করোনার নতুন স্ট্রেইনের সঙ্গে লড়াইয়ে ব্যর্থ অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন। সে কারণে, দক্ষিণ আফ্রিকা ওই ভ্যাকসিন দেয়া বন্ধ করল।
বিজ্ঞাপন
দক্ষিণ আফ্রিকায় ধাক্কা খেল অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকা। দেশের সরকার জানিয়ে দিল, আপাতত ওই টিকা সে দেশে দেওয়া হবে না। কারণ, নতুন ধরনের যে করোনা ভাইরাস দক্ষিণ আফ্রিকায় দ্রুত ছড়াচ্ছে, অক্সফোর্ডের আবিষ্কৃত টিকা তা আটকাতে পারছে না বলে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। সম্প্রতিদক্ষিণ আফ্রিকায় এ নিয়ে একটি পরীক্ষা হয়েছিল। তাতেই এমন ফলাফল পাওয়া গিয়েছে।
প্রশ্ন-উত্তরে করোনার টিকা
করোনার টিকা কি হালাল, শিশু ও গর্ভবতীরা কি টিকা নিতে পারবে, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি, কতদিন স্বাস্থ্য়বিধি মানতে হবে- এমন সব প্রশ্নের উত্তর থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Leon Neal/Getty Images
কতগুলো টিকা অনুমোদন পেয়েছে
ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন বায়োনটেক-ফাইজার, মডার্না ও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, এই তিন টিকার অনুমোদন দিয়েছে৷ এর বাইরে রাশিয়া স্পুটনিক ৫ ও চীন সিনোভ্যাক টিকার অনুমোদন দিয়েছে৷
ছবি: Sven Hoppe/dpa/picture alliance
পার্থক্য
বায়োনটেক-ফাইজার ও মডার্নার টিকা হচ্ছে এমআরএনএ টিকা৷ মডার্নার টিকা ঘরের রেফ্রিজারেটরে সর্বোচ্চ ৩০ দিন পর্যন্ত রাখা যায়৷ বায়োনটেক-ফাইজারের টিকার মতো মডার্নার টিকাকে পরিবহনের সময় মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখতে হয় না৷ আর অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাটি ভেক্টর ভাইরাস টিকা, যা সাধারণ রেফ্রিজারেটরে রাখা যায়৷
ছবি: ULMER Pressebildagentur/picture alliance
দ্বিতীয় ডোজে অন্য টিকা?
তিনটি টিকার ক্ষেত্রেই দুটো করে ডোজ দিতে হয় এবং ডোজ দুটো একই টিকার হতে হবে৷ কারণ দুই ডোজে দুই ধরনের টিকা নিলে কী হতে পারে সে বিষয়ে এখনও কোনো তথ্য নেই৷
ছবি: TASR/dpa/picture alliance
করোনা হলেও টিকা নিতে হবে?
হ্যাঁ, নেয়া ভালো৷ কারণ একবার সংক্রমিত হলে পরে আর হবে না, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই৷
ছবি: Abdesslam Mirdass/Hans Lucas/imago images
কী অবস্থায় টিকা নেয়া যাবেনা?
করোনায় আক্রান্ত অবস্থায় এবং সাধারণ সর্দি, কাশি ও জ্বর থাকলে সেই সময় টিকা নেয়া যাবে না৷ কোয়ারান্টিনে থাকার সময়ও টিকা নেয়া যাবে না৷ যাদের কোনো বিষয়ে অ্যালার্জি আছে তাদের বেশিরভাগই টিকা নিতে পারবেন৷
ছবি: Markus Schreiber/AP Photo/picture alliance
শিশুদের টিকা?
টিকাগুলো ১৬ বছর বা তার বেশি বয়সিদের দেয়ার জন্য অনুমোদন পেয়েছে৷ শিশুদের টিকা দেয়ার বিষয়ে গবেষণা চলছে বলে জানিয়েছে জার্মানির রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট৷
ছবি: Getty Images/S. Gallup
গর্ভবতীরা টিকা নিতে পারবেন?
