ইসলামিক স্টেট বা আইএস জঙ্গিদের বন্দি সন্তানদের দেশে ফিরিয়ে আনতে চায় জার্মানি৷ তবে তাদের ফিরিয়ে আনার সম্ভাব্য বিপদের দিকটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ বর্তমানে এমন অন্তত ছ'জন জার্মান শিশু ইরাকের কারাগারে বন্দি রয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
সিরিয়াতে তথাকথিত জঙ্গি গোষ্ঠী জঙ্গি সংগঠন আইএস-এ যোগ দিয়েছে বেশ কয়েকজন জার্মান নাগরিক৷ এদের কয়েকজনের স্ত্রী ও সন্তান বর্তমানে ইরাকে বন্দি অবস্থায় রয়েছে৷ জার্মান দৈনিক স্যুডডয়চে সাইটুং ও পাবলিক ব্রডকাস্টার এনডিআর ও ভিডিআর-এর সূত্রমতে, এ সব শিশুদের জার্মানিতে ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যেই ইরাকের সহযোগিতা চেয়েছে জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ নাগরিকদের প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও মানবিকতার বিচারে এদের ফিরিয়ে আনতে চায় জার্মানি৷
সংবাদে জানানো হয়, কূটনীতিকরা কারাবন্দি জার্মান পরিবারের সাথে দেখা করতে গেলে এ সব শিশুদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানায় বন্দি মায়েরা৷ অবশ্য এখনো ইরাকের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি৷
বিশ্বের ভয়ংকর পাঁচ জঙ্গি সংগঠন
তথাকথিত জঙ্গিদের কারণে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে৷ অনেকেরই ধারণা তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস-ই সবচেয়ে ভয়ংকর জঙ্গি গোষ্ঠী৷ কিন্তু বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচি বা গ্লোবাল টেররিজম ইনডেক্স কিন্তু বলছে ভিন্ন কথা৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. Lieman
বোকো হারাম
ইসলামিক স্টেট বা আইএস নয়, বিশ্বের ভয়ংকর জঙ্গি সংগঠনগুলোর তালিকার শীর্ষে রয়েছে নাইজেরিয়ার বোকো হারাম৷ ২০১৫ সালে আবু বকর শেকাউ-এর নেতৃত্বে এই জঙ্গি গোষ্ঠীটি ৬ হাজার ৬৪৪ জন মানুষকে হত্যা করেছে৷ তাদের হামলায় আহত হয়েছে ১,৭৪২ জন৷ বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক৷ এছাড়া হাজারো কিশোরীকে অপহরণ করেছে বোকো হারাম৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S.Alamba
ইসলামিক স্টেট
যদিও বোকো হারাম আইএস-এর তুলনায় বেশি মানুষকে হত্যা করেছে, কিন্তু আতঙ্ক সৃষ্টির দিক থেকে সবচেয়ে উপরে আছে আইএস৷ বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি বলা হচ্ছে আইএসকে৷ ২০১৫ সালে তাদের হাতে প্রাণ হারিয়েছে ৬ হাজার ৭৩ জন মানুষ এবং আহত হয় ৫ হাজার ৭৯৯ জন৷ ১০৭১টি হামলা চালিয়েছে তারা বিশ্ব জুড়ে৷ আবু বকর আল-বাগদাদির নেতৃত্বে সংগঠনটি সিরিয়া, ইরাক, তুরস্ক ও ইউরোপ জুড়ে এখনো হামলা চালিয়ে যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তালেবান
