চরম আর্থিক সংকটে থাকা শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, তারা আইএমএফের কাছ থেকে ২৯০ কোটি ডলারের ঋণ পাচ্ছেন।
ছবি: Eranga Jayawardena/AP/picture alliance
বিজ্ঞাপন
আইএমএফের বোর্ডও জানিয়েছে, তারা এই ঋণ অনুমোদন করেছেন। এর ফলে আর্থিক সংকটে জেরবার শ্রীলঙ্কা একটু আশার আলো দেখতে পেল। আবার তাদের ঋণের বোঝাও বাড়লো।
আইএমএফ জানিয়েছে, তারা অবিলম্বে শ্রীলঙ্কাকে ৩৩ কোটি ডলার দেবে। এই অর্থ দিয়ে প্রাথমিকভাবে শ্রীলঙ্কা তাদের সংকট সামলাতে পারবে। কিন্তু সেই সঙ্গে আইএমএফের ম্য়ানেজিং ডিরেক্টর তিনটি বিষয়ে শ্রীলঙ্কাকে সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, শ্রীলঙ্কাকে কর ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে, গরিবদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা বলয় তৈরি করতে হবে, দুর্নীতিকে কঠোর হাতে দমন করতে হবে।
শ্রীলঙ্কায় যেভাবে প্রধানমন্ত্রীর অফিস দখল বিক্ষোভকারীদের
গোটাবায়া রাজাপাকসে দেশ ছেড়ে পালানোর পর তীব্র বিক্ষোভ শ্রীলঙ্কায়। প্রধানমন্ত্রীর অফিস দখল করে নিল বিক্ষোভকারীরা।
ছবি: Adnan Abidi/REUTERS
রাজাপাকসের দেশত্যাগের পর
বুধবার সকালেই সেনার বিমানে শ্রীলঙ্কা ছেড়ে মালদ্বীপে পালান প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাসকে। তারপরই বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমে পড়েন। কলম্বোর রাস্তা চলে যায় হাজার হাজার বিক্ষোভকারীদের দখলে। তারা তখন রাজাপাকসের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন।
ছবি: Adnan Abidi/REUTERS
স্পিকারের ঘোষণা
এরপর শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টের স্পিকার ঘোষণা করেন, সংবিধান অনুযায়ী নতুন ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন। বিক্ষোভকারীরা এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে। কিছুদিন আগেই বিক্ষোভকারীরা বিক্রমসিংহের বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। স্পিকারের ঘোষণার পর তারা সোজা প্রধানমন্ত্রীর অফিসের দিকে যান।
ছবি: Rafiq Maqbool/AP Photo/picture allaince
গেট ভেঙে ঢোকা
প্রধানমন্ত্রীর অফিসের সামনে হাজার হাজার মানুষ পৌঁছে যান। তারা অফিসে ঢোকার গেট উপড়ে ফেলে ভিতরে ঢোকেন।
ছবি: Adnan Abidi/REUTERS
ছত্রভঙ্গ করতে গ্যাস
বিক্রমসিংহে পুলিশ ও সেনাকে নির্দেশ দেন, বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। তাদের সরিয়ে দিতে হবে। দেশে জরুরি অবস্থাও জারি করা হয়। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে।
ছবি: Adnan Abidi/REUTERS
কাঁদানে গ্যাস সহ্য করে
একটা সময় দেখা যায়, পুলিশ একের পর এক কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটাচ্ছে। বিক্ষোভকারীরা জল দিয়ে চোখ ধুয়ে আবার বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। পুলিশ সমানে চেষ্টা করেও বিক্ষোভকারীদের একটুও সরাতে পারেনি।
