আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এ যোগ দেয়া ব্রিটিশ নাগরিক শামীমা বেগম বাংলাদেশের নাগরিক নন বলে জানিয়েছে ঢাকা৷ ব্রিটেন ইতোমধ্যে তাঁর নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
২০১৫ সালে আইএস-এ যোগ দেয়া বেগম কোনোভাবেই বাংলাদেশের নাগরিক নন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ ব্রিটেন তার নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর বুধবার বাংলাদেশের তরফ থেকে এই তথ্য জানানো হয়৷ ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (হোম অফিস) অবশ্য এই ধারণা প্রকাশ করেছিল যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বেগম বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার আইনি অধিকার রয়েছে৷
দুই বন্ধুসহ ২০১৫ সালে আইএস-এ যোগ দিতে লন্ডন থেকে সিরিয়া পাড়ি জমান শামীমা বেগম৷ তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর৷ বর্তমানে তিনি সিরিয়ার একটি শরণার্থী শিবিরে রয়েছেন, যেখানে সপ্তাহান্তে তিনি তাঁর তৃতীয় সন্তান জন্ম দিয়েছেন৷ তার আগের দুই সন্তান অবশ্য আগেই মারা গেছে৷ নিজের সন্তানকে ব্রিটেনে বড় করার সুযোগ দিতে দেশটির সরকারের প্রতি সহানুভূতি কামনা করেছিলেন তিনি, যদিও আইএস-এ যোগ দেয়া নিয়ে কোনো ধরনের অনুশোচনা নেই তাঁর৷
সাবেক আইএস জঙ্গিদের যেভাবে গ্রহণ করা হচ্ছে
ইউরোপের বিভিন্ন দেশ কয়েকদিন ধরে ইসলামিক স্টেটে যোগ দেয়া নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার পথ খুঁজছে৷ এদিকে, সিরিয়ার শাম্মার গোষ্ঠী ইতিমধ্যে সাবেক আইএস সদস্যদের গ্রহণ করা শুরু করেছে৷
ছবি: DW/B. Gerdziunas
কারা এই শাম্মার?
সিরিয়ার আরব গোষ্ঠী শাম্মারের সশস্ত্র বাহিনী ‘আল সানাদিদ’ এতদিন ধরে মার্কিনপন্থি সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স, এসডিএফ-এর সাথে যুক্ত ছিল৷ সম্প্রতি দল পালটে তারা কুর্দি নেতৃত্বাধীন নাগরিক গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছে৷ উল্লেখ্য, বর্তমান উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার বিশাল এলাকা শাম্মার গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে৷
ছবি: DW/B. Gerdziunas
একসাথে প্রার্থনা
শাম্মার নেতা শেখ হুমায়দি দাহাম আল-হাদির বাড়ির চত্বরে প্রতি শুক্রবার প্রার্থনাসভা হয়৷ সেখানে আশেপাশের গ্রামের মানুষজনের সাথে উপস্থিত থাকেন ইসলামিক স্টেটের সাবেক সৈনিকরাও৷
ছবি: DW/B. Gerdziunas
ঘরে বাইরে...
ইসলামিক স্টেটে যোগ দেয়া শাম্মার সদস্যরা শেখের আহ্বানে ফিরে এসেছে৷ শেখের নির্দেশেই প্রথমে তারা এসডিএফের কাছে আত্মসমর্পণ করে ও পরে বিচারের সম্মুখীন হয়৷ বিচারপর্ব শেষ হলে তবেই আবার শাম্মার গোষ্ঠীর সম্পূর্ণ সদস্যপদ ফিরে পাবেন প্রাক্তন জঙ্গিরা৷
ছবি: DW/B. Gerdziunas
ঘরে ফেরা নিয়ে বিতর্ক
শেখ যদিও অস্বীকার করেছেন যে শাম্মারের ঘরে জঙ্গিদের কোনো স্থান নেই, কিন্তু শাম্মার গোষ্ঠীর জনসংযোগকর্তা আবদুলহামিদ আল-আসকারের মতে, এমন ঘটনা আকছার ঘটছে৷ আল-সানাদিদে একাধিক প্রাক্তন আইএস সদস্য রয়েছেন বলে জানান তিনি৷ শেখ হুমায়দির মতে তাদেরও অবস্থান জঙ্গিবাদের বিপরীতেই৷ সে কারণেই বর্তমানে তারা পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলি ও আইএস সৈনিকদের মধ্যে মধ্যস্থতা করছেন৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/S. Backhaus
কেন ঘরে ফিরছে সৈনিকরা?
