তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট' গোষ্ঠী জর্ডানের বন্দি পাইলটকে যেভাবে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী তার চরম শাস্তি হওয়া উচিত বলে বিধান দিয়েছেন মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যান্ড ইমাম শেখ আহমেদ আল-তায়েব৷
বিজ্ঞাপন
প্রতিশোধের আগুনে ফুঁসছে জর্ডানের অনেক মানুষ৷ সেনাবাহিনীও তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট'-কে উচিত শিক্ষা দিতে বদ্ধপরিকর৷ বাদশাহ আব্দুল্লাহও হুঁশিয়ারি দিয়ে দিয়েছেন৷ যে নৃশংসতার সঙ্গে সে দেশের বন্দি পাইলটকে হত্যা করেছে আইএস জঙ্গিরা, তা ক্ষমার অযোগ্য বলে মনে করেন তিনি৷ বাদশাহ বলেছেন, জর্ডান জঙ্গিদের বিরুদ্ধে নৈতিক সংগ্রাম চালাচ্ছে৷ কড়া প্রতিক্রিয়া দেখানো হবে, কারণ এই সন্ত্রাসবাদী সংগঠন শুধু জর্ডান নয়, ইসলাম ধর্ম ও তার মৌলিক মূল্যবোধের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাচ্ছে৷
সম্ভবত জানুয়ারির শুরুতেই জর্ডানের বন্দি পাইলটকে হত্যা করে বন্দি বিনিময়ের প্রস্তাব দিয়ে প্রতারণা করে চলছিলো ‘ইসলামিক স্টেট'৷ তাই পাইলটের হত্যার খবর পেয়ে সবার আগে সেই দুই বন্দির বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে জর্ডানের প্রশাসন৷
মধ্যপ্রাচ্য থেকে চীন পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় নিজেদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী সনাতন ইসলামি শাসনব্যবস্থা কার্যকর করার অঙ্গীকার করে চলেছে আইএস৷ তাদের এই অভিসন্ধি সম্পর্কে ইসলামি দেশগুলির প্রতিক্রিয়া এতকাল যথেষ্ট নরম ছিল বলে বার বার অভিযোগ উঠেছে৷ অ্যামেরিকার নেতৃত্বে সামরিক অভিযানে যোগ দেওয়া সত্ত্বেও মতাদর্শের প্রশ্নে আইএস-এর বিরুদ্ধে সরাসরি সংঘাতে যেতে দ্বিধা করে এসেছে অনেক ইসলামি দেশ৷ কিন্তু জর্ডানের বন্দি পাইলটকে জীবন্ত অবস্থায় পুড়িয়ে মারার ঘটনা সেই দ্বিধা অনেকটা কাটিয়ে তুলছে৷
হত্যা, আতঙ্ক আর ঘৃণায় আইএস
শুধু ইরাক আর সিরিয়া নয়, আজকাল বিশ্বের অনেক দেশেই ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর তৎপরতার কথা শোনা যায়৷ খেলাফত কায়েমের কথা বলে মধ্যপ্রাচ্যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা জঙ্গি সংগঠনটিকে নিয়েই আমাদের আজকের ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jordan News Agency
তাদের কাছে নারী যেন বাজারের পণ্য
অনেক সময় আটক নারী ও শিশুদের আইএস জঙ্গিরা যৌন দাস হিসেবে ব্যবহার করে৷ সম্প্রতি আইএস-এর কবল থেকে পালিয়ে আসা ৪০ জনেরও বেশি ইয়াজিদি নারীর সঙ্গে কথা বলে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ নারী ও শিশুদের সঙ্গে আইএস-এর এমন আচরণে নিন্দা জানিয়েছেন সবাই৷
ছবি: DW/Andreas Stahl
সাংবাদিক, এনজিওকর্মী হত্যা করে হুমকি
তাদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা বন্ধ না করায় যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করতে নিরপরাধ মানুষ হত্যার বেশ কিছু নজীর গড়েছে আইএস৷ বিমান হামলার প্রতিশোধের কথা বলে যুক্তরাষ্ট্রের দু’জন সাংবাদিক, একজন এনজিও কর্মী এবং ব্রিটেনের দু’জন এনজিও কর্মীর শিরশ্ছেদ করেছে তারা৷ ওপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক জেমস ফলিকে৷ গত আগস্টে তাঁর শিরশ্ছেদ করে ভিডিওচিত্র প্রচার করে আইএস৷
ছবি: dapd
মুসলমান হলেও রক্ষা নেই....
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সিরীয় শরণার্থীদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন পিটার কাসিগ৷ মুসলমান হিসেবে তাঁর নাম হয়েছিল আব্দুল রহমান কাসিগ৷ গত নভেম্বরে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ায় তাঁকেও হত্যা করে আইএস৷ হত্যার পর ভিডিও চিত্রও প্রকাশ করা হয়৷ নৃশংস এ ঘটনাকে ‘শয়তানের কাজ' হিসেবে বর্ণনা করেন বারাক ওবামা৷
ছবি: picture-alliance/AP/Kassig Family
জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি, তারপর...
