ইসলামিক স্টেট-এর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের বিমান হামলায় এতদিন অংশ না নিলেও অবশেষে অবস্থান থেকে সরেছে তুরস্ক৷ আইএস-এর বিরুদ্ধে হামলা শুরু করেছে দেশটি৷ সীমান্তকে আইএস-মুক্ত করার লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে চায় তুরস্ক৷
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস-এর ওপর যে বিমান হামলা চালিয়ে আসছে তাতে অংশ নিতে শুরু থেকেই অনীহা প্রকাশ করে আসছে তুরস্ক৷ কিন্তু গত এক সপ্তাহে হঠাৎই অবস্থান বদলেছে দেশটি৷ আইএস-এর আত্মঘাতী হামলায় হতাহতের ঘটনার পর একই সঙ্গে আইএস এবং কুর্দি বিদ্রোহীদের ঘাঁটির ওপর বিমান হামলা শুরু করেছে ন্যাটোর সদস্য দেশটি৷ ইতিমধ্যে নিরাপত্তার স্বার্থে ন্যাটোর প্রতি জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠানের আহ্বানও জানিয়েছে তারা৷ মঙ্গলবারই হচ্ছে সেই বৈঠক৷ তবে এর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে রেখেও আইএস-বিরোধী ‘রণকৌশল' ঠিক করতে চাইছে তুরস্ক৷
মূলত উত্তর সিরিয়ার পাশের তুরস্ক সীমান্ত থেকে আইএস-কে হঠিয়ে দিতে চায় তুরস্ক৷ বলা হচ্ছে, এর ফলে সিরীয় বিদ্রোহীরা সে অঞ্চলে বড় একটি এলাকার দখল নিতে পারবে এবং সিরীয় শরণার্থীদের দেশত্যাগের পথ উন্মুক্ত হবে বলেই এমনটি চাইছে তুরস্কের বর্তমান সরকার৷ তুরস্ক ইতিমধ্যে প্রায় ১৮ লাখ সিরীয় শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে৷ তারপরও পুরো বিষয়টি এক ধরণের সংশয়ের জন্ম দিয়েছে৷ বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, তুরস্ক আকস্মিকভাবে যে হামলা শুরু করেছে, তা যতটা না আইএস-বিরোধী, তার চেয়ে অনেক বেশি কুর্দি বিদ্রোহীবিরোধী৷ তুরস্ক আসলে আইএস-কে হঠানোর কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে কুর্দি বিদ্রোহীদের সংগঠন পিকেকে-কে সামলাতেই নাটকীয়ভাবে সাম্প্রতিক হামলাটি শুরু করেছে বলে তাঁদের ধারণা৷
তুরস্ক জানিয়েছে, তিন হাজারের মতো শরণার্থী সপ্তাহান্তে সেদেশে প্রবেশ করেছে৷ ‘ইসলামিক স্টেট’ এবং কুর্দি বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধের মাত্রা বাড়ায় সিরীয়রা তাদের সবকিছু ফেলে রেখে দেশত্যাগ করছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Kilic
বাধ্য হয়ে পলায়ন
গত সপ্তাহে ১৩ হাজারের মতো সিরীয় সেদেশের তেল আবিয়াত শহর ত্যাগ করে অন্যত্র চলে গেছে৷ আধুনিক ‘খেলাফত’ প্রতিষ্ঠার নামে সহিংস প্রচারণার জন্য বিদেশে সেনা নিয়োগে শহরটি ব্যবহার করে জঙ্গিগোষ্ঠী৷ তুরস্ক অবশ্য শরণার্থীদের জন্য সীমান্ত খুলে দেয়নি৷ ফলে অবৈধভাবে দেশত্যাগ করেছে তারা৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Kilic
জঙ্গি এবং বন্ধ সীমান্তের মাঝে
কুর্দি সেনারা ধীরে ধীরে তেল আবিয়াত শহরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে৷ ইতোমধ্যে শহরটির কাছের একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রাম দখল করেছে তারা৷ কুর্দিদের ঠেকাতে দুটি সেতু ধ্বংস করে দিয়েছে ‘ইসলামিক স্টেট৷’ তবে, কিছু সিরীয় গোলাগুলির মাঝে আটকে পড়ে শহরটিতে রয়ে গেছে৷ আর যারা সেখান থেকে বের হতে পেরেছে, তারা বাধা পেয়েছে সীমান্তে৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Kilic
‘ইসলামিক স্টেট’-এর থাবা থেকে রক্ষা
