জার্মানির অন্যতম বড় জ্বালানি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আরডাব্লিউই'র পুর্নব্যবহার্য জ্বালানি বিষয়ক সহযোগী সংস্থার প্রধান অর্থ কর্মকর্তা অ্যাসিড হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন৷ ড্যুসেলডর্ফে একটি পার্কের কাছে এই ঘটনা ঘটে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির একজন জ্বালানি নির্বাহী অ্যাসিড হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন বলে তাঁর কোম্পানি সোমবার ভোরে নিশ্চিত করেছে৷ ইনোগি'র প্রধান অর্থ কর্মকর্তা বের্নহার্ড গ্যুন্থার ড্যুসেলডর্ফের শহরতলী হানে একটি পার্ক অতিক্রম করার সময় আক্রান্ত হন৷
‘‘আমরা স্তম্ভিত,'' বলেন ইনোগি'র চেয়ারম্যান উয়ি টিগস৷ ‘‘আমরা বেনহার্ড এবং তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি এবং তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি৷''
পুলিশকে দেয়া এক বিবৃতিতে গ্যুন্থার জানিয়েছেন, ‘‘অজ্ঞাতপরিচয়ের দুই ব্যক্তি তাঁর চেহারার উপর অ্যাসিড ছুঁড়ে মেরে পায়ে হেঁটে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়৷''
৫১ বছর বয়সি বেনহার্ড তখন কোনোমতে বাড়িতে পৌঁছে সাহায্য চান৷ পরবর্তীতে তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হয়৷ তাঁর শারীরিক অবস্থা এখন শঙ্কামুক্ত বলে জানা গেছে৷
ইউরোপের সবচেয়ে বড় কয়লা খনি বিরোধী প্রতিবাদ
কপ২৩-এর ঠিক আগে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে কয়লা খনি বিরোধী কর্মীরা জার্মানির হাম্বাখ কয়লা খনিতে প্রতিবাদ কর্মসূচি করেন৷ তাঁদের কথায়, কয়লার ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব কমিয়ে আনা যাবে না৷
ছবি: DW/Wecker/Banos Ruiz
কয়লা ত্যাগ করুন – এখনই !
বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে কয়লা ব্যবহারের বিরোধীতা জানিয়ে কপ২৩-এর ঠিক একদিন আগে, হাজার হাজার বিক্ষোভকারী সমবেত হন৷ বিক্ষোভকারীদের সবাই সেসময় সাদা পোশাক পরে প্রায় ১০ কিলোমিটার হেঁটে হাম্বাখ কয়লা খনি পর্যন্ত যান৷
ছবি: DW
ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করুন
ইউরোপে সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী কয়লা খনি হলো হাম্বাখ৷ এর সম্প্রসারণের কারণে ইতিমধ্যে ১ হাজার বছরের পুরনো বন কেটে ফেলা হচ্ছে৷ পরিবেশবাদীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যখন বন শহরে সম্মেলন চলছে তখন সেখান থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে এই খনি থাকাটা খুবই হাস্যকর একটা ব্যাপার৷
ছবি: DW
শান্তিপূর্ণ লড়াই
বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি সত্ত্বেও, রবিবারের প্রতিবাদ কর্মসূচি ছিল একেবারে শান্তিপূর্ণ৷ রঙিন ব্যানার, চেহারায় নানা অংকন, কেউ কেউ আবার গিটার এনে গানও করেছেন দিনের প্রথম ভাগে৷
ছবি: DW/Wecker/Banos Ruiz
জীবনের ঝুঁকিতে দৃষ্টি আকর্ষণ
বিক্ষোভকারীরা খনির কাছাকাছি পৌঁছালে পুলিশ কর্মকর্তারা চারপাশ থেকে তাঁদের ঘিরে রাখে৷ স্পিকারে তারা ঘোষণা করে যে, বিক্ষোভকারীরা অন্যের ব্যক্তিগত জায়গায় ঢুকে পড়েছেন৷ আর তাতে নাকি নিরাপত্তা সংক্রান্ত জটিলতা হতে পারে৷
ছবি: DW
পালাও
খনিরা কাছে যেতেই বিক্ষোভকারীদের দীর্ঘ লাইনে হঠাৎ করেই কেউ কেউ ফুঁসে ওঠেন৷ অনেকেই চিৎকার ও দৌড়াতে শুরু করে দেন৷
ছবি: DW
একটি একদিনের সাফল্য
বিক্ষোভকারীদের মতে, তাঁদের দাবি তুলে ধরার সবচেয়ে ভালো উপায়ই ছিল এই কয়লা খনির চারপাশ অবরোধ করা৷ এতে করে কিছু সময়ের জন্য হলেও তো খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ ছিল! তাই কিছুক্ষণের এই বিরতিকে বিরাট সাফল্য হিসেবে দেখছেন বিক্ষোভকারীরা৷
ছবি: DW
কয়লা: আর না...
