কুর্দ সাংবাদিক মাসুদ আকিল সিরিয়ায় জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের হাতে ২৮০ দিন ধরে বন্দি ছিলেন৷ জার্মানিতে পালানোর পর তিনি ইউরোপে আইএস সন্ত্রাসীদের খুঁজে বার করতে শুরু করেন৷ ডয়চে ভেলের জন্য ফ্রাংক হফমানের বিশেষ বিবরণ৷
বিজ্ঞাপন
কিবোর্ডে আঙুল চলেছে৷ মাসুদের কম্পিউটার ইসলামিক স্টেট বা আইএস সন্ত্রাসীদের সংক্রান্ত তথ্যে ভরা৷ মাসুদ আপাতত কয়েকটি ফেসবুক প্রোফাইলের স্ক্রিনশটের খোঁজ করছেন; এক সম্ভাব্য আইএস সমর্থক ইউরোপে পৌঁছানোর পর তার উগ্রপন্থি দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে মাসুদকে খোলাখুলিভাবে লেখে৷ লোকটিকে মাসুদের সিরিয়া থেকে মনে আছে – কিন্তু তার ফেসবুক প্রোফাইল উধাও হয়েছে৷ তাই তাঁর নিজের স্টোর করা সেই ফেসবুক প্রোফাইলটির স্ক্রিনশটের সন্ধান করছেন মাসুদ৷
‘‘ওদের অনেকে গোড়ায় কিরকম খোলাখুলি কথা বলেছে, তা বিশ্বাস করা শক্ত’’, ২৪ বছর বয়সি মাসুদ ডয়চে ভেলেকে বলেন৷ ২০১৬ সালের গোড়ার দিকে, মাসুদ যখন নিজে বলকান রুট ধরে জার্মানির দিকে পালাচ্ছেন, তখন তিনি হঠাৎ উপলব্ধি করেন যে, তাঁর নিপীড়নকারীরা ইউরোপেও রয়েছে – ইসলামিক স্টেট!
২০১৪ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে মাসুদকে সিরিয়ায় আইএস-এর ছ'টি বিভিন্ন কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছিল৷ একটি সাক্ষাৎকার নিতে যাওয়ার সময় আইএস সদস্যরা মাসুদ ও তাঁর সহযোগী ফরহাদকে একটি চৌরাস্তার মোড়ে গাড়ি থেকে অপহরণ করে৷
তারিখটা ছিল ২০১৪ সালের ১৫ই ডিসেম্বর৷ বস্তুত উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার রোজাভায় এই রাস্তার মোড়টি আইএস-এর নয়, বরং কুর্দ গণ সুরক্ষা গোষ্ঠী ওয়াইপিজি-র যোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল৷ আইএস-এর অবস্থিতি তখন রোজাভা থেকে অনেক দূরে৷
আইএস-কে কি কেউ হুঁশিয়ারি দিয়েছিল?
কুর্দ টেলিভিশন সাংবাদিকরা যে ঐ চৌরাস্তা দিয়ে যাবেন, আইএস-এর কাছে সে ব্যাপারে খুব সম্ভবত আগে থেকে খবর ছিল৷ মাসুদ ও তাঁর সহযোগী ফরহাদ হামো আইএস-এর কাছে পুরোপুরি অপরিচিত ছিলেন না৷ এর আগের ২০ মাস ধরে তাঁরা তাঁদের টেলিভিশন কেন্দ্রের জন্য প্রায় প্রতিদিন রিপোর্ট ফাইল করেছেন: বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয় ছাড়া যুদ্ধের প্রগতি সম্পর্কেও রিপোর্ট দিয়েছেন তাঁরা৷
রোজাভার কুর্দ নেতৃত্ব তখন এলাকাটিতে স্থিতি আনার কাজে ব্যস্ত – ওয়াইপিজি তখন আইএস-এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈরী হিসেবে নাম করছে ও তারাই ছিল তখন সিরীয় সংঘাতে সংশ্লিষ্ট একমাত্র গোষ্ঠী, যারা বাইরে থেকে সাহায্য পাচ্ছিল, কেননা প্রতিবেশি তুরস্ক থেকে পিকেকে গোষ্ঠী তাদের মদত দিচ্ছিল৷ আজ রোজাভার ওয়াইপিজি যোদ্ধারা মার্কিন নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাস বিরোধী জোটের অঙ্গ ও তারা ইসলামিক স্টেট সম্বন্ধে যা জানে, তা অতি মূল্যবান তথ্য৷
ইসলামিক স্টেট বিশেষ করে সিরিয়ার পিছনে-পড়ে-থাকা মানুষদের সমর্থন সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছে, বলেন মাসুদ: ‘‘আইএস-এর এলাকার মানুষজন প্রধানত মরু অঞ্চলে বাস করতেন, যেখানে স্কুল-কলেজ বলে কিছু ছিল না৷ সিরীয় সরকার তাদের স্রেফ উপেক্ষা করছিল৷ কাজেই এই সব মানুষ বিনা জীবিকায় সেখানে আটকা পড়ে ছিল৷ এ ধরনের মানুষ উগ্রপন্থি আদর্শে চট করে আকৃষ্ট হন৷ আইএস সেটা জানত ও সে প্রবণতার সুযোগ নিতে পেরেছিল৷’’
ইসলামিক স্টেটের জেলখানার ভেতরটা কেমন?
