টেসলা ও স্পেস-এক্সের প্রধান ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক জানিয়েছেন, তিনি অ্যাসপারগার সিনড্রোমে ভুগছেন। শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের একটি জনপ্রিয় টেলিভিশন কমেডি-শোতে নিজের এ শারীরিক অবস্থার কথা জানান তিনি।
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাষ্ট্রের এনবিসি চ্যানেলের বিখ্যাত লেইট নাইট শো ‘সেটারডে নাইট লাইভ’ (এসএনএল) অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতে গিয়ে এ বিলিয়নিয়ার বলেন, ‘‘আজ আমি একটি ইতিহাস গড়তে যাচ্ছি। অ্যাসপারগার সিনড্রোম নিয়ে এসএনএল অনুষ্ঠান করা প্রথম জন আমি, অন্তত এ সমস্যা স্বীকার করেছেন এমন ব্যক্তিদের মধ্যে প্রথম৷’’
অ্যাসপারগার সিনড্রোমকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে ছোটখাট ধরনের অটিজম বলা হয়ে থাকে। এর মূল লক্ষণ হলো ভাষাগত ও মনোভাব আদান-প্রদানজনিত জটিলতা যার ফলে সামাজিক যোগাযোগ ও সর্ম্পক তৈরিতে প্রভাব পড়ে।
টকশোটিতে ইলন মাস্কের মাও উপস্থিত ছিলেন। তিনি ছেলের শৈশবের বিভিন্ন স্মৃতি দর্শকদের কাছে তোলে ধরেন।
জনপ্রিয় এ শোটিতে উপস্থিত এ উদ্যোক্তা নিজের করা বিভিন্ন টুইটের বিষয়েও কথা বলেন। উল্লেখ্য, সম্প্রতি ইলন মাস্কের কিছু টুইট বিতর্কের জন্ম দেয়। কয়েক সপ্তাহ আগে 'চাঁদে কুকুর ডাকছে' বলে একটি টুইট করেন তিনি।
করোনা-পর্বেও উৎপাদনে টেসলা
বিশ্বের প্রথম সারির ইলেকট্রিক গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা টেসলার প্রধান এলন মাস্ক জানিয়েছেন শিগগিরই উৎপাদনে ফিরছে তারা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Chinatopix
অপেক্ষার অবসান
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ সারা বিশ্বে ছড়ানোর আঁচ এসে পড়েছিল টেসলার জার্মানি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারখানাগুলিতেও৷ ২৩ মার্চ থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার ফ্রেমন্ট শহরের এই কারখানাটি বন্ধ থাকার পর আবার চালু হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন এলন মাস্ক৷ এতদিন, এই কারখানা ছিল জনমানবশূন্য৷
চলতি সপ্তাহের শুরুতে এলন মাস্ক জানান, স্থানীয় বিধিনিষেধ উপেক্ষা করেই ক্যালিফোর্নিয়ার এই কারখানাটি চালু করা হচ্ছে৷ এই কারখানায় সাধারণত ১০ হাজার কর্মচারী কাজ করে৷ কারখানা চালু হবার পর সেখানের গাড়ির পার্কিং করার জায়গাটি পুরোপুরি ভর্তি ছিল৷
ছবি: Reuters/J. White
কড়া বার্তা দিলেন মাস্ক
ফ্রেমন্টের কারখানা চালু করার পর টেসলার সাথে কেমন আচরণ করে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এখন, সেটাই দেখার৷ যদিও ইতিমধ্যে টুইটারে এলন মাস্ক জানিয়েছেন যে, প্রয়োজন পড়লে এই কারখানা অন্যত্র সরিয়ে নিতেও পেছপা হবেন না তিনি৷ শুধু তাই নয়, তিনি বলেন যে, অবস্থার প্রয়োজনে টেসলার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ও সরিয়ে টেক্সাস বা নেভাডায় নিয়ে যেতে পারেন তিনি৷
বর্তমানে খবরের শীর্ষে ফ্রেমন্টের এই কারখানা উঠে এলেও পিছিয়ে নেই বার্লিনে টেসলার গিগাফ্যাক্টরি প্রকল্পের কাজও৷ জার্মান সরকারের করোনা বিষয়ক কড়া নীতি অবলম্বন সত্ত্বেও চলছে কাজ৷ কারখানার ঘর তৈরির অনুমতি এখনও না পাওয়া গেলেও জঙ্গল সাফাই করার কাজ সম্পূর্ণ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul
প্রয়োজনে পিঁপড়ারও স্থান বদল
পরিবেশবিদদের পরামর্শে, টেসলার গিগাফ্যাক্টরি প্রকল্পের অঞ্চলে বসবাসরত বাদুড় ও পিঁপড়াকে সরাতে রাজি হয়েছেন এলন মাস্ক৷ তাদের সেখান থেকে সরিয়ে অন্য কোনো বাসযোগ্য স্থানে নিয়ে যাওয়া হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul
টেসলার পাশেই জার্মানি
জার্মান অর্থনীতি মন্ত্রী পেটার আল্টামায়ার জানিয়েছেন যে, করোনা সংকট টেসলার এই প্রকল্পের জন্য কোনো বড় বিলম্ব বয়ে আনবে না৷ বার্লিনের পাশে গ্র্যুনহাইডে অঞ্চলে তৈরি হচ্ছে এই প্রকল্প৷ স্থানীয়দের কাছে এই প্রকল্প ইতিমধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে৷
ছবি: DW/H. Graupner
২০২১ সালেই কি তৈরি হবে গাড়ি?
