আইএস যোদ্ধার স্ত্রী-র বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২
তথাকথিত জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর যোদ্ধাকে বিয়ে করা এক নারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে জার্মানিতে৷ অভিযুক্ত নারী জার্মানির নাগরিক৷ বলা হচ্ছে, সিরিয়ায় তিনি ‘একাধিক আইএস সদস্যকে' বিয়ে করেছিলেন৷
ছবি: DELIL SOULEIMAN/AFP/Getty Images
বিজ্ঞাপন
জার্মানির আইন অনুযায়ী দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত কারো পরিচয় প্রকাশ করা যায় না৷ এ কারণে গত অক্টোবরে ফ্রাঙ্কফুর্টে গ্রেপ্তার হওয়া নারীর নাম ইয়ালদা এ. হিসেবে উল্লেখ করে একটি বিবৃতি দিয়েছেন কার্লসরুহের প্রসিকিউটর জেনারেল৷ বিবৃতিতে জানানো হয়, ওই নারীর বিরুদ্ধে আইএস-এর হত্যা, নির্যাতন কাছ থেকে দেখা এবং তাদের কর্মকাণ্ডকে সমর্থন দেয়ায় ওই নারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে৷
ইয়ালদা এ. জার্মানি থেকে তুরস্ক হয়ে সিরিয়ায় গিয়েছিলেন ২০১৪ সালে৷ সেখানে গিয়ে তিনি আইএস-এ যোগ দেন এবং এক আইএস যোদ্ধাকে বিয়ে করেন৷
প্রথমে তাল আবিয়াদে থাকলেও পরে রাকা শহরে চলে যান ইয়ালদা এ.৷ শুধু আইএস যোদ্ধার স্ত্রী হয়ে থাকেনইনি থাকেনইনি, প্রসিকিউটর জেনারেলের বিবৃতি অনুযায়ী, হত্যা নির্যাতনসহ আইএস-এর সব কর্মকাণ্ড খুব কাছ থেকে দেখেছেন৷ আইএস-এর সব কর্মকাণ্ড সমর্থন করতেন বলে নিজের সন্তানকেও একই আদর্শে বিশ্বাসী করে তোলেন ইয়ালদা৷
সিরিয়ায় আইএস জঙ্গিদের বন্দিজীবন
যুদ্ধে হেরে যাওয়ায় আইএস জঙ্গিরা এখন সিরিয়ায় বন্দি৷ ১০ হাজারের বেশি জঙ্গি এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের রাখা হয়েছে সিরিয়ার হাসাকা শহরে৷ ছবিঘরে দেখুন সেখানে কেমন আছেন তারা৷
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
জঙ্গিদের বন্দিজীবন
২০১৪ সালে ইসলামি খেলাফত কায়েম করার কথা বলে সিরিয়ায় যুদ্ধ শুরু করে তথাকথিত জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)৷ যুদ্ধের সময় অনেক মানুষ হত্যা করেছে তারা৷ কিন্তু গত বছর যুদ্ধে নিজেদের শেষ ঘাঁটিটিও হারানোর পর থেকে তারা বন্দি৷ সিরিয়ার উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের হাসাকা শহরে বন্দি আছে দশ হাজারেরও বেশি জঙ্গি এবং জঙ্গিদের স্ত্রী, সন্তান৷
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
কুর্দিদের কাছে বন্দি
যুদ্ধের সময় এই এলাকাটি ছিল কুর্দি যোদ্ধাদের দখলে৷ পরাজিত আইএস যোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের কারাগারে পুরেছে কুর্দিরাই৷
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
জায়গার অভাব
কোয়ামিশি শহরের কাছের এই এলাকাটিতে একটি কারাগার রয়েছে৷ সেখানে সব জঙ্গির জায়গা হয়নি৷ তাই স্থানীয় স্কুলেও রাখা হয়েছে আইএস যোদ্ধা এবং তাদের সহায়তাকারীদের৷
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
দুই হাজার বিদেশি
যুদ্ধের সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক মানুষ আইএস-এ যোগ দিয়েছিলেন৷ তারাও এখন বন্দি৷ হাসাকার দশ হাজারের মধ্যে অন্তত দুই হাজার জঙ্গিই বিদেশি৷
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
বিদেশিদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
কুর্দি যোদ্ধারা জানিয়েছেন, এত বন্দি এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের কঠোর নিরাপত্তায় রাখতে তারা হিমসিম খাচ্ছেন৷ বিদেশি বন্দিদের অনেকেই এসেছেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে৷কিন্তু কোনো দেশই তাদের ফেরত নিতে চায় না৷
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
‘আমাদের কী শাস্তি হবে?’