ইরাকের মসুল শহরকে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করতে অভিযান চলছে৷ এরই মধ্যে একটি জেলখানার সন্ধান পান ইরাকি সেনাবাহিনী৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
সাধারণ ভবন
বাইরে থেকে দেখে কেউ যেন বুঝতে না পারে সেজন্য শহরের আবাসিক এলাকার এই বাড়িতে জেলখানা স্থাপন করেছিল ইসলামিক স্টেট৷ সম্প্রতি এই কারাগারের সন্ধান পান ইরাকি সেনাবাহিনী৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
তবে সব ব্যবস্থা ছিল
শুধু বাইরে থেকে বোঝা যেত না, এই যা৷ কিন্তু জেলখানাটির ব্যবস্থাপনা ছিল সাধারণ কারাগারের মতোই৷ ফলে বন্দিদের সেখানে নেয়ার পর তাদের জামাকাপড় সহ অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে নেয়া হত৷ পরে কোনো বন্দি ছাড়া পেলে তা ফেরত দেয়া হতো৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
যাদের আটক রাখা হত
আইএস-এর হাতে বন্দি ইরাকি সামরিক বাহিনীর সদস্য ও ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের লোকজনদের ধরে এখানে রাখা হতো৷ স্টিলের এই দরজার পেছনেই ছিল কারাগারের শুরু৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
অভিযানের বয়স আট মাস
মসুল থেকে আইএসকে হটাতে অভিযান চলছে৷ তবে সাধারণ মানুষ বাস করে এমন এলাকায় আইএস সদস্যরা চলে যাওয়ায় অভিযানের গতি কমে গেছে৷ ছবিতে আইএস এর জেলখানার ভেতরে একজন ইরাকি সেনাকে পাহারা দিতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
বোমা তৈরির সরঞ্জাম
জেলখানার একটি ঘরের মেঝেতে বোমা তৈরির সরঞ্জাম পড়ে রয়েছে৷ কোনো স্থান থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় আইএস সাধারণ ঐ স্থানে ‘বুবি ট্র্যাপ’, অর্থাৎ এমন কিছু ফেলে যায় যা অন্যদের ক্ষতি করে৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
অমুসলিমদের মাংস খাওয়ার পরামর্শ!
যুদ্ধের সময় প্রয়োজন হলে আইএস তার অনুসারীদের অমুসলিমদের মাংস খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
পর্যবেক্ষণ ক্যামেরা
বন্দিদের উপর সার্বক্ষণিক নজর রাখার জন্য জেলখানার ঘরগুলোতে সার্ভিলেন্স ক্যামেরা বসিয়েছিল আইএস৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
7 ছবি1 | 7
এই পরিস্থিতিতে তরুণ ভিডিও সাংবাদিক মাসুদ ও তাঁর সহযোগীকে জিম্মি করে আইএস, ও জিম্মিদের উপর শারীরিক নিপীড়ন চালায়৷ মাসুদ সে অত্যাচারের কথা বললেন: ‘‘ওরা আমাকে নিপীড়ন করার সময় জেরা চালিয়েছে৷ আমার পায়ে ও পিঠে আঘাত করেছে৷ ওরা আমার মুখে ঘুঁষি মেরেছে, চুল টেনেছে, কুর্দ কাফের বলে আমাকে গাল দিয়েছে – বলেছে যে, সব কুর্দকে মেরে ফেলা উচিত, আমাদের সবাইকে, কেননা আমরা এলাকাটিকে ইসলামপন্থিদের ধারণা অনুযায়ী ইসলামি হতে দিচ্ছি না৷’’
মাসুদ যখন সিরিয়ায় আইএস-এর দ্বিতীয় কারাগার আল-শাদ্দাদিতে পৌঁছান, তখন তাঁর জন্য রীতিমতো একটি অ্যাডমিশন ফর্ম ভর্তি করেন টিউনিশিয়া থেকে আসা এক আইএস সদস্য, যেন আইএস সত্যিই একটি ‘স্টেট’ বা রাষ্ট্র হয়ে উঠেছে: ‘‘আইএস-এর কারাগারে আইএস-এর আইডি-র মতো,’’ বলেন মাসুদ৷
হামবড়াই
