নতুন এক ভিডিওতে বাংলাদেশে জিহাদের ডাক দিয়েছে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সদস্যরা৷ ওই ভিডিওতে তাদের আইএস নেতা আবু বকর আল-বাগদাদির কাছে বাংলা ভাষায় জিহাদে অংশ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে দেখা যায়৷
ছবি: picture-lliance/AP Photo/K. Mohammed
বিজ্ঞাপন
তবে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলছেন, বাংলাদেশে আইএস বলে কিছু নেই, এখানে যারা আসবে তারা বিপদে পড়বে এবং কিছুতেই ঘাঁটি গাড়তে পারবে না৷
ভিডিওটি এখনো বাংলাদেশ সরকারের নজরে না এলেও ওই ভিডিওতে যারা বাংলায় কথা বলেছেন তাদের শনাক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷
ভারতের জিনিউজ এক প্রতিবেদনে জানায়, সন্ত্রাসী সংগঠন আইএস-এর ‘বাংলাদেশ ইউনিট’ গত সপ্তাহে আমাক এজেন্সি এবং আইএসপন্থী টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে ‘দ্য বেস্ট আউটকাম ইজ ফর পায়াস' শিরোনামে একটি ভিডিও প্রকাশ করে৷
তাতে দেখা যায়, আইএস-এর দুই সদস্য সুইসাইড জ্যাকেট পরে এবং মেশিনগান নিয়ে সংগঠনটির নেতা আবু বকর আল-বাগদাদীর কাছে জিহাদে অংশ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন৷ ভিডিওটিতে আইএস-এর চারজন সদস্য বাংলায় কথা বলেন এবং শেখ হাসিনা সরকার, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং ব়্যাবের সমালোচনা করেন৷
আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল
This browser does not support the audio element.
ভিডিওতে বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং হিন্দু ও বৌদ্ধ পুরোহিতদের কিছু চিত্র দেখানো হয়৷ এছাড়া আইএসের সাবেক হামলাকারী ছাড়াও পুলিশের গুলি খাওয়ার আগে ওর্সবার্গের কাছে একটি ট্রেনে হামলা করে চার জনকে আহত করা রিয়াজ খান আহমদজাইকে দেখানো হয় ওই ভিডিওতে৷
ভিডিওতে বাংলাদেশ সরকারের অফিস, নির্বাচনি কেন্দ্র এবং হিন্দুদের ওপর হামলার আহ্বান জানানো হয়েছে বলে সংবাদ জিনিউজের৷
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সোমবার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ভিডিওটা আমরা এখনো দেখিনি, আর কেউ বাংলায় কথা বললেই যে তারা বাংলাদেশি, এমন কোনো কথা নেই৷ কারণ, বাংলাদেশ থেকে গিয়ে অনেকে অ্যামেরিকা বা বিট্রিশ নাগরিকত্ব নিয়েছেন তারা কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে না৷ ভারতের ১২ কোটি মানুষ বাংলায় কথা বলেন৷ অনেক মানুষ বাংলায় কথা বলে, কাজেই বাংলায় কথা বললেই তারা যে বাংলাদেশি এমন কোনো কথা নেই৷''
‘‘আর আমাদের এখানে আইএস-ফাইএস বলে কিছু নেই, এখানে (বাংলাদেশে) যারা আসবে তারা বিপদে পড়বে৷ তাদেরকে আমরা ডিটেক্ট করব৷, এখানে ঘাঁটি গাড়তে পারবে না৷ (ভিডিওতে যারা বাংলায় কথা বলেছেন তারা) বাংলাদেশের কিনা আমরা নিশ্চিত নই, তবে আমাদের কোনো বাংলাদেশি এগুলো করে বলে আমাদের জানা নেই৷ যেহেতু আমরা নিশ্চিত নই, কাজেই আমরা তাদের পরিচয় সম্বন্ধে সন্ধিহান, তাদের শনাক্ত করার চেষ্ট করব৷ ভিডিওটি এখনো আমার নজরে আসেনি৷ হয়ত যারা এটি নিয়ে কাজ করেন, তাদের নজরে এসেছে৷''
মো. এমরানুল হাসান
This browser does not support the audio element.