শেখ হুমায়দির মতে, সিরিয়ার শাম্মার সদস্যরা নেতৃত্বের চাপে পড়ে আইএস-এ যোগদান করে৷ এখন নিজেদের গোষ্ঠীর কাছে ফিরে আসতে চাইছে তারা৷ এবং শাম্মার তাদের সেই সুযোগ দিচ্ছে বলেই এমনটা সম্ভব হচ্ছে৷
ছবি: DW/B. Gerdziunas
ফেরার পর...
সাবেক আইএস সৈনিকদের ঘরে ফেরার পরের জীবন মোটেও আরামের নয়৷ কড়া অনুশাসনের মধ্য দিয়ে দিন কাটাতে হয় তাদের৷ শোনা গেছে, ইতিমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিরা এসে পর্যবেক্ষণ করে গেছেন প্রাক্তন জঙ্গিদের এই পুনর্বাসন প্রক্রিয়া৷
ছবি: DW/B. Gerdziunas
যুদ্ধক্ষেত্রে ফুটবল
ইরাক ও সিরিয়ার মধ্যে সংযোগকারী একটি রেলপথ বেশ কয়েক বছর ধরে নিষ্ক্রিয়৷ শেখের মতে, রেলপথের বেশিরভাগ অংশই এখন কয়েকশ’ আইএস জঙ্গিদের দখলে৷ বাতিল হওয়া রেললাইনের পাশেই চলছে ফুটবল খেলা৷ ওপরের ছবিতে রয়েছে সেই দৃশ্য৷
ছবি: DW/B. Gerdziunas
7 ছবি1 | 7
ব্রিটেন সরকার সাধারণত কোনো নাগরিক রাষ্ট্রের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত হলে তাঁর নাগরিকত্ব বাতিল করতে পারে৷ তবে এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে সেই নাগরিকের যদি রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে নাগরিকত্ব বাতিল করা যায় না৷ বেগমের ব্রিটিশ এবং বাংলাদেশি নাগরিকত্ব রয়েছে বলে ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে নানা সূত্রে প্রকাশ হয়েছে৷
তবে, শামীমা বেগম জানিয়েছেন তিনি কখনো বাংলাদেশে যাননি এবং বাংলাদেশি পাসপোর্টও তাঁর নেই৷ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বেগম কখনো দ্বৈত নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেননি বলে জানিয়েছে৷ ফলে তাঁর জন্মভূমি যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশেরও নাগরিক বলে যে তথ্য প্রকাশ হয়েছে, তা সঠিক নয় বলে দাবি ঢাকার৷
এদিকে, নাগরিকত্ব বাতিলের ব্রিটিশ সিদ্ধান্তকে তিনি এবং তাঁর সন্তানের প্রতি ‘কিছুটা অন্যায়' আচরণ বলে মনে করছেন বেগম৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা আমার জন্য কিছুটা কিছুটা হতাশাজনক৷'' তবে তাঁর আইএস যোদ্ধা স্বামী, যিনি বর্তমানে সিরিয়ায় বন্দি রয়েছেন বলে গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে, নেদারল্যান্ডসের নাগরিক হওয়ায় সেদেশে আশ্রয় পাওয়ার ব্যাপারে চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন বেগম৷