বিক্ষোভকারীরা বলছেন, বিদ্যুতের জন্য কয়লার ওপর এতটা নির্ভরশীলতা ইউরোপের আর কোথাও নেই৷ ‘কয়লা ত্যাগ করুন, জলবায়ু রক্ষা করুন’ লেখা ব্যানারও সেদিন তাই চোখে পড়ে৷
ছবি: DW
শেষ পর্যন্ত
রবিবারের প্রতিবাদ কর্মসূচির শেষ দিকে বিক্ষোভকারীদের দু’টি দল মূল দল থেকে তাঁদের নেতাদের নিয়ে ভাগ হয়ে যায়৷ ছবিতে নিশ্চয় দেখতে পাচ্ছেন পুলিশ তাঁদের প্রতিরোধ করতে কীভাবে প্রস্তুত ছিল৷
ছবি: DW/Wecker/Banos Ruiz
এখনই সময়
একদিনের জন্য হাম্বাখ খনি বন্ধ করে দিতে সফল হন বিক্ষোভকারীরা৷ তবে এটা দেখতে হবে যে শেষ পর্যন্ত রাজনীতিবিদরা ‘কপ২৩’ সম্মেলনে কয়লা খনি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী কোনো পদক্ষেপ নেন কিনা৷
ছবি: DW/Wecker/Banos Ruiz
9 ছবি1 | 9
এদিকে, ড্যুসেলডর্ফের পুলিশ জানিয়েছে, গ্যুন্থারের উপর হামলার সম্ভাব্য সব কারণই খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ তবে এই মুহূর্তে তারা নির্দিষ্ট কোন কারণ জানাতে পারছেন না৷
জার্মানির জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকা বিল্ড লিখেছে, ‘‘জার্মানির কোলন এবং আখেনের মাঝে অবস্থিত এক জঙ্গল নিয়ে পরিবেশবাদীদের সঙ্গে আরডাব্লিউই'র মধ্যকার দ্বন্দ্বের জের ধরে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে কিনা তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা৷''
হামবাখ জঙ্গলটি বারো হাজারেরও বেশি পুরনো এবং জার্মানির অন্যান্য জঙ্গলের চেয়ে এটির জীববৈচিত্র অনেক বিস্তৃত৷ তবে নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কবলে পড়ে জঙ্গলটির মাত্র দশ শতাংশ এখন অবশিষ্ট রয়েছে৷ এই জঙ্গলের পাশে অবস্থিত আরডাব্লিউই'র উন্মুক্ত কয়লা খনিকে কেন্দ্র করে ২০১২ সাল থেকে পরিবেশবাদীদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির বিরোধ চলছে৷ ৩৩ বর্গমাইল বিস্তৃত এই কয়লা খনিটি ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বড়৷
হামবাখের জঙ্গলে যাতে আরডাব্লিউই'র গাড়ি প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য গত কয়েকবছর ধরেই আন্দোলন করছেন পরিবেশবিদরা৷ এমনকি, জঙ্গলের মধ্যে গাছে দিনের পর দিন অবস্থানও করেছেন অনেক অ্যাক্টিভিস্ট৷