অনলাইনে আহ্বান জানিয়ে ‘যোদ্ধা' সংগ্রহ করছে আইএস৷ এভাবে ইরাক ও সিরিয়ায় নিজ অবস্থান আরো শক্ত করার চেষ্টা করছে জঙ্গি সংগঠনটি৷ তাদের প্রতিহত করতে তাই অনলাইন-যুদ্ধেও শরিক হওয়া জরুরি মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র৷
বিজ্ঞাপন
বেশ কিছু উদ্যোগ সত্ত্বেও গত কয়েকদিনে সুন্নি মুসলমানদের জঙ্গি সংগঠন ‘ইসলামিক স্টেট' বা আইএস-এর বিরুদ্ধে বড় কোনো সাফল্য আসেনি৷ ইরাক এবং সিরিয়ার বেশ বড় একটি অংশ এখনো আইএস-এর দখলে৷ সিরিয়ার সীমান্তবর্তী শহর কোবানিতে এখনো চলছে তুমুল যুদ্ধ৷ তার ওপর এখানে-ওখানে চলছে আত্মঘাতী হামলা৷ সোমবার বাগদাদে এক গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে অন্তত ৮ জন মারা গেছেন৷ ইরাকের রাজধানী শহরটিতে একই দিনে আরেক আত্মঘাতী বোমা হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৪ জন সেনাসদস্য৷
ওদিকে কুর্দিরা তুরস্ক থেকে গিয়ে সিরিয়ার কোবানিতে আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগ দেবে এবং এর ফলে সেখানকার পরিস্থিতি বদলাবে বলে ধারণা করা হলেও এখনো তেমন কিছু হয়নি৷ শহরটি দখল করে নেয়ার জন্য এখনো তুমুল আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে আইএস৷ তুরস্ক থেকে এখনো পেশমেরগা বাহিনীর কুর্দিরা সেখানে যায়নি৷ এ জন্য তুরস্ক সরকারকেই দায়ী করেছেন কুর্দি নেতা মুস্তাফুজ কাদের৷ বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি জানান, তুর্কি সরকার তুরস্কের ভূমি ব্যবহার করে কুর্দিদের কোবানিতে যাওয়ার সুযোগ দিতে রাজি হলেও সেই সিদ্ধান্ত এখনো কার্যকর হয়নি৷
যুক্তরাষ্ট্র এবং তার পশ্চিমা ও আরব মিত্ররা অবশ্য আইএস-কে প্রতিহত করতে নিজস্ব পরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের সেনা দপ্তরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত রবি এবং সোমবার কোবানিতে চারবার এবং ইরাকে সাতবার বিমান থেকে বোমা হামলা চালানো হয়েছে৷
ইরাক ও সিরিয়া থেকে আইএস-কে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা
জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএস-কে ইরাক ও সিরিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে ওয়াশিংটনের অদূরের এক সামরিক ঘাঁটিতে বৈঠক করলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ সেই নিয়েই ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/F. Augstein
কোবানির বর্তমান অবস্থা
সিরিয়ার কোবানিতে চলছে আইএস-বিরোধী বিমান হামলা৷ লন্ডনভিত্তিক সংস্থা ‘সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস’ জানিয়েছে, সিরিয়া-তুরস্ক সীমান্তের কোবানি শহরের এক-তৃতীয়াংশ দখল করে নিয়েছে ইসলামিক স্টেট৷
ছবি: REUTERS/U. Bektas
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি
মঙ্গলবার সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় শহর কোবানিতে ২১ বার বিমান থেকে বোমা হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট৷ সে হামলায় শহরটির পুরোপুরিভাবে ইসলামিক স্টেটস বা আইএস-এর নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়া আপাতত রোখা গেছে বলে দাবি করা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/G. Sahin
ওবামার বৈঠক