আইএস-এর সদস্যরা ভুলও করেছে: ‘‘ওরা আমার কাছে ওদের চর পাঠিয়ে ওদের সংগঠনের ক্ষমতা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে'', বলেন মাসুদ৷ ‘‘ওরা আমাকে আইএস-এর ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি সম্পর্কে খবরের কাগজের প্রবন্ধ আর পশ্চিমি মিডিয়ার ভিডিও দেখিয়েছে৷ বিষয়টি নিয়ে ওরা খুব গর্বিত ছিল৷’’
হয়ত একটু বেশি গর্বিত ছিল, বলে মাসুদের ধারণা৷ শেষমেষ মৃত্যু অবধারিত, বলে ধরে নিয়ে যে সব আইএস চর মাসুদের কারাকক্ষে এসেছে, তারা খোলাখুলিভাবে তাদের করা হত্যাকাণ্ডের কথা বলেছে৷ মাসুদকে তারা এমন অনেক খুঁটিনাটি জানিয়েছে যা মাসুদ আজ অবধি ভোলেননি৷ ‘‘আমার তথ্যের একটা উৎস হলো আমি আইএস-এর কারাগারে যা শুনেছি৷ এছাড়া বিভিন্ন আইএস সদস্য ও বেসামরিক ব্যক্তি, যারা অন্যান্য আইএস যোদ্ধাদের কথা জানত৷ ২০১৫ আর ২০১৬ সালে যে সব সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও সম্ভাব্য সন্ত্রাসী জার্মানিতে পালিয়ে এসেছে, তাদের খুঁজে বার করতে এই তথ্য আমাকে সাহায্য করেছে,’’ বলে মাসুদ আজ মনে করেন৷
যুদ্ধের মাঠে সেল্ফি
যুদ্ধ মানেই ধ্বংসলীলা৷ বিপক্ষকে ঘায়েল করতে যেখানে প্রতিমুহূর্তে চলে অস্ত্র আর কৌশলে এগিয়ে থাকার লড়াই৷ সেখানে বসেই যেন ক্ষণিকের নিশ্চিন্ত ভাবে যোদ্ধারা মেতে উঠে সেল্ফিতে৷
ছবি: Reuters/E. De Castro
যুদ্ধযাত্রার পূর্বে লিবিয়ার বিশেষ বাহিনী
জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর সর্বশেষ শক্ত ঘাঁটি লিবিয়ার বেনগাজিতে প্রবেশের পূর্বে লিবিয়ান সেনাবাহিনীর বিশেষ ফোর্সের সদস্যরা সেল্ফি তুলছেন৷ গত ৫ জুলাই ছবিটি তোলা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/E. Omran Al-Fetori
সেনাধ্যক্ষের সাথে সেল্ফি
ইরাকের পূর্ব মোসুলে আইএস বিরোধী অভিযানকালে লে. জে. আবদেলওয়াহাব আল সাদী সাথে সাধারণ মানুষ সেল্ফি তুলছেন৷ গত ৯ জানুয়ারি ছবিটি তোলা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/K. Al-Remehi
ব়্যাপিড রেসপন্স ফোর্সের সেল্ফি
ইরাকের সরকারি বাহিনীর সাথে আইএস-এর সংঘাতে পূর্ব মোসুলের একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হাসপাতালের সামনে সেল্ফি তুলছেন দেশটির ব়্যাপিড রেসপন্স ফোর্সের সেল্ফি৷
ছবি: Reuters/A. Al-Marjani
কুর্দিদের সঙ্গে যোগ দেয়া আরব সৈন্যদের সেল্ফি
কুর্দি পেশমের্গা সেনাদের সাথে যোগ দেয়া একদল আরব সৈন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শেষে সেল্ফি তুলছে৷ ইরাকের ডুহোক প্রদেশ থেকে গত ৭ ফেব্রুয়ারি ছবিটি তোলা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/A. Jalal
মোসুলে ইরাকি বাহিনী
তখনও মোসুলের এক অংশে রয়েছে আইএস-এর রাজত্ব৷ উদ্ধারে চলছে সরকারি বাহিনীর তৎপরতা৷ এ সময় পশ্চিম মোসুলের একটি ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িতে বসে সেল্ফি তুলছেন ইরাকি সৈন্যরা৷ গত ৫ জুন এই ছবিটি তোলা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/E. De Castro
মোসুল জয়ের পর
আইএস-এর হাত থেকে ইরাকের প্রাচীন নগরী মোসুল পুনরুদ্ধার করার পর গ্র্যান্ড আল-নূরী মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে সেল্ফি তুলছেন দেশটির কাউন্টার টেরোরিজম সার্ভিসের সদস্যরা৷