‘জার্মান স্ট্যান্ডিং কমিশন অন ভ্য়াকসিনেশন’ বা স্টিকো গর্ভবতীদের টিকা নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেনা৷ আবার না-ও করছেনা৷ তবে গর্ভবতী মায়েদের মধ্যে যাদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে তারা ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে ঝুঁকি-লাভ বিবেচনা করে টিকা নিতে পারেন বলে জানিয়েছে স্টিকো৷ এদিকে, এমআরএনএ টিকা গর্ভবতী মা ও গর্ভের শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিশ্বাস করেননা বিশেষজ্ঞরা৷ তবে এ বিষয়ে এখন প্রাণীর উপর গবেষণা চলছে৷
টিকা নেয়ার পর তিনদিনের মধ্যে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে৷ যেমন টিকার স্থান ফুলে যাওয়া, মাথাব্য়াথা, জ্বর, দুর্বল লাগা ইত্যাদি৷ তবে দুদিনের মধ্যে এগুলো সেরে যাবার কথা৷
ছবি: Imago Images/M. Eichhammer
অন্য টিকা নিতে কতদিন অপেক্ষা?
ইনফ্লুয়েঞ্জা, হাম, রুবেলা কিংবা টিটেনাসের টিকা নিতে চাইলে করোনার টিকা নেয়ার আগে বা পরে ১৪ দিন অপেক্ষা করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: imago/blickwinkel
টিকা হালাল?
ফাইজার, মডার্না ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার মুখপাত্ররা টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে নিশ্চিত করেছেন তাদের টিকায় শূকরের কিছু নেই৷
ছবি: Dominic Lipinski/picture-alliance
টিকা নেয়ার পরও হাত ধোঁয়া, মাস্ক পরতে হবে?
টিকা আপনাকে কতদিন রক্ষা করতে পারে সে বিষয়ে এখনও কোনো গবেষণা নেই৷ তাই টিকা নিলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরা চালিয়ে যেতে হবে৷
ছবি: Michel Kappeler/REUTERS
11 ছবি1 | 11
করোনার বি.১.৩৫১ ভেরিয়েন্টের ভাইরাস দক্ষিণ আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়েছে। এই ভাইরাসটিই দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছিল। ইউরোপের বেশ কিছু দেশেও ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে। সাধারণ করোনা ভাইরাস থেকে এই জীবাণুটি অনেক বেশি সংক্রমক। সাধারণ করোনা ভাইরাস থেকে প্রায় ৭০ শতাংশ বেশি ছড়াতে পারে এই ভাইরাসটি। দক্ষিণ আফ্রিকায় এর জেরেই গত এক মাসে করোনা সংক্রমণের হার লাফিয়ে বেড়েছে। তারই মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছেছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা। প্রায় এক মিলিয়ন অর্থাৎ, ১০ লাখ ভ্যাকসিন দ্রুত দেয়ার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকার প্রশাসন। কিন্তু তারই মধ্যে, দুই হাজার মানুষকে নিয়ে সেখানকার গবেষকরা একটি পরীক্ষা চালান। তাতেই দেখা যায়, কোভিডের নতুন স্ট্রেইনের মোকাবিলা করতে পারছে না অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনটি। তারপরই সেটি আপাতত ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিবৃতি দিয়ে রোববার এ কথা জানিয়ে দিয়েছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকায় এখনো পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এক দশমিক পাঁচ মিলিয়ন মানুষ। মৃত্যু হয়েছে ৪৬ হাজার মানুষের। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রশাসন ঠিক করেছে দ্রুত দেশের ৬৭ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। কিন্তু তারই মধ্যে এই বিপর্যয় ঘটল। তবে সরকার জানিয়েছে, অ্যস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন দিতে না পারলেও জনসন অ্যান্ড জনসন এবং ফাইজারের টিকা দেওয়া হবে। ওই দুইটি ভ্যাকসিন নতুন স্ট্রেইনের সঙ্গেও লড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
অ্যাস্ট্রাজেনেকাও জানিয়েছে, নতুন স্ট্রেইনের সঙ্গে লড়াই করার মতো ভ্যাকসিন গরমের মধ্যেই তারা নিয়ে আসবে।