ছবি: Rafiy Maqbool/AP Photo/picture alliance
প্রধানমন্ত্রীর অফিসে
প্রধানমন্ত্রীর অফিসের ভিতরে ঢুকে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। তারা বারান্দায় চলে যান। দেওয়াল বেয়েও উঠতে দেখা যায় তাদের।
ছবি: DINUKA LIYANAWATTE/REUTERS
বিজয়গর্বে
এর আগে প্রেসিডেন্টের বাড়িতে ঢুকে পড়েছিলেন বিক্ষোভকারীরা। এবার প্রধানমন্ত্রীর অফিসেও ঢুকে পড়লেন তারা। বিজয়গর্বে তারা ঘোরাফেরা করেছেন অফিসের ভিতরে।
ছবি: Adnan Abidi/REUTERS
ডাইনিং টেবিলে
কিছু বিক্ষোভকারী প্রধানমন্ত্রীর অফিসের ডাইনিং টেবিলের সঙ্গে রাখা চেয়ারে বসে পড়েন। এভাবেই তারা বুঝিয়ে দেন, বিক্রমসিংঘেকে তারা মানবেন না।
ছবি: Rafiq Maqbool/AP/picture alliance
সর্বদলীয় বৈঠকের সিদ্ধান্ত
এরপর সর্বদলীয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বিক্রমসিংহেকে পদত্যাগ করতে হবে। স্পিকার আপাতত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব সামলাবেন। ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল মিলে জাতীয় সরকার গঠন করবে। তারাই ঠিক করবে, কে প্রধানমন্ত্রী হবেন।
ছবি: Eranga Jayawardena/AP Photo/picture alliance
রাজাপাকসে সিঙ্গাপুর যেতে চান?
গোটাবায়া রাজাপাকসে আপাতত মালদ্বীপে আছেন। সেখানকার সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, রাজাপাকসে সিঙ্গাপুর যেতে চান। সেজন্য তিনি সরকারি বিমান চেয়েছেন।
ছবি: Abhishek Chinnappa/Getty Images
10 ছবি1 | 10
তিনটি কাজই শ্রীলঙ্কার পক্ষে বেশ কঠিন। তবে আইএমএফ মনে করছে, তাদের বাঁচার জন্য এবং এই সংকট কাটানোর জন্য এই রাস্তা নেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমসিংঘে জানিয়েছেন, কর সংস্কার ও আর্থিক ম্যানেজমেন্টের মধ্য দিয়ে শ্রীলঙ্কা পরিস্থিতির বদল ঘটাবে। আইএমএফের কাছে শ্রীলঙ্কা কৃতজ্ঞ থাকবে। কারণ, তারা ঋণ দিয়ে শ্রীলঙ্কাকে সংকট কাটাতে সাহায্য করলো।
অর্থনৈতিক সংকটে যেভাবে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কার নিম্নবিত্ত মানুষ
অর্থনৈতিক অস্থিরতায় বিপাকে শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষ৷ পরিস্থিতি এমন যে দিনে দুই বেলা খাবারের খরচ মেটাতেও পারছেন না তারা৷ বিস্তারিত জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: Kim Kyung-Hoon/REUTERS
চাল নেই ঘরে
রাজধানী কলম্বোর কাছে ওয়ান্টামুলায় তিন সন্তান আর নাতি-নাতনি নিয়ে থাকেন এই নারী৷ রান্নার গ্যাস বিস্ফোরণে আহত হওয়ার পর স্বামী ছেড়ে যান তাকে৷ স্থায়ী কোনো চাকরি না থাকায় ছুটা কাজ করে পরিবারের খরচ চালান তিনি৷ এখন তার মতো কয়েক লাখ মানুষের পক্ষে এমনকি তিন বেলার খাবার জোগাড় করাও বড় এক চ্যালেঞ্চ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
ছবি: Kim Kyung-Hoon/REUTERS
প্রোটিনের ঘাটতি
