আইএস-এর দখলে পালমিরা, আবার শিল্পকর্ম ধ্বংসের আশঙ্কা
২২ মে ২০১৫
সিরিয়ার প্রাচীন শহর পালমিরা দখল করে নিয়েছে আইএস৷ সেখানে বেসামরিক লোকও হত্যা করেছে জঙ্গি সংগঠনটি৷ সুপ্রাচীন শিল্পকর্মগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়েও দেখা দিয়েছে শঙ্কা৷
বিজ্ঞাপন
সিরিয়ার প্রায় অর্ধেক এখন আইএস-এর দখলে৷ বুধবার ২ হাজার বছরের পুরোনো শহর পালমিরাও দখল করে নেয় সুন্নি মুসলমানদের এই জঙ্গি সংগঠন৷ সংগঠনের কর্মীরা টুইটারে এ খবর জানায়৷ ব্রিটেনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, শহরটির নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর থেকে সেখানে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১৭ জনকে হত্যা করেছে আইএস৷ নিহতরা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সমর্থক অথবা তাঁর অনুগত বাহিনীর সদস্য৷ পালমিরার অন্তত এক তৃতীয়াংশ অধিবাসী শহর ছেড়ে পালিয়েছে৷
ঐতিহ্য হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা
সিরিয়ার পালমিরা শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো প্রায় ২০০০ বছরের পুরনো৷ এর আগে আইএস ইরাকের অনেক ঐতিহাসিক প্রাচীন নিদর্শন ধ্বংস করেছে৷ এবার পালমিরার বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় থাকা স্থাপনাগুলো ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা করছে ইউনেস্কো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Scholz
মরুদ্যানের ধ্বংসাবশেষ
সিরিয়ার মরুভূমির ঠিক মধ্যাঞ্চলে পালমিরার ধ্বংসাবশেষ৷ এই সিল্ক রোড ধরেই উটের কাফেলা চলত৷ এ এলাকাটি ছিল সম্পদ ও বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল৷ সুবর্ণ সময় চলে গেছে এবং পুরো শহর এখন মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে৷ ১৯৮০ সালে এলাকাটি বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পায়৷
ছবি: Fotolia/bbbar
বা’আল মন্দির
খ্রিস্টের জন্মের পর প্রথম শতকে পালমিরার অধিবাসীরা বা’আল দেবতার জন্য এই মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন৷ এরপর থেকে এটি পালমিরার মানুষের ধর্মীয় জীবনযাপনের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়৷ চতুর্দশ শতাব্দীতে পালমিরা রোমান সাম্রাজ্যের আওতাভুক্ত হয়৷ বুলেটের আঘাতে মন্দিরের দেয়াল এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/F. Neukirchen
হাদ্রিয়ানস আর্ক
দ্বিতীয় শতকে নির্মিত এই বারান্দাটির দৈর্ঘ্য এক কিলোমিটারের বেশি৷ মসলা, সুগন্ধি, রত্ন এবং অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ এদিক দিয়েই সরবরাহ হতো৷ রোমান সম্রাট হাদ্রিয়ানের নামানুসারে এর নাম হাদ্রিয়ানস আর্ক বা হাদ্রিয়ানের ধনুক৷
ছবি: Louai Beshara/AFP/Getty Images
রোমান মনুমেন্ট
দুই রাস্তার সংযোগস্থলে ‘টেট্রাপাইলন অফ পালমিরা’ নামের এই স্তম্ভটি অবস্থিত৷ আসওয়ানের খনি থেকে লাল গ্রানাইট পাথর এনে এটি তৈরি করা হয়েছিল৷ এর চার স্তম্ভের মধ্যে এখন একটি ছাড়া বাকিগুলো রেপ্লিকা বা নকল৷
ছবি: Fotolia/waj
পবন দেবতা
বারসামিনকে বলা হয় পবন দেবতা৷ পালমিরার অধিবাসীদের কাছে অত্যন্ত পূজনীয় দেবতা তিনি৷ তবে মন্দিরটি ঠিক কবে নির্মিত হয়েছিল তা জানা যায়নি৷ ধারণা করা হয়, ফিনিশিয়রা যখন এই এলাকায় বসতি স্থাপন করেছিল, সে সময় নির্মিত হয় এটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Scholz
প্রাচ্যের নাট্যমঞ্চ
গ্রিক-রোমান সভ্যতার অনেক নিদর্শন পাওয়া যায় পালমিরায়৷ আছে একটি বারান্দা, থার্মাল স্নানাগার এবং একটি অ্যাম্ফিথিয়েটার৷ এখানে প্রাচ্যের অনেক নাটক মঞ্চস্থ হতো৷ এছাড়া গ্ল্যাডিয়েটর এবং প্রাণীদের মধ্যে লড়াইও হত এখানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Marczok
সমাজের উচ্চ পদস্থদের ফোরাম
এখানে একসময় ২০০টি মূর্তি ছিল৷ সেই মূর্তি বা স্ট্যাচুগুলো তাদের, যারা একসময় দেশের সিটি কাউন্সিলের উচ্চপদে ছিলেন৷ এখানে সিটি কাউন্সিলের বৈঠক হত৷
ছবি: picture-alliance/Robert Harding World Imagery/C. Rennie
অলংকৃত কবর
শহরের ফটকের ঠিক বাইরেই বেশ কয়েকটি কবরস্থান রয়েছে৷ কোথাও কোথাও একই বংশের কয়েক প্রজন্ম একই কবরস্থানে শায়িত আছেন৷ সেই কবরস্থানগুলোর কয়েকটির উপরে আছে লম্বা টাওয়ার৷ আবার কিছু কবর খুব সুন্দর করে সাজানো৷
ছবি: Imago/A. Schmidhuber
আসন্ন ধ্বংসের আশঙ্কা
খ্রিস্টের জন্মের ৩০০ বছর আগে আধুনিক সামরিক স্থাপনা সমৃদ্ধ শহরটিতে রাজত্ব করেছেন অনেক শাসক৷ এখন ইসলামিক স্টেট জঙ্গিদের দখলে এর কিছু অংশ৷ তাই ইউনেস্কো এই ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Scholz
9 ছবি1 | 9
এর আগে ইরাকের মোসুল এবং নিমরুদ দখলের পর সেখানকার প্রাচীন নিদর্শন ধ্বংস করেছিল আইএস৷ এবার সিরিয়ার পালমিরার প্রাচীন শিল্পকর্মগুলোরও একই পরিণতির আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা বলেছেন, ‘‘পালমিরা মরুর বুকে অনন্য এক ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন নিদর্শন৷ এর কোনো অংশ ধ্বংস করলে তা যে শুধু যুদ্ধাপরাধ হবে তা-ই নয়, তাতে মানবতারও অপরিমেয় ক্ষতি হবে৷''
ইউরোপীয় ইউনিয়নও সিরিয়ায় আইএস শিল্পনিদর্শন ধ্বংসসহ নানা ধরনের যুদ্ধাপরাধ করতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে৷ এক বিবৃতিতে ইইউ-র পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক সমন্বয়ক ফেডেরিকা মোগেরিনি বলেন, ব্যাপক হত্যাকাণ্ড এবং প্রত্নতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক নিদর্শন ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করা যুদ্ধাপরাধের পর্যায়েই পড়ে৷