1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আইএস-এ যোগ দিলো আরো তিনজন

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা২৭ মে ২০১৫

জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট-এর আরো দু’জন সদস্যকে আটক করা হয়েছে, দাবি গোয়েন্দা বিভাগের৷ তারা উচ্চ শিক্ষিত ও তথ্য-প্রযুক্তিতে পারদর্শী৷ বাংলাদেশে গত আট মাসে এ নিয়ে ২০ জনকে আইএস-এর সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আটক করা হলো৷

Propagandabild IS-Kämpfer ARCHIV
ছবি: picture-alliance/abaca/Yaghobzadeh Rafael

সর্বশেষ যাদের আটক করা হয়েছে তারা হলো আমিনুল ইসলাম বেগ (৩৫) এবং সাকিব বিন কামাল (৩০)৷ গত রবিবার তাদের ঢাকার উত্তরা ও লালমাটিয়ায় নিজ বাসা থেকে আটক করা হয়৷ তাদের কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ, একটি ল্যাপটপ চার্জার, তিনটি মুঠোফোন, বিভিন্ন লেখকের সাতটি জিহাদি বই ও ডায়েরি জব্দ করা হয়েছে বলে খবর৷

এদের মধ্যে আমিনুল বরিশাল ক্যাডেট কলেজের ছাত্র ছিল৷ পরে মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিষয়ে পড়াশুনা করে আমিনুল ইসলাম৷ দেশে কয়েকটি মোবাইল ফোন কোম্পানিতে চাকরি করার পর, কোকাকোলার আইটি বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেয়৷ আর সাকিব ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে লেখাপড়া শেষ করে লালমাটিয়ার একটি ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছিল৷ তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোমবার আদালতের মাধ্যমে তিন দিনের পুলিশ রিমান্ডে নেয়া হয়েছে৷

ঢাকা মোট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মুখপাত্র এবং গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আমিনুল আইএস-এর নির্দেশিত খিলাফত প্রতিষ্ঠায় কাজ করছিল৷ এ জন্য নানাভাবে তথ্য প্রচার, গোপনে অর্থ ও কর্মী সংগ্রহ, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হত্যার পরিকল্পনাসহ বিভিন্নভাবে ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছিল ও৷''

মনিরুল ইসলাম জানান, ‘‘অন্তত ২০ জনের একটি গ্রুপ করে আমিনুল আইএস-এর আদর্শ প্রচার করছিল৷ তার সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া সাকিব ঐ ২০ জনেরই একজন৷''

গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নাজমুল আলম ডয়চে ভেলেকে জানান, আইএস নিয়ে ইন্টারনেটে ব্যাপক পড়াশুনা রয়েছে আমিনুলের৷ আইএস-এর মতাদর্শ নিয়ে ইন্টারনেটে সে নিয়মিত লেখালেখিও করতো৷ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমিনুল জানায়, যে ২০ জনকে সে আইএস-এর আদর্শে অনুপ্রাণিত করেছে, তাদের মধ্যে দু-তিনজন ইতিমধ্যেই ইসলামিক স্টেটে যোগ দিতে সিরিয়া গেছে৷

বাংলাদেশে সংগঠিত হচ্ছে আইএস জঙ্গিরা

গত আগস্ট মাসে ইউটিউব-এ প্রকশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, পাঁচজন ‘বাংলাদেশি' যুবক ইসলামিক স্টেট-এ র প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদির কাছে জিহাদের শপথ নিচ্ছে৷ তারা শপথ নেয় বাংলায়৷ আর তারপর থেকেই বাংলাদেশের গোয়েন্দারা এখানে আইএস-এর তৎপরতার ব্যাপারে জানতে পান৷

যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত আইএস নিয়ে বাংলাদেশে কাজ করা একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেন ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘ইসলামিক স্টেট-এর সঙ্গে বাংলাদেশের কিছু তরুণ প্রধানত ফেসবুক এবং টুইটারের মাধ্যমেই যোগাযোগ করে৷ এই পেজগুলো অবশ্য এখন ছদ্মনামে থাকে৷ থাকে ব্যক্তিগতও নামেও৷ গত বছর ‘আইএস বাংলাদেশ' নামে একটি ফেসবুক পেজ শনাক্ত করার পর, তা বন্ধ হয়ে যায়৷ সেই পেজে লাইক ছিল দেড় লাখেরও বেশি৷ তবে এখন এদের যোগাযোগে ভাষায় পরিবর্তন এসেছে৷