৪৯ বছর বয়সি নিলান্থি গুনাসেকারার ঘরে মাছ বলতে এই শুটকিটুকুই অবশিষ্ট রয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘অর্থনৈতিক সংকটের আগে আমরা ভালোই খেতাম৷ সন্তানদের সপ্তাহে অন্তত তিন বা চারদিন মাংস বা মাছ খাওয়াতে পারতাম৷ এখন মাছ আমাদের পরিবারের খাদ্য তালিকা থেকে বাদ গেছে, একই অবস্থা মাংসেও৷’’
ছবি: Kim Kyung-Hoon/REUTERS
করোনার উপর নতুন খাঁড়া
৬০ বছর বয়সি গামাগে রূপাওয়াথির (ডানে) কলম্বোতে ফলের দোকান ছিল৷ সেখান থেকে আয় দিয়ে স্বামী (মাঝে), সন্তান (বামে) নিয়ে ভালোভাবেই চলছিল তাদের সংসার৷ কিন্তু মহামারি চলাকালীন দীর্ঘ লকডাউনের কারণে তার দোকান বন্ধ হয়ে যায়৷ অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সেটি আর পুনরায় চালু করতে পারেননি তিনি৷
ছবি: Kim Kyung-Hoon/REUTERS
এক কাপ চা, দুটি বিস্কুট
গামাগে রূপাওয়াথির স্বামীর জন্য কোনো কোনোদিন এটিই একমাত্র খাবার৷ দ্বীপ রাষ্ট্রটির সোয়া দুই কোটি বাসিন্দার এক চতুর্থাংশই বর্তমানে দুই বেলা খাবার জোগাতে হিমশিম খান৷
ছবি: Kim Kyung-Hoon/REUTERS
ওষুধের সংকট
হৃদরোগে আক্রান্ত মানেল পাইরিস তার ওষুধের খরচ বহন করতে হিমশিম খাচ্ছেন৷ ৬৮ বছর বয়সি এই নারী একটি সরকারি হাসপাতাল থেকে আগে নিয়মিত তিন মাসের ওষুধ পেতেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এখন আমাদের ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনতে মাসে তিন হাজার ৪০০ রুপি খরচ হয়, যা আমার পক্ষে বহন সম্ভব না৷ আমি বড়জোর এক সপ্তাহের ওষুধ কিনতে পেরেছি৷ কখনো কখনো আমার স্বামীকে টাকা ধার করতে হয় বা অগ্রিম মজুরির আবেদন করতে হয়৷’’
ছবি: Kim Kyung-Hoon/REUTERS
জলের অভাব
‘‘আমাদের কলে জলের সংযোগ আছে, কিন্তু খাবারের ক্রমবর্ধমান খরচ ছাড়াও জল আর বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করা খুব কঠিন৷ তাই এখন টাকা বাঁচানোর জন্য আমি প্রায়ই একটি পাবলিক কূপে স্নান করি,’’ বলেছিলেন শিবরাজা সঞ্জীওয়ান নামে ৩১ বছর বয়সি অটোরিকশা চালক৷
ছবি: Kim Kyung-Hoon/REUTERS
বিপদে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা
৫৩ বছরের প্রিয়ানি ধম্মিকা পান বিক্রি করেন৷ এর ভিতরে থাকে বাদাম৷ তিনি বলেন, ব্যবসা এখন খুব কঠিন, কেননা, বাদামের দাম তিনগুণ আর পাতার দাম আটগুণ বেড়েছে৷
ছবি: Kim Kyung-Hoon/REUTERS
কী দিয়ে রান্না করবেন?
বিদ্যাথিপাতিগে নিহাল আর তার পরিবারের গ্যাসের ট্যাংক আর চুলা চুরি গেছে৷ এর ফলে খোলা চুলায় রান্না করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা৷ কিন্তু গ্যাসের ঘাটতির কারণে জ্বালানি কাঠের চাহিদা দ্রুত বেড়েছে৷ বেড়েছে দামও।
ছবি: Kim Kyung-Hoon/REUTERS
8 ছবি1 | 8
২০২২ সালের এপ্রিলে শ্রীলঙ্কা আন্তর্জাতিক ঋণ শোধ করতে পারেনি এবং গভীর আর্থিক সংকটে পড়েছিল। তারপর শাসকদের বিরুদ্ধে মানুষ বিক্ষোভ দেখিয়েছে। যার জেরে প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে। রাজাপাকসে পরিবার ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।