ইউরোপ ও অ্যামেরিকায় চরম দক্ষিণপন্থি, খোলাখুলি ইসলাম-বিরোধী শক্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে৷ আইএস-এর মতো উগ্র ইসলামপন্থি শক্তির সঙ্গে তাদের রসায়ন পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে৷
বিজ্ঞাপন
মূল স্রোতের রাজনীতি বিফল হলে চরমপন্থিরা সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে এগিয়ে আসে৷ ইউরোপ সহ বিশ্বের অনেক প্রান্তে এই প্রবণতা ইদানীংকালে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে৷ দুর্বল অর্থনীতি, বহিরাগতদের সম্পর্কে ভীতি, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে উৎকণ্ঠার ফায়দা তুলতে এগিয়ে আসছে চরমপন্থি ও ‘পপুলিস্ট' দলগুলি৷ তাদের ঝুলিতে রয়েছে এমন সব চটজলদি সমাধানসূত্রের প্রতিশ্রুতি, যা মানুষের মনে আশা জাগিয়ে তোলে৷
ইউরোপে একের পর এক দেশে চরম দক্ষিণপন্থিরা বড় আকারে মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে৷ এই মুহূর্তে তাদের মূল অস্ত্র সিরিয়া সহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা শরণার্থীদের ঢল৷ বিশাল সংখ্যায় বহিরাগতদের আগমন নিয়ে মানুষের মনে এমনিতেই এক ভীতি কাজ করছে৷ শরণার্থীদের একটা বড় অংশ মুসলিম হওয়ায় ইসলাম-বিরোধিতার জিগির তুলে সেই ভীতিকে আরও উসকে দিচ্ছে চরম দক্ষিণপন্থি দল ও গোষ্ঠীগুলি৷
নেদারল্যান্ডস-এর চরম দক্ষিণপন্থি নেতা খেয়ার্ট ভিল্ডার্স মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইসলাম বিরোধিতার প্রশ্নে সহযোগী হিসেবে তুলে ধরেছেন৷
জার্মানিতে পেগিডা নামের গোষ্ঠী এভাবেই ভয়-ভীতি ছড়িয়ে শরণার্থীদের বিরুদ্ধে জনরোষ জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করছে৷
পেগিডা-র মোকাবিলার পাশাপাশি চরম দক্ষিণপন্থি এনপিডি দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে জার্মানিতে৷
ইউরোপে চরম দক্ষিণপন্থিদের এই দৌরাত্ম্য অনেকটা সহজ করে তুলছে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট-এর কর্মকাণ্ড৷ প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলা জনমানসে সরাসরি আতঙ্কের সৃষ্টি করছে৷ অন্যদিকে সিরিয়া সংকটের ফলে শরণার্থীদের ঢলও ইউরোপে ইসলাম ধর্মের আধিপত্য বিস্তারের ষড়যন্ত্র হিসেবে তুলে ধরছে দক্ষিণপন্থিরা৷ ফ্রান্সে সপ্তাহান্তের নির্বাচনে এই দুই শক্তির মধ্যে অদ্ভুত রসায়নের পরিচয় পাওয়া গেছে৷
অন্যদিকে ইউরোপ ও অ্যামেরিকায় চরম দক্ষিণপন্থি শক্তির উত্থান আইএস-এর পক্ষে অত্যন্ত সুবিধাজনক হয়ে উঠছে বলেও অনেকে মনে করছেন৷
জার্মানিতে এত শরণার্থী চায় না তারা
শরণার্থীরা তাদের গন্তব্য হিসেবে জার্মানিকে বেছে নিচ্ছে৷ জার্মানিও তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখাচ্ছে৷ কিন্তু জার্মানিতে এত শরণার্থী চান না অনেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘বিশ্বাসঘাতক’ ম্যার্কেল
জার্মানির ইসলাম ও অভিবাসী বিরোধী গোষ্ঠী পেগিডার হাজার হাজার সমর্থক সোমবার জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের শরণার্থী নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে৷ শরণার্থীদের প্রতি নরম মনোভাবের কারণ তারা ম্যার্কেলের বিরুদ্ধে ‘উচ্চ পর্যায়ের বিশ্বাসঘাতকতা’ ও ‘জার্মানির মানুষের বিরুদ্ধে অপরাধ’-এর অভিযোগ আনেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Settnik
শরণার্থীদের নিয়ে কটূক্তি
পেগিডার (প্যাট্রিয়টিক ইউরোপিয়ান অ্যাগেনস্ট দ্য ইসলামাইজেশন অফ দ্য অক্সিডেন্ট) প্রতিষ্ঠাতা লুটৎস বাখমান সম্প্রতি শরণার্থীদের ‘পশু’, ‘আবর্জনা’ ও ‘উচ্ছৃঙ্খল জনতা’ বলে আখ্যায়িত করেন৷ এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছে সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O.Berg
সমাজে অন্তর্ভুক্তি সম্ভব নয়
সোমবার বিক্ষোভের সময় বাখমান বলেন, শরণার্থীর সংখ্যা দেড় কিংবা দুই মিলিয়নেই থেমে থাকবে না৷ এরপর আসবে তাদের স্ত্রী; আসবে এক, দুই কিংবা তিন সন্তান৷ ফলে এতগুলো লোকের জার্মান সমাজে অন্তর্ভুক্তির কাজ অসম্ভব হয়ে পড়বে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Settnik
জার্মান সরকারের অস্বীকার
জার্মানির জনপ্রিয় পত্রিকা ‘বিল্ড’ সরকারের গোপন ডকুমেন্টের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, চলতি বছর জার্মানিতে প্রায় দেড় মিলিয়ন শরণার্থী আসবে বলে মনে করছে সরকার৷ যদিও প্রকাশ্যে সরকার বলছে সংখ্যাটা এক মিলিয়ন হতে পারে৷ তবে জার্মান সরকারের এক মুখপাত্র এ ধরনের কোনো গোপন ডকুমেন্টের কথা তিনি জানেন না বলে সাংবাদিকদের বলেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Thalia Engel
শরণার্থীর মৃত্যু
জার্মানির পূর্বাঞ্চলের এক শরণার্থীদের বাসস্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ইরিত্রিয়া থেকে আসা ২৯ বছরের এক শরণার্থীর মৃত্যু হয়েছে৷ অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনও জানা যায়নি৷ এদিকে, জার্মান সরকারের হিসেবে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর শরণার্থী ও তাদের বাসস্থানের উপর হামলার সংখ্যা বেড়েছে৷ এ বছরের প্রথম ছয় মাসেই এরকম ২০২টি ঘটনা ঘটেছে বলে সরকার জানিয়েছে, যেখানে গত বছর সংখ্যাটি ছিল ১৯৮৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিপদে ম্যার্কেল
শরণার্থীদের সঙ্গে এমন আচরণের কারণে নিজ দল সহ অন্যান্য দলের রাজনীতিবিদদের তোপের মুখে পড়েছেন ম্যার্কেল৷ তাঁরা জার্মানির শরণার্থী নীতি ও শরণার্থীদের আগমনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে চ্যান্সেলরকে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন৷