ছবি: Reuters/E. De Castro
ধ্বংসের মাঝে নির্মাণের প্রত্যয়
সিরিয়ার দিরা প্রদেশের সাইদা শহরে বিদ্রোহী অধ্যুষিত একটি নির্মাণাধীন ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে সেল্ফি তুলছেন ‘ইউ ডেস্ট্রয় অ্যান্ড উই রিবিল্ড ব্রিগ্রেড’ নামে একটি সংগঠনের সদস্যরা৷
ছবি: Reuters/A. Al-Faqir
রাশিয়ান কমান্ডারের সাথে সিরিয়ান নারীর সেল্ফি
এক রাশিয়ান কমান্ডারের সঙ্গে সেলফি তুলছেন এক সিরিয়ান নারী৷ মধ্য সিরিয়ার হোমস শহরের ওয়ায়ের জেলা থেকে গত ২১ মে এই ছবি তোলা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
বিধ্বস্ত মসজিদে সেল্ফি
সিরিয়ার আলেপ্পোর একটি বিধ্বস্ত মসজিদের ভেতরে একদল মানুষ সেল্ফি তুলছে৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
ফ্রি সিরিয়ান আর্মির সেল্ফি
সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় শহর আল-বাবের নিকটবর্তী কোয়াবাসিন শহরে আইএস বিরোধী অভিযানকালে ফ্রি সিরিয়ান আর্মির এক যোদ্ধা৷
ছবি: Reuters/K. Ashawi
10 ছবি1 | 10
আইএস-এর বিভিন্ন নিপীড়ন কক্ষে মোট ২৮০ দিন কাটানোর পর মাসুদ একটি বন্দিবিনিময় কর্মসূচিতে মুক্তি পান ও সঙ্গে সঙ্গে জার্মানিতে পলায়ন করেন৷
জার্মান সরকারকে তথ্য প্রদান
কাজেই মাসুদ যখন জার্মানিতে আসেন, তখন তিনি বিশদ তথ্য সঙ্গে করে নিয়ে আসেন – সে তথ্য এমনই বিশদ যে, বিশেষজ্ঞরা মাসুদের বিবরণকে বিশেষভাবে বিশ্বাসযোগ্য বলে গণ্য করেন৷
মাসুদের অভিজ্ঞতা যেন তাঁর স্মৃতিশক্তিকে আরো প্রখর করেছে৷ বার্লিনের সাংবাদিক পেটার ক্যোফ-এর সঙ্গে যৌথভাবে একটি বই লিখেছেন মাসুদ, যা এ-মাসেই প্রকাশিত হচ্ছে৷ বইটিতে মাসুদ আকিল ব্যাখ্যা করেছেন, কেন তিনি তাঁর পরিচয় গোপন করছেন না এবং কেন তিনি আইএস-এর বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রতিরোধের পন্থা বেছে নিয়েছেন: ‘‘আমি চাই না যে, এই দানবগুলো এমন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করুক যেখানে জার্মানিতেও জঙ্গলের আইন চালু হবে৷ কাজেই আমি যা কিছু জানি, আমার সব তথ্য জার্মান কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷’’
সেই তথ্য আজ জার্মান পুলিশকে চলতি নানা তদন্তে সাহায্য করছে৷ দৃশ্যত জার্মান দায়রা পুলিশ দপ্তর (বিকেএ) অবশেষে উদ্বাস্তুদের কাছ থেকে পাওয়া হুঁশিয়ারি ও খোঁজখবরকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, অতীতে যা ঘটেনি৷ মাসুদ আকিল স্বয়ং বলেছেন যে তিনি জার্মানিতে আসার পর কেন যে তাঁকে ঠিকমতো জেরা করা হয়নি, তা তিনি আজও বুঝে উঠতে পারেননি৷
ফ্রাংক হফমান/এসি
‘ইসলামিক স্টেট’ আসলে কী?
আল-কায়েদার অখ্যাত এক উপদল থেকে প্রভাবশালী ‘মিলিট্যান্ট মুভমেন্টে’ পরিণত হয়েছে তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএস৷ জিহাদি এই গোষ্ঠীটির দখলে থাকা অঞ্চল থেকে আক্রমণের কৌশল – আইএস-এর এমন নানা দিক তুলে দেয়া হলো এই ছবিঘরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Souleiman
আইএস কোথা থেকে এসেছে?
