প্যারিস হামলার পর ফ্রান্সের অনুরোধে আইএস-বিরোধী আন্তর্জাতিক সামরিক জোটে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় জার্মানি৷ এরপর বুধবার প্রথমবারের মতো সামরিক অভিযানে অংশ নেয় জার্মানি৷
বিজ্ঞাপন
দেশটির একটি ট্যাঙ্কার বিমান মধ্য আকাশে থাকা দুটি জেট বিমানকে তেল সরবরাহ করে বলে জানায় জার্মান সামরিক বাহিনী৷ ঐ জেটগুলো সিরিয়ায় আইএস এর বিরুদ্ধে বোমা নিক্ষেপ কাজে নিয়োজিত ছিল৷ তবে জেটগুলো কোন দেশের ছিল সেটা জানানো না হলেও এখন পর্যন্ত ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও সৌদি আরবের জেট এই মিশনে রয়েছে৷
আইএস-বিরোধী অভিযানে জার্মানির ১,২০০ সৈন্য অংশ নেবে৷ এছাড়া শত্রুপক্ষের অবস্থান ও তাদের সামর্থ্য সম্পর্কে খবর রাখতে সক্ষম এমন বিমান ও ট্যাঙ্কার বিমান দিয়ে সহায়তা করবে জার্মানি৷ তবে তারা বোমা নিক্ষেপ কাজে অংশ নেবে না৷
Ursula von der Leyen talks to DW
02:22
এদিকে, আইএস-বিরোধী জোটে এর চেয়ে বেশি সহায়তা করতে যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে জার্মানি৷ জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী উর্সুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন বলেন, জার্মানি ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে যুক্ত আছে৷
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি এই নিয়ে তৃতীয়বার কোনো ধরনের সামরিক অভিযানে অংশ নিল৷ এর আগে ১৯৯৯ সালে কসোভোতে এবং তারপর আফগানিস্তানে সামরিক মিশনে অংশ নিয়েছিল জার্মানি৷
জেডএইচ/ডিজি (ডিপিএ, এপি)
আইএস বিরোধী লড়াইয়ের আঁচ জার্মানিতে
গত জুন মাসে ইরাকের মোসুল দখল করে নেয় ইসলামিক স্টেট (আইএস বা আইসিস)৷ চরমপন্থি ইসলামি সংগঠনটির লক্ষ্য, মধ্যপ্রাচ্যের একটা অংশে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা৷ এদিকে আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আঁচ লেগেছে জার্মানিতেও৷ দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Aris Messinis/AFP/Getty Images
জার্মানিতে সংঘর্ষ
সুদূর ইরাক ও সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট জঙ্গিদের তৎপরতার আঁচ জার্মানিতেও দেখা যাচ্ছে৷ উত্তরের হামবুর্গ ও সেলে শহরে মঙ্গলবার (০৭.১০.১৪) কুর্দি ও ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে উগ্রপন্থি মুসলমানদের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Markus Scholz
গনসচেতনতার উদ্যোগে বাধা
জার্মানিতে বসবাসরত কুর্দি ও ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের মানুষ সিরিয়া ও ইরাকে আইএস জঙ্গিদের তৎপরতা সম্পর্কে গণসচেতনতা বাড়াতে গত কয়েক মাস ধরে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ও সমাবেশের আয়োজন করেছে৷ কখন উগ্রপন্থিরা তাদের বাধা দিচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/Alexander Koerner
কোবানিতে তীব্র লড়াই
এদিকে সিরিয়ার কোবানি বা আইন আল-আরব শহরে আইএস জঙ্গিদের ব্যাপক হামলা চলছে৷ প্রাণ বাঁচাতে এক লাখেরও বেশি সিরীয় কুর্দি এলাকা ছেড়েছে৷ অধিকাংশই আশ্রয় নিয়েছে প্রতিবেশী দেশ তুরস্কে৷ আইএস জঙ্গিদের প্রতিরোধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কুর্দিদের আধা সামরিক বাহিনী ওয়াইপিজি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/SEDAT SUNA
