আইএস-এর সঙ্গে জড়িত সন্দেহে বাংলাদেশে গত আট মাসে ২০ জনকে আটক করা হয়েছে৷ তবে শুধু আটক নয়, জঙ্গিবাদের প্রসার থামাতে এখনই উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা৷
বিজ্ঞাপন
জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর সঙ্গে জড়িত সন্দেহে বাংলাদেশের গোয়েন্দা পুলিশ গত রবিবার দু'জনকে আটক করে৷ এর মধ্যে একজন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ আমিনুল ইসলাম বেগ আইএস-এর সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছিলেন বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র এবং গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান মনিরুল ইসলাম৷ আটক হওয়া অন্যজন লালমাটিয়ার একটি ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ে শিক্ষক৷
উচ্চশিক্ষিত এ সব মানুষের আইএস-এর সঙ্গে জড়িত হওয়ার খবরে চিন্তিত ফেরদৌস আহমদ ফয়সল৷ ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘‘আন্তর্জাতিকভাবে জঙ্গিরা তাদের শক্তিটা ছড়িয়ে দিচ্ছে, তাই দেশে জঙ্গি নির্মূল সহজ কোনো ব্যাপার না৷ এদের ব্যাপারে সবসময়েই সতর্ক থাকতে হবে, জঙ্গিদের আইনের আওতার পাশাপাশি জঙ্গি উৎপাদনের কারখানাগুলো বন্ধ করতে না পারলে এভাবে ধরপাকড় করেও জঙ্গিদের নির্মূল করা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করে না৷ তাই চাই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন৷''
হত্যা, আতঙ্ক আর ঘৃণায় আইএস
শুধু ইরাক আর সিরিয়া নয়, আজকাল বিশ্বের অনেক দেশেই ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর তৎপরতার কথা শোনা যায়৷ খেলাফত কায়েমের কথা বলে মধ্যপ্রাচ্যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা জঙ্গি সংগঠনটিকে নিয়েই আমাদের আজকের ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jordan News Agency
তাদের কাছে নারী যেন বাজারের পণ্য
অনেক সময় আটক নারী ও শিশুদের আইএস জঙ্গিরা যৌন দাস হিসেবে ব্যবহার করে৷ সম্প্রতি আইএস-এর কবল থেকে পালিয়ে আসা ৪০ জনেরও বেশি ইয়াজিদি নারীর সঙ্গে কথা বলে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ নারী ও শিশুদের সঙ্গে আইএস-এর এমন আচরণে নিন্দা জানিয়েছেন সবাই৷
ছবি: DW/Andreas Stahl
সাংবাদিক, এনজিওকর্মী হত্যা করে হুমকি
তাদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা বন্ধ না করায় যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করতে নিরপরাধ মানুষ হত্যার বেশ কিছু নজীর গড়েছে আইএস৷ বিমান হামলার প্রতিশোধের কথা বলে যুক্তরাষ্ট্রের দু’জন সাংবাদিক, একজন এনজিও কর্মী এবং ব্রিটেনের দু’জন এনজিও কর্মীর শিরশ্ছেদ করেছে তারা৷ ওপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক জেমস ফলিকে৷ গত আগস্টে তাঁর শিরশ্ছেদ করে ভিডিওচিত্র প্রচার করে আইএস৷
ছবি: dapd
মুসলমান হলেও রক্ষা নেই....
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সিরীয় শরণার্থীদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন পিটার কাসিগ৷ মুসলমান হিসেবে তাঁর নাম হয়েছিল আব্দুল রহমান কাসিগ৷ গত নভেম্বরে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ায় তাঁকেও হত্যা করে আইএস৷ হত্যার পর ভিডিও চিত্রও প্রকাশ করা হয়৷ নৃশংস এ ঘটনাকে ‘শয়তানের কাজ' হিসেবে বর্ণনা করেন বারাক ওবামা৷
ছবি: picture-alliance/AP/Kassig Family
জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি, তারপর...
জাপানের দুই নাগরিককে জিম্মি করে প্রথমে ২০০ মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ দাবি করে আইএস৷ মুক্তিপণ না পাওয়ায় হারুনা ইউকাওয়াকে হত্যা করলেও সাংবাদিক কেনজি গোতোকে আটকে রাখে৷ গোতো এবং জর্ডানের বৈমানিক আইমান মাজ-আল-কাসাবেহকে জিম্মি করে তাঁদের প্রাণের বিনিময়ে জর্ডানে আটক আইএস-এর এক নারী যোদ্ধার মুক্তি দাবি করা হয়৷ তাঁকে মুক্তি না দেয়ায় কেনজি গোতো এবং আইমান মাজ-আল-কাসাবেহকে হত্যা করে আইএস৷
ছবি: Reuters/www.reportr.co via Reuters TV
ইরাকে শুরু....
গত বছরের জুন মাসে ঝটিকা আক্রমণের ইরাকের মোসুল দখল করে নেয় আইএস৷ সুন্দিদের এই জঙ্গি সংঠনটি তারপর ইরাকের বেশ বড় একটা অংশে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে৷ সিরিয়াতেও দখল করে নেয় কিছু এলাকা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বাংলাদেশেও তৎপর আইএস...
আইএস সরাসরি যুদ্ধ করছে ইরাক আর সিরিয়ায়৷ যোদ্ধা সংগ্রহ করা হচ্ছে বিশ্বের প্রায় সব প্রান্ত থেকে৷ জার্মানি, বৃটেন, ফ্রান্স, বেলজিয়ামের মতো ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে জঙ্গি মনোভাবাপন্নরা গিয়েছে ইরাক, সিরিয়ায়৷ এশিয়ার দেশগুলোতেও তৎপর আইএস৷ বাংলাদেশেও আইএস সমর্থক সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েকজনকে৷
ছবি: Reuters
জুতার নীচে আইএস!
