বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে বিবেচিত পাকিস্তানি অধ্যাপক ওয়ারিস মীরের সন্তান হামিদ মীর তাঁর বাবাকে দেয়া এক সম্মাননা ফিরিয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন৷ তাঁর এই ঘোষণা বাংলাদেশে সৃষ্টি করেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া৷
বিজ্ঞাপন
১৯৭১ সালে বাংলাদেশে দমনপীড়নের বিরুদ্ধে যেসব বিদেশি অবস্থান নিয়েছিলেন তাদের বন্ধু হিসেবে সম্মাননা দিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার৷ ৫০টি দেশের বিদেশি বন্ধুদের সম্মাননা দেয়া হয়৷ এদের একজন পাকিস্তানি সাংবাদিক হামিদ মীরের বাবা প্রয়াত অধ্যাপক ও সাংবাদিক ওয়ারিস মীর৷ বাবার পক্ষে বাংলাদেশে এসে সম্মাননা নিয়েও গেছেন হামিদ মীর৷ তখন বাংলাদেশের গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে হামিদ মীর সরকারকে ধন্যবাদ দিয়ে এই ধরনের উদ্যোগের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন৷ পাকিস্তানের তখনকার ভূমিকারও সমালোচনা করেন এই সাংবাদিক৷ এখন হঠাত্ করেই বাবার সম্মাননা ফিরিয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি৷
Kabir.mp3 - MP3-Stereo
হামিদ মীর কেন এই ঘোষণা দিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বিদেশি বন্ধু খুঁজে বের করা কমিটির সদস্য শাহরিয়ার কবির ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘হামিদ মীরের বাবার নাম তো আমাদের তালিকাতেই ছিল না৷ হামিদ মীর নিজে আমাকে ফোন করে তার বাবার ভূমিকার কথা জানান৷ পাশাপাশি কিছু প্রমাণও হাজির করেন৷ আমরা কমিটির সদস্যরা তাঁর দেয়া তথ্য ও অন্যান্যভাবে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হই ওয়ারিস মীর গণহত্যার প্রতিবাদ করে লেখালেখি করেছিলেন৷ এ কারণে তাঁর নাম আমরা তালিকাভুক্ত করি এবং উনি নিজেই বাবার পক্ষে সম্মাননা নিতে বাংলাদেশে আসেন৷ ওয়ারিস মীর ছাড়াও আরো কয়েকজনকে আমরা সম্মাননা দিয়েছি৷''
যুদ্ধপরাধ ইস্যু নিয়ে কাজ করা শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘‘কয়েকদিন আগে আমি পাকিস্তান গিয়েছিলাম৷ সেখানে যারা সম্মাননা পেয়েছেন তাদের কয়েকজন আমাকে বলেছেন পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই তাদের সম্মাননা ফিরিয়ে দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে৷ কিন্তু তারা সেই চাপের কাছে নতি স্বীকার করবেন না বলে বলেছেন৷''
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু দুর্লভ ছবি
সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-র সংগ্রহে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু দুর্লভ ছবি রয়েছে৷
ছবি: AP
উত্তাল মার্চ
১৯৭১ সালের ২৩ শে মার্চ ঢাকার রাস্তায় স্বাধীনতার দাবিতে হারপুন হাতে বিক্ষোভ মিছিল৷
ছবি: AP
যশোরে মুক্তিবাহিনী
২ এপ্রিল ১৯৭১৷ যশোরে মার্চ করছে মুক্তিবাহিনী৷
ছবি: AP
ত্রিপুরায় বাংলাদেশি শরণার্থী
১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল৷ প্রচণ্ড যুদ্ধ চলছে৷ প্রাণ বাঁচাতে ভারতের ত্রিপুরার মোহনপুরের একটি স্কুল ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশিরা৷
ছবি: AP
ভারত সীমান্তের কাছে বাংলাদেশিদের অবস্থান
১৯৭১ সালের ৮ এপ্রিল৷ ভারত সীমান্তের ৩০ মাইলের মধ্যে কুষ্টিয়ায় মুক্তিযোদ্ধাসহ অনেকেই অবস্থান করছিল৷
ছবি: AP
বেনাপোলের কাছে শরণার্থী শিবির
১৪ এপ্রিল ১৯৭১, যশোরের বেনাপোলের কাছে ভারত সীমান্তে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিল পাঁচ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি৷
ছবি: AP
আহত মুক্তিযোদ্ধা
১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর বোমা হামলায় আহত একজন মুক্তিযোদ্ধাকে চিকিৎসা দিতে নিয়ে যাচ্ছেন বেসামরিক মানুষ এবং মুক্তিযোদ্ধারা৷
ছবি: AP
মুক্তিবাহিনী
১৯৭১ সালের ৩ রা আগস্ট৷ ঢাকার কাছে মুক্তিবাহিনীর সদস্য হেমায়েতউদ্দীন একটি গোপন ক্যাম্প থেকে মেশিনগান তাক করে রেখেছেন৷
