়াইন কুইনদের দেখতে ভীষণ সুন্দর হতে হয়, আচার-আচরণ ও ব্যবহার ভালো হতে হয় এবং নির্বাচিত হওয়ার পর জার্মানির বিখ্যাত ওয়াইন কোম্পানির অ্যাম্বাসেডর হিসেবে দেশে ও বিদেশে কাজ করতে হয়৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
মদ আর বিয়ার একসাথে
১৯৭২ সালের অক্টোবরফেস্টের ছবি এটি৷ সেসময়ের ওয়াইন কুইন হেলগা ভেবারকে ছবিতে দেখা যাচ্ছে (বামে)৷ বর্তমানে প্রতি বছর জার্মানির নয়েস্টাডের ভাইনস্ট্রাসেতে ওয়াইন কুইনের মাথায় মুকুট পরানো হয়৷
ছবি: Imago
রাজদণ্ড থেকে ওয়াইন গ্লাস
ছবিতে গত কয়েক দশকের সুরা সম্রাজ্ঞীদের দেখা যাচ্ছে৷ ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ছবিতে কুইনরা রাজদণ্ড নিয়ে ছবি তুলতো৷ এরপর তাদের হাতে মদের গ্লাস শোভা পায়৷ তবে মুকুটে কোন পরিবর্তন আসেনি৷
ছবি: Deutsches Weininstitut
নতুন জার্মানির প্রথম সুরা সম্রাজ্ঞী
বির্গিট শেল ১৯৯০ সালে ওয়াইন কুইন নির্বাচিত হন, যে বছর জার্মানি পুনরেকত্রিত হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Grubitzsch
ওয়াইন কুইন থেকে রাজনৈতিক নেতা
সংসদ সদস্য ইউলিয়া ক্লকন্যার রাইনলান্ড রাজ্যের ক্রিশ্চান ডেমোক্রাটিক ইউনিয়ন পার্টির প্রধান৷ ধারণা করা হচ্ছে ম্যার্কেলের উত্তরসূরি তিনি৷ তিনি ১৯৯৫ সালে ওয়াইন কুইন নির্বাচিত হয়েছিলেন৷
ছবি: Deutsches Weininstitut
অস্ট্রিয়ায় ভিন্ন রূপ
অ্যাথলিট, কৃষক, দমকলবাহিনীর সদস্যদের এ ধরনের নগ্ন ছবি ক্যালেন্ডারে প্রকাশ হয়৷ তবে জার্মানির ওয়াইন শিল্পে এ ধরনের ছবি প্রকাশের কোনো রীতি নেই৷ অথচ অস্ট্রিয়ায় এই চিত্র একেবারেই ভিন্ন৷ সেখানে ওয়াইন ইন্ডাস্ট্রিতে মেয়েদের নগ্ন ছবি থাকবে এটাই যেন স্বাভাবিক!
ছবি: picture-alliance/H. K. Techt
এ বছর কে হবে ওয়াইন কুইন?
গত বছরের ওয়াইন কুইন নির্বাচিত হয়েছিলেন বাডেন এর জোসেফিন স্লুমব্যর্গার৷ বছরের পুরোটাই জার্মানি ও বিশ্বের বিভিন্ন অংশে ঘুরে বেড়িয়েছেন স্থানীয় ওয়াইনকে পরিচিত করার জন্য৷ এ বছরের ওয়াইন কুইন অনুষ্ঠিত হবে মাইন্সে ৩০ সেপ্টেম্বর, রাইন হেসেন এলাকার ২০০ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Anspach
11 ছবি1 | 11
গবেষকদের নেতৃত্ব দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েল্স ইউনিভার্সিটির ন্যাশনাল ড্রাগ অ্যান্ড অ্যালকোহল রিসার্চ সেন্টারের টিম স্লেড৷ স্লেড বলেন, ‘‘মদ্যপান ও মদ্যপান সংক্রান্ত অসুখবিসুখ চিরকাল পুরুষদের বিষয় বলে গণ্য হয়ে এসেছে৷'' কিন্তু সর্বাধুনিক সমীক্ষা থেকে দেখা যাচ্ছে যে, কমবয়সি মহিলারাই মদ্যপান কমানো অভিযানের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ৷