স্থানীয়দের বেশির ভাগ মানুষ টেসলার পাশে থাকলেও ৩৭৩টি নালিশও জমা পড়েছে, যার ফলে জার্মানিতে টেসলার ভবিষ্যৎ কিছুটা হলেও প্রশ্নের মুখে৷ ২০২১ সালের মধ্যে এই কারখানা থেকে গাড়ি বাজারে আসার কথা থাকলেও, বাড়তি খরচ ও পুরোদমে যানবাহনের ঝঞ্ঝাটের সম্ভাবনা গ্র্যুনহাইডের মতো ছোট অঞ্চলে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করছে৷
ছবি: DW/H. Graupner
7 ছবি1 | 7
তার আগে থাইল্যান্ডে গুহায় আটকে পড়া শিশুদের উদ্ধার করতে যাওয়া এক ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞ খননকারীকে ‘পেডো গাই’ বলে টুইট করেছিলেন মাস্ক। এমন টুইটের ফলে তাকে আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়েছিল।
টুইটের বিষয়ে ইলন মাস্ক বলেন, ‘‘দেখুন, আমি জানি যে, মাঝে মাঝে আমি অদ্ভুত বিষয়ে বলি বা টুইট করি। আমার ব্রেইন আসলে এভাবে কাজ করে।’’
স্পেস-এক্সের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘‘যারা আমার টুইটের কারণে আঘাত পেয়েছেন তাদেরকে বলতে চাই, আমি ইলেকট্রিক কার নতুনভাবে তৈরি করেছি, আমি স্পেসশিপে করে মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠাচ্ছি। আপনারা কি ভেবেছিলেন যে, আমি খুব আমুদে ও সাধারণ একজন!’’
অ্যামেরিকান এ কমেডি-শোটিতে এখন পর্যন্ত অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক। ফোর্বস ম্যাগাজিনের তথ্য অনুযায়ী, ৪৯ বছর বয়স্ক এলন মাস্ক বিশ্বের কয়েকজন শীর্ষ ধনীদের একজন। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ৯৬ বিলিয়ন ইউরো বা ১১৭ বিলিয়ন ডলার।
ইলন মাস্ক সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য
টেসলা, স্পেসএক্স, পেপ্যাল, বোরিং কোম্পানি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করেছেন ইলন মাস্ক৷ বর্তমানে তিনি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী৷
১৯৭১ সালের ২৮ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়াতে ইলন মাস্কের জন্ম৷ বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর হাইস্কুল শেষে মা আর ভাই-বোনকে নিয়ে ক্যানাডায় চলে যান মাস্ক৷ সেখানে অন্টারিও’র একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও পরে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা আর অর্থনীতিতে মাস্টার্স করেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/H. Guerrero
শেষ করেননি শিক্ষাজীবন
স্নাতকোত্তর শেষে পিএইচডি’র জন্য যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পান৷ কিন্তু অর্থ উপার্জনের নেশায় পিএচইডি অধরা থেকে যায়৷ বর্তমানে উদ্যোক্তা হিসেবে বিশ্বের তরুণদের আইকন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP/J. Raoux
প্রতিভাধর
মাত্র দশ বছর বয়সে কমোডর ভিআইসি-২০ কম্পিউটার ব্যবহার করতে গিয়ে কম্পিউটারের প্রতি আগ্রহ জন্মায়৷ শেখেন কম্পিউটার প্রোগ্রামিং৷ ১২ বছর বয়সে বেসিক প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে ব্লাস্টার নামে একটি ভিডিও গেম তৈরি করে ৫০০ ডলারে পিসি অ্যান্ড অফিস টেকনোলজি ম্যাগাজিনের কাছে বিক্রি করে দেন৷
ছবি: Ringo H.W. Chiu/AP Photo/picture alliance
জিপ-টু
উদ্যোক্তা হিসেবে ভাইকে সাথে নিয়ে তিনি জিপ-টু নামে একটি সফটওয়্যার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন৷ ১৯৯৫ সালে এর পথচলা শুরু হলেও সফল হতে সময় লেগেছিল৷ সেসময় অ্যাপার্টমেন্টে থাকার খরচ না থাকায় অফিসেই ঘুমাতেন৷ ১৯৯৯ সালে কমপ্যাক কোম্পানির কাছে ২২ মিলিয়ন ডলারে জিপ-টু বিক্রি করেন তিনি৷
