চিংড়ি সহ সামুদ্রিক মাছ আমাদের খাদ্যতালিকায় স্থান পেলেও অ্যালজি বা সামুদ্রিক উদ্ভিদ এখনো ব্রাত্য থেকে গেছে৷ অথচ অত্যন্ত পুষ্টিকর এই উদ্ভিদ ও কিছু প্রজাতির ঝিনুক মানুষের কাজে লাগতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
বাল্টিক সাগরে কয়েকজন মেরিন বায়োলজিস্ট সমুদ্র থেকে নতুন কৃষিপণ্য উত্তোলন করতে নিজেদের জ্ঞান কাজে লাগাচ্ছেন৷ নিজেদের তৈরি ব়্যাফট বা নৌকায় কয়েক মিনিটের মধ্যে আন্ডারওয়াটার ফার্মে পৌঁছনো যায়৷ সেই অ্যাকোয়া ফার্ম বা সামুদ্রিক কৃষিক্ষেত্রে জলের উপর শুধু বয়া ভাসতে দেখা যায়৷ তার নীচে ঝোলানো দড়ির উপর অ্যালজি চাষ করছেন বিজ্ঞানীরা৷
গবেষকরা কয়েক বছর ধরে অ্যালজি চাষ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চলেছেন৷ গবেষণাগারে চারা প্রস্তুত করা হয়৷ অ্যালজির মধ্যে বিশাল সম্ভাবনা লুকিয়ে রয়েছে, যা সত্যি অবাক করার মতো৷ মেরিন বায়োলজিস্ট টিম স্টাউফেনব্যার্গার বলেন, ‘‘শুকনা অ্যালজিতে আগুন লাগিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করার কথা উঠেছিল৷ কিন্তু তার মধ্যে এত পুষ্টি রয়েছে যে, ভালো কিছু করার সুযোগ রয়েছে৷’’
কয়েকটি সেরা উদ্ভিদ ও প্রাণী
প্রতিবছর বিভিন্ন সংগঠন কিছু উদ্ভিদ ও প্রাণীকে সেরা নির্বাচিত করে, যেগুলো হুমকির মুখে রয়েছে এবং যাদের রক্ষা করা দরকার৷ ‘ফ্লোরা অ্যান্ড ফোনা ২০১৫’ তে কোন গাছ, ফুল ও পতঙ্গ সেরা খেতাব জিতল জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Hummel
তিতলি
তিতলি বা প্রজাপতি প্রাণিজগতের অন্যতম সুন্দর পতঙ্গ হিসেবে পরিচিত৷ এই প্রজাপতিটিকে নির্বাচন করার পেছনে অবশ্য অন্য কারণ রয়েছে৷ এরা খাদ্যের জন্য পিপড়ার উপর নির্ভরশীল৷ পিপড়া মথে খাবার লুকিয়ে রাখে, যা খেয়ে বেঁচে থাকে এই প্রজাপতিরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Schmitt
কচ্ছপ
২০১৫ সালের সেরা সরীসৃপ নির্বাচিত হয়েছে এই ইউরোপীয় কচ্ছপটি৷ জার্মানির ব্রান্ডেনবুর্গ রাজ্যে এই হলুদ ছোপ ছোপ কচ্ছপের দেখা পাওয়া যায়৷ এরা কেবল স্থির পানিতে থাকতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Robert Schlesinger
ম্যাপেল গাছ
এই গাছটি ম্যাপেল প্রজাতির৷ এ ধরনের গাছ শহরের বাইরে বা জঙ্গলে বেশি দেখা যায়৷ এই গাছের কাঠ খুব ভালো৷ তাই বলা হয় এটি কখনো প্রতারণা করে না৷ আর এজন্যই ২০১৫ সালের সেরা গাছ হিসেবে উঠে এসেছে এর নাম৷
ছবি: A. Roloff
প্রবাল
যদিও প্রবাল বা শৈলশিরা সমুদ্রের সাথে সম্পর্কিত৷ কিন্তু ‘মাশরুম ২০১৫’তে এদের নামই উঠে এসেছে৷ এখানে যে মাশরুমটিকে দেখা যাচ্ছে, সেটা অনেকটা মৃত গাছ থেকে জন্ম নেয়া ছত্রাকের মত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Theiß
বাজপাখি
রাজাওয়ালি প্রজাতির এই বাজ ২০১৫ সালের পাখি নির্বাচিত হয়েছে৷ এটি বিরল প্রজাতির এবং এ ধরনের পাখি শিকার ৭০ এর দশকে নিষিদ্ধ করা হলেও এখনো তা চলছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jens Wolf
