মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে ধ্বংস এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে ও বিশ্বের অন্য যে-কোনো স্থানে থাকা আইএস অনুসারীদের গ্রেপ্তারের অঙ্গীকার করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
রবিবার রাতের প্রাইম টাইমে ওভাল অফিস থেকে দেয়া এক বক্তৃতায় মার্কিনিদের এই অঙ্গীকারের কথা জানান ওবামা৷ এ নিয়ে মাত্র তৃতীয়বার ওভাল অফিস থেকে বক্তব্য রাখলেন তিনি৷ বুধবার ক্যালিফোর্নিয়ায় এক দম্পতির গুলিতে ১৪ জন নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন৷ আইএস সরাসরি ঐ হামলার দায়িত্ব স্বীকার না করলেও ঐ দম্পতিকে (যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেয়া সৈয়দ ফারুক ও তাঁর পাকিস্তানি স্ত্রী তাশফিন মালিক) নিজেদের ঘোষিত খেলাফত রাষ্ট্রের ‘সেনা' হিসেবে আখ্যায়িত করেছে৷
ওবামা তাঁর বক্তব্য বলেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদের হুমকি বাস্তব, কিন্তু আমরা তা মোকাবিলা করব৷ আমরা ‘আইসিল' (এই নামেও পরিচিত আইএস) সহ অন্য যে কোনো সংগঠন যারা আমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করবে তাদের ধ্বংস করবো৷''
এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ওবামা সুনির্দিষ্টভাবে চারটি উপায়ের কথা জানান৷ এর মধ্যে সামরিক পদক্ষেপ যেমন রয়েছে তেমনি আছে অ্যামেরিকার মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতা ও প্রযুক্তি সমাজের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে একযোগে কাজ করা৷
তবে লক্ষ্য পূরণ করতে গিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ করতে সৈন্য পাঠানোর বিরোধী তিনি৷ বরং ইরাক ও সিরিয়ার সেনাদের প্রশিক্ষণ দিতে চান ওবামা৷
একই ধরণের মন্তব্য করেছেন ন্যাটোর মহাসচিব ইয়েন্স স্টোলটেনব্যার্গ৷ সুইস এক পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়তে সিরিয়ায় সৈন্য পাঠানোর চেয়ে স্থানীয় সেনাদের প্রশিক্ষণ দেয়া প্রয়োজন৷
ওবামার বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প৷
এদিকে, ইরাকে আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়তে ইরাক সরকারের পাশে থাকার কথা জানাতে সোমবার ইরাক গেছেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাংক ভাল্টার স্টাইনমায়ার৷
আইএস কী, কোথায় এবং কেন?
প্রতিদিনই খবরে আইএস৷ কোনোদিন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য, কোনোদিন হয়তো ইরাক বা সিরিয়ায় কোনো অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য৷ আইএস বলছে, ইসলামি খেলাফত কায়েম করার জন্য যুদ্ধে নেমেছে তারা৷ ছবিঘরে আইএস সম্পর্কে কিছু তথ্য....
ইসলামিক স্টেট বা আইএস আসলে কী?
আল কায়েদা থেকে তৈরি হওয়া সুন্নি মুসলমানদের জঙ্গি সংগঠন আইএস৷ সাদ্দাম পরবর্তী সময়ে ইরাকে এবং বাশার আল আসাদের আমলে সিরিয়ায় সুন্নিদের হতাশা থেকেই জন্ম সংগঠনটির৷ আইএস-এর পতাকায় লেখা থাকে, ‘মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর নবী’ এবং ‘আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই৷’
ছবি: AP
আইএস কোথায় সক্রিয়?
শরিয়া আইন অনুযায়ী পরিচালিত হবে এমন রাষ্ট্র, বা ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায় আইএস৷ সিরিয়া এবং ইরাকেই প্রত্যক্ষভাবে সক্রিয় তারা৷ দুটি দেশেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগে বেশ বড় অঞ্চল দখল করে নিয়েছে আইএস৷
আইএস কেন আলাদা?
মূলত নিষ্ঠুরতার জন্য৷ শত্রুপক্ষ এবং নিরীহ মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়াতে তারা এমন বর্বরতা এবং নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করে যা আগে কেউ করেনি৷ জবাই করে ভিডিও প্রচার, পুড়িয়ে মারা, বাবার সামনে মেয়েকে জবাই করা এবং তার তার ভিডিও প্রচার, মেয়েদের যৌনদাসী বানানো আর পণ্যের মতো বিক্রি করা – এসব নিয়মিতভাবেই করছে আইএস৷ কোনো অঞ্চল দখলে নেয়ার পর সেখানে শাসন প্রতিষ্ঠায় মন দেয় আইএস৷
ছবি: gebphotography - Fotolia.com
অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক
আইএস যদিও শুধু সিরিয়া এবং ইরাকেই সক্রিয়, তবে বিশ্বের অন্যান্য ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন নয়৷ নাইজেরিয়ার জঙ্গি সংগঠন বোকো হারাম কয়েকদিন আগেই জানিয়েছে, আইএস-কে তারা সমর্থন করে৷ দুটি সংগঠনের মধ্যে একটি জায়গায় মিলও আছে৷ আইএস-এর মতো বোকো হারামও নিষ্ঠুরতা এবং বর্বরতার প্রতিভূ হয়ে উঠেছে৷ অন্য ধর্মের নারীদের প্রতি দুটি সংগঠনের দৃষ্টিভঙ্গি এবং আচরণই মধ্যযুগীয়৷
ছবি: Getty Images/A. Katib
আইএস-এর অনুসারী কারা?
অনুসারী সংগ্রহের সাফল্যেও আইএস অন্য সব জঙ্গি সংগঠনের চেয়ে আলাদা৷ এ পর্যন্ত অন্তত ২০ হাজার বিদেশী যোদ্ধা আইএস-এ যোগ দিয়েছে৷ তাদের মধ্যে ৪ হাজারই পশ্চিম ইউরোপ এবং উত্তর অ্যামেরিকার৷
আইএস-কে রুখতে অন্য দেশগুলো কী করছে?
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বেশ কিছু পশ্চিমা এবং আরব দেশ সিরিয়া ও ইরাকে আইএস ঘাঁটির ওপর বিমান থেকে বোমা হামলা চালাচ্ছে৷ বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সিরিয়ায় ১৪২২ এবং ইরাকে ২২৪২ বার হামলা হয়েছে৷ কোনো কোনো সরকার দেশের অভ্যন্তরেও কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে৷ সিরিয়া ফেরত অন্তত ৩০ জন সন্দেহভাজন জঙ্গির বিচার শুরু করবে জার্মানি৷ গত মাসে সৌদি পুলিশও ৯৩ জন সন্দেহভাজন আইএস জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে৷