নেদারল্যান্ডস সফর শেষে দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর অস্তিত্ব, বিদেশি নাগরিক হত্যা, বাক স্বাধীনতা, রাজনীতি সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন৷
বিজ্ঞাপন
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘বাংলাদেশকে ‘আফগানিস্তান বা পাকিস্তানের মতো' ব্যবহার করার জন্য সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া হত্যা ও হামলার পেছনে আইএস বা জঙ্গি গোষ্ঠী থাকার স্বীকারোক্তি দিতে ‘চাপ' আসছে৷'' তিনি বলেন, ‘‘তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে চায়৷ আফগানিস্তান, পাকিস্তান বানাতে চায়৷ যে কোনো সময় হামলা চালাতে পারে৷''
ওয়ালিউর রহমান তাঁর ফেসবুকে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া কয়েকটি মন্তব্য শেয়ার করে ‘কিছু সত্য কথার জন্য' প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন৷
মাসুদ খান রেজা লিখেছেন, চাপ কারা দিচ্ছে সেটা উল্লেখ করেননি প্রধানমন্ত্রী৷ একই রকম প্রশ্ন করেছেন পলাশ রহমান৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘...কে চাপ দিয়েছে? কোথায় চাপ দিয়েছে? কে হামলে পড়বে? কোথায় হামলে পড়বে? বাংলাদেশের উপর যদি কারো হামলে পড়ার ইচ্ছা থাকে তাহলে তারা কি উনার স্বীকার, অস্বীকারের জন্য অপেক্ষা করবে? উনি স্বীকার করলেই বাংলাদেশ অনিরাপদ, আর অস্বীকার করলেই দেশ নিরাপদ?''
ঘটনাস্থলে ছড়িয়ে থাকা মৃতদেহ দেখে, আহতদের আর্তনাদ শুনে সেদিন অসহায় বোধ করেছেন অনেকে৷ মৃতদেহ ডিঙ্গিয়ে আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন কেউ কেউ৷ পুলিশ তখনো এগিয়ে আসেনি৷ সাধারণ মানুষদের তখন পুলিশের প্রতি হামলার শিকারদের সহায়তার এগিয়ে আসার আহ্বান জানাতে দেখা যায়৷
ছবি: Reuters/T. Berkin
শান্তির বাণীতে ঢাকা মৃতদেহ
শান্তি সমাবেশে এসে মৃত্যু বরণ করা মানুষগুলোর ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহগুলো ঢাকার মতো কাফনের কাপড় তখন ছিল না৷ তাই ব্যানার-ফেস্টুন দিয়েই ঢেকে দেয়া হয় তাঁদের দেহ৷
ছবি: Getty Images/G. Tan
স্বজন এবং সমমনাদের কান্না
বোমা হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে ছুটে আসে শত শত মানুষ৷ কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে চিরবিদায় নেয়া স্বজন এবং সমমনাদের জন্য তখন অবশ্য কেঁদে ভাসানো ছাড়া কিছুই করার ছিল না৷
ছবি: picture-alliance/AA
তদন্তের তৎপরতা
একটু দেরিতে হলেও শনিবারই ঘটনার তদন্তে সক্রিয় হতে দেখা যায় নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে৷ ফরেনসিক বিভাগের কর্মীরা সেদিনই ঘটনাস্থলে ব্যস্ত সময় কাটান৷
ছবি: Getty Images/G. Tan
পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ
কিন্তু পুলিশের ভূমিকায় জনমনে দেখা দেয় ক্ষোভ৷ বোমা হামলার পর বিক্ষুব্ধ জনতার একাংশ পুলিশের ওপর হামলা চালায়৷ পুলিশের এই গাড়িটিও জনবিক্ষোভের শিকার৷
ছবি: picture-alliance/AA
বিক্ষোভ চলছে
আত্মঘাতী বোমা হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ হামলার জন্য ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আইএস-কে দায়ী করেছে তুরস্কের সরকার৷ তবে হামলার পর তুরস্কে প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ানের বিরুদ্ধেও বিক্ষোভ হয়েছে৷ আংকারা এবং ইস্তানবুলসহ কিছু শহরে বোমা হামলার বিক্ষোভ জানানোর সময় এর্দোয়ান-বিরোধী স্লোগানেও ফেটে পড়েছেন বিক্ষু্ব্ধরা৷
শনিবারের হামলাটি হয়েছে তুরস্কের কুর্দি অধ্যুষিত অঞ্চলে৷ নিহত এবং আহতরা মূলত কুর্দি এবং বামপন্থি দলের নেতা-কর্মী৷ তাই সারা বিশ্বের সব কুর্দির মাঝেই দানা বেঁধেছে ক্ষোভ৷ ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে কুর্দি ডেমোক্রেটিক কাউন্সিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Saget
11 ছবি1 | 11
পলাশ রহমান মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রী চাপের কথা বলতে আসলে ‘সবদলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য' চাপের কথা বলতে চেয়েছেন৷
জুবায়ের আহমেদ লিখেছেন, প্রধানমন্ত্রী পিছটান দিয়েছেন৷ তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারই বার বার জঙ্গির কথা বলে ‘মডারেট মুসলিম দেশ' বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্রের উপাধিতে ভূষিত করেছে৷ কিন্তু এখন হয়ত গদি রক্ষায় শেখ হাসিনা অন্য কথা বলছেন৷
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতার বন্ধুদের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়েছিল৷ নয়ন আহমেদ লিখেছেন, ‘‘বাংলাদেশে কোনো আইএস নাই সব মিথ্যা কথা....সরকার এ ব্যাপারে আরো কঠোর হবে বলে আমার বিশ্বাস৷'' দেবাশীষ ঘোষ মনে করেন, ‘‘অস্বাভাবিক কিছুই না৷ বিশ্ব রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তো এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে৷''
শামিউল ইসলাম লিখেছেন, ‘‘যেখানে সরকার ও সরকারের এমপি, মন্ত্রীরা আইএস বা জঙ্গি ছাড়া কথাই বলতে পারেন না সেখানে অস্বীকার করেও তো লাভ নাই৷'' নিয়ামুল ইসলাম লিখেছেন, ‘‘আইএস নেই, কিন্তু রাজনৈতিক সন্ত্রাসীদের অভাব নেই৷''
আইএস কী, কোথায় এবং কেন?