আইএস-এর প্রতি ঘৃণাও বাড়ছে সারা বিশ্বে৷ ইরাকের স্থপতি আকীল খ্রীফ তো আইএস জঙ্গিদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে বেছে নিয়েছেন অভিনব এক উপায়৷ পুরোনো জুতা সংগ্রহ করে তার নীচে জুতার পরিত্যক্ত ফিতা, বোতাম ইত্যাদি দিয়ে ফুটিয়ে তুলছেন আইএস জঙ্গিদের চেহারার আদল৷ আকীল খ্রীফ মনে করেন, আইএস জঙ্গিদের স্থান জুতার নীচেই হওয়া উচিত৷
ছবি: Armend Nimani/AFP/Getty Images
বৈমানিককে পুড়িয়ে মারা এবং জর্ডানের ‘প্রতিশোধ’
আটক নারী যোদ্ধাকে মুক্তি না দেয়ায় জর্ডানের বৈমানিক আইমান মুয়াত আল-কাসেসবেহ-কে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে মারে আইএস৷ ক্ষুব্ধ হয়ে পাল্টা ব্যবস্থা নিতেও দেরি করেনি জর্ডান৷ আইমান মুয়াত আল-কাসেসবেহ-কে (ওপরের ছবি) হত্যা করে আইএস ভিডিও প্রকাশের পরই তাদের নারী যোদ্ধা সাজিদা আল-রিশোয়াই ও আরেক কর্মীকে ফাঁসিতে ঝোলায় জর্ডান সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jordan News Agency
8 ছবি1 | 8
অনিকা খান শিক্ষিত মানুষের জঙ্গি হওয়ার খবরে বিস্মিত হয়েছেন৷ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘শিক্ষিত হয়ে জঙ্গি হয়েছে...!! তাহলে পড়ালেখা করার কি দরকার ছিল...??'' প্রথম আলোর ফেসবুক পাতায় শেয়ার করা এ সংক্রান্ত খবরের নীচে মন্তব্যের ঘরে এই প্রতিক্রিয়া জানান তিনি৷ শামীম আহমেদ লিখেছেন, ‘‘আইএস কখনো ইসলামিক দল হতে পারে না, এরা ইসলামকে বিকৃত করতে এমন পন্থা অবলম্বন করছে৷ তারা ইসলামের নামে বিশ্বে যাহা করছে তা ইসলাম সমর্থন করে না৷''
তবে এ প্রসঙ্গে দেয়া পুলিশের বক্তব্য বিশ্বাস করছেন না অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী৷ জিল্লুর রহমান লিখেছেন, ‘‘সবই হাসিনার পুলিশ লীগের সাজানো নাটক৷ সাধারণ মুসলিম দাঁড়িওয়ালা ব্যক্তিদের টার্গেট করে জঙ্গি সাজানোর অপকৌশল মাত্র৷'' মুহিব খান লিখেছেন, ‘‘পুরো দুনিয়া যু্দ্ধ করে যাদের থামাতে পারতেছে না, সেখানে যারা এই সরকারের আমলে একটা হত্যাকাণ্ডেরও আসামি ধরতে পারে না তারাই নাকি আইএস ধরতেছে!!!!????'' আব্দুর রহিম মনে করছেন, বর্তমান সরকার এভাবে পুলিশ দিয়ে ঘটনা সাজিয়ে বিদেশি প্রভুদের খুশি করে বাকশালী ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে চাইছে৷
এদিকে, সবাক পাখি আইএস-এর কোনো সদস্যকে গ্রেপ্তারের পরপরই ফাঁসি দেয়ার প্রস্তাব করেছেন৷ তবে স্বভাবতই তাঁর এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেননি অনেকে৷ কারণ সেটা হলে তো আর আইএস-এর সঙ্গে তাঁর (সবাক পাখি) কোনো তফাৎ থাকবেনা বলে মন্তব্য তাদের৷ কিন্তু সবাক পাখি এই যুক্তি খণ্ডন করার চেষ্টা করেছেন এভাবে, ‘‘... আমরা আইএস-কে কী কারণে চিনি? ওরা ধরে ধরে শিরশ্ছেদ করে৷ এটাই ওদের পরিচয়ের বোল্ড পয়েন্ট৷ এখন কারো ভাইকে যদি আইএস ধরে নিয়ে যায় কল্লা কাটার জন্য, সে কী চাইবে? সরকারের কাছে কী দাবি জানাবে? অথবা তার সামনে যদি তার ভাইকে জবাই করতে থাকে, সে কী ভাববে? ভাইকে জবাই করা শেষে নিকটস্থ থানায় গিয়ে অজ্ঞাতনামা কিছু মানুষের নামে কিভাবে মামলা করবে৷ তারপর আসামি গ্রেপ্তার হচ্ছে না কেন, এটা বলে সরকারের পদত্যাগ চাইবে? এর বাইরে আইনত আর কী কী করার আছে? শুভ অশুভ-র লড়াই কেমন হয়? নিশ্চিত খুনির হাত থেকে স্বজনকে বাঁচানোর লড়াই কেমন হয়? সামনে একটা সাপ পাইলে বিষাক্ত নাকি বিষাক্ত না, সেটা নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে সাপ মেরে ফেলে, অথচ আইএস-এর জন্য ব্যাপক মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে বসে আছে এই দেশের অনেক মানুষ৷''