এক সময় ইরাক নিয়ে মার্কিন নীতির বিরোধীতা করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন বারাক ওবামা৷ মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারও করেন ইরাক থেকে৷ এবার কিন্তু পুরোপুরি উল্টো পথে হাঁটছেন৷ ইসলামিক স্টেটকে ঠেকানোর ‘গেম প্ল্যান’ তৈরি করছেন ওবামা৷
বিজ্ঞাপন
রবিবার যুক্তরাষ্ট্রের এনবিসি চ্যানেলের ‘মিট দ্য প্রেস' অনুষ্ঠানে প্রচারিত সাক্ষাৎকারে বারাক ওবামা বলেন, ‘‘আইএস-এর (বা আইসিস-এর) হুমকি মোকাবেলা করতে আমাদের দেশ যে প্রস্তুত এ বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি আমি৷'' সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আরো জানান, এক ভাষণে তিনি জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) ইরাক থেকে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা ঘোষণা করবেন৷ বুধবার তাঁর এই ভাষণ প্রচারিত হওয়ার কথা৷
ইরাকে জিহাদিবিরোধী যুদ্ধ
চরমপন্থি ইসলামি সংগঠন আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে ইরাকে৷ সন্ত্রাসবাদী এ সংগঠনটির সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশেও তৎপরতা রয়েছে৷ দেখুন ইরাকে আইএস-বিরোধী যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট কিছু ছবি৷
ছবি: Reuters
টিকরিট পুনরুদ্ধারের চেষ্টা
সুন্নিদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইসিস) উত্তর ও দক্ষিণ ইরাকের কিছু অংশ দখল করে নিয়েছে৷ বাগদাদ থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরের শহর টিকরিটও এখন তাদের দখলে৷ সে এলাকায় ইরাক সরকারের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের জন্য আইসিস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়ছে সেনাবাহিনী৷
ছবি: Reuters
মধ্যপ্রাচ্যে কর্তৃত্ব চায় আইসিস
আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে আইসিস-এর একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ ২০০৬ থেকে ২০০৭-এর দিকে ইরাকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই চলছে তখনই আইসিস-এর জন্ম৷ সংগঠনটির লক্ষ্য সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, ফিলিস্তিন এবং জর্ডান মিলিয়ে বেশ বড় একটা অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা৷ ইরাকে নুসরা ফ্রন্টসহ বেশ কিছু সংগঠন তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বিদ্রোহীদের পাশে যুক্তরাষ্ট্র
সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ আর ইরাকে নুরি আল মালিকির সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহীদের মধ্যে মধ্যপন্থি এবং মৌলবাদী সংগঠনের কর্মী রয়েছে৷ সিরিয়ায় ন্যাশনাল কোয়ালিশনের মতো কিছু মধ্যপন্থি সংগঠনকে সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামা বিদ্রোহীদের একাংশকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছেন৷
ছবি: Reuters
ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি জানিয়েছেন, কংগ্রেস বিদ্রোহীদের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব অনুমোদন করলে তা সিরিয়া এবং ইরাকে দেয়া হবে৷ এই বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ, কেননা, ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বড় একটা অংশ যে আইসিস-এর কাছে যাবেনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই৷
ছবি: Reuters
কুর্দিরা চায় স্বাধীন কুর্দিস্তান