গত সপ্তাহান্তে তিন হাজারের মতো শরণার্থী সিরীয়-তুর্কি সীমান্ত অতিক্রম করেছে৷ ছবিতে কিছু সিরীয়কে দেখা যাচ্ছে, যারা অবৈধভাবে কাটাতারের বেড়া অতিক্রম করে তুরস্কে প্রবেশের চেষ্টা করছে৷ তেল আবিয়াত ‘ইসলামিক স্টেট’-এর নিয়োগ কেন্দ্র হলেও কুর্দি সেনারা সেখানে না পৌঁছানো পর্যন্ত মানিয়ে চলার চেষ্টা করেছিল সিরীয়রা৷
ছবি: Reuters/K. Celikcan
‘সীমান্তের মধ্যে থাকুন’
সিরীয়রা সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা করলে গরম পানি এবং ‘পিপার স্প্রে’ করে তুর্কি বাহিনী৷ এক পর্যায়ে অবশ্য একটি সীমান্ত অনিচ্ছুকভাবে খুলে দেয়া হয়৷ তুরস্কের উপ-প্রধানমন্ত্রী নুমান কুর্টুলমুস জানিয়েছেন, সিরীয়রা মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিমান হামলা এড়ানোর চেষ্টা করছেন৷ আমরা তাদের সীমান্তের মধ্যে রাখার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছি, বলেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Str
ইউএনএইচসিআর-এর কাছে নথিভুক্ত ৪০ লাখ সিরীয়
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর মে মাসের শেষের দিকে জানিয়েছে, চল্লিশ লাখের মতো শরণার্থী তাদের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য নথিভুক্ত হয়েছে৷ সিরিয়ার সরকারি বাহিনী এবং বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরুর পর থেকে এখন অবধি সতের লাখের মতো শরণার্থী গ্রহণ করেছে তুরস্ক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Gurgah
সবচেয়ে ‘বেশি ভুগছে’ শিশুরা
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক কমিশনার আন্থনিও গুটারেস এক বিবৃতিতে বলেছেন, সিরিয়ায় সংঘাতের কারণে সিরীয় ছেলে-মেয়েরা ব্যাপকহারে শারীরিক এবং মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ তুরস্কে নিবন্ধিত সিরীয় শরণার্থীদের মধ্যে অর্ধেকই শিশু৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Kilic
যথেষ্ট নয়
চলতি বছরের শুরুতে তুরস্ক সিরীয় শরণার্থীদের জন্য তাদের সবচেয়ে বড় শরণার্থী ক্যাম্পটি খুলে দিয়েছে৷ সুরুচ ক্যাম্পে ৩৫ হাজারের মতো শরণার্থী বসবাস করে৷ আরো ৯০ হাজার শরণার্থীর অবস্থান দেশটির ২৫টি ক্যাম্পে৷ তবে ইউএনএইচসিআর-এর প্রশংসা সত্ত্বেও তুরস্ক রেকর্ড সংখ্যক সিরীয় শরণার্থীর চাহিদা মেটাতে সক্ষম হচ্ছে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Kilic
পেছনে ফেলে আসা
তেল আবিয়াত শহর থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে কোবানিতে এখনও কিছু সিরীয় রয়ে গেছেন৷ ইসলামিক স্টেট-এর গণহারে মানুষ হত্যা এবং কুর্দি পেশমার্গা বাহিনীর হামলায় শহরটি কার্যত ধ্বংসস্তুতে পরিণত হয়েছে৷ সেখানে খাবার এবং বিদ্যুতের অভাব রয়েছে৷ তা সত্ত্বেও অল্প কিছু মানুষ শহরটিতে টিকে থাকার লড়াই করছে৷
ছবি: DW/K. Sheikho
8 ছবি1 | 8
অবশ্য তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী আহমেত আহমেত দাভোতলু সে দেশের একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে খুব জোর দিয়েই বলেছেন, ‘‘তুরস্কের সীমান্তে আমরা দায়েশ (আইএস)-কে দেখতে চাই না৷''
গত শুক্রবার সিরিয়ার সীমান্তবর্তী আইএস-এর ঘাঁটি এবং উত্তর ইরাকে কুর্দি বিদ্রোহীদের ঘাঁটির ওপর বিমান হামলা শুরু করে তুরস্ক৷ হামলা এখনো অব্যাহত রয়েছে৷ ব্যাপক ধরপাকড়ও চলছে দেশ জুড়ে৷ এ পর্যন্ত অন্তত ১ হাজার মানুষকে আইএস, পিকেকে এবং মার্ক্সবাদী দল ‘ডিএইচকেপি-সি'-র সমর্থক হিসেবে গ্রেপ্তার করেছে তুর্কি পুলিশ৷