১৯৯৪ সালে আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ চলার সময় এই জঙ্গি সংগঠনটির আবির্ভাব৷ বিশ্বের সবচেয়ে অভিজ্ঞ জঙ্গি সংগঠন বলা হয় এদের৷ ২০১৫ সালে তালেবানের হাতে প্রাণ হারিয়েছে ৩ হাজার ৪৭৭ জন এবং আহত হয়েছে ৩ হাজার ৩১০ জন৷ গত বছর বিশ্ব জুড়ে ৮৯১ টি হামলা চালিয়েছে তারা৷ হিবাতুল্লাহ আকন্দজাদা এখন তালেবানের নেতৃত্বে রয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Noorullah Shirzada
ফুলানি জঙ্গি গোষ্ঠী
বিশ্বব্যাপী এদের তেমন পরিচিতি নেই৷ এরা নাইজেরিয়ার ফুলা সম্প্রদায়ের মানুষ৷ এদের লক্ষ্য ফুলানির ভূমি মালিকদের হত্যা করা৷ ২০১৫ সালে ১৫০ টি সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে ফুলানি, তাদের হামলায় মারা গেছে ১ হাজার ২২৯ জন৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. Lieman
আল-শাবাব
বোকো হারামকে যদি আইএস-এর সাথে তুলনা করা হয়, তবে আল শাবাবকে তুলনা করা যায় আল-কায়েদার সঙ্গে৷ পূর্ব আফ্রিকায় এদের আধিপত্য অনেক বেশি৷ সোমালিয়াকে ইসলামিক রাষ্ট্র বানানোই তাদের মূল লক্ষ্য৷ গত বছর জঙ্গি গোষ্ঠীটি ৪৯৬টি হামলা চালিয়েছে, হত্যা করেছে ১ হাজার ২১ জন মানুষকে, আহত হয়েছে ৮৫০ জন৷
ছবি: A. Ohanesian
5 ছবি1 | 5
আইএস বাহিনীর কবল থেকে ইরাকের বিভিন্ন এলাকা উদ্ধারের পর, আটক করা হয় জঙ্গি পরিবারের এ সব নারীও শিশুদের৷ আইএস-এর প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে পালিয়ে আসা পরিবারের সাথে সিরিয়াতে পৌঁছায় অনেক শিশু, আবার অনেকে জন্ম নিয়েছে সিরিয়াতেই৷ যেসব শিশু সিরিয়াতে আইএস অধ্যুষিত এলাকায় জন্ম নিয়েছিল, আইএস-এর পক্ষ থেকে তাদের জন্মসনদ দেয়া হয়েছিল, যদিও পরিবারের সূত্রে তারা জার্মান নাগরিক৷
পরিসংখ্যান মতে, জার্মানি থেকে যে ৯৪০ জন আইএস-এ যোগ দিতে সিরিয়া বা ইরাকে পালিয়ে যায়, তাদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশেরই রয়েছে জার্মান নাগরিকত্ব৷
তবে এ সব শিশুদের জার্মানিতে ফিরিয়ে আনার সম্ভাব্য বিপদের দিকটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ রিপোর্টে জানানো হয়, একেবারে ছোট শিশুরা ‘ট্রমার' শিকার হলেও যেহেতু আদর্শগতভাবে প্রভাবিত নয়, তাই তাদের নিয়ে নিরাপত্তা ঝুঁকি না থাকলেও অপেক্ষাকৃত বড় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সে সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না৷ জার্মানির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান হান্স-গেয়র্গ মাসেন বলেন, আইএস যোদ্ধাদের সন্তানরা যেহেতু কট্টর ইসলামি চিন্তাধারায় বেড়ে উঠেছে, তারা জার্মান সমাজের জন্য বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে৷ অর্থাৎ জার্মানির মাটিতেই ‘জিহাদিদের নতুন এক প্রজন্ম তৈরি হতে পারে'৷
আইএস কী, কোথায় এবং কেন?
প্রতিদিনই খবরে আইএস৷ কোনোদিন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য, কোনোদিন হয়তো ইরাক বা সিরিয়ায় কোনো অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য৷ আইএস বলছে, ইসলামি খেলাফত কায়েম করার জন্য যুদ্ধে নেমেছে তারা৷ ছবিঘরে আইএস সম্পর্কে কিছু তথ্য....
ইসলামিক স্টেট বা আইএস আসলে কী?