ছবি: AP
১৯ বছর বয়সি শিক্ষার্থীর নেতৃত্বে প্লাটুন
১৩ নভেম্বর ১৯৭১৷ ফরিদপুরে রাইফেল হাতে তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ৷ ৭০ সদস্যের একটি প্লাটুন গড়া হয়েছিল সেখানে৷ সেই প্লাটুন দক্ষিণাঞ্চলে সামরিক ও চিকিৎসা দ্রব্য সরবরাহ করত৷ একদম বামে থাকা ১৯ বছর বয়সি তরুণটি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র৷ ৭০ জনের প্লাটুনের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি৷
ছবি: AP
মুক্তিবাহিনীর পারুলিয়া দখল
১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর৷ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের পারুলিয়া গ্রাম দখল করে নেয় মুক্তিবাহিনী৷
ছবি: AP
আখাউড়ায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী
২৯ নভেম্বর, ১৯৭১৷ আখাউড়ায় অস্ত্র পাহাড়া দিচ্ছে পাকিস্তানি সেনারা৷ তাদের দাবি ছিল, ভারতীয় সৈন্যদের কাছ থেকে এসব অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে৷
ছবি: AP
ভারতীয় সেনাদের হামলা
২ ডিসেম্বর, ১৯৭১৷ যশোরে পাকিস্তানি সেনাদের উপর গোলাবর্ষণ শুরু করে ভারত ৷ এক পাকিস্তানি সেনাসদস্য রাইফেল নিয়ে অন্যত্র যাচ্ছে৷ অন্য সেনারা তখন অস্ত্র তাক করে পরিখার মধ্যে রয়েছে৷
ছবি: AP
ভারতীয় সেনা
১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর৷ ভারতীয় সীমান্তের কাছে ডোঙ্গারপাড়ায় খোলা মাঠে মেশিনগান তাক করে রেখেছেন এক ভারতীয় সেনা৷
ছবি: AP
ডিসেম্বরেও ঢাকায় পাকিস্তানি সার্জেন্ট
১২ ডিসেম্বর, ১৯৭১৷ রাজধানী ঢাকার অদূরে একটি এলাকায় একজন পাকিস্তানি সার্জেন্ট দুই সেনাকে নির্দেশনা দিচ্ছে৷
ছবি: AP
যুদ্ধবিরতি
রবিবার ১২ ডিসেম্বর. ১৯৭১৷ ঢাকা বিমানবন্দরে অপেক্ষায় আছেন বিদেশিরা৷ একটি ব্রিটিশ বিমান অবতরণ করেছে৷ ৬ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির সময় বিদেশিদের নিয়ে যাওয়ার জন্যই ঐ বিমানটি পাঠানো হয়েছিল৷
ছবি: AP
ভারতীয় ট্যাংক
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর৷ ভারতীয় সেনাবাহিনীর ট্যাংক বগুড়ার দিকে রওনা হয়েছে৷
ছবি: AP
চার রাজাকারকে হত্যার পর মুক্তিবাহিনীর প্রতিক্রিয়া
হত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাটে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করা চার রাজাকারকে হত্যার পর আল্লাহ’র উদ্দেশে শুকরিয়া জানাচ্ছেন মুক্তিসেনারা৷
ছবি: AP
16 ছবি1 | 16
শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘‘হামিদ মীর আইএসআই'কে খুশি করতে সম্মাননা ফিরিয়ে দিতে চান৷ আর এই কথা বলে তিনি নিজের বাবাকেই অপমানিত করেছেন৷ তার বাবা সত্যের পক্ষে মানবতার পক্ষে তখন অবস্থান নিয়েছিলেন৷''
প্রসঙ্গত, সম্মাননা ফিরিয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়ে সাংবাদিক হামিদ মীর বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের টানাপড়েনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়ী৷ বাবার ওই সম্মাননাকে এখন ‘ধোঁকা' বলে মনে হচ্ছে৷ উনি চাচ্ছেন, বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক একদম শেষ হয়ে যাক৷ ওই অ্যাওয়ার্ড ছিল ধোঁকা৷ আমি ধন্যবাদের সাথে বলছি, ওই অ্যাওয়ার্ড আমাদের হাসিনা ওয়াজেদকে ফেরত দেওয়া উচিত৷ আমি এই ধোঁকা ফেরত দিচ্ছি৷''
স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়ানো যে ৬৯ জন বিদেশি বন্ধুকে ২০১৩ সালের মার্চ মাসে সম্মাননা দেওয়া হয়, তার মধ্যে ওয়ারিস মীরসহ ১৩ জন ছিলেন পাকিস্তানি৷ একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতের গণহত্যার ভয়াবহতা সচক্ষে দেখতে একদল ছাত্র নিয়ে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে এসেছিলেন সাংবাদিক ওয়ারিস মীর৷ নির্মমতার চিত্র দেখে ক্ষুব্ধ এই সাংবাদিক তা নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেন দৈনিক জং পত্রিকায়৷ আর তাই তাঁকে সম্মাননা দেয় বাংলাদেশ সরকার৷