আইএস-এর বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ
১৪ আগস্ট ২০১৫
কুর্দিদের বিরুদ্ধে আইএস রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ তুলেছে জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্র৷ অন্যদিকে সিরিয়া ও ইরাকে ইসলামি এই জঙ্গি সংগঠটিকে প্রতিহত করতে ব্যয় প্রায় দিগুণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা পদাতিক বাহিনী না পাঠানোয় সিরিয়া এবং ইরাকে বেশ সহজ সাফল্য পেয়ে যাচ্ছিল আইএস৷ তবে গত কয়েক মাসে সিরিয়ায় তাদের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে কুর্দিরা৷ কিছু এলাকা থেকে আইএসকে পিছু হঠতেও বাধ্য করেছে তারা৷ কুর্দিদের সামরিক প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দেয় জার্মানি৷ জার্মানি থেকেই উঠেছে আইএস-এর বিরুদ্ধে রাসায়নিত অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ৷ জার্মান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, তাঁদের ধারণা, সিরিয়ায় কুর্দিদের বিরুদ্ধে আইএস রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে৷ তিনি জানান, গত মঙ্গলবার ইসলামি জঙ্গিদের চালানো সেই হামলার পর থেকে অনেক কুর্দি সেনার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে৷
কুর্দি পেশমের্গার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার আইএস তাঁদের ওপর যে রকেট হামলা চালিয়েছে তাতে ক্লোরিন গ্যাস ব্যবহার করা হয়৷ তবে যুক্তরাষ্টের আশঙ্কা, আইএস আসলে মাস্টার্ড গ্যাস ব্যবহার করেছে৷ শুক্রবার পেন্টাগনের এক কর্মকর্তা জানান, আইএস সম্ভবত সিরিয়া থেকেই এই মাস্টার্ড গ্যাস পেয়েছিল৷ ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সালে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সব রাসায়নিক অস্ত্র প্রত্যাহারের অঙ্গীকার করার সময় দেশের কিছু অঞ্চলে মাস্টার্ড গ্যাস মওজুদ থাকার কথা বলেছিলেন৷ যুক্তরাষ্টের সামরিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আইএস সেখান থেকেই মাস্টার্ড গ্যাস সংগ্রহ করেছে৷ আইএস ক্লোরিন গ্যাস, মাস্টার্ড গ্যাস নাকি অন্য কিছু ব্যবহার করেছে তা হয়ত শিগগিরই জানা যাবে৷ বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য ইতিমধ্যে বাগদাদ থেকে মার্কিন ও ইরাকি রাসায়নিক বিশেষজ্ঞরা সিরিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন৷
আইএস কী, কোথায় এবং কেন?
প্রতিদিনই খবরে আইএস৷ কোনোদিন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য, কোনোদিন হয়তো ইরাক বা সিরিয়ায় কোনো অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য৷ আইএস বলছে, ইসলামি খেলাফত কায়েম করার জন্য যুদ্ধে নেমেছে তারা৷ ছবিঘরে আইএস সম্পর্কে কিছু তথ্য....
ইসলামিক স্টেট বা আইএস আসলে কী?
আল কায়েদা থেকে তৈরি হওয়া সুন্নি মুসলমানদের জঙ্গি সংগঠন আইএস৷ সাদ্দাম পরবর্তী সময়ে ইরাকে এবং বাশার আল আসাদের আমলে সিরিয়ায় সুন্নিদের হতাশা থেকেই জন্ম সংগঠনটির৷ আইএস-এর পতাকায় লেখা থাকে, ‘মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর নবী’ এবং ‘আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই৷’
ছবি: AP
আইএস কোথায় সক্রিয়?
শরিয়া আইন অনুযায়ী পরিচালিত হবে এমন রাষ্ট্র, বা ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায় আইএস৷ সিরিয়া এবং ইরাকেই প্রত্যক্ষভাবে সক্রিয় তারা৷ দুটি দেশেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগে বেশ বড় অঞ্চল দখল করে নিয়েছে আইএস৷
আইএস কেন আলাদা?
মূলত নিষ্ঠুরতার জন্য৷ শত্রুপক্ষ এবং নিরীহ মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়াতে তারা এমন বর্বরতা এবং নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করে যা আগে কেউ করেনি৷ জবাই করে ভিডিও প্রচার, পুড়িয়ে মারা, বাবার সামনে মেয়েকে জবাই করা এবং তার তার ভিডিও প্রচার, মেয়েদের যৌনদাসী বানানো আর পণ্যের মতো বিক্রি করা – এসব নিয়মিতভাবেই করছে আইএস৷ কোনো অঞ্চল দখলে নেয়ার পর সেখানে শাসন প্রতিষ্ঠায় মন দেয় আইএস৷
ছবি: gebphotography - Fotolia.com
অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক
আইএস যদিও শুধু সিরিয়া এবং ইরাকেই সক্রিয়, তবে বিশ্বের অন্যান্য ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন নয়৷ নাইজেরিয়ার জঙ্গি সংগঠন বোকো হারাম কয়েকদিন আগেই জানিয়েছে, আইএস-কে তারা সমর্থন করে৷ দুটি সংগঠনের মধ্যে একটি জায়গায় মিলও আছে৷ আইএস-এর মতো বোকো হারামও নিষ্ঠুরতা এবং বর্বরতার প্রতিভূ হয়ে উঠেছে৷ অন্য ধর্মের নারীদের প্রতি দুটি সংগঠনের দৃষ্টিভঙ্গি এবং আচরণই মধ্যযুগীয়৷
ছবি: Getty Images/A. Katib
আইএস-এর অনুসারী কারা?
অনুসারী সংগ্রহের সাফল্যেও আইএস অন্য সব জঙ্গি সংগঠনের চেয়ে আলাদা৷ এ পর্যন্ত অন্তত ২০ হাজার বিদেশী যোদ্ধা আইএস-এ যোগ দিয়েছে৷ তাদের মধ্যে ৪ হাজারই পশ্চিম ইউরোপ এবং উত্তর অ্যামেরিকার৷
আইএস-কে রুখতে অন্য দেশগুলো কী করছে?
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বেশ কিছু পশ্চিমা এবং আরব দেশ সিরিয়া ও ইরাকে আইএস ঘাঁটির ওপর বিমান থেকে বোমা হামলা চালাচ্ছে৷ বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সিরিয়ায় ১৪২২ এবং ইরাকে ২২৪২ বার হামলা হয়েছে৷ কোনো কোনো সরকার দেশের অভ্যন্তরেও কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে৷ সিরিয়া ফেরত অন্তত ৩০ জন সন্দেহভাজন জঙ্গির বিচার শুরু করবে জার্মানি৷ গত মাসে সৌদি পুলিশও ৯৩ জন সন্দেহভাজন আইএস জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে৷
6 ছবি1 | 6
এদিকে জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে আইএস-এর বিরুদ্ধে বিমান হামলার পেছনে ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ পেন্টাগনের এক হিসেবে দেখা গেছে, আগে যুক্তরাষ্ট্র যেখানে বোমা এবং গোলাবারুদের পেছনে প্রতিদিন গড়ে ২৩ লক্ষ ৩০ হাজার ডলার খরচ করত, জুলাইয়ের ১৫ থেকে প্রতিদিন সেখানে গড়ে প্রায় ৪৬ লক্ষ ডলার খরচ করছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের এক সামরিক কর্মকর্তা জানান, আইএস-এর বিরুদ্ধে বিমান হামলা বাড়ানোর কারণে খরচও বেড়েছে৷