কাঁচামরিচ
২০১৫/১৬ বছরের সেরা সবজি নির্বাচিত হয়েছে কাঁচামরিচ৷ এটা বিভিন্ন রঙ ও বিভিন্ন ধরনের হয়৷ স্বাদের দিক থেকেও ভিন্নতা রয়েছে৷
ছবি: Getty Images
পেঁয়াজ
পেঁয়াজ কাটতে হয়ত কেউ ভালোবাসেন না৷ কিন্তু পেঁয়াজের রোগ সারানোর ক্ষমতা আছে৷ তাই আরোগ্য উদ্ভিদের তালিকায় সেরা হয়েছে পেঁয়াজ৷ পেঁয়াজ যে-কোনো ধরনের ফ্লু প্রতিরোধে সাহায্য করে৷
ছবি: Fotolia/xalanx
ঔষধি উদ্ভিদ
হাইপেরিকাম পারফরেটুম এমন একটা উদ্ভিদ, যা মানুষের ভয় ও উত্তেজনা হ্রাস করে৷ এছাড়া হতাশা কমাতেও এর জুরি নেই৷ এছাড়া ক্যান্সার ও আলৎসহাইমার প্রতিরোধে ওষুধ হিসেবে এই উদ্ভিদটি নিয়ে গবেষণা হচ্ছে৷ এ কারণে ‘ওষধি উদ্ভিদ ২০১৫’ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে এটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Hummel
ছোট্ট শামুক, দুর্দান্ত পারফর্মেন্স
এ ধরনের শামুক এখন প্রায় বিরল৷ এরা সাধারণত গুহা, খনিতে লুকিয়ে থাকে৷ তাই একে ‘অ্যানিমেল কেভ ২০১৫’ এর খেতাব দেয়া হয়েছে৷
ছবি: K. Bogon
লম্বা দৈর্ঘ্যের গোলাকার ফুল
এই ফুলের প্রধান দুটি রঙ বেগুনি ও নীল৷ কখনো কখনো গোলাপী রঙেরও হয়ে থাকে৷ তাই সাকসিসা নামের এই ফুলটিকে ২০১৫ সালের সেরা ফুলের খেতাব দেয়া হয়েছে৷ ইউরোপের জলাবনে এদের দেখতে পাওয়া যায়৷ চা হিসেবে এই ফুলের দারুণ কদর রয়েছে৷ এটি রক্ত বিশুদ্ধকরণ এবং কাশি কমাতে সাহায্য করে৷
‘সি বেল্ট’ নামের খয়রি রঙের অ্যালজি থেকে বায়োলজিস্টরা প্রসাধনদ্রব্য তৈরি করছেন৷ ত্বকের জন্য তা খুবই ভালো, কারণ অ্যালজি অনেক পরিমাণ তরল ধারণ করতে পারে৷ বিপুল সম্ভাবনা নিয়ে এই উদ্যোগ শুরু হলেও দ্রুত শেষ হয়ে যেতে পারে৷ কারণ এই প্রজাতির অ্যালজি জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা সামলে উঠতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে৷ টিম স্টাউফেনব্যার্গার বলেন, ‘‘সি বেল্ট তার সহ্যশক্তির সীমায় পৌঁছে গেছে৷ এখনো সে বহাল তবিয়তে রয়েছে বটে, কিন্তু তাপমাত্রা আরও বাড়লে সেটা তার পছন্দ হবে না৷ এখন ভবিষ্যতের পূর্বাভাষ নিয়ে ভাবতে হবে, কারণ হিসাব অনুযায়ী তাপমাত্রা আরও বাড়বে৷ তাই অন্য প্রজাতির অ্যালজি চাষ করে তা দিয়ে প্রসাধনদ্রব্য তৈরির কথা ভাবতে হবে৷’’
অন্যদিকে ক্ল্যাম বা ভেনাস ঝিনুক উত্তাপ পছন্দ করে৷ তাই বায়োলজিস্টরা এবার মাসল্ বা কম্বোজ ঝিনুক চাষ করছেন, যা অত্যন্ত পুষ্টিকর খাদ্য৷ কম্বোজ ঝিনুক একটু বেশি উত্তাপ পছন্দ করে৷ তখন তারা জল থেকে আরও খাদ্য সংগ্রহ করতে পারে৷ খাদ্যের অভাব নেই৷ মোটকথা উত্তাপ তারা খুবই ভালোবাসে৷
বায়োলজিস্টরা নমুনা সংগ্রহ করতে চান৷ বিক্রির আগে যাচাই করে নিতে হবে, ঝিনুকের মধ্যে কোনো রোগের বীজ বা ক্ষতিকারক পদার্থ আছে কিনা৷ জলের নীচে ঝিনুক বেড়ে উঠছে কিনা, তা পরীক্ষা করতে এক ডুবুরি কাজে নেমেছেন৷ বাল্টিক সাগরের জল বেশ ঘোলাটে, তবে দূষণের কারণে নয়৷ অসংখ্য ক্ষুদ্র জীব সেখানে থাকে৷ ফলে বেড়ে উঠতে দড়িতে ঝোলানো ঝিনুকের খাদ্যের অভাব হয় না৷