যুক্তরাষ্ট্র চায় ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি সুন্নি এবং কুর্দিদের অংশিদারিত্বের সরকার গঠন করুন৷ ইরাকের কিছু অংশে কুর্দিদের স্বায়ত্তশাসন রয়েছে৷ কুর্দিরা ‘পেশমেরগা’, অর্থাৎ কুর্দিদের স্বাধিকার আন্দোলনের অংশ হিসেবে আইসিসের বিরুদ্ধে লড়ছে৷ কুর্দিদের মূল লক্ষ্য ইরাকে স্বাধীন কুর্দিস্তান প্রতিষ্ঠা করা৷
ছবি: Reuters
ইরানের ভূমিকা
ইরাকে শিয়া-সুন্নি সংঘাতের মধ্যে জড়াতে চায়না ইরান৷ কিন্তু শিয়া প্রধান দেশ ইরানের সরকার ইরাকের মালিকি সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে বলে ধারণা করা হয়৷ নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইসিস-বিরোধী যুদ্ধে মালিকি সরকারকে ড্রোন এবং অন্যান্য সমর উপকরণ দিয়ে সহায়তা করছে ইরান সরকার৷
ছবি: Atta Kanare/AFP/Getty Images
এক হাজারেরও বেশি নিহত
সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছে সৌদি আরব৷ ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি মনে করেন, আইসিসকেও মদদ দিচ্ছে সৌদি সরকার৷ ইরাকে চলমান সংঘাতে কমপক্ষে এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে৷ মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ জন্য ইরাক সরকার এবং আইসিস-এর কঠোর সমালোচনা করেছে৷
ছবি: Reuters
বাড়ছে শরণার্থী
আইসিসের হামলা শুরুর পর থেকে ইরাকের বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ১২ লাখ মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন৷ সিরিয়া সংকট শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত আড়াই লাখ সিরীয় স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি রাজ্যগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে৷ এখন আইসিসের দখল করে নেয়া শহরগুলো থেকে পালিয়ে ইরাকিরাও আসছে৷ ছবিতে খাজাইর চেকপয়েন্ট অতিক্রম করে কুর্দিদের নিয়ন্ত্রিত শহর এরবিলের দিকে যেতে দেখা যাচ্ছে মসুল থেকে আসা ইরাকিদের৷
ছবি: Getty Images
স্বেচ্ছাসেবীরাও নেমেছে যুদ্ধে
প্রধানমন্ত্রী মালিকি জানিয়েছেন, রাশিয়া আর বেলারুশের কাছ থেকে পুরোনো যুদ্ধ বিমান কিনেছে ইরাক৷ আইসিসের বিরুদ্ধে সেগুলো ব্যবহার করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ বাড়ছে সমরাস্ত্র৷ বাড়ছে যোদ্ধা৷ স্বেচ্ছাসেবীরাও যোগ দিচ্ছেন আইসিস বিরোধী যুদ্ধে৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
এদিকে আরব লিগ জানিয়েছে, তারাও আইএস-এর বিরুদ্ধে সম্ভব সব রকমের ব্যবস্থা নেবে৷ তবে ২২টি দেশ নিয়ে গঠিত এ জোট ইরাকে মার্কিন বিমান হামলা বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেনি৷ গত ৮ই আগস্ট থেকে আইএস-এর বিরুদ্ধে বিমান হামলা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র৷ রবিবার থেকে হামলা আরো জোরদার করা হয়৷
এনবিসি-কে বারাক ওবামা অবশ্য জানিয়েছেন, বিমান হামলা আরো জোরদার করা হলেও যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে নতুন করে পদাতিক বাহনী পাঠাবে না৷ ২০১১ সালে ইরাক থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করেন ওবামা৷ আইএস ইরাকের বিভিন্ন শহরে হামলা শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র আবার মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটিতে সামরিক হস্তক্ষেপ শুরু করে৷
ইরাকের বেশ কিছু অঞ্চল এখনো আইএস-এর দখলে৷ তবে মার্কিন বিমান অভিযান শুরুর পর থেকে জঙ্গি সংগঠনটির সামরিক সাফল্য থমকে গেছে৷ শুরুতে ইরাকি সেনাবাহিনী বেশ কিছু শহরের কর্তৃত্ব প্রায় বিনা প্রতিরোধে ছেড়ে দিলেও এখন দখল ফিরে পেতে প্রচণ্ড লড়াই করছে৷ রবি বার বানওয়ারা শহর থেকে আইএস জঙ্গিদের হঠিয়ে দিয়েছে তারা৷ জঙ্গিরা অস্ত্র এবং যানবাহন ফেলে শহরটি থেকে পালিয়েছে৷