আপাতত রক্ষা
কুর্দি এই নারী তাঁর দুই মেয়েকে নিয়ে আইন আল-আরব থেকে পালিয়ে এসেছেন৷ সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় শহরটিতে আইএস-এর হামলা তীব্র হওয়ার পরপরই তাঁরা তুরস্কে আশ্রয় নেন৷
ছবি: DW/Alice Martins
আতঙ্ক
তখনও আইন আল আরব সীমান্তে চলছে তীব্র লড়াই৷ এই কুর্দি পরিবার আইন আল-আরব থেকে এসে তুরস্কের সীমান্তে অপেক্ষা করছে৷ ইরাকে কুর্দি নারীদের আইএস যেভাবে তুলে নিয়ে বিক্রি করেছে, তাড়াতাড়ি পালাতে না পারলে তাঁদেরও একই পরিণতি হতে পারে এই আতঙ্ক গ্রাস করেছে তাঁদের৷
ছবি: DW/Alice Martins
অসহায়ত্ব
তুরস্কেও ভালো নেই আইন আল-আরব ছেড়ে আসা কুর্দিরা৷ খাবারদাবার, এমনকি খাওয়ার পানিও ঠিকমতো জোটে না৷ একটি সংগঠন তাই চাঁদা তুলে পানির বোতল কিনে এনে বিতরণ করছে শরণার্থীদের মাঝে৷
ছবি: DW/Alice Martins
দীর্ঘ অপেক্ষা
প্লাস্টিকের ব্যাগে কিছু খাবার নিয়ে এসেছেন একজন৷ আইন আল-আরব ছেড়ে আসা সিরীয়দের সে খাবারগুলো দিতে চান৷ বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে্ তুরস্কের সেনাবাহিনী৷ তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা চলছে৷ ওদিকে খাবারের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছে শরণার্থীরা৷
ছবি: DW/Alice Martins
যাত্রী চাই
সিরীয় শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার জন্য সীমান্ত খুলে দিয়েছে তুর্কি সরকার৷ এক মিনিবাস চালক তাই যাত্রীর অপেক্ষায়৷ শরণার্থীদের কেউ যদি তাঁর মিনিবাসে ওঠেন, তাতে নিজের তো সামান্য কিছু আয় হবেই, শরণার্থীদেরও উপকার হবে৷ জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত প্রায় ১৩ লাখ সিরীয় তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছে৷
ছবি: DW/Alice Martins
মধ্যপ্রাচ্যে কর্তৃত্ব চায় আইএস
আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে আইএস বা আইসিস-এর একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ ২০০৬ থেকে ২০০৭-এর দিকে ইরাকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই চলছে তখনই আইএস-এর জন্ম৷ সংগঠনটির লক্ষ্য সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, ফিলিস্তিন এবং জর্ডান মিলিয়ে বেশ বড় একটা অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
আইএস-এর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র
সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ আর ইরাকে নুরি আল-মালিকির সাবেক সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট বিদ্রোহীদেরই পাশে ছিল৷ সিরিয়ায় ন্যাশনাল কোয়ালিশনের মতো কিছু মধ্যপন্থি সংগঠনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে৷ তবে ওবামা সরকার এখন আইএস-এর বিরুদ্ধে৷ জঙ্গি সংগঠনটিকে নিশ্চিহ্ন করার অঙ্গীকার নিয়ে ইরাক ও সিরিয়ায় চলছে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা৷
ছবি: picture alliance/dpa/Matthew Bruch
এবার আইন আল-আরব?
সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত আইন আল-আরব সাধারণের কাছে ‘কোবানি’ নামেই পরিচিত৷ তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তের এ শহরের একটা অংশ এখন আইএস-এর দখলে৷ এবার কি তবে আইন আল-আরবও দখল করে নেবে আইএস? তারপর?