জর্ডানের এক বৈমানিককে পুড়িয়ে মেরেছে জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস৷ দেশটির সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এর ‘দুনিয়া কাঁপানো’ জবাব দেয়া হবে৷ এরপর বুধবারই দুই জঙ্গিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে জর্ডান৷
বিজ্ঞাপন
গত ডিসেম্বর থেকে ইসলামি জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটস (আইএস)-এর হাতে বন্দি ছিলেন জর্ডানের তরুণ বৈমানিক মুয়াত আল-কাসেসবেহ৷ সিরিয়ায় আইএস-এর বিরুদ্ধে হামলা পরিচালনার সময় তাঁর বিমানটি বিধ্বস্ত হয়৷ প্রাণ বাঁচালেও আইএস-কে এড়াতে পারেননিন৷ জাপানের দুই নাগরিকও তখন আইএস-এর হাতে বন্দি ছিলেন৷ তাঁদের জন্য মুক্তিপণ হিসেবে প্রথমে ২০০ মিলিয়ন ডলার দাবি করা হয়৷ টাকা না পাওয়ায় একজনকে মেরে ফেলে৷ অন্যজন, অর্থাৎ সাংবাদিক কেনজি গোতো এবং জর্ডানের বৈমানিক মুয়াত আল-কাসেসবেহ-এর প্রাণের বিনিময়ে তখন জর্ডানে আটক নারী যোদ্ধা সাজিদা আল-রিশোয়াই-এর মুক্তি দাবি করে আইএস৷ দাবি আদায় না হওয়ায় কেনজি গোতোকে হত্যা করে ভিডিও প্রচার করে ইরাক এবং সিরিয়ার বেশ বড় একটি এলাকা দখল করে নেয়া জঙ্গি সংগঠনটি৷
বৈমানিক মুয়াত আল-কাসেসবেহকে হত্যা করে মঙ্গলবার তার ভিডিও-ও প্রচার করে আইএস৷ জানানো হয় মুয়াতকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে৷ জর্ডানে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়৷ মুয়াতের বাড়ির কাছে কয়েকটি সরকারি কার্যালয়ে হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা৷ বিক্ষুব্ধরা ‘মৃত্যু, মৃত্যু, মৃত্যু চাই, দায়েশের মৃত্যু চাই' স্লোগান দিচ্ছিলেন৷ আরবি ভাষায় ইসলামিক স্টেটকে বলা হয় ‘দায়েশ'৷ এই শব্দটি জর্ডানের অনেক মানুষই গত ডিসেম্বর থেকে ঘৃণা এবং আতঙ্ক নিয়ে উচ্চারণ করছেন৷ তবে অনেকে মুয়াতের হত্যার জন্য জর্ডান সরকারকেও দায়ী মনে করেন৷ তাঁদের ধারণা, মুয়াতকে মুক্ত করার জন্য যতটা উদ্যোগী হওয়া উচিত ছিল, ততটা উদ্যোগী হয়নি সরকার৷
সরকারের পক্ষ থেকে সে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে৷ জানানো হয়েছে, মুয়াতকে মুক্ত করার জন্য ২০০৫ সালে সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে আটক সাজিদা আল-রিশোয়াইকে মুক্তি দিতেও রাজি হয়েছিল সরকার৷ কিন্তু আইএস মুয়াত যে সত্যি সত্যি জীবিত আছে, তা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়৷ এক সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার হত্যা করার কথা জানানো হলেও মুয়াতকে আসলে প্রায় এক মাস আগে হত্যা করা হয়েছিল৷
হত্যা, আতঙ্ক আর ঘৃণায় আইএস
শুধু ইরাক আর সিরিয়া নয়, আজকাল বিশ্বের অনেক দেশেই ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর তৎপরতার কথা শোনা যায়৷ খেলাফত কায়েমের কথা বলে মধ্যপ্রাচ্যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা জঙ্গি সংগঠনটিকে নিয়েই আমাদের আজকের ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jordan News Agency
তাদের কাছে নারী যেন বাজারের পণ্য
অনেক সময় আটক নারী ও শিশুদের আইএস জঙ্গিরা যৌন দাস হিসেবে ব্যবহার করে৷ সম্প্রতি আইএস-এর কবল থেকে পালিয়ে আসা ৪০ জনেরও বেশি ইয়াজিদি নারীর সঙ্গে কথা বলে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ নারী ও শিশুদের সঙ্গে আইএস-এর এমন আচরণে নিন্দা জানিয়েছেন সবাই৷
ছবি: DW/Andreas Stahl
সাংবাদিক, এনজিওকর্মী হত্যা করে হুমকি
তাদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা বন্ধ না করায় যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করতে নিরপরাধ মানুষ হত্যার বেশ কিছু নজীর গড়েছে আইএস৷ বিমান হামলার প্রতিশোধের কথা বলে যুক্তরাষ্ট্রের দু’জন সাংবাদিক, একজন এনজিও কর্মী এবং ব্রিটেনের দু’জন এনজিও কর্মীর শিরশ্ছেদ করেছে তারা৷ ওপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক জেমস ফলিকে৷ গত আগস্টে তাঁর শিরশ্ছেদ করে ভিডিওচিত্র প্রচার করে আইএস৷
ছবি: dapd
মুসলমান হলেও রক্ষা নেই....