এরকম ভিডিও বিভিন্ন সাইট থেকে প্রায়ই আপলোড করা হয় দাবি করে ব়্যাবের মুখপাত্র মো. এমরানুল হাসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শুধু ব়্যাব না, ওরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জড়িয়ে অনেক সময় স্টেস্টমেন্ট দেয়৷ যারা জঙ্গিবাদ ছাড়ায়, তারা আসলে প্রচলিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিশ্বাস করে না, যখনই সাইটে আসে সরকারবিরোধী কথা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, বিচারক, দেশের বিভিন্ন প্রশংসনীয় লোকদের প্রতি তাদের আক্ষেপ ওই ভিডিওতে লক্ষ্য করা যায়৷ আমাদের একটা সাইবার মনিটরিং সেল আছে এবং আমরা এগুলো সব সময় নজরদারিতে রাখি৷ আমরা সব সময় এসব বিষয়ে সতর্ক পদক্ষেপ নেই৷''
তিনি বলেন, ‘‘ঈদ উৎসবকে কেন্দ্র করে এবং আগস্টের শোক দিবসের অনুষ্ঠান নিয়ে আমাদের তৎপরতা রয়েছে, যে কোনো ধরনের তৎপরতা হলে আমরা মনিটরিংয়ে রাখব এবং ব্যবস্থা নেব৷''
কয়েকটি উগ্র মতাদর্শ
ধর্ম, বর্ণ, স্বাধীনতা নানা নামে উগ্রবাদ ছড়ায় বিশ্বে৷ বিভিন্ন মতাদর্শের উপর ভর করে গড়ে ওঠে জঙ্গি সংগঠন কিংবা সশস্ত্র বাহিনীও, যা অনেক সময় রূপ নেয় সন্ত্রাসে৷
ছবি: Reuters
ইসলামিক স্টেট, আইএস
একসময় পোশাকি নাম ছিল ‘ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দি লিভ্যান্ট’৷ সংক্ষেপে আইএসআইএল কিংবা আইএসআইএস৷ তবে বেশি পরিচিত আইএস বা দায়েশ নামে৷ বিশ্বজুড়ে ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে ২০১৪ সালে তারা আত্মপ্রকাশ করে৷ ২০১৫ সালের শেষ পর্যন্ত বিশ্বের ৮৫টি দেশ থেকে প্রায় ৩০ হাজার যোদ্ধা জঙ্গি গোষ্ঠীটিতে যোগ দেয়৷ সিরিয়া, ইরাকের একটি বড় অংশ দখল করে নিয়েছিল তারা৷ তবে সম্প্রতি শেষ ঘাঁটিটিও হারিয়েছে আইএস৷
ছবি: Reuters
আল-কায়দার উত্থান
জর্ডান-প্যালেস্টেনিয়ান মুসলিম ধর্মীয় গুরু আব্দুল্লাহ আজম৷ একটি জিহাদি জার্নালে আফগানিস্তানে লড়াইয়ের জন্য মুজাহিদিন বা বিদেশি যোদ্ধাদের বাহিনী গড়ার ধারণা দেন তিনি৷ ১৯৮৯ সালে মারা গেলেও তাঁর মতবাদই বৈশ্বিক জিহাদি ধারণার জন্ম দেয়৷ যার উপর ভিত্তি করে ১৯৮৮ সালে আল-কায়েদা প্রতিষ্ঠা করেন ওসামা বিন লাদেন৷ আফগানিস্তান থেকে রাশিয়ার সৈন্য প্রত্যাহারের পরে আল-কায়দার শাখা ছড়িয়ে পড়ে অনেক মুসলিম দেশে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Ausaf
দেশে দেশে আল-কায়দা
বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন নামেও আল-কায়দার জিহাদি মতাদর্শের উপর ভিত্তি করে জঙ্গি সংগঠন গড়ে ওঠে৷ তারই একটি আল শাবাব৷ সোমালিয়ায় শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য নিয়ে ২০০৬ সালে গোষ্ঠীটি প্রতিষ্ঠিত হয়৷ দেশটিতে বহু বিদেশি নাগরিক হত্যার জন্য দায়ী তারা৷ আফ্রিকার এমন আরেকটি জঙ্গি গোষ্ঠী নাইজেরিয়ার বোকো হারাম৷ ২০১৪ সালে ৩০০ স্কুল ছাত্রী অপহরণের ঘটনায় গোষ্ঠীটি আন্তর্জাতিকভাবে আলোচনায় আসে৷
ছবি: Reuters/J. Penney
‘‘সাদারাই সেরা’’
বর্ণবাদী মতবাদের উপর ভিত্তি করে বিশ্বে যুগে যুগে নানা গোষ্ঠীর উত্থান হয়েছে৷ বিংশ শতকে ‘হোয়াইট সুপ্রিমেসি’ বা সাদাদের শ্রেষ্ঠত্বের ধারণার উপর ভিত্তি করে অ্যামেরিকায় গড়ে ওঠে ‘কু ক্লুক্স ক্ল্যান’ নামের কট্টর বর্ণবাদী গোষ্ঠী৷ বর্ণবাদের উপর ভর করে ইউরোপে উত্থান হয় ফ্যাসিবাদের৷
ছবি: picture alliance / ZUMAPRESS.com
উগ্র ডানপন্থা
সাম্প্রতিক সময়ে নতুন করে পশ্চিমা দুনিয়ায় উগ্র ডানপন্থার প্রকটতা বাড়ছে৷ অ্যামেরিকা, ইউরোপ থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড পর্যন্ত এই মতাদর্শ ছড়িয়ে পড়ছে৷ ভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, জাতি ও সংস্কৃতির মানুষের প্রতি এর অনুসারীরা রক্ষণশীল৷ সবশেষ নিউজিল্যান্ডে হামলা করে ৫০ জনকে হত্যায় অভিযুক্তও তেমনই একজন৷
ছবি: Reuters/M. Mitchell
বামপন্থিদের সশস্ত্র লড়াই
সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা কিংবা কমিউনিস্ট রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নেয় বিশ্বের অনেক উগ্র বামপন্থি সংগঠন৷ রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে, সরকারি কর্মকর্তা, সম্পদশালী মানুষদের তারা শত্রু বিবেচনা করে৷ ফিলিপিন্সের কমিউনিস্ট পার্টি নিও পিপলস আর্মি বা ভারতের মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি তারই উদাহরণ - যাদেরকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে অভিহিত করে আসছে দেশগুলোর সরকার৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Quraishi
স্বাধীনতাকামীদের সংগ্রাম
ইসরায়েলের দখলদারিত্বের অবসান ঘটিয়ে একটি স্বাধীন প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রের জন্য দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করে আসছে ফিলিস্তিনিরা৷ এজন্য সশস্ত্র যুদ্ধের পথ বেছে নিয়েছে হামাস, প্যালেস্টাইন লিবারেশন ফ্রন্ট, প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদ৷ উগ্রতার কারণে এই দলগুলোকে সন্ত্রাসী হিসেবে অভিহিত করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র৷ এমন স্বাধিনতাকামী সংগঠন আছে আয়ারল্যান্ড, রাশিয়া, পাকিস্তান ভারতসহ বিশ্বের নানা দেশে৷