‘ইসলামিক স্টেট’-কে পরাস্ত করার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে প্যারিসে শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক সম্মেলন৷ উদ্বোধনী ভাষণে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বলেছেন,‘‘আইএস সারা বিশ্বের জন্যই হুমকি, তাই এ হুমকি নিশ্চিহ্ন করার দায়িত্ব বৈশ্বিক৷’’
বিজ্ঞাপন
এর আগে এক ব্রিটিশ জিম্মিকে হত্যা করার ভিডিও প্রচার করে জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস বা আইসিস)৷ সুন্নি ইসলামি জঙ্গি সংগঠনটি নিহত ব্যক্তির পরিচয়ও দিয়েছে৷ নিহত ব্যক্তির নাম ডেভিড হাইন্স৷ তাঁর শিরশ্ছেদ করার আগে ভিডিওতে মুখোশ পরা এক জঙ্গি জানায়, ব্রিটেন আইএস-বিরোধী অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়ার কারণেই হাইন্সকে হত্যা করা হচ্ছে৷ ব্রিটেন তার সিদ্ধান্তে অটল থাকলে আরেক ব্রিটিশ জিম্মি অ্যালেন হেনিং-এরও একই পরিণতি হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে আইএস৷ এই নিয়ে তিনটি হত্যার ভিডিও প্রচার করল জঙ্গি সংগঠনটি৷ এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক স্টিভেন সটলফ এবং জেমস ফলিকেও একইভাবে হত্যা করে তারা৷
ইরাকে জিহাদিবিরোধী যুদ্ধ
চরমপন্থি ইসলামি সংগঠন আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে ইরাকে৷ সন্ত্রাসবাদী এ সংগঠনটির সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশেও তৎপরতা রয়েছে৷ দেখুন ইরাকে আইএস-বিরোধী যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট কিছু ছবি৷
ছবি: Reuters
টিকরিট পুনরুদ্ধারের চেষ্টা
সুন্নিদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইসিস) উত্তর ও দক্ষিণ ইরাকের কিছু অংশ দখল করে নিয়েছে৷ বাগদাদ থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরের শহর টিকরিটও এখন তাদের দখলে৷ সে এলাকায় ইরাক সরকারের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের জন্য আইসিস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়ছে সেনাবাহিনী৷
ছবি: Reuters
মধ্যপ্রাচ্যে কর্তৃত্ব চায় আইসিস
আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে আইসিস-এর একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ ২০০৬ থেকে ২০০৭-এর দিকে ইরাকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই চলছে তখনই আইসিস-এর জন্ম৷ সংগঠনটির লক্ষ্য সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, ফিলিস্তিন এবং জর্ডান মিলিয়ে বেশ বড় একটা অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা৷ ইরাকে নুসরা ফ্রন্টসহ বেশ কিছু সংগঠন তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বিদ্রোহীদের পাশে যুক্তরাষ্ট্র
সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ আর ইরাকে নুরি আল মালিকির সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহীদের মধ্যে মধ্যপন্থি এবং মৌলবাদী সংগঠনের কর্মী রয়েছে৷ সিরিয়ায় ন্যাশনাল কোয়ালিশনের মতো কিছু মধ্যপন্থি সংগঠনকে সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামা বিদ্রোহীদের একাংশকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছেন৷
ছবি: Reuters
ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি জানিয়েছেন, কংগ্রেস বিদ্রোহীদের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব অনুমোদন করলে তা সিরিয়া এবং ইরাকে দেয়া হবে৷ এই বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ, কেননা, ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বড় একটা অংশ যে আইসিস-এর কাছে যাবেনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই৷
ছবি: Reuters
কুর্দিরা চায় স্বাধীন কুর্দিস্তান