এই প্রজাতির ঝিনুক ৭ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বড় হতে পারে৷ মানুষের খাদ্য হিসেবে সেগুলি খুবই উপযোগী৷ গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকায় অত্যন্ত স্বাস্থ্যকরও বটে৷
জলের নীচে দড়ির গায়ে ঝিনুক চাষ অন্য যে কোনো পদ্ধতির তুলনায় বেশি পরিবেশবান্ধব৷ এতকাল সমুদ্রতলের মাটিতে এই চাষ করা হতো৷ ফলে সেই মাটির মারাত্মক ক্ষতি হতো৷ জার্মানির প্রথম অরগ্যানিক ঝিনুক চাষিরা কোনো রাসায়নিক পদার্থও ব্যবহার করেন না৷
বিষধর ওষুধ
বিষ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষের প্রাণনাশক হতে পারে৷ কিন্তু কথায় বলে বিষে বিষ ক্ষয়৷ তাইতো সাপ, বিছা কিংবা মাকড়সার মত বিষধর প্রাণীর বিষ থেকে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ তৈরি হয়৷
ছবি: San Diego Shooter/nc/nd
বিষ থেকে হৃদরোগের ওষুধ
অস্ট্রেলিয়ার এই সাপটি সবচেয়ে বিষধর সাপ বলে ধারণা করা হয়৷ অথচ এই সাপের বিষ হৃদরোগের ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিছা বেশ কাজের
কাকড়া বিছার বিষ ভয়াবহ এবং এই বিষে মানুষের মৃত্যু হতে পারে৷ কিন্তু এর বিষ ব্যথা কমানোর ওষুধে এবং হৃদরোগের ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়৷
ছবি: Fotolia/scorpsnakes
মাকড়সা থেকে ওষুধ
এই বিষধর মাকড়সার দেখা মেলে চিলিতে৷ আর হৃদরোগ উপশমে ব্যবহার করা হয় এটিকে৷ বিশেষজ্ঞদের ধারণা এটির বিষ বন্ধ্যাত্ব দূর করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে৷
ছবি: Pedro Avaria
বাতের ব্যথা সারায় মৌমাছির হুল
বাতের ব্যথা কমাতে ‘মৌমাছির হুল’ চিকিৎসা করা হয়৷ দেহের যে স্থানে ব্যথা থাকে সেখানে হুল ফোটানো হয়৷ চিকিৎসার এই ধরন প্রায় তিন হাজার বছরের পুরানো৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আলজাইমারের চিকিৎসা
বিজ্ঞানীরা বলেন দক্ষিণ আফ্রিকায় হলুদ রংয়ের এই সাপের বিষ স্মৃতিশক্তি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে৷ অর্থাৎ আলজাইমারের ক্ষেত্রে এই সাপের বিষ অত্যন্ত ভালো ওষুধ৷
ছবি: San Diego Shooter/nc/nd
বেদনানাশক শামুক
শামুকের মুখ থেকে এক ধরনের বিষাক্ত পদার্থ বের হয়৷ এটি বেদনানাশক ওষুধে ব্যবহৃত হয়৷
ছবি: picture-alliance
কোবরার বিষ
গলায় কালো রংয়ের এই কোবরা বা কেউটে সাপের বৈশিষ্ট্য হল, এরা ফনা তুলে বাতাসে বিষ ছোড়ে৷ এর বিষ অত্যন্ত মারাত্মক৷ কিন্তু এই বিষই অনেক রোগের ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বহুমূত্র রোগের চিকিৎসা
এই প্রজাতির টিকটিকির বিষ ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগের ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়৷ এর লালায় বিশেষ ধরনের একটি রাসায়নিক পদার্থ থাকে যা রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে৷