আল কায়েদা থেকে তৈরি হওয়া সুন্নি মুসলমানদের জঙ্গি সংগঠন আইএস৷ সাদ্দাম পরবর্তী সময়ে ইরাকে এবং বাশার আল আসাদের আমলে সিরিয়ায় সুন্নিদের হতাশা থেকেই জন্ম সংগঠনটির৷ আইএস-এর পতাকায় লেখা থাকে, ‘মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর নবী’ এবং ‘আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই৷’
ছবি: AP
আইএস কোথায় সক্রিয়?
শরিয়া আইন অনুযায়ী পরিচালিত হবে এমন রাষ্ট্র, বা ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায় আইএস৷ সিরিয়া এবং ইরাকেই প্রত্যক্ষভাবে সক্রিয় তারা৷ দুটি দেশেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগে বেশ বড় অঞ্চল দখল করে নিয়েছে আইএস৷
আইএস কেন আলাদা?
মূলত নিষ্ঠুরতার জন্য৷ শত্রুপক্ষ এবং নিরীহ মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়াতে তারা এমন বর্বরতা এবং নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করে যা আগে কেউ করেনি৷ জবাই করে ভিডিও প্রচার, পুড়িয়ে মারা, বাবার সামনে মেয়েকে জবাই করা এবং তার তার ভিডিও প্রচার, মেয়েদের যৌনদাসী বানানো আর পণ্যের মতো বিক্রি করা – এসব নিয়মিতভাবেই করছে আইএস৷ কোনো অঞ্চল দখলে নেয়ার পর সেখানে শাসন প্রতিষ্ঠায় মন দেয় আইএস৷
ছবি: gebphotography - Fotolia.com
অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক
আইএস যদিও শুধু সিরিয়া এবং ইরাকেই সক্রিয়, তবে বিশ্বের অন্যান্য ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন নয়৷ নাইজেরিয়ার জঙ্গি সংগঠন বোকো হারাম কয়েকদিন আগেই জানিয়েছে, আইএস-কে তারা সমর্থন করে৷ দুটি সংগঠনের মধ্যে একটি জায়গায় মিলও আছে৷ আইএস-এর মতো বোকো হারামও নিষ্ঠুরতা এবং বর্বরতার প্রতিভূ হয়ে উঠেছে৷ অন্য ধর্মের নারীদের প্রতি দুটি সংগঠনের দৃষ্টিভঙ্গি এবং আচরণই মধ্যযুগীয়৷
ছবি: Getty Images/A. Katib
আইএস-এর অনুসারী কারা?
অনুসারী সংগ্রহের সাফল্যেও আইএস অন্য সব জঙ্গি সংগঠনের চেয়ে আলাদা৷ এ পর্যন্ত অন্তত ২০ হাজার বিদেশী যোদ্ধা আইএস-এ যোগ দিয়েছে৷ তাদের মধ্যে ৪ হাজারই পশ্চিম ইউরোপ এবং উত্তর অ্যামেরিকার৷
আইএস-কে রুখতে অন্য দেশগুলো কী করছে?
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বেশ কিছু পশ্চিমা এবং আরব দেশ সিরিয়া ও ইরাকে আইএস ঘাঁটির ওপর বিমান থেকে বোমা হামলা চালাচ্ছে৷ বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সিরিয়ায় ১৪২২ এবং ইরাকে ২২৪২ বার হামলা হয়েছে৷ কোনো কোনো সরকার দেশের অভ্যন্তরেও কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে৷ সিরিয়া ফেরত অন্তত ৩০ জন সন্দেহভাজন জঙ্গির বিচার শুরু করবে জার্মানি৷ গত মাসে সৌদি পুলিশও ৯৩ জন সন্দেহভাজন আইএস জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে৷
6 ছবি1 | 6
আরএন/ডিজি
প্রতিবেদনটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান, লিখুন নীচের ঘরে৷