যুক্তরাষ্ট্র চায় ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি সুন্নি এবং কুর্দিদের অংশিদারিত্বের সরকার গঠন করুন৷ ইরাকের কিছু অংশে কুর্দিদের স্বায়ত্তশাসন রয়েছে৷ কুর্দিরা ‘পেশমেরগা’, অর্থাৎ কুর্দিদের স্বাধিকার আন্দোলনের অংশ হিসেবে আইসিসের বিরুদ্ধে লড়ছে৷ কুর্দিদের মূল লক্ষ্য ইরাকে স্বাধীন কুর্দিস্তান প্রতিষ্ঠা করা৷
ছবি: Reuters
ইরানের ভূমিকা
ইরাকে শিয়া-সুন্নি সংঘাতের মধ্যে জড়াতে চায়না ইরান৷ কিন্তু শিয়া প্রধান দেশ ইরানের সরকার ইরাকের মালিকি সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে বলে ধারণা করা হয়৷ নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইসিস-বিরোধী যুদ্ধে মালিকি সরকারকে ড্রোন এবং অন্যান্য সমর উপকরণ দিয়ে সহায়তা করছে ইরান সরকার৷
ছবি: Atta Kanare/AFP/Getty Images
এক হাজারেরও বেশি নিহত
সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছে সৌদি আরব৷ ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি মনে করেন, আইসিসকেও মদদ দিচ্ছে সৌদি সরকার৷ ইরাকে চলমান সংঘাতে কমপক্ষে এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে৷ মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ জন্য ইরাক সরকার এবং আইসিস-এর কঠোর সমালোচনা করেছে৷
ছবি: Reuters
বাড়ছে শরণার্থী
আইসিসের হামলা শুরুর পর থেকে ইরাকের বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ১২ লাখ মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন৷ সিরিয়া সংকট শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত আড়াই লাখ সিরীয় স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি রাজ্যগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে৷ এখন আইসিসের দখল করে নেয়া শহরগুলো থেকে পালিয়ে ইরাকিরাও আসছে৷ ছবিতে খাজাইর চেকপয়েন্ট অতিক্রম করে কুর্দিদের নিয়ন্ত্রিত শহর এরবিলের দিকে যেতে দেখা যাচ্ছে মসুল থেকে আসা ইরাকিদের৷
ছবি: Getty Images
স্বেচ্ছাসেবীরাও নেমেছে যুদ্ধে
প্রধানমন্ত্রী মালিকি জানিয়েছেন, রাশিয়া আর বেলারুশের কাছ থেকে পুরোনো যুদ্ধ বিমান কিনেছে ইরাক৷ আইসিসের বিরুদ্ধে সেগুলো ব্যবহার করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ বাড়ছে সমরাস্ত্র৷ বাড়ছে যোদ্ধা৷ স্বেচ্ছাসেবীরাও যোগ দিচ্ছেন আইসিস বিরোধী যুদ্ধে৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
এদিকে ব্রিটনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, ডেভিড হাইন্সকে হত্যা করার জন্য আইএস-কে চরম মূল্য দিতে হবে৷ তিনি জানান, ইরাকে আইএস-বিরোধী অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের পাশে থাকার সিদ্ধান্তে ব্রিটেন এখনো অটল৷ ফ্রান্স ইতিমধ্যে ইরাকে যুদ্ধবিমান পাঠানো শুরু করেছে৷ ১০টি যুদ্ধবিমান এবং ৬০০ সেনা পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে অস্ট্রেলিয়া৷ যুক্তরাষ্ট্র গত মাস থেকে শুরু হওয়া বিমান হামলা জোরদার করার পাশাপাশি আইএস-বিরোধী ‘মধ্যপন্থি সিরীয় বিদ্রোহীদের' প্রশিক্ষণ এবং আইএস-এর হামলায় বিপর্যস্ত ইরাকি সেনাবাহিনীর পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখার ঘোষণা দিয়েছে৷
আইএস-কে পরাস্ত করার বাকি পরিকল্পনা চূড়ান্তকরণ এবং পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে অংশগ্রহণকারী দেশের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্যই প্যারিসে সোমবার শুরু হয়েছে একটি বিশেষ সম্মেলন৷ সম্মেলন শুরুর আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেন, তাঁর দেশ আশা করে আইএস-বিরোধী অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের সব মিত্র দেশ, বিশেষ করে আরব দেশগুলো ‘অর্থপূর্ণ' ভূমিকা রাখবে৷