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সিরীয় শরণার্থীদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন পিটার কাসিগ৷ মুসলমান হিসেবে তাঁর নাম হয়েছিল আব্দুল রহমান কাসিগ৷ গত নভেম্বরে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ায় তাঁকেও হত্যা করে আইএস৷ হত্যার পর ভিডিও চিত্রও প্রকাশ করা হয়৷ নৃশংস এ ঘটনাকে ‘শয়তানের কাজ' হিসেবে বর্ণনা করেন বারাক ওবামা৷
ছবি: picture-alliance/AP/Kassig Family
জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি, তারপর...
জাপানের দুই নাগরিককে জিম্মি করে প্রথমে ২০০ মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ দাবি করে আইএস৷ মুক্তিপণ না পাওয়ায় হারুনা ইউকাওয়াকে হত্যা করলেও সাংবাদিক কেনজি গোতোকে আটকে রাখে৷ গোতো এবং জর্ডানের বৈমানিক আইমান মাজ-আল-কাসাবেহকে জিম্মি করে তাঁদের প্রাণের বিনিময়ে জর্ডানে আটক আইএস-এর এক নারী যোদ্ধার মুক্তি দাবি করা হয়৷ তাঁকে মুক্তি না দেয়ায় কেনজি গোতো এবং আইমান মাজ-আল-কাসাবেহকে হত্যা করে আইএস৷
ছবি: Reuters/www.reportr.co via Reuters TV
ইরাকে শুরু....
গত বছরের জুন মাসে ঝটিকা আক্রমণের ইরাকের মোসুল দখল করে নেয় আইএস৷ সুন্দিদের এই জঙ্গি সংঠনটি তারপর ইরাকের বেশ বড় একটা অংশে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে৷ সিরিয়াতেও দখল করে নেয় কিছু এলাকা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বাংলাদেশেও তৎপর আইএস...
আইএস সরাসরি যুদ্ধ করছে ইরাক আর সিরিয়ায়৷ যোদ্ধা সংগ্রহ করা হচ্ছে বিশ্বের প্রায় সব প্রান্ত থেকে৷ জার্মানি, বৃটেন, ফ্রান্স, বেলজিয়ামের মতো ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে জঙ্গি মনোভাবাপন্নরা গিয়েছে ইরাক, সিরিয়ায়৷ এশিয়ার দেশগুলোতেও তৎপর আইএস৷ বাংলাদেশেও আইএস সমর্থক সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েকজনকে৷
ছবি: Reuters
জুতার নীচে আইএস!
আইএস-এর প্রতি ঘৃণাও বাড়ছে সারা বিশ্বে৷ ইরাকের স্থপতি আকীল খ্রীফ তো আইএস জঙ্গিদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে বেছে নিয়েছেন অভিনব এক উপায়৷ পুরোনো জুতা সংগ্রহ করে তার নীচে জুতার পরিত্যক্ত ফিতা, বোতাম ইত্যাদি দিয়ে ফুটিয়ে তুলছেন আইএস জঙ্গিদের চেহারার আদল৷ আকীল খ্রীফ মনে করেন, আইএস জঙ্গিদের স্থান জুতার নীচেই হওয়া উচিত৷
ছবি: Armend Nimani/AFP/Getty Images
বৈমানিককে পুড়িয়ে মারা এবং জর্ডানের ‘প্রতিশোধ’
আটক নারী যোদ্ধাকে মুক্তি না দেয়ায় জর্ডানের বৈমানিক আইমান মুয়াত আল-কাসেসবেহ-কে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে মারে আইএস৷ ক্ষুব্ধ হয়ে পাল্টা ব্যবস্থা নিতেও দেরি করেনি জর্ডান৷ আইমান মুয়াত আল-কাসেসবেহ-কে (ওপরের ছবি) হত্যা করে আইএস ভিডিও প্রকাশের পরই তাদের নারী যোদ্ধা সাজিদা আল-রিশোয়াই ও আরেক কর্মীকে ফাঁসিতে ঝোলায় জর্ডান সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jordan News Agency
8 ছবি1 | 8
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সফর বাতিল করে দেশে ফিরেছেন বাদশাহ আব্দুল্লাহ৷ বুধবার ভোরে মুয়াতকে হত্যার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে দুই জঙ্গি সাজিদা আল-রিশোয়াই এবং জিয়াদ কারবোলিকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়৷ চল্লিশোর্ধ নারী সাজিদা ২০০৫ সালে আম্মানের এক বিলাসবহুল হোটেলে চালানো সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত ছিলেন৷ আল-কায়েদার চালানো সেই হামলায় ৬০ জন নিহত হয়৷ সাজিদারও তখন মৃত্যুবরণ করার কথা ছিল৷ কিন্তু আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী হিসেবে সেখানে গেলেও কোমরে বাঁধা বোমাটি বিস্ফোরিত না হওয়ায় তিনি বেঁচে যান৷ পরে ইরাকি আল-কায়েদার এই নারী যোদ্ধাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় জর্ডানের আদালত৷ ইরাকি আল-কায়েদার আরেক সদস্য জিয়াদ কারবোলিক-এর বিরুদ্ধেও ফাঁসির রায় দেয়া হয়েছিল৷ বুধবার ভোরে রাজধানী আম্মান থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরের সোয়াকা কারাগারে দু'জনকেই ফাঁসি দিয়ে আইএস-কে মুয়াত আল-কাসেসবেহ হত্যার জবাব দিয়েছে জর্ডান সরকার৷