‘‘ইসলামিক স্টেট-এর যেখান থেকে অর্থায়ন হয়, এখানে যারা আছে তাদের অর্থায়ন একই জায়গা থেকে হয়৷ মতাদর্শের খুব একটা পার্থক্য নেই৷ ফলে তারা জঙ্গিবাদ বিস্তারের সব চেষ্টাই করছে বাংলাদেশে৷'' ডিডাব্লিউ-কে বলেন ডা. ইমরান এইচ সরকার৷
বিজ্ঞাপন
[No title]
গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. সরকারের কথায়, ‘‘দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের পর এক ধরনের অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশে৷ জঙ্গিরা ব্লগারদের নতুন নতুন তালিকা তৈরি করছে৷ আর সেই তালিকা ধরে হত্যাকাণ্ডও চালাচ্ছে তারা৷’’
ডয়চে ভেলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, ‘‘এ বছর চারজন ব্লগারকে হত্যা করা হয়েছে৷ এই হত্যাকাণ্ডের আগেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সরকার৷ আর পরেও বিচারের চাইতে ধামাচাপা দেয়াতে মনোযোগ তাদের বেশি৷ ফলে সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ শুধু ব্লগার না, আমাদের দেশের পীর ও ইসলামি স্কলারদেরও হত্যা করা হচ্ছে৷ ধর্মকে ব্যবহার করে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র যারা বানাতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে এই পীররা কথা বলেন৷ মোট কথা, যারা ওদের বিরুদ্ধে লেখে, বা বলে, তাদের বেছে বেছে হত্যা করা হচ্ছে৷ এভাবে চলতে থাকলে রাষ্ট্রকে নিরাপদ রাখা সম্ভব নয়৷''
এদিকে দুই বিদেশি হত্যার পর, গত শনিবার, নতুন করে মার্কিন নাগরিকদের বাংলাদেশে ভ্রমণ কিংবা চলাফেরার সময় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি নিজেদের নিরাপত্তায় সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে দূতাবাস৷ যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা নাগরিকদের লক্ষ্য করে আন্তর্জাতিক হোটেলসহ বড় সমাবেশে আবারো সন্ত্রাসী হামলার বিশ্বাসযোগ্য তথ্য থাকায়, ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের নিরাপত্তা বার্তায় নাগরিকদের এ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷
[No title]
তবে এই সতর্কবার্তার একদিন পর, অর্থাৎ রবিবার, ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার নতুন করে কোনো সতর্কবার্তা দেয়নি৷ আগের বার্তাটা শুধু নবায়ন করেছে৷ যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে৷ বার্নিকাট জানান যে, বাংলাদেশে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে৷ এক্ষেত্রে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী যে সহযোগিতা করছে, তা সত্যিই সন্তোষজনক৷
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিন্তু শুরু থেকেই বলে আসছে যে, বাংলাদেশে কোনো আইএস নেই৷ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া রবিবার এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘‘দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জঙ্গি গোষ্টী ইসলামিক স্টেট বা আইএস-র কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি৷'' পাশাপাশি মামলার তদন্ত অনেক দূর এগিয়েছে বলেও জানান তিনি৷
অথচ বাংলাদেশে জঙ্গিদের যে একটা অবস্থান আছে, সেটা কিন্তু কেউই অস্বীকার করছেন না৷ ব্লগার বা পীরদের খুনের সঙ্গে জঙ্গিদের যোগাযোগও অস্বীকার করছেন না বাংলাদেশের কোনো গোয়েন্দা কর্মকর্তাই৷
বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার শিকার যারা
চলতি বছর ইসলামপন্থিরা একের পর এক হামলা চালিয়ে বাংলাদেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছে৷ এতে প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন৷ চলুন জানা যাক ২০১৫ সালের কবে, কারা হামলার শিকার হয়েছেন...৷
ছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ব্লগার খুন
একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে খুন হন ব্লগার এবং লেখক অভিজিৎ রায়৷ কমপক্ষে দুই দুর্বৃত্ত তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে৷ এসময় তাঁর স্ত্রী বন্যা আহমেদও গুরুতর আহত হন৷ বাংলাদেশি মার্কিন এই দুই নাগরিককে হত্যার দায় স্বীকার করেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি গোষ্ঠী ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’৷ পুলিশ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
বাড়ির সামনে খুন
ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে হত্যা করা হয় ঢাকায়, গত ৩০ মার্চ৷ তিন দুর্বৃত্ত মাংস কাটার চাপাতি দিতে তাঁকে কোপায়৷ সেসেময় কয়েকজন হিজরে সন্দেহভাজন দুই খুনিকে ধরে ফেলে, তৃতীয়জন পালিয়ে যায়৷ আটকরা জানায়, তারা মাদ্রাসার ছাত্র ছিল এবং বাবুকে হত্যার নির্দেশ পেয়েছিল৷ কে বা কারা এই হত্যার নির্দেশ দিয়েছে জানা যায়নি৷ বাবু ফেসবুকে ধর্মীয় উগ্রপন্থিদের বিরুদ্ধে লিখতেন৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
সিলেটে আক্রান্ত মুক্তমনা ব্লগার
শুধু ঢাকায় নয়, ঢাকার বাইরে ব্লগার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে৷ গত ১২ মে সিলেটে নিজের বাসার কাছে খুন হন নাস্তিক অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট এবং ব্লগার অনন্ত বিজয় দাস৷ ভারত উপমহাদেশের আল-কায়েদা, যাদের সঙ্গে ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’-এর সম্পর্ক আছে ধারণা করা হয়, এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷ দাস ডয়চে ভেলের দ্য বব্স জয়ী মুক্তমনা ব্লগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/EPA/Str
বাড়ির মধ্যে জবাই
ব্লগার নিলয় চট্টোপাধ্যায়কে, যিনি নিলয় নীল নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন, হত্যা করা হয় ঢাকায় তাঁর বাড়ির মধ্যে৷ একদল যুবক বাড়ি ভাড়ার আগ্রহ প্রকাশ করে ৮ আগস্ট তাঁর বাড়িতে প্রবেশ করে এবং তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে৷ নিজের উপর হামলা হতে পারে, এমন আশঙ্কায় পুলিশের সহায়তা চেয়েছিলেন নিলয়৷ কিন্তু পুলিশ তাঁকে সহায়তা করেনি৷ ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’ এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে, তবে তার সত্যতা যাচাই করা যায়নি৷
ছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman
জগিংয়ের সময় গুলিতে খুন বিদেশি
গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে জগিং করার সময় ঢাকার কূটনৈতিক এলাকায় খুন হন ইটালীয় এনজিও কর্মী সিজার তাবেলা৷ তাঁকে পেছন থেকে পরপর তিনবার গুলি করে দুর্বৃত্তরা৷ জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে বলে দাবি করেছে জিহাদিদের অনলাইন কর্মকাণ্ডের দিকে নজর রাখা একটি সংস্থা৷ তবে বাংলাদেশে সরকার এই দাবি অস্বীকার করে বলেছে ‘এক বড় ভাইয়ের’ তাঁকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/ A.M. Ahad)
রংপুরে নিহত এক জাপানি
গত ৩ অক্টোবর রংপুরে খুন হন জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও৷ মুখোশধারী খুনিরা তাঁকে গুলি করার পর মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়৷ ইসলামিক স্টেট এই হত্যাকাণ্ডেরও দায় স্বীকার করেছে, তবে সরকার তা অস্বীকার করেছে৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন না যে তাঁর দেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীটির উপস্থিতি রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
হোসনি দালানে বিস্ফোরণ, নিহত ১
গত ২৪ অক্টোবর ঢাকার ঐতিহ্যবাহী হোসনি দালানে শিয়া মুসলমানদের আশুরার প্রস্তুতির সময় বিস্ফোরণে এক কিশোর নিহত এবং শতাধিক ব্যক্তি আহত হন৷ বাংলাদেশে এর আগে কখনো শিয়াদের উপর এরকম হামলায় হয়নি৷ এই হামলারও দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট, তবে সরকার সে দাবি নাকোচ করে দিয়ে হামলাকারীরা সম্ভবত নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি গোষ্ঠী জেএমবি-র সদস্য৷ সন্দেহভাজনদের একজন ইতোমধ্যে ক্রসফায়ারে মারা গেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Zaman
ঢাকায় প্রকাশক খুন
গত ৩১ অক্টোবর ঢাকায় দু’টি স্থানে কাছাকাছি সময়ে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়৷ এতে খুন হন এক ‘সেক্যুলার’ প্রকাশক এবং গুরুতর আহত হন আরেক প্রকাশক ও দুই ব্লগার৷ নিহত প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনের সঙ্গে ঢাকায় খুন হওয়া ব্লগার অভিজিৎ রায়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ জঙ্গি গোষ্ঠী ‘আনসার-আল-ইসলাম’ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
প্রার্থনারত শিয়াদের গুলি, নিহত ১
গত ২৭ নভেম্বর বাংলাদেশের বগুড়ায় অবস্থিত একটি শিয়া মসজিদের ভেতরে ঢুকে প্রার্থনারতদের উপর গুলি চালায় কমপক্ষে পাঁচ দুর্বৃত্ত৷ এতে মসজিদের মুয়াজ্জিন নিহত হন এবং অপর তিন ব্যক্তি আহত হন৷ তথকথিত ইসলামিক স্টেট-এর সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততা দাবি করা স্থানীয় একটি গোষ্ঠী হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