জাপানের দুই নাগরিককে জিম্মি করে প্রথমে ২০০ মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ দাবি করে আইএস৷ মুক্তিপণ না পাওয়ায় হারুনা ইউকাওয়াকে হত্যা করলেও সাংবাদিক কেনজি গোতোকে আটকে রাখে৷ গোতো এবং জর্ডানের বৈমানিক আইমান মাজ-আল-কাসাবেহকে জিম্মি করে তাঁদের প্রাণের বিনিময়ে জর্ডানে আটক আইএস-এর এক নারী যোদ্ধার মুক্তি দাবি করা হয়৷ তাঁকে মুক্তি না দেয়ায় কেনজি গোতো এবং আইমান মাজ-আল-কাসাবেহকে হত্যা করে আইএস৷
ছবি: Reuters/www.reportr.co via Reuters TV
ইরাকে শুরু....
গত বছরের জুন মাসে ঝটিকা আক্রমণের ইরাকের মোসুল দখল করে নেয় আইএস৷ সুন্দিদের এই জঙ্গি সংঠনটি তারপর ইরাকের বেশ বড় একটা অংশে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে৷ সিরিয়াতেও দখল করে নেয় কিছু এলাকা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বাংলাদেশেও তৎপর আইএস...
আইএস সরাসরি যুদ্ধ করছে ইরাক আর সিরিয়ায়৷ যোদ্ধা সংগ্রহ করা হচ্ছে বিশ্বের প্রায় সব প্রান্ত থেকে৷ জার্মানি, বৃটেন, ফ্রান্স, বেলজিয়ামের মতো ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে জঙ্গি মনোভাবাপন্নরা গিয়েছে ইরাক, সিরিয়ায়৷ এশিয়ার দেশগুলোতেও তৎপর আইএস৷ বাংলাদেশেও আইএস সমর্থক সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েকজনকে৷
ছবি: Reuters
জুতার নীচে আইএস!
আইএস-এর প্রতি ঘৃণাও বাড়ছে সারা বিশ্বে৷ ইরাকের স্থপতি আকীল খ্রীফ তো আইএস জঙ্গিদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে বেছে নিয়েছেন অভিনব এক উপায়৷ পুরোনো জুতা সংগ্রহ করে তার নীচে জুতার পরিত্যক্ত ফিতা, বোতাম ইত্যাদি দিয়ে ফুটিয়ে তুলছেন আইএস জঙ্গিদের চেহারার আদল৷ আকীল খ্রীফ মনে করেন, আইএস জঙ্গিদের স্থান জুতার নীচেই হওয়া উচিত৷
ছবি: Armend Nimani/AFP/Getty Images
বৈমানিককে পুড়িয়ে মারা এবং জর্ডানের ‘প্রতিশোধ’
আটক নারী যোদ্ধাকে মুক্তি না দেয়ায় জর্ডানের বৈমানিক আইমান মুয়াত আল-কাসেসবেহ-কে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে মারে আইএস৷ ক্ষুব্ধ হয়ে পাল্টা ব্যবস্থা নিতেও দেরি করেনি জর্ডান৷ আইমান মুয়াত আল-কাসেসবেহ-কে (ওপরের ছবি) হত্যা করে আইএস ভিডিও প্রকাশের পরই তাদের নারী যোদ্ধা সাজিদা আল-রিশোয়াই ও আরেক কর্মীকে ফাঁসিতে ঝোলায় জর্ডান সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jordan News Agency
8 ছবি1 | 8
সুন্নি মুসলিম সম্প্রদায়ের জ্ঞানচর্চার পীঠস্থান হিসেবে পরিচিত কায়রোর আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় কড়া ভাষায় আইএস-এর এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যান্ড ইমাম শেখ আহমেদ আল-তায়েব এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করে বলেন, পবিত্র এই পদক্ষেপের সেই শাস্তি হওয়া উচিত, যা কোরান অনুযায়ী দুর্নীতিপরায়ন অত্যাচারীদের জন্য স্থির করা হয়েছে – হত্যা, ক্রুশবিদ্ধ করা অথবা হাত-পা কেটে দেওয়া৷ স্পষ্ট ভাষায় তিনি আরও বলেন, ইসলাম ধর্মে নিরাপরাধ মানুষের আত্মার হত্যা নিষিদ্ধ৷ তাছাড়া মানুষের আত্মাকে এভাবে অগ্নিদগ্ধ বা অন্য কোনো ভাবে বিকৃত করাও নিষিদ্ধ৷ এমনকি শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ বা তারা হামলা চালালেও এর বিধান নেই৷
এদিকে আইএস দমনে প্রায় ৬০টি দেশের যে আন্তর্জাতিক জোট সামরিক অভিযান চালাচ্ছে, তাতে কিছুটা ফাটল দেখা যাচ্ছে৷ সংযুক্ত আরব আমিরাত আইএস-নিয়ন্ত্রিত এলাকার উপর বিমান হামলায় আর অংশগ্রহণ করবে না বলে জানিয়েছে৷ নিজেদের সামরিক পাইলটদের সুরক্ষার স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত৷ তারা অ্যামেরিকার উদ্দেশ্যে ভবিষ্যতে পাইলটদের দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা করার আর্জি জানিয়েছে৷