প্রতিদিনই খবরে আইএস৷ কোনোদিন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য, কোনোদিন হয়তো ইরাক বা সিরিয়ায় কোনো অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য৷ আইএস বলছে, ইসলামি খেলাফত কায়েম করার জন্য যুদ্ধে নেমেছে তারা৷ ছবিঘরে আইএস সম্পর্কে কিছু তথ্য....
ইসলামিক স্টেট বা আইএস আসলে কী?
আল কায়েদা থেকে তৈরি হওয়া সুন্নি মুসলমানদের জঙ্গি সংগঠন আইএস৷ সাদ্দাম পরবর্তী সময়ে ইরাকে এবং বাশার আল আসাদের আমলে সিরিয়ায় সুন্নিদের হতাশা থেকেই জন্ম সংগঠনটির৷ আইএস-এর পতাকায় লেখা থাকে, ‘মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর নবী’ এবং ‘আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই৷’
ছবি: AP
আইএস কোথায় সক্রিয়?
শরিয়া আইন অনুযায়ী পরিচালিত হবে এমন রাষ্ট্র, বা ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায় আইএস৷ সিরিয়া এবং ইরাকেই প্রত্যক্ষভাবে সক্রিয় তারা৷ দুটি দেশেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগে বেশ বড় অঞ্চল দখল করে নিয়েছে আইএস৷
আইএস কেন আলাদা?
মূলত নিষ্ঠুরতার জন্য৷ শত্রুপক্ষ এবং নিরীহ মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়াতে তারা এমন বর্বরতা এবং নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করে যা আগে কেউ করেনি৷ জবাই করে ভিডিও প্রচার, পুড়িয়ে মারা, বাবার সামনে মেয়েকে জবাই করা এবং তার তার ভিডিও প্রচার, মেয়েদের যৌনদাসী বানানো আর পণ্যের মতো বিক্রি করা – এসব নিয়মিতভাবেই করছে আইএস৷ কোনো অঞ্চল দখলে নেয়ার পর সেখানে শাসন প্রতিষ্ঠায় মন দেয় আইএস৷
ছবি: gebphotography - Fotolia.com
অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক
আইএস যদিও শুধু সিরিয়া এবং ইরাকেই সক্রিয়, তবে বিশ্বের অন্যান্য ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন নয়৷ নাইজেরিয়ার জঙ্গি সংগঠন বোকো হারাম কয়েকদিন আগেই জানিয়েছে, আইএস-কে তারা সমর্থন করে৷ দুটি সংগঠনের মধ্যে একটি জায়গায় মিলও আছে৷ আইএস-এর মতো বোকো হারামও নিষ্ঠুরতা এবং বর্বরতার প্রতিভূ হয়ে উঠেছে৷ অন্য ধর্মের নারীদের প্রতি দুটি সংগঠনের দৃষ্টিভঙ্গি এবং আচরণই মধ্যযুগীয়৷
ছবি: Getty Images/A. Katib
আইএস-এর অনুসারী কারা?
অনুসারী সংগ্রহের সাফল্যেও আইএস অন্য সব জঙ্গি সংগঠনের চেয়ে আলাদা৷ এ পর্যন্ত অন্তত ২০ হাজার বিদেশী যোদ্ধা আইএস-এ যোগ দিয়েছে৷ তাদের মধ্যে ৪ হাজারই পশ্চিম ইউরোপ এবং উত্তর অ্যামেরিকার৷
আইএস-কে রুখতে অন্য দেশগুলো কী করছে?
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বেশ কিছু পশ্চিমা এবং আরব দেশ সিরিয়া ও ইরাকে আইএস ঘাঁটির ওপর বিমান থেকে বোমা হামলা চালাচ্ছে৷ বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সিরিয়ায় ১৪২২ এবং ইরাকে ২২৪২ বার হামলা হয়েছে৷ কোনো কোনো সরকার দেশের অভ্যন্তরেও কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে৷ সিরিয়া ফেরত অন্তত ৩০ জন সন্দেহভাজন জঙ্গির বিচার শুরু করবে জার্মানি৷ গত মাসে সৌদি পুলিশও ৯৩ জন সন্দেহভাজন আইএস জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে৷
6 ছবি1 | 6
সংকলন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ
আইএস নিয়ে কারা চাপ দিচ্ছে বলে আপনার মনে হয়? জানিয়ে দিন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