‘সেক্স গ্যাপ' - অর্থাৎ পুরুষরা যে মহিলাদের চেয়ে কম মদ্যপান করে থাকেন - সেই ব্যবধান যে এখন কমে আসছে, তার কারণ এই নয় যে, পুরুষরা কম মদ্যপান করছেন৷ বরং মহিলাদের বেশি মদ্যপান করাই এই ব্যবধান কমে আসার কারণ৷
সামগ্রিক পরিসংখ্যান থেকে বিভিন্ন দেশ, এমনকি মহাদেশের মধ্যে পার্থক্য বিশেষ স্পষ্ট হয় না৷ কিন্তু এশিয়ার মতো মহাদেশ, যেখানে মদ্যপান সাধারণভাবেই অপেক্ষাকৃত কম, সেখানে কিন্তু মদ্যপানে স্ত্রী-পুরুষের মধ্যে ব্যবধান আজও বর্তমান৷ অন্যদিকে সারা বিশ্বে অ্যালকোহল সেবন বিস্তার ও পরিমাণ, উভয় বিচারেই বেড়ে চলেছে৷
এসি/এসিবি (এএফপি)
ধূমপান ও মদ্যপানে এগিয়ে ইউরোপীয়রা
অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় ইউরোপীয়রা সবচেয়ে বেশি মদ্যপান ও ধূমপান করেন৷ সময়মতো সতর্ক না হলে ফলাফল ভয়ঙ্কর৷ তাই এ ব্যাপারে ইউরোপীয়দের সাবধান করে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা৷
যা মোটেই সুখের নয়
ডাব্লিউএইচও-র লন্ডন প্রতিনিধি ক্লাউডিয়া স্টাইন বলেন ‘‘অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় ইউরোপীয়রা মদ্যপান ও ধূমপান বেশি করেন৷ তাছাড়াও অতিরিক্ত ওজনের কারণে হৃদরোগ, ক্যানসার ও অন্যান্য অসুখের ঝুঁকিও বেশি৷ এদিক দিয়ে আমরা বিশ্ব রেকর্ড করেছি, যা মোটেই সুখের নয়৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Fluger
বেশিরভাগ মানুষই মোটা
যে সময়ে অন্যান্য দেশে এসব সমস্যা কমিয়ে আনার চেষ্টা চলছে, তখন ইউরোপে তামাক, মদ অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা বাড়ছে৷ ইউরোপের শতকরা ৬০ ভাগ মানুষই অতিরিক্ত মোটা৷ যদিও অ্যামেরিকাই অতিরিক্ত মোটা মানুষের দিক থেকে এক নম্বরে রয়েছে৷ তারপরেই ইউরোপের স্থান৷ ইউরোপের শতকরা ৩০ ভাগ মানুষ ধূমপান করেন৷ আর মদ্যপান করেন মাথাপিছু বছরে ১১ লিটার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hesse
গড় আয়ু কমার আশঙ্কা
ইউরোপীয়রা যেভাবে মদ ও ধূমপান করেন, এভাবে চলতে থাকলে পরবর্তী প্রজন্মের ইউরোপীয়দের গড় আয়ু কমবে বলে আশঙ্কা রয়েছে৷ এই সমীক্ষাটি করা হয়েছে ইউরোপের ৩৯টি দেশের যাতে সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রও ছিলো৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইতিবাচক দিক
আরেকটি সমীক্ষা করা হয় অ্যামেরিকাসহ মোট ৫৩টি দেশে – যার মধ্যে পুরো রাশিয়া এবং তুর্কমেনিস্তানও রয়েছে৷ তবে ইতিবাচক দিক হলো,২০০৫ সাল থেকে ২০১০ সালের মধ্যে মদ্যপানের মাত্রা শতকরা ১০ ভাগ কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে বিভিন্ন ক্যাম্পেনের মাধ্যমে৷
ছবি: Imago/teutopress
কম মদ্যপান মুসলিম দেশগুলোতে
সবচেয়ে বেশি অ্যালকোহল পান করা হয় বেলারুশ এবং লিথুয়েনিয়ায়৷ সমীক্ষায় জানা গেছে সবচেয়ে কম মদ্য পান করা হয়েছে তুরস্ক ও আজারবাইজানের মতো মুসলিম দেশগুলোতে৷