জানা গেছে, এই তরুণদের একাংশ জেএমবি-র সঙ্গে জড়িত, যারা আইএস-এর উত্থানে উদ্বুদ্ধ হয়ে সেদিকে ঝুঁকছে৷ এছাড়াও আরো কিছু মানুষ আছে, যারা আইএস-এর ভাবধারা এবং নানা টেক্সট পড়ে উদ্বুদ্ধ হয়৷

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের সূত্র ধরেই বাংলাদেশের গোয়েন্দরা গত বছর থেকে এ সব তরুণদের শনাক্ত করা শুরু করেন৷ গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, ‘‘গত আট মাসে এ পর্যন্ত কম-বেশি ২০ জনকে আইএস-এর সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে আটক করা হয়েছে৷ তারা সিরিয়া অথবা ইরাকে গিয়ে আইএস-এ যুক্ত হয়ে ‘জিহাদে' অংশ নিতে ব্যাকুল ছিল৷''

গত বছরের ১৯শে সেপ্টেম্বরে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবি-র ভারপ্রাপ্ত আমির আব্দুল্লাহ আল-তাসনিম ওরফে নাহিদসহ সাতজনকে আটক করেন গোয়েন্দরা৷ তাদের সঙ্গে আইএস-এর যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়৷ এরপর সাখাওয়াতুল কবির, আনোয়ার হোসেন বাতেন, রবিউল ইসলাম আর নজরুল ইসলাম নামে চারজনকে আটক করে পুলিশ৷

সাখাওয়াতের ভায়রা শামীম ও বাতেনের ভগ্নিপতি সায়েম পাকিস্তানে থাকতো এবং তারা দু'জনেই আইএস-এর সঙ্গে জড়িত ছিল৷ বলা বাহুল্য, তারাই বাংলাদেশে সাখাওয়াতকে সংগঠনের সমন্বয়কের দায়িত্ব দিয়েছে৷ সাখাওয়াত পাকিস্তান, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে যাতায়াত করেছে৷ পরবর্তীতে পাকিস্তানে জঙ্গিবিরোধী এক অভিযানে শামীম ও সায়েম নিহত হয়৷

২৮শে সেপ্টেম্বর ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশনে সামিউন রহমান ইবনে হামদান নামে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক ব্রিটিশ নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়৷ ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর সদস্য সংগ্রহ করে সিরিয়ায় পাঠানোর জন্য বাংলাদেশে এসেছিল হামদান৷

ইসলামিক স্টেট-এর জন্য অনলাইনে সদস্য সংগ্রহের অভিযোগে ২৫শে সেপ্টেম্বর ঢাকার পুরানা পল্টন এলাকা থেকে মো. হিফজুর রহমান নামের ২২ বছর বয়সি আরেক তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়৷

ঐ সময় সেগুনবাগিচা ও রমনা এলাকা থেকে মো. আসিফ আদনান (২৬) ও মো. ফজলে এলাহী তানজিল (২৪) নামের দু'জনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যারা ইসলামিক স্টেটে যোগ দেয়ার পরিকল্পনা করছিল বলে দাবি করে গোয়েন্দা পুলিশ৷

গত মাসে ঢাকার মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) প্রকৌশল বিভাগের ছাত্র আশেকুর রহমানের সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট-এ যোগদানের খবর নিয়ে তোলপাড় হয় বাংলাদেশে৷

ওদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে জঙ্গিদের ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ নেয়া বাংলাদেশের ঐ গোয়েন্দা কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেন জানান, ‘‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘লাইক' দেয়ার মাধ্যমে প্রধানত আইএস-এর সঙ্গে বাংলাদেশি যুবকদের যোগাযোগ শুরু হয়৷ এরপর বাংলাদেশি যুবকদের আগ্রহ বিবেচনা করে আইএস যোগাযোগ বাড়ায়৷ এই যোগাযোগ অবশ্য এখন আর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে হয় না, হয় ভিন্ন উপায়ে৷''

তিনি বলেন, ‘‘এরা সাধারণত এক ধরণের ‘হিরোইজম' বা ‘স্বপ্ন' থেকে আইএস-এর দিকে ঝুঁকে পড়ে৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘নানা মাধ্যমে আমরা অন্তত ১০০ জন তরুণকে শনাক্ত করেছি, যারা বাংলাদেশ থেকে সিরিয়া বা ইরাকে গিয়ে সরাসরি আইএস-এ যোগ দিতে চায়৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