পিটার কাসিগের শিরশ্ছেদের ঘটনায় দু'জন ফরাসি নাগরিকও জড়িত ছিল৷ ভিডিওচিত্র দেখে এ বিষয়ে মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছে ফ্রান্স৷ সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, সিরিয়ায় এ পর্যন্ত অন্তত ১৪২৯ জনের শিরশ্ছেদ করেছে আইএস৷
বিজ্ঞাপন
নৃশংসভাবে মানুষ হত্যা করেই চলেছে ইসলামি জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস বা আইসিস)৷ গত রবিবার আইএস যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক পিটার কাসিগের শিরশ্ছেদের ভিডিও প্রকাশ করার পর থেকে আসছে নতুন নতুন খবর৷ ভিডিওচিত্রে কাসিগ ছাড়া আরো ১৮ জনকে হত্যার দৃশ্য দেখানো হয়৷ ইরাক ও সিরিয়ার বেশ বড় একটি অংশ দখল করে নেয়া সুন্নিদের এই জঙ্গি সংগঠনটি জানিয়েছে, ওই ১৮ জনের বেশির ভাগই ছিলেন সিরিয়ার সৈন্য৷
আইএস শুধু সিরীয় সৈন্যদেরই শিরশ্ছেদ করছে না৷ যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন তাদের ওপর বিমান হামলা চালাচ্ছে বলে ওই দুটি দেশের নাগরিকদেরও ধরে নিয়ে হত্যা করছে৷ হত্যাদৃশ্যের ভিডিও প্রচার করে দিচ্ছে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা৷ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সিরীয় শরণার্থীদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা পিটার কাসিগ, ওরফে আব্দুল রহমানও আইএস-এর এই নৃশংসতা থেকে বাঁচতে পারেননি৷ সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, সিরিয়ায় আইএস এ পর্যন্ত শিরশ্ছেদ করে কমপক্ষে ১৪২৯ জনকে হত্যা করেছে৷ ব্রিটেন ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটির দাবি, এই ১৪২৯ জনকে হত্যা করার প্রমাণ তাদের কাছে আছে৷
আইএস-এর হয়ে শুধু মুসলিম প্রধান দেশগুলোর নাগরিকরাই অংশ নিচ্ছে না৷ পাশ্চাত্যের বেশ কয়েকটি দেশ থেকে কয়েক হাজার লোক গিয়ে যোগ দিয়েছে আইএস-এর ইসলামি খিলাফত কায়েমের মিশনে৷ ফ্রান্স জানিয়েছে, কাসিগকে হত্যার ভিডিওতে দ্বিতীয় ফরাসি নাগরিকের উপস্থিতি সম্পর্কে তারা মোটামুটি নিশ্চিত৷ ফ্রান্স থেকে এ পর্যন্ত অন্তত হাজার খানেক মুসলমান সিরিয়ায় যুদ্ধ করতে গিয়েছেন বলে ধারণা করা হয়৷ তাঁদের মধ্যে অন্তত ৩৬ জন ইতিমধ্যে মারা গেছেন৷
আইএস বিরোধী লড়াইয়ের আঁচ জার্মানিতে
গত জুন মাসে ইরাকের মোসুল দখল করে নেয় ইসলামিক স্টেট (আইএস বা আইসিস)৷ চরমপন্থি ইসলামি সংগঠনটির লক্ষ্য, মধ্যপ্রাচ্যের একটা অংশে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা৷ এদিকে আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আঁচ লেগেছে জার্মানিতেও৷ দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Aris Messinis/AFP/Getty Images
জার্মানিতে সংঘর্ষ
সুদূর ইরাক ও সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট জঙ্গিদের তৎপরতার আঁচ জার্মানিতেও দেখা যাচ্ছে৷ উত্তরের হামবুর্গ ও সেলে শহরে মঙ্গলবার (০৭.১০.১৪) কুর্দি ও ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে উগ্রপন্থি মুসলমানদের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Markus Scholz
গনসচেতনতার উদ্যোগে বাধা
জার্মানিতে বসবাসরত কুর্দি ও ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের মানুষ সিরিয়া ও ইরাকে আইএস জঙ্গিদের তৎপরতা সম্পর্কে গণসচেতনতা বাড়াতে গত কয়েক মাস ধরে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ও সমাবেশের আয়োজন করেছে৷ কখন উগ্রপন্থিরা তাদের বাধা দিচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/Alexander Koerner
কোবানিতে তীব্র লড়াই
এদিকে সিরিয়ার কোবানি বা আইন আল-আরব শহরে আইএস জঙ্গিদের ব্যাপক হামলা চলছে৷ প্রাণ বাঁচাতে এক লাখেরও বেশি সিরীয় কুর্দি এলাকা ছেড়েছে৷ অধিকাংশই আশ্রয় নিয়েছে প্রতিবেশী দেশ তুরস্কে৷ আইএস জঙ্গিদের প্রতিরোধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কুর্দিদের আধা সামরিক বাহিনী ওয়াইপিজি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/SEDAT SUNA
আপাতত রক্ষা
কুর্দি এই নারী তাঁর দুই মেয়েকে নিয়ে আইন আল-আরব থেকে পালিয়ে এসেছেন৷ সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় শহরটিতে আইএস-এর হামলা তীব্র হওয়ার পরপরই তাঁরা তুরস্কে আশ্রয় নেন৷
ছবি: DW/Alice Martins
আতঙ্ক