ইরাক ও সিরিয়া থেকে আইএস-কে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা প্রণয়নে জোটভুক্ত দেশগুলোর সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ ইরাক ও সিরিয়ায় আইএস-এর তৎপরতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি৷
ছবি: Reuters/Kevin Lamarque
ইরাক ও সিরিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা
ওবামা ওয়াশিংটনের অদূরের এক সামরিক ঘাঁটিতে বৈঠক করেন৷ বৈঠকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল মার্টিন ডেম্পসিকে সঙ্গে নিয়ে পশ্চিমা ও মধ্যপ্রাচ্যের মোট ২০টি দেশের সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন৷
ছবি: Reuters/G. Cameron
যুদ্ধটি হবে দীর্ঘমেয়াদী
বৈঠক শেষে ওবামা জানান, আইএস বিরোধী জোট ‘কোয়ালিশন অফ দ্য উইলিং’-এর এ বৈঠকে অংশ নেয়া সবাই একটি বিষয়ে একমত হয়েছেন যে, ‘‘আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধটি হবে দীর্ঘমেয়াদী’’৷
ছবি: Reuters/Umit Bektas
নীরব দর্শকের ভূমিকায় তুরস্ক
মাত্র কয়েক’শ গজ দূরের সীমান্ত থেকে নীরব দর্শকের মতো যুদ্ধ দেখছে তুরস্কের সেনাবাহিনী৷ নিজেদের আকাশসীমা ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রকে আইএস-এর ওপর হামলা চালানোর অনুমতি দেয়নি তুরস্ক৷
ছবি: picture-alliance/AA
তুর্কি সরকারের কাছে কুর্দি বিদ্রোহীদের আহ্বান
কুর্দি বিদ্রোহীরা বলে আসছে, আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে তারা তুরস্কের সেনাবাহিনীর সহায়তা চায় না৷ তারা চায়, কোবানিকে রক্ষা করতে যেসব অস্ত্র প্রয়োজন সেগুলো কুর্দি যোদ্ধাদের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য তুর্কি সরকার তাদের ভূমি ব্যবহার করার অনুমতি দিক৷ কুর্দিদের সেই দাবিও প্রত্যাখ্যান করেছে তুরস্ক৷
ছবি: Reuters/Rodi Said
জার্মানিতে বিক্ষোভ
শনিবার( ১১.১০.১৪) জার্মানির ড্যুসেলডর্ফে কয়েক হাজার কুর্দি কোবানিতে আইএস জঙ্গিদের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/F. Augstein
8 ছবি1 | 8
কিন্তু গত ৮ আগস্ট থেকে আইএস-এর বিরুদ্ধে হামলা শুরু করলেও এখনো বড় কোনো সাফল্য পায়নি যুক্তরাষ্ট্র৷ পেন্টাগন জানিয়েছে, এ হামলায় প্রতিদিন গড়ে ৮৩ লাখ ডলার খরচ হচ্ছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক বাজেট-বিশেষজ্ঞদের ধারণা, প্রকৃত ব্যয় তার চেয়ে অনেক বেশি৷
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বিশেষ তত্ত্বাবধান এবং বিপুল ব্যয় সত্ত্বেও আইএস-এর বিরুদ্ধে এখনো বড় কোনো সাফল্য না আসার কারণ কী? জেনারেল জন অ্যালেন মনে করেন, প্রচারে এগিয়ে থাকার কারণেই যুদ্ধক্ষেত্রেও আইএস অপ্রতিহত৷ যুক্তরাষ্ট্রের অবসরপ্রাপ্ত এই সেনা কর্মকর্তা মনে করেন, আইএস অনলাইনে সারা বিশ্বের মুসলমানদের প্রতি যুদ্ধে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে নিরীহ অনেক মানুষের কাছ থেকেও সাড়া পাচ্ছে৷ তাই তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা যদি অনলাইনেও আইএস (আইসিস বা আইসিল)-এর বিরুদ্ধে লড়াই করি, তরুণদের প্রতি তারা যেসব কথা বলে যুদ্ধে অংশ নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছে সেসবের অসারতা যদি বুঝিয়ে বলি, তাহলেই সত্যিকার অর্থে এই জঙ্গি গোষ্ঠীকে হারানো যাবে৷''