ইসলামিক স্টেট (আইএস) সুন্নী ইসলামিস্ট আদর্শে বিশ্বাসী আল-কায়েদার একটি উপদল, যেটি আইএসআইএল, আইসিস এবং দায়েশ নামেও পরিচিত৷ ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আক্রমণের পর এটির বহিঃপ্রকাশ ঘটে৷ এই গোষ্ঠীর নেতৃত্বে রয়েছেন আবু বকর আল-বাগদাদি৷ জঙ্গি গোষ্ঠীটির লক্ষ্য হচ্ছে ইরাক, সিরিয়া এবং অন্যান্যা অঞ্চল নিয়ে একটি ইসলামিক স্টেট বা খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
আইএস কোথায় কাজ করে?
বিশ্বের ১৮টি দেশে আইএস সক্রিয় রয়েছে বলে ধারণা করা হয়৷ ইরাক এবং সিরিয়ার কিছু অংশ এই গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং এটি সিরিয়ার রাকা শহরকে রাজধানী হিসেবে বিবেচনা করে৷ তবে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে এখন অবধি নিজেদের দখলে থেকে এক চতুর্থাংশ এলাকা তাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে৷
কারা তাদের বিরুদ্ধে লড়ছে?
আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বেশ কয়েকটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে৷ বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশের সমন্বয়ে তৈরি মার্কিন নেতৃত্বাধীন একটি ‘কোয়ালিশন’ আইএস অধ্যুষিত এলাকায় বিমান হামলা চালাচ্ছে৷ এই কোয়ালিশনে কয়েকটি আরব দেশও রয়েছে৷ অন্যদিকে সিরিয়া সরকারের পক্ষে সেদেশে বিমান হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া৷ তবে ভূমিতে তাদের বিরুদ্ধে লড়ছে কুর্দিশ পেশমার্গার মতো আঞ্চলিক শক্তিগুলো৷
ছবি: picture-alliance/abaca/H. Huseyin
আইএস-এর অর্থের উৎস কী?
জঙ্গি গোষ্ঠীটির অর্থ আয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে তেল এবং গ্যাস৷ এটি এখনো সিরিয়ার তেল উৎপাদনের এক তৃতীয়াংশ দখলে রেখেছে৷ আর মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিমান হামলার অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে জঙ্গি গোষ্ঠীর এই মূল্যবান সম্পদ৷ এছাড়া কর, মুক্তিপন এবং লুট করা পুরাকীর্তি বিক্রি করেও অর্থ আয় করে এই জঙ্গি গোষ্ঠীটি৷
ছবি: Getty Images/J. Moore
আইএস কোথায় কোথায় জঙ্গি হামলা চালিয়েছে?
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অসংখ্য জঙ্গি হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস৷ চলত বছর সবচেয়ে ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলাটি চালানো হয়েছে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে, যেখানে দু’শোর বেশি মানুষ নিহত ও অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছে৷ আইএস-এর নেতারা জঙ্গি গোষ্ঠীটির আদর্শে বিশ্বাসীদের এককভাবে বিভিন্নস্থানে আঘাত হানতে উৎসাহ প্রদান করে৷
অন্যান্য আর কী কৌশল ব্যবহার করে আইএস?
নিজেদের ক্ষমতার পরিধি বাড়াতে অনেক কৌশল ব্যবহার করে আইএস৷ জঙ্গি গোষ্ঠীটি ‘কালচারাল ক্লিনজিংয়ের’ নামে সিরিয়া এবং ইরাকের অনেক ঐতিহাসিক শিল্পকর্ম লুট ও ধ্বংস করেছে৷ এছাড়া সংখ্যালঘু ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর কয়েকহাজার মেয়েকে ক্রীতদাসী বানিয়েছে৷ গোষ্ঠীটি নিজেদের ‘প্রোপোগান্ডা’ এবং নিয়োগের কাজে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে থাকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
শরণার্থী হয়েছেন কতজন?
সিরিয়ায় চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে সেদেশের প্রায় ৬০ লাখ মানুষ প্রতিবেশী লেবানন, জর্ডান এবং তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছেন৷ অনেক সিরীয় ইউরোপেও পাড়ি জমিয়েছেন৷ এছাড়া প্রায় ৩০ লাখ ইরাকে ইরাকের মধ্যেই অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন বলে খবর৷