তখনও আইন আল আরব সীমান্তে চলছে তীব্র লড়াই৷ এই কুর্দি পরিবার আইন আল-আরব থেকে এসে তুরস্কের সীমান্তে অপেক্ষা করছে৷ ইরাকে কুর্দি নারীদের আইএস যেভাবে তুলে নিয়ে বিক্রি করেছে, তাড়াতাড়ি পালাতে না পারলে তাঁদেরও একই পরিণতি হতে পারে এই আতঙ্ক গ্রাস করেছে তাঁদের৷
ছবি: DW/Alice Martins
অসহায়ত্ব
তুরস্কেও ভালো নেই আইন আল-আরব ছেড়ে আসা কুর্দিরা৷ খাবারদাবার, এমনকি খাওয়ার পানিও ঠিকমতো জোটে না৷ একটি সংগঠন তাই চাঁদা তুলে পানির বোতল কিনে এনে বিতরণ করছে শরণার্থীদের মাঝে৷
ছবি: DW/Alice Martins
দীর্ঘ অপেক্ষা
প্লাস্টিকের ব্যাগে কিছু খাবার নিয়ে এসেছেন একজন৷ আইন আল-আরব ছেড়ে আসা সিরীয়দের সে খাবারগুলো দিতে চান৷ বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে্ তুরস্কের সেনাবাহিনী৷ তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা চলছে৷ ওদিকে খাবারের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছে শরণার্থীরা৷
ছবি: DW/Alice Martins
যাত্রী চাই
সিরীয় শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার জন্য সীমান্ত খুলে দিয়েছে তুর্কি সরকার৷ এক মিনিবাস চালক তাই যাত্রীর অপেক্ষায়৷ শরণার্থীদের কেউ যদি তাঁর মিনিবাসে ওঠেন, তাতে নিজের তো সামান্য কিছু আয় হবেই, শরণার্থীদেরও উপকার হবে৷ জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত প্রায় ১৩ লাখ সিরীয় তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছে৷
ছবি: DW/Alice Martins
মধ্যপ্রাচ্যে কর্তৃত্ব চায় আইএস
আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে আইএস বা আইসিস-এর একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ ২০০৬ থেকে ২০০৭-এর দিকে ইরাকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই চলছে তখনই আইএস-এর জন্ম৷ সংগঠনটির লক্ষ্য সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, ফিলিস্তিন এবং জর্ডান মিলিয়ে বেশ বড় একটা অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
আইএস-এর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র
সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ আর ইরাকে নুরি আল-মালিকির সাবেক সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট বিদ্রোহীদেরই পাশে ছিল৷ সিরিয়ায় ন্যাশনাল কোয়ালিশনের মতো কিছু মধ্যপন্থি সংগঠনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে৷ তবে ওবামা সরকার এখন আইএস-এর বিরুদ্ধে৷ জঙ্গি সংগঠনটিকে নিশ্চিহ্ন করার অঙ্গীকার নিয়ে ইরাক ও সিরিয়ায় চলছে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা৷
ছবি: picture alliance/dpa/Matthew Bruch
এবার আইন আল-আরব?
সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত আইন আল-আরব সাধারণের কাছে ‘কোবানি’ নামেই পরিচিত৷ তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তের এ শহরের একটা অংশ এখন আইএস-এর দখলে৷ এবার কি তবে আইন আল-আরবও দখল করে নেবে আইএস? তারপর?
ছবি: Aris Messinis/AFP/Getty Images
11 ছবি1 | 11
কাসিগ-হত্যা দৃশ্যের ভিডিওতে অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম এবং ডেনমার্কের নাগরিকও ছিলেন বলে অনুমান করা হচ্ছে৷ বেলজিয়ামের একটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই ভিডিওতে এমন একজনকে দেখা গেছে যার চেহারা আব্দেল মজিদ ঘারমৌ-এর মতো৷ আব্দেল মজিদ ঘারমৌ পলাতক৷ বেলজিয়ামের আদালতে তার বিরুদ্ধে জিহাদি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হওয়ার অভিযোগে মামলা চলছে৷
এদিকে ইউরোপের দেশগুলো আইএস এবং অন্যান্য ইসলামি জঙ্গি সংগঠনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে শুরু করেছে৷ জার্মানিতে ইতিমধ্যে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সব রকমের সম্পৃক্ততা নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ দেশের কোনো নাগরিক যাতে ইসলামি জঙ্গি সংগঠনের হয়ে যু্দ্ধ করতে যেতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যে সন্ত্রাসবিরোধী আইন সংস্কার করেছে ফ্রান্স৷ এখন থেকে যে কেউ যখন-তখন ফ্রান্সের বাইরে যেতে পারবেন না৷ কেউ কোনো ইসলামি সংগঠনে যোগ দিতে যাচ্ছে এমন সন্দেহ হলে তার পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করার আইন কার্যকর করার কথাও ভাবছে ব্রিটেন৷