ছবি: Patrick Pleul/dpa/picture alliance
পেপ্যাল
পেপ্যাল নামের টাকা লেনদেনের একটি ডিজিটাল সার্ভিস চালু করে তিনি সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে যান৷ ১৯৯৯ সালে তিনি এক্স.কম নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন, যা পরে পেপ্যালের সাথে একত্রিত হয়৷ ২০০২ সালে ই-বে’র কাছে পেপ্যাল ১.৫ বিলিয়ন ডলারে বিক্রি করে দেন৷ এই বিক্রি থেকে তার লাভ থাকে ১৬৫ মিলিয়ন ডলার৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/P. Sakuma
স্পেস এক্সের মঙ্গল অভিযান
রকেট নির্মাণপ্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স৷ গত ফেব্রুয়ারিতে স্পেসএক্সের তৈরি রকেট ফ্যালকন হেভির সফল উৎক্ষেপণের পর তুমুল আলোচিত হন মাস্ক৷ স্পেসএক্স থেকে ফ্যালকন ১ নামের রকেটটি উৎক্ষেপণ করতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হয়েছিলেন কিন্তু হাল ছাড়েননি৷ ২০৫০ সালের মধ্যে মঙ্গলে একটি পরিপূর্ণ শহর স্থাপনের পরিকল্পনা মাস্কের৷
ছবি: Gene Blevins/REUTERS
টেসলা
২০০৩ সালে যখন এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন এর সাথে ছিলেন না মাস্ক৷ পরবর্তীতে ২০০৪ সালে ইলন মাস্ক বোর্ড অফ ডিরেক্টরসে যোগ দিলে কোম্পানিতে আমূল পরিবর্তন আসে৷ বর্তমানে বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটি র প্রধান নির্বাহী এবং পণ্য প্রকৌশলী তিনি৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS/Tesla Motors
দ্য বোরিং কোম্পানি
২০১২ সালে এই হাইপারলুপ প্রযুক্তির দৈনন্দিন ব্যবহারে সর্বপ্রথম আগ্রহ দেখান ইলন মাস্ক৷ হাইপারলুপ-এর জন্য সুরঙ্গ খুঁড়তে তিনি ‘দ্য বোরিং কোম্পানি’ নামক একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছেন৷ সম্প্রতি ঘণ্টায় এক হাজার কিলোমিটার গতিবেগে চলা হাইপারলুপের প্রথম পরীক্ষা সফল হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/R. Beck
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠিয়েছে ইলন মাস্কের কোম্পানি স্পেস এক্স৷ স্পেস-এক্স-এর সবচেয়ে আধুনিক ফ্যালকন রকেটের মাধ্যমে ২০১৮ সালের মে মাসে বঙ্গবন্ধু-১ টেলিকম স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানো হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP/R. Huber/O. Sentinel
নিউরালিঙ্ক
২০১৬ সালে মাস্কের প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানিটি সম্প্রতি একটি ব্রেইন-মেশিন ইন্টারফেস প্রকাশ করেছে, যা মানুষের মস্তিষ্কের সাথে কম্পিউটার ও মোবাইল ফোন যুক্ত করবে৷
ছবি: Patrick Pleul/dpa/picture alliance
বেতন
কোম্পানির সিইও হিসেবে বছরে বেতন নেন মাত্র এক ডলার৷ নিজের অংশীদারিত্ব থাকা বিভিন্ন কোম্পানি থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশসহ আরো কিছু সুবিধা পান মাস্ক, যার বেশিরভাগই আসে টেসলা থেকে৷ বছরে ১ ডলার বেতন নেয়াটা আসলে সিলিকন ভ্যালির একটা ট্রেন্ড৷
বিতর্কের জন্ম দিতে ভালোবাসেন মাস্ক৷ টুইটারে নানা বিতর্কিত টুইট করেন৷ নিজের প্রতিষ্ঠানের সহযোগীদের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন নানা সময়৷ একবার কমেডিয়ান জো রোগান-এর সঙ্গে অংশ নেওয়া এক পডকাস্টে সরাসরি সম্প্রচারের সময় গাঁজা সেবন করেছিলেন৷