সিরীয় আইএস যোদ্ধা মাহমুদ মোহাম্মদ রয়টার্সকে বলেন, ‘‘আমাদের কী হবে জানতে চাই৷ আমরা আমাদের পরিবার সম্পর্কে কিছু জানি না৷ তারা বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে, সিরিয়ায় আছে নাকি বাইরে, কিছুই জানি না৷ তাছাড়া কী শাস্তি হবে তা-ও আমরা জানি না৷’’
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
হাসপাতালে শতাধিক জঙ্গি
হাসাকার ৫০ শয্যার হাসপাতালে রয়েছে শতাধিক অসুস্থ এবং যুদ্ধাহত জঙ্গি৷
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
নারী, শিশু বাইরে
জঙ্গিদের স্ত্রী এবং সন্তানদের কারাগারের বাইরে রাখা হয়েছে৷ নারীরা ঘোরাফেরা করতে পারেন, শিশুরা খেলতে পারে মাঠে৷
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
‘দেশে ফিরতে চাই না’
কুর্দি যোদ্ধাদের অনুমতি নিয়ে নয়জন আইএস জঙ্গির সঙ্গে কথা বলেছে রয়টার্স৷ তবে জঙ্গিদের স্ত্রীরা কথা বলতে রাজি হননি৷ হংকং থেকে আসা এক নারী কথা বললেও নাম প্রকাশ করতে চাননি৷ রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘‘আমার একটা সন্তান৷ স্বামী মারা গেছে৷ আমি জানি এখানে পরিস্থিতি ভালো নয়৷ এটা কোনো ঘর নয়, স্রেফ একটা তাঁবু৷ তবু আমি দেশে ফিরবো না৷ সবাইকে আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে হয়৷ আল্লাহ চাইলে সব ভালো হবে৷’’
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
9 ছবি1 | 9
২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে এক যুদ্ধে ইয়ালদার স্বামী মারা যায়৷ তারপর সেপ্টেম্বর মাসে দ্বিতীয় এবং অক্টোবর মাসে তৃতীয় বিয়েও করেন তিনি৷তারপর সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহর মায়াদিনে চলে যান ইয়ালদা৷ তৃতীয় স্বামী এক ইয়াজিদি নারীকে নিয়ে এসেছিলেন দাসী হিসেবে৷ বিবৃতিতে বলা হয়, সেই নারীকে অকথ্য নির্যাতন করতেন ইয়ালদা৷
ইয়াজিদি নারীকে তার স্বামী ধর্ষণ করতো এবং ইয়ালদা তা কাছ থেকে দেখতেন- এমন অভিযোগও রয়েছে ইয়ালদার বিরুদ্ধে৷বিবৃতিতে ইয়াজিদি নারীকে নির্যাতনের বিষয়ে প্রসিকিউটর জেনারেল বলেন, ‘‘তিনি (ইয়ালদা) প্রায় প্রতিদিনই ওই নারীর (ইয়াজিদি) ওপর নির্যাতন চালাতেন৷নিয়মিত ওই নারীকে ঘুসি, লাথি মারতেন, চূল ধরে টানতেন, মাথা ঠুকে দিতেন দেয়ালের সঙ্গে৷''
২০১৭ সালের শেষ দিকে সিরিয়া ছাড়তে চেয়েছিলেন ইয়ালদা এ.৷কিন্তু কুর্দি যোদ্ধারা তাকে ধরে ফেলে৷ জার্মানিতে ফেরার আগ পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